আজল পর্ব-০৭

0
584

#আজল
#পর্ব-সাত

১৭.

সকালের নামাজ টা পড়ে সাঁচি ভাবলো একটু ঘুমিয়ে নেবে। রাতে ফুয়াদ কে জলপট্টি দিতে দিতে আর ওর আবোল তাবোল প্রলাপ শুনতে শুনতে ঘুমের বারোটা বেজেছে। তাই ফজরের আযান টা শোনা মাত্রই চট করে নামাজ পড়ে নিয়ে ঘুমাতে আসলো। বিছানার অর্ধেকের বেশিটা জুড়ে ফুয়াদ শুয়ে আছে বাঁকা হয়ে। সাঁচি ফুয়াদের কপালে হাত দিলো, নাহ! জ্বর একটু কমেছে! ও ডাকলো ফুয়াদকে-
” এই, একটু সোজা হয়ে শোন না! আমি শোবো তো? একটু জায়গা দিন তো?”
ফুয়াদ সরলো না শুধু একটি নড়ে উঠলো-
“একটু পানি দেবে, সাঁচি?”
“হুম, দিচ্ছি। ”
উঠে বসে পানিতে চুৃুমুক দিয়ে মুখটা বিকৃত করলো ফুয়াদ। মুখ একদম তেতো হয়ে আছে, পানির স্বাদও তিতকুটে লাগছে। দু চুমুক পানি খেয়ে গ্লাসটা ফেরত দিলো সাঁচিকে-
” রাতে কি বেশি জ্বালিয়েছি তোমাকে? ঘুমাতে দেইনি না?!”
” তা একটু জ্বালিয়েছেন বৈকি। তবে ব্যাপার না! অসুস্থ মানুষ, এরকম একটু তো হতেই পারে! আচ্ছা রাতে তো সেরকম কিছু খাননি। এখন ঘুম যেহেতু ভেঙেছে কিছু খেয়ে ওষুধ টা খেয়ে নেবেন?”
” খেতে ইচ্ছে করছে না। ”
” ইচ্ছা না করলেও খেতে হবে কিন্তু! ওষুধ না খেলে জ্বর ভালো হবে??”
“আচ্ছা, তবে একটু খিচুড়ি খাবো, সবজি খিচুড়ি। মা কে বলো মা রান্না করে দেবে। মা খুব মজা করে সবজি খিচুড়ি রান্না করে।”
একটু মন খারাপ করলো সাঁচি। ওকেও তো কিছু রান্নার কথা বলতে পারতো?লোকটা ওকে কিছু মনেই করে না! অন্তত বন্ধুত্বের দাবিতেও তো বলতে পারতো? মন খারাপ ভাব নিয়েই বললো-
“আচ্ছা, তবে মাকে বলে আসি।”
সাহেরা বেগম রান্না ঘরেই ছিল। কাজের মেয়েটাকে নাস্তা বানানোর ইন্সট্রাকশন দিচ্ছিলো। সাঁচি ডাকলো পেছন থেকে-
” মা, উনি আপনার হাতের সবজি খিচুড়ি খেতে চাচ্ছে।”
” জ্বর কমেছে ফুয়াদের? ”
“জ্বী, মা কমেছে। ”
“আচ্ছা, আমি চট করে খিচুড়ি রান্না করছি। তুমি ফুয়াদের কাছে যাও। দেখো কিছু লাগবে কিনা?”
সাঁচি মাথা নাড়লো। রুমে এসে দেখে ফুয়াদ বিছানায় উঠে বসে আছে মাথায় হাত দিয়ে।
“কি হয়েছে? মাথা ব্যাথা নাকি?”
“হুম। একটু বাথরুমে যাবে বলে নামতে চাইলাম। কিন্তু মাথা প্রচন্ড রকম ঘুরছে। ব্যাথাও প্রচুর, মাথা তুলতে পারছি না। প্লিজ একটু হেল্প করো না!!?”
সাঁচি মনে মনে ভীষন খুশি হলো। আব আয়ে উট পাহাড় কে নিচে!?এতদিন তো নিজের কাছে ঘেষতে পর্যন্ত দিতো না! চেষ্টা করেও পারেনি সাঁচি। এখন এতো কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ পাবে ভাবতেই মনের মধ্যে হাজারো অনুভুতিরা সব ঘুম থেকে যেগে উঠছে যেন। ইস! একবার যদি ওর খালি বুকটা দেখতে পেতাম? ওর সে বুকে মাথা রাখতে পারতাম! ওর জ্বরের কারনে যদি সুযোগ টা পেয়ে যায়! মনের মধ্যকার ইচ্ছে গুলো সব ঝাপি খুলে বেরিয়ে আসতে চাইছে যেন! নিজের মনের এরকম দশা দেখে কম অবাক না সাঁচি! একজন অসুস্থ লোকের অসুখের চিন্তা না করে কি সব চিন্তা করছে?? আসলেই ফুয়াদের অবহেলা ওর মাথা নষ্ট করে দিয়েছে। নিজেকে শাসন করলো সাঁচি-
“কি হচ্ছে! সাঁচি, ছি! কি ভাবনা এগুলো! কোথায় লোকটার চিন্তা করবি তা না করে নিজের মনোবাসনা পূরণ করার চিন্তা করছিস??! লুচ্চি কোথাকার!”
পরক্ষনেই আবার বলছে-
” কেন,কি দোষ তাতে! ও আমার স্বামী! হক আছে ওর ওপর আমার। ও যদি সে অধিকার না দেয় তাহলে আমি কি চুপচাপ বসে থাকবো?? কখনোই না!”
ভাবনায় বুদ সাঁচি কে ফুয়াদ ডেকেই চলেছে –
” সাঁচি, এই সাঁচি! কি রে ভাই! এতে ডাকছি তুমিতো শুনছোই না? কই হাড়ায়ে গেলা?”
সম্বিত ফিরলে সাঁচির-
” এই, আমি আপনার কোন জনমের ভাই লাগি! হ্যা?”
“আচ্ছা! বোন লাগো তাইলে? ডাকছি কখন থেকে? কি ভাবো এতো? আর কতক্ষণ বাথরুম আটকায়ে থাকবো? এখানেই করে দেই তাইলে?”
“এই না! ছি ছি! সরি, আমি আসলে… আমার খেয়ালই ছিলো না…. চলুন….”
ফুয়াদকে কাঁধের সাপোর্ট দিলো সাঁচি। দু হাতে আগলে ধরলো ফুয়াদকে। লম্বা ফুয়াদের কাঁধ বরাবর আসলে সাঁচি। মাথাটা বুকে রাখতে ইচ্ছা হলো খুব। নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে নিলো।ফুয়াদ বাথরুমে যেয়ে দাড়ালো –
“এখন যাও তুমি!আমার হলে তোমাকে ডাকবো।”
সাঁচি ঘাড় নেরে বেড়িয়ে এলো।

ফুয়াদকে খিচুড়ি আর ওষুদ খাইয়ে নিজে খেতে খেতে বেলা নয়টা বেজে গেল। ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে সাঁচির। শাশুড়ি কে বলে ঘুমাতে চলে এলো। শাশুড়ি মা যে কয় দিন থাকে সংসার নিয়ে সাঁচি ভাবে না। মা ঠিক সামলে নেয়। রুমে ঢুকে দেখলো ফুয়াদ ততক্ষণে ঘুমে কাঁদা। সাঁচিও পাশে শুয়ে পড়লো। ওদের মাঝে একটা বালিশ দেয়া থাকে সবসময়। যেটা ফুয়াদ আজ পর্যন্ত কখনো ডিঙায় নি। সাঁচি মাঝে মাজে ইচ্ছা করে সরিয়ে নিতো। কিন্তু ফুয়াদ ভুলেও আসতো না এদিকে। সাঁচি মাঝে মাঝে অবাক হয়ে ভাবতো এই ছেলে মনেহয় ঘুমায় না। ঘুমের ভান করে জেগে বসে থাকে সারারাত। আজ সাঁচি নিজে পাশ বালিশ টা জরিয়ে ধরে শুয়ে পড়লো, মনে মনে বললো, “ওকে তো জরিয়ে ধরতে পারছি না! তুইই সই!”

সাঁচির গায়ের মনে হচ্ছে আগুন লেগে গেছে, এতো গরম লাগছে কেন? গরম নিঃশ্বাস এসে লাগছে গায়ে। হাতটা সরাতে গেলে বুঝলো ফুয়াদ শুয়ে আছে খুব কাছে। ওরই নিঃশ্বাস বাড়ি খাচ্ছে সাঁচির শরীরে এসে। হাতটা বাড়িয়ে ফুয়াদের কপালে রাখলো। দেখলো জ্বরে গা পুরে যাচ্ছে ওর। দ্রুত হাত সরিয়ে উঠে বসলো। ঘরের দড়জা জানালা সব বন্ধ হওয়ার কারনে বেলা বোঝা যাচ্ছে না। আধো আলোতে ঘড়ির দিকে তাকালো। পাঁচটা বাজে। তারমানে বিকাল হয়ে গেছে? ইয়া আল্লাহ! এতোক্ষন ঘুমিয়েছে? উঠে তাড়াতাড়ি বাতি জ্বালালো সাঁচি। ফুয়াদের কপালে পট্টি দিয়ে মা কে ডেকে নিয়ে আসলো। মা বললেন, একটু গা স্পঞ্জ করে দিতে। কথাটা শোনা মাত্রই সাঁচির মুখে খুশির এক অপার্থিব হাসি ফুটে উঠল। সাঁচির হঠাৎ করে মনে হলো আজকের দিনটা ওর জন্য খুব লাকি। ওর মনের সুপ্ত ইচ্ছে গুলো সব পূরন হয়ে যাচ্ছে। ফুয়াদের জ্বর হওয়াটা ওর জন্য শাপেবর হয়েছে যেন। ও তারাতারি একটা টাওয়েল ভিজিয়ে আনলো। কিন্তু ফুয়াদের গেন্জি খুলবে কিভাবে? ওর মতো বিশালদেহী পুরুষ কে কি সাঁচির পক্ষে তোলা সম্ভব? সাঁচি ফুয়াদের পাশে বসে ওকে ডাকলো-
“এই যে শুনছেন? আপনার গা টা একটু মুছিয়ে দেবো। একটু উঠবেন? গেন্জিটা একটু খুলুন না।”
“না না আমার লজ্জা লাগে তোমার কাছে। গেঞ্জি খুলবো না আর গা ও মোছাতে হবে না।”
ঘুমের ঘোরে বিরবির করলো ফুয়াদ। সাঁচি ঝারি দিলো একটা –
” এতো কিসের লজ্জা আপনার? পুরুষ মানুষ না আপনি? এত লজ্জা থাকতে নেই পুরুষের, বুঝলেন? তারাতারি খুলুন বলছি!”
ধমক খেয়ে ফুয়াদ জ্বরের ঘোরে উঠে বসার চেষ্টা করলো। সাঁচি ওকে ধরলো, তারপর আলতো করে গেঞ্জি খুলে নিলো। মনেমনে যতই ফটপট করুক সাঁচি, ওর ও ভীষন লজ্জা লাগছিলো, হাত কাঁপছিলো। গেন্জি খুলতেই ফুয়াদের উজ্জ্বল ফর্সা লোমশ বুকটা সাঁচির চোখের সামনে চলে এলো। সাঁচি হা হয়ে তাকিয়ে আছে, নিশ্বাস নিতে ভুলে গেছে যেন? ইস! কি সুন্দর প্রশস্ত লোমশ বুক ফুয়াদের! মার কথাই ঠিক তাহলে? এই জন্যই তবে ফুয়াদ এত্তো ভালো? ওর মনটা এতো নরম? এতো মায়া মমতা ওর মধ্যে? ইস! ফুয়াদ কবে ওকে আপন করবে? কবে ওর বুকে মাথা রাখতে পারবে সাঁচি? কবে ফুয়াদ ওর দুটো হাত দিয়ে আগলে নেবে সাঁচিকে? কবে মাথায় ফুয়াদের ভালোবাসার স্পর্শ পাবে? প্রশ্নগুলো ঘুরপাক খায় সাঁচির মাথায়।
“ওহ, ঠান্ডা লাগছে তো! আবার কি হলো, সাঁচি?”
“নাহ, কিছুনা। এই মুছিয়ে দিচ্ছি। তারপর কাপড় পরিয়ে দেবো।”
কাঁপা কাঁপা হাতে ফুয়াদের গা মুছিয়ে ওকে নতুন একটা গেঞ্জি পরিয়ে দিলো সাঁচি। ওকে শুইয়ে দিয়ে গায়ে কাথা দিলো। উঠে আসার সময় কি মনে করে ঘুমন্ত ফুয়াদের কপালে নিজের ঠোঁট ছুইয়ে দিলো-
” এবার আপনি সুস্থ হয়ে গেলে নিজের অধিকার চাইবো আপনার কাছে। নিজে থেকে তো দেবেন না, আমি চাইলেও কি ফিরিয়ে দেবেন? ভালোবাসার মানুষটা এক কাছে অথচ তাকে ছুতে পারছি না! এই কষ্ট কি আপনি বোঝেন না?”
ফিসফিস করলো সাঁচি।

১৮.

দিন তিনেক পরে জ্বর ছারলো ফুয়াদের। সকালেই ঘুম ভেঙে দেখলো ওর পাশেই সাঁচি গুটি সুটি মেরে শুয়ে আছে। নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলো বিছানার মাঝখানে ও শুয়ে। হেসে দিলো ফুয়াদ। মেয়েটা বাধ্য হয়ে এভাবে শুয়ে আছে। একটু পাশ ফিরলেই নিচে চিটপটাং হবে। কিছুক্ষণ সাঁচির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো। কি সুন্দর গোলগাল মুখ,চোখের নিচটা একটু বসা বসা। হয়তো এই কদিনের ক্লান্তির কারনে। পুরো সেন্সে না থাকলেও ফুয়াদ বুঝেছে সাঁচি এই কদিন অনেক খেটেছে ওর জন্য। মাঝে মাঝে কপালে ওর ভালোবাসার স্পর্শও বুঝতে পেরেছে। ভালোই লেগেছে সে স্পর্শ। বহুদিন পরে কারো স্পর্শ পেলো এই কপালটা। খুব ইচ্ছে হয়েছে ওকে বলে, তুমি আমার কপালে কিছুক্ষণ তোমার ঠান্ডা হাতটা রাখো। এই রকম মায়া মায়া চেহারা নিয়ে বসে থাকে আমার পাশে আরো কিছুক্ষণ। এই রকম ভালোবাসাপূর্ন স্পর্শ দিয়ে বারবার হাজারবার আমার কপালটা ছুয়ে দাও।
কিন্তু বলতে পারেনি! ফুয়াদ তো ছোটবেলা থেকেই এমন! নিজের মনের ইচ্ছা সহজে বলতে ভয় লাগে। পাছে সেটা যদি অন্য কারো কাছে বাড়তি মনেহয়! কোনো একজন খুব আপন ভেবে নিজের ইচ্ছা গুলো জানিয়েছিলো তো ফুয়াদকে। সে কি সেই ইচ্ছার মান রেখেছে? তাহলে অন্যের কাছ থেকে কিভাবে আশা করে? কারো উপর কোনো প্রেশার ক্রিয়েট করতে চায় না ফুয়াদ। এই বেশ ভালো আছে। নিজের কষ্টের জগত নিয়ে। তবে মাঝে মাঝে হঠাৎ হটাৎ মনে হয়, ঠকাচ্ছে নাতো মেয়েটাকে? ও তো নিজে ইচ্ছায় মেয়েটাকে নিজের জীবনে এনেছে, তবে এই অবহেলা কি ওকে দেয়া ঠিক হচ্ছে? সাঁচি যদি ওর পাওনা টা কখনো চেয়ে বসে? ওর সাথে কি কথা বলা উচিত ? জানানো উচিত সবটা? কিন্তু জানালে যদি ভুল বোঝে? যদি হীতে বিপরীত হয়! যদি এটাই বলে আমায় ঠকালেন কেন বিয়ে করে? বড্ড ভয় লাগে ফুয়াদের। আজকাল কি তবে সাঁচিকে হারানোর ভয় জাগছে মনে? কিন্তু কেন? ও কি তবে সাঁচির প্রতি দূর্বল হয়ে যাচ্ছে মনে মনে?
“কখন উঠলেন? এভাবে বসে আছেন যে? বাথরুমে যাবেন নাকি? জ্বর আসছে আবার?” উদ্দিগ্ন কন্ঠে বললো সাঁচি।
” নারে বাবা, জ্বর ছেড়ে গেছে। তাই আপনাতেই ঘুমটা ভেঙে গেলো। বাথরুম যাবে অবশ্য! তবে তোমার উঠতে হবে না। তুমি বরং আর একটু ঘুমাও।”
“আরে না, চলুন আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসি।”
“আহ! বললামতো লাগবে না। আমি পারবো একা একা যেতে।”
ফুয়াদের মৃদু ধমকে সাঁচি থমকে গেলো। মনে মনে ভ্যাংচালো ওকে-
“এহ, একটু সুস্থ হতেই দেখ কেমন করছে? আমাকে চিনতেই পারছে না যেন! বদের লাঠি কোথাকার?”
ফুয়াদ একা একাই আস্তে আস্তে হেঁটে হেঁটে বাথরুমে গেল। সাঁচি আর শুয়ে না থেকে উঠে পরলো। ভাবলো, বদটার শরীর যখন ভাল হয়েছে, তখন আজকের নাস্তা টা না হয় নিজের হাতে বানাবে। সবাই মিলে একসাথে খাওয়া যাবে বেশ অনেকদিন পর।

আরো বেশ কিছুদিন পার হয়ে গেছে। জ্বর ভালো হওয়ার পর ফুয়াদ অফিসে যাওয়া শুরু করেছে। অনেকদিন গ্যাপ হয়ে যাওয়ার কারনে প্রচুর কাজ জমে গেছে। সাঁচিও প্রচন্ড ব্যাস্ত। ওর সেমিস্টার ফাইনাল চলছে। বেচারি দম ফেলার টাইম পাচ্ছে না। রাতে বাবা মা সাঁচি আর ফুয়াদ খেতে বসেছে একসাথে। তখন মা কথা তুললো-
” তোদের বিয়ের চারমাস পার হয়ে গেলো সাঁচিকে নিয়ে তো কোথাও ঘুরতে গেলি না ফুয়াদ?”
” মা, দেখছোই তো সময় পাচ্ছি না একটুও। তাছারা সাঁচিও তো বিজি।”
সাঁচি একবার ফুয়াদের দিকে তাকিয়ে আবার মাথা নিচু করে খেতে লাগলো।
” সাঁচি মা, তোমার পরীক্ষা কবে নাগাদ শেষ হবে?”
” মা, আমার আর দুটো আছে। তারপর কিছু দিনের ব্রেক পাবো।”
” তাহলে তো হলোই। ফুয়াদ তুই সাঁচিকে নিয়ে এর মধ্যে কোথাও থেকে ঘুরে আয়। ততদিন আমরা না হয় এখানে থাকবো। তোরা আসলে আবার টাঙ্গাইল চলে যাবো। এবার অনেকদিন থাকা হলো। আর তোর বাবার শরীর ও এখন ভালো আছে।”
“হ্যারে, ফুয়াদ ঘুরে আয়। এখন না ঘুরলে আর কবে যাবি? পরে গেলে দেখবি আর ভালো লাগবে না।”
বললেন ফুয়াদের বাবা।
” আমি তো ভাবলাম সবাই মিলে একসাথে বেড়াতে যাবো। একসাথে কোথাও যাওয়া হয়নি অনেকদিন।”
ফুয়াদ বললো।
“কোনো দরকার নেই। এবার তোমরা ঘুরে নিজেরা নিজেরা ঘুরে আসো। বিয়ের পর প্রথম বেড়ানো টা নিজেরা নিজেরা গেলেই ভালো। এতে দুজনার মধ্যে বোঝাপড়ার সময় পাওয়া যায়। এটা খুব দরকার জীবনটা একসাথে সাজিয়ে নেওয়ার জন্য। আর এই সময়টাও অনেক স্পেশাল। এই অনুভব গুলো পরে আর আসে না জীবনে। তাই এখন তোমরাই যাও। পরেরবার না হয় আমরা সবাই যাবো?”
বললেন আজমল সাহেব। ফুয়াদ কিছুটা অবাক হলো। বাবা কখনো এতো সুন্দর করে বুঝিয়ে কথা বলে না। আজ কি সুন্দর করে বুঝিয়ে কথা বলছে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো বাবার দিকে। অসুখের পর বাবা কি একটু পাল্টে গেছে নাকি?

সাঁচির পরীক্ষা শেষ হয়েছে দুদিন হলো। সেদিন বেড়াতে যাওয়ার কথা শোনার পর থেকে সাঁচির মনের মধ্যে খুশির বান ডেকেছে। চব্বিশ ঘন্টা একসাথে থাকলে নিশ্চয়ই ফুয়াদ ওকে এভাবে এড়াতে পারবে না? কি করবে তখন তুমি,বাছাধন! কোথায় পালাবে? হয় আত্মসমর্পণ করবে আর না হয় নিজের অপারগতার কথা স্বীকার করবে! দুটোর মধ্যে থেকে যে কোন একটা বেছে নিতেই হবে তোমায়।
খুশিতে গুনগুন করে গান গাইতে শুরু করলো সাঁচি।

সেদিন রাতে ফুয়াদ যখন বাসায় ফিরলো সাঁচি তখন ভীষন সিরিয়াস ভঙ্গিতে ওর সামনে দাড়ালো। ফুয়াদ একটু ভয় খেয়ে গেল-
“কি হয়েছে? কোন সমস্যা?”
” আপনার সাথে আমার কথা আছে।”
” ঠিক আছে বলো। কি বলবে?”
“এখন না। রাতে বলবো। আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন ততোক্ষণে। ”
চিন্তিত ভঙ্গিতে ওয়াশরুমে ঢুকলো ফুয়াদ। কি বলবে সাঁচি ওকে? সিরিয়াস কিছু কি???

চলবে—-
©‌‌‌‌Farhana_Yesmin

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে