আজল পর্ব-০২

0
667

#আজল
#পর্ব-দুই

৪.

রিসিপশানের অনুষ্ঠানটা সাঁচির জন্য যেন একটা বিশাল সারপ্রাইজ। তার পিওর জেন্টেলম্যান হাজবেন্ডের যে এত বন্ধু বান্ধব আছে এবং সে যে এত পপুলার একজন মানুষ তা সাঁচির জানাই হতো না যদি এই অনুস্ঠানটা না হতো! সাঁচি আর ফুয়াদকে ঘিরে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ফুয়াদের বন্ধুরা। ফুয়াদ সবার সাথে একে একে সাঁচির পরিচয় করিয়ে দিতে শুরুই করেছে কিন্তু সাজিদ নামে ওর এক ফ্রেন্ড ফুয়াদকে থামিয়ে দিলো-
” দোস্ত, আজকে এইসব পরিচয় ফরিচয় করানো বাদ দে তো! আমরা এতোগুলা মানুষ, ভাবির মনে থাকবে না সবার নাম। শেষে দেখা যাবে অন্য সবার নাম মনে করতে করতে তোরেই ভুলে গেছে।”
সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। পাশ থেকে আর একজন বললো-
“হ দোস্ত, আপাতত এইসব বাদ। পরে একদিন আমরা আলাদা ভাবে ভাবির সাথে পরিচয় হবো নে। এর জন্য অবশ্য তোর আর একদিন পকেট ফাঁকা করতে হবে। কিন্তু কি আর করা। বউয়ের জন্য এইটুকু তো করতেই পারিস, তাই না? এখন তোরে চান্স দিলাম, তুই আগে ভাবির সাথে ভালোমতো পরিচিত হ। ”
এরমধ্যেই পাশ থেকে আরেকজন ফোরন কাটে-
“হা দোস্ত, আপাতত এই কয়েক দিন তোর পরিচয়ের পালা। দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা তোর পরিচয় দিতে থাক!”
আবার সবার একসাথে হাসি।
” তা ভাবি, দোস্ত আমার ঠিকমতো যন্ত টত্ন নিয়েছে তো আপনার! কোনো সিমটম তো দেখি না। শালা কি বাসর রাতেও ভদ্রতা দেখাইছে নাকি!!?? ”
পাশ থেকে প্রথমজন বললো। ফুয়াদ বন্ধুদের মৃদু ধমক দিলো এবার-
“আহঃ, কি হচ্ছে এসব? এবার কিন্তু বেশি বেশি হচ্ছে? ”
“দোস্ত তুই কি লজ্জা পাইলি নাকি?”

আবার সমস্বরে হাসি। ওদের কথা শুনে সাঁচির মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেল। কান দিয়ে মনে হচ্ছে ধোয়া বের হচ্ছে। এই ছেলেগুলো এতো ফাজিল কেন? খালি দুষ্টু দুষ্টু কথা বলছে! সাঁচি ফুয়াদের দিকে তাকিয়ে দেখলো ও শুধু মিটিমিটি হাসছে। কিছু না বলে মুখ নিচু করলো বসে রইলো সাঁচি। তখনই পাশ থেকে দুই আপু বের হয়ে এলো, ফুয়াদের বান্ধবী মনে হয়। ওরা সাঁচিকে বাঁচিয়ে নিলো। একজন বললো-
” এই শয়তানের দল, তোদের শুরু হয়ে গেছে তাই না! কোনো জ্বালাচ্ছিস মেয়েটাকে? ভাগ এখান থেকে!”
“ঐ যে চলে এসেছে নারী নেত্রী। এখন এই বিয়ে বাড়িতে বর বউ এর অনুষ্ঠানের মঞ্চকেও আন্দোলনের মঞ্চ বানিয়ে দেবে!? ”
কেউ একজন বললো।
“রুমন, শয়তান! কি বললি তুই! তুই বাসায় চল আজ তোর খবর আছে?”
“তুই আর কি খবর করবি? তোর খবর করা মানে তো খাওয়া বন্ধ! তবে আজ আর কোনো খবর করতে পারবি না। কারন আজ তো এখান থেকেই খেয়ে যাবো। তাই আজকের জন্য তোকে ভয় পাচ্ছি না।”
দুজনের ঝগরা শুনে সবাই আবার হেসে দিলো। সাঁচি বুঝলো ওরা দুজন স্বামী স্ত্রী। পাশের আপুটা বললো-
” আহ! তোরা কি শুরু করলি। চল ওদের সাথে কয়েকটা ছবি তুলো ওদের ছেড়ে দেই। দেখছিস না সবাই দাড়িয়ে আছে। আমাদের জন্য কেউ আসতে পারছে না ওদের কাছে।”
সবাই ছবি তুলে চলে গেল। সাথে ফুয়াদও গেল।
“ভাবি, আপনার স্বামীকে কিছুক্ষণের জন্য নিয়ে গেলাম! যাওয়ার আগে আবার দিয়ে যাবো, কেমন?”
বন্ধুদের বিদায়ের আগে আপু দুটো ওর সাথে কিছুক্ষণ কথা বললো। আপুদের একজনের নাম মীম আর একজনের নাম আলিফ। মীম আপু সাঁচিকে বললে-
” সাঁচি, ইউ নো! ইউ আর এ ভেরি লাকি গার্ল। বিকজ ইউ গট ফুয়াদ। ফুয়াদ ইজ আ জেম। হি ইজ আ রিয়েল হিরো।”
“ইয়েস সাঁচি! মীম ইজ রাইট। ফুয়াদ ইজ দা অননি ওয়ান পারসন। আই হ্যাভ নেভার সিন হিম টু ফ্লার্ট এনি গার্ল। সো কিপ হিম হ্যাপি। এন্ড গুড উইশ ফর ইয়োর ম্যারিড লাইফ।”

ওরা যাওয়ার পরে কিছুক্ষণ একা একাই বসে ছিল সাঁচি। ফটোগ্রাফাররা বিভিন্ন এ্যাঙ্গেলে ওর ছবি তুলছিলো। কিছুক্ষণ পরে ফুয়াদও এলো। দুজনের কিছু যুগল ছবি তুললো স্মৃতি রাখার জন্য। ফ্যামিলি ছবিও তোলা হলো অনেক। বিয়ের অনুষ্ঠান মানে অনেক অনেক স্মৃতি আর ছবিগুলো যেন সেইসব স্মৃতিকে ধরে রাখার চেষ্টা!

৫.

রাতে নিজেদের বাড়িতে নিজের রুমে আয়নার সামনে বসে ফ্রেশ হচ্ছিল সাঁচি। আসলে আয়নার সামনে বসে চুলের জট ছাড়াচ্ছিলো আর ফুয়াদের কথা ভাবছিলো। লোকটা বেশ পপুলার। তার অফিস কলিগরাও ফুয়াদ বলতে পাগল। ভালোই লাগছে সাঁচির। বিখ্যাত মানুষের সঙ্গী হতে কে না চায়! জীবনসঙ্গী হিসেবে এরকম একজন মানুষকে পেয়ে সত্যি জীবনটা পরিপূর্ণ মনে হচ্ছে সাঁচির । একটু যেন গর্বও হচ্ছিল। ভার্সিটি তে সাঁচিও বেশ পরিচিত মুখ। বহু প্রেমের প্রস্তাবও পেয়েছে কিন্তু বাবার আদেশ ছিল, জীবনেও যেন কোনো কারনে বাবার মাথা হেট না হয়! ফ্যামিলির বড় মেয়ে, তাকে দেখেই বাকিরা শিখবে। তাই এমন কাজ যেন তার দ্বারা না হয় যেটাতে তাদের সম্মান হানি হয়। সাঁচি এসব কথা মাথায় রেখেই বড় হয়েছে। তাই কখনো প্রেম ভালোবাসার চিন্তা তার মাথায় আসেনি। আজ মনে হচ্ছে তার এই ত্যাগের কারনেই হয়তো ফুয়াদের মতো লাইফ পার্টনার পেলো! এই যে ফুয়াদ বাসায় এসে তার বাবা মায়ের সাথে তাদের ছেলের মতো, ভাই বোনের সাথে তাদের বড় ভাইয়ের মতো গল্প করছে এটাও কি কম পাওয়া!? মনে মনে এসব ভাবছিলো সাঁচি আর মুখে একটা খুশির আভা ছড়িয়ে পরছিলো।

তখনই রুমে ঢুকলো ফুয়াদ। ওর দিকে তাকিয়ে চোখ নাচালো-
” কি ব্যাপার! এতো খুশি ক্যান? কি হয়েছে?”
” কিচ্ছু না। এমনিই!”
বলে আয়না থেকে মুখ ঘুরলো সাঁচি। ওকে সরাসরি দেখে ফুয়াদ হেসে দিলো-
” এ অবস্তা কেন? সারা মুখে তেল?”
” আর বলবেন না! পার্লারে চুল বেধে চুলের বারোটা বেজেছে। তাই আজকে ইচ্ছা মতো তেল দিয়েছি চুলে। এখন শাওয়ার নিয়ে নেবো। ”
” ওওও, আচ্ছা। তাহলে ঠিক আছে।”
” আপনি কি শাওয়ার নেবেন? নিলে নিয়ে নিতে পারেন। আমি ঢুকলে একটু দেরি হবে তো তাই বলছিলাম আরকি! আপনি করলে আগে করে নেন। গিজার অন করা আছে।”
“হুম, গোসল তো করাই দরকার? এতোক্ষণ অনুষ্ঠানের মধ্যে ওভাবে থেকে গা হাত পা কেমন যেন নোংরা নোংরা লাগছে! ঠিক আছে,আমি তাহলে করে ফেলি গোসলটা। এই সাঁচি, তুমি কি আমায় একটু চা বানিয়ে দিতে পারবে আদা দিয়ে। গোসলের পর চা খেলে খুব আরাম লাগবে। মাথা ধরাটা কমবে।”
ফুয়াদের ‘এই সাচি’ ডাকে সাচির শরীরটা ঝিমঝিম করে উঠলো। কি সুন্দর করে ডাকলো লোকটা! লোকটার ভারি কন্ঠে ওর নামটা শুনতে একেবারে ইউনিক লাগলো। সাঁচি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো-
” আপনি গোসল করে আসুন। আমি চা বানিয়ে আনছি।”
” থ্যাংকু।”
সাঁচি দৌড়ে গেল চা বানাতে। আসলে ফুয়াদের কাছ থেকে সরে যেতে চাইলো। ওর এতো ভালোলাগার ব্যাপারটা যদি ফুয়াদ বুঝে ফেলে?
তাই ছুতো পেয়ে বেড়িয়ে এলো। লোকটা কাছে থাকলে এতো ভালো লাগে কেন? একটু কথা বললেই নিজেকে ধন্য মনে হয়। কেন এমনটা লাগে সাঁচির? এই অনুভুতিটা একেবারেই নতুন সাঁচির কাছে। তাই বুঝে উঠতে পারছে না এটাকে কি বলবে?

ভাবতে ভাবতে চা বানাচ্ছিলো সাঁচি। একটু বেশি করেই বানালো চা। শেষে দুমগে চা ঢেলে ঢাকা দিয়ে ট্রেতে করে নিয়ে ঘরে গেল। ভাবলো নিজের শাওয়ার শেষে ফুয়াদের সাথে বসে একসাথে চা খাবে আর গল্প করবে। ফুয়াদ শাওয়ার নিয়ে বের হতেই ও একবারে থমকে গেল। ফুয়াদ একটা হাফ হাতা গেন্জি আর ট্রাউজার পরেছে। চুলগুলো ভেজা ভেজা, সেগুলো টাওয়েল দিয়ে মুছতে মুছতেই হেঁটে আসছিলো রুমে। সাঁচি হা করে তাকিয়ে দেখছে ফুয়াদকে। উজ্জ্বল শ্যামবর্নের নীলাভ গাল, মোটামুটি লম্বাটে মুখের মাঝে টিকোলো নাক আর পাতলা ঠোঁটের ফুয়াদ যেন চুম্বকের মতো টানছে সাঁচিকে। আজ পর্যন্ত কখনো কোনে ছেলেকে এতো মন দিয়ে, এতো কাছ থেকে দেখেনি সাঁচি আর! তাই আজ ও বেহায়ার মতো নিজের স্বামীর দিকে তাকিয়ে আছে। কয়েকবার সাঁচিকে ডাকলো ফুয়াদ। ও শুনলো না, শুনবে কিভাবে? ও তো নিজের মধ্যে নেই! বাধ্য হয়ে
হাতের তুড়ি মেরে সাঁচির ধ্যান ভাঙালো ফুয়াদ- “কি হলো! গোসলে যাবে না?”
” এ্যা, হ্যা হ্যা ওহ, যাবো তো!?”
তোতলাচ্ছে সাঁচি। ভীষন লজ্জা ও পেলো। না জানি ফুয়াদ কি অবস্থায় দেখেছে ওকে? কতক্ষণ ধরে ডাকছিলো ওকে কে জানে! আর এত বেহায়াই বা হলো কবে ও! ছি ছি! কি ভাবলো ফুয়াদ! অসস্তি কর অবস্থা থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য কাপড় চোপড় নিয়ে দৌড়ে বাথরুমে ঢুকলো সাঁচি।

৬.

ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুল আচরাচ্ছিলো ফুয়াদ। চুল আচরানো শেষে সাঁচির রুমটা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলো। একটা মাঝারি সাইজের খাট, সাথে ম্যাচিং আলমিরা। খাটের পাশে পড়ার টেবিল, যেখানে হরেক রকম বই সাজানো আছে। পড়ার বই ছাড়াও নানা ধরনের গল্পের বই, ভ্রমন কাহিনী আর আত্মজীবনী কোনে কিছুই বাদ যায়নি লিষ্ট থেকে! বইয়ের কালেকশন দেখেই বোঝা যাচ্ছে মেয়েটা জীবনে বৈচিত্র্য পচ্ছন্দ করে। আবার দেয়ালে শোভা পাচ্ছে কিছু ছবি, কয়েকটা ওয়ালম্যাট আর সাঁচির বিভিন্ন বয়সের ছবি। বোঝা যাচ্ছে মেয়েটা ছোট থেকেই বেশ কিউট দেখতে। উজ্জল ফর্সা গায়ের রং, পাতলা ঠোঁট আর বোঁচা নাক। অনেকটা চাকমা মেয়েদের মতো। তবে সবচেয়ে সুন্দর হচ্ছে ওর চোখ দুটো। একেবার গভীর দৃষ্টি যাকে বলে। দেয়ালের ওয়ালম্যাট গুলোতে শোভা পাচ্ছ গ্রামের দৃশ্য, আনারী হাতের কাজ, দেখে মনে হচ্ছে সাঁচির নিজের হাতে তৈরী। বাহ! মেয়েটা গুনি আছে তো!? মনে মনে তারিফ করলো ফুয়াদ। টেবিলের ট্রেতে দুটো মগ দেখে মনে মনে একটু হাসলো ফুয়াদ। মেয়েটা নিশ্চয়ই ওর সাথে একসাথে চা খাওয়ার কথা ভেবেছে!? কিন্তু আজ মনেহয় সাঁচির সাথে চা খাওয়া ঠিক হবে না! কিছুক্ষণ আগে ওর চোখে নিজের জন্য নেশা হতে দেখেছে ফুয়াদ। তখন থেকেই অসস্তি হচ্ছে ফুয়াদের। রিলেশনটা এতো দ্রুত মেনে নেওয়া ওর জন্য কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। এতোদিন স্বাধীনভাবে নিজের একাকী জীবনটা কাটিয়েছে। এখন কিছুটা সময় দরকার ওর। সব কিছু মেনে নিতে, মানিয়ে নিতে। দুটে অপরিচিত মানুষ শুধু শরীরের টানে কাছে আসবে এটা ভাবতেও অস্বস্তি ফিল করছে ফুয়াদ। কিন্তু ও জানে, এখন এই মুহুর্তে সাঁচিকে কিছু বললো ও ভুল বুঝতে পারে। ওর সময় চাওয়াটার অন্য কোন মিনিং করতে পারে। ফুয়াদ চায় না সম্পর্ক টা শুরু হওয়ার আগেই নষ্ট হয়ে যাক। তাই সাঁচিকে একটু এ্যাভোয়েড করতে চাচ্ছে ফুয়াদ। ও চায় না ওর কারনে মেয়েটা কষ্ট পাক। মেয়েটা খুবই ভালো। একেবারে ক্লিন ইমেজের সহজ সরল মেয়ে। এই টাইপের মেয়েরা খুব অল্পতেই বেশি আঘাত পায়। সহজ ব্যাপারকে জটিল করে তোলে। এখন যে কোন কথাই ওর মনে যেয়ে লাগবে। ওর মনে হবে ওকে অপমান করা হচ্ছে? এই কষ্টটা ওকে দিতে চায় না ফুয়াদ। তারচেয়ে বরং নিজেকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে মেয়েটাকে সুখী করার চেস্টা করবে।

চা খেতে খেতে এসবই ভাবছিলো ফুয়াদ। কি মনে হতেই একবার বেডের দিকে চোখ গেলো। ওর বাড়ির তুলনায় এই বেডটা বেশ ছোট। একসাথে শুলে সাঁচির গায়ের সাথে গা না লেগে যায়! ধুর! লেগে গেলেই বা কি!? বিয়ে করা বউই তো ওর!? ভাবতে ভাবতে বিছানায় শুয়ে পড়লো ফুয়াদ। সাঁচি নিশ্চয়ই আজকে ওর থেকে কিছু এসপেক্ট করবে। কিছু না হোক অন্তত হাতটা ধরবে, চোখে চোখ রেখে কথা বলবে এটা তো আশা করবেই মেয়েটা! ফুয়াদ ও তো চায় সাঁচির সাথে স্বাভাবিক থাকতে! তবে কেন জানেনা ওর কাছে গেলে মাথাটা ঝিমঝিম করে! কেন বুকের ভেতরটা খাঁ খাঁ করে!!??? এক অব্যক্ত কষ্ট দলা পাকিয়ে গলার কাছে এসে জমা হয়! নাহ ভালো লাগে না কিছু??? মাথা নাড়ে ফুয়াদ। তারচেয়ে বরং ঘুমিয়ে যাক। সাঁচি নিশ্চয়ই ওকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে গল্প করতে চাইবে না!! এই ভালো! চোখের সামনে থেকেও পালিয়ে বেড়ানো!!!????

সাঁচি শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে দেখলো ফুয়াদ ঘুমিয়ে গেছে। আশ্চর্য তো! লোকটা আজকেও কেন ঘুমিয়ে গেল!! কাল না হয় টায়ার্ড ছিলো কিন্তু আজ? আজ কি হয়েছে? আচ্ছা! ও কি অনেক লেট করেছে নাকি শাওয়ার নিতে! ঘড়ির দিকে তাকালো। আধাঘন্টা মতো লেগেছে। লেট ই বলতে হবে। তবুও তো ওয়েট করতে পারতো ওর জন্য! নতুন বউয়ের সাথে আজকে অন্তত কিছুটা সময় গল্প করতে পারতো??? নাকি ওয়েট করতে করতে ঘুমিয়ে গেছ? হয়তোবা ? মন খারাপ করে সাঁচি চুল ঝেড়ে টাওয়েল টা বারান্দায় মেলে দিলো। তারপর আবার রুমে এসে ফুয়াদের দিকে তাকালো একবার। দেখে মনে হচ্ছে গভীরে ঘুমে আছে। চায়েট ট্রের দিকে তাকিয়ে দেখলো ওখানে একটা মগ খালি পড়ে আছে। তারমানে, নিজের চা টুকু খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে? খুব কষ্ট লাগলো সাঁচির। এমনটা কেন করলো ফুয়াদ? কতো আশা নিয়ে দুমগ ভরে চা বানালো যে অনেক সময় নিয়ে চা খেতে গল্প করবে! আর উনি নিজের চা টা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে! প্রচন্ড অভিমান হলো সাঁচির। কেন এমন করলো ফুয়াদ? কাল এর জবাব চাইবে ফুয়াদের কাছে।

ঘরের বাতিটা বন্ধ করে নিজের চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে বারান্দায় পাতানো চেয়ারে বসে চায়ে চুমুক দিলো সাঁচি। বারান্দা টা বেশ সুন্দর সাঁচির। সামনে কিছু লতানো ফুলের গাছ গ্রিলের কিছু অংশ জুড়ে আছে। নিচে কিছু পাতা বাহার। সাথে আছে হরেক রকম ফুলের গাছ। সাঁচির রুমটা এই বাসার সবচেয়ে সুন্দর রুম। এই বাড়িটা যখন তৈরী হচ্ছিল সাঁচি তখন ক্লাস নাইনে পড়ে। সাঁচি ওর বাবার কাছে বায়না করেছিলো, ওকে দক্ষিণ দিকে একটা সুন্দর বড় বারান্দা সহ রুম দিতে। প্রথম সন্তান হওয়ার সুবাদে বাবা ওকে ভালোবাসতেন খুব! তাই মেয়ের আবদার মেনেই সাঁচির জন্য এই রুমটা তৈরী করেন। এই রুমের বড় আকর্ষন হলো এই বারান্দা। তার উপর সাঁচি গাছ টাছ লাগিয়ে বারান্দা কে এক অন্যরকম সৌন্দর্য দিয়েছে। জোছনা রাতে চাঁদের আলো যখন এই বারান্দায় লুটোপুটি খায় কি যে অপরুপ লাগে দেখতে? কতো জোছনা রাত যে ওরা তিন ভাইবোন কাটিয়েছে এখানে! সে সব কথা মনে করে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সাঁচি। ওর কত স্বপ্ন ছিলো ওর হাজবেন্ড কে নিয়ে এই বারান্দায় বসে জোছনা বিলাস করবে ও। আর ভাগ্যক্রমে আজ জোছনা রাতও ছিলো! কিন্তু ওর আন রোমান্টিক বরটা ঘুমাচ্ছে আজকে।

পূর্নিমা রাতে চাঁদের আলো এসে বেশ মোহনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। ওর খুব ইচ্ছা করছে যেয়ে ফুয়াদকে ঘুম থেকে ডেকে নিয়ে আসে। তারপর বারান্দায় বসে ফুয়াদের সাথে নিজের জীবনের আশা, আকাঙ্ক্ষা, ইচ্ছা, অনিচ্ছা সব শেয়ার করে। সেই সাথে ফুয়াদের টাও শুনে। কিন্তু তা কি করা সম্ভব ?? ব্যাটাকে ঘুম থেকে ডাকলে যদি রেগে যায়? মন খারাপ করে একা একাই নিঃশব্দে বসে চায়ের কাপে চুমুক দেয় সাঁচি। ভাগ্য খারাপ, তার সঙ্গী আজ পাশে নেই। আজকের আকাশের চাঁদই সঙ্গী তার এই জোছনা বিলাসের!!!

চলবে—-
©‌‌‌‌Farhana_Yesmin

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে