আজকে আমার মন ভালো নাই পর্ব-১৪+১৫

0
314

আজকে আমার মন ভালো নাই।।
নাহিদা সানজিদ।।

১৪.
প্রিয় অর্পা,
তোমাকে আজ একটা সত্য কথা বলে ফেলি। প্রিয় মানুষকে ধোঁয়াশায় রাখা কষ্টের। গোপন কথা মনে চেপে না রেখে ফরফর করে বলে দেবার জন্যই আমরা হন্য হয়ে নিজের মানুষ খুঁজে ফিরি। সেখানে এত বড় একটা ঘটনা কীভাবে চেপে রাখি? আমার দমবন্ধ লাগতে শুরু করেছে। ধরতে পারো অপরাধের বিবৃতি। একপাক্ষিক মনে করে কিছুটা সন্দেহ কোরো।

বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন একটা মেয়েকে আমি প্রচন্ডরকম ভালোবেসে ফেলি। মেয়েটা ছিলো ক্লাসের অন্যতম সুন্দরীদের একজন। সুতরাং কেন ভালোবাসলাম জিজ্ঞেস করে লজ্জা দেবেনা আশা করি। কিন্তু সমস্যা ছিলো তখন আমার বয়স ঊনিশ। চাকরিবাকরি নেই। আম্মা গালি-গালাজ করে বিয়ের পোকা বের করে দিলেন। আমার বাবা মেয়েটার হাত চাইতে গিয়েছিলেন তাদের দুয়ারে, বেকার ছেলের কাছে নাকি মেয়ে দেওয়া হয় না। আধুনিক যুগের নিয়ম। মেয়েটার সেবছরই বিয়ে হয়ে গেলো।

আমি অভিমানে বইয়ের সঙ্গে ঘর সংসার শুরু করলাম। আমার সহজ সরল সঙ্গী হলো হুমায়ুন আহমেদের একটি বিখ্যাত চরিত্র হিমু। হিমু-রূপা নিয়ে অনেক রোমান্টিসিজম এ যুগে প্রচলিত হলেও, আদতে হিমু ছিলো একা। আমার মধ্যে বৈরাগ্য চলে আসলো হিমুতে ডুবে থাকার কারণে। ঠিক করলাম, আমিও মহাপুরুষ হতে চাই। কিন্তু আমি হলদে পাঞ্জাবি পরে হাঁটবো না শহরের এমাথা থেকে ওমাথা। আমি হতে চেয়েছি ঘরকুনো। সাদা পাঞ্জাবি পড়ি শুভ্রতার প্রতীক হিসেবে, সবুজও পড়ি মাঝেমাঝে। আমার এই মহাপুরুষ হবার যাত্রা বেশিদিন টিকলো না। হিমুর বাবা হিমুকে মহাপুরুষ বানাতে চেয়েছিলেন, আমার বাবা নয়। আমার বাবা চেয়েছেন, আমি হই পৃথিবীর সহজ সরল ছেলে হই যে জগতের কুটিলতা নিয়ে তেমন ভাবে না। যার মন হবে শিমুল তুলার মতো নরম, অল্প দিনেই ভালোবেসে ফেলবে বাবার ঠিক করা পুত্রবধূকে। আমার ধারণা বাবা আমাকে খুব ভালোমতোই চেনেন। তার ষড়যন্ত্র সফল হয়েছে।

চিঠি আর বেশি বড় করলাম না। এই আধুনিক যুগে চিঠি দেওয়ায় আদিম গন্ধ ভাসে। আমি বিশ্বাস করি ভালোবাসা ঐশ্বরিক একটি বিষয়। আদম আলাইহিস সালাম একা বোধ করছিলেন বলে হাওয়া আলাইহাস সালামকে সৃষ্টি করা হয় তার বুকের পাঁজর থেকে। এর চেয়ে চমৎকার উদহারন এ মুহুর্তে মাথায় আসছে না। ইঞ্জিনিয়ারিং আমার জীবন শুকনো তক্তার মতো বানিয়ে ফেলেছে, আমি প্রায়ই ভাবি মরে যাই, তাই ভালো। এত জঞ্জাল আর সহ্য হয় না।

তখন আমি তোমার মুখ মনে করার চেষ্টা করি। তুমি আমার ভালো সময়ে বিরক্ত করতে থাকো, আর খারাপ সময়ে বলো, “ইব্রাহীম সাহেব, জীবনে কত কত বড় বড় ব্যাপার সামনে পড়ে আছে। আপনি ছোট্ট একটা ইঞ্জিনিয়ারিং এর ডিগ্রী নিয়ে মাথাব্যথা তুলে ফেলছেন? আপনি বরং এসব ছেড়ে চলে আসুন, আমরা কৃষিকাজ শুরু করি। এরচেয়ে চমৎকার জীবন আর হয় না। মানুষ কামলা বলে ডাকবে, ব্যাপারটা মাথায় রাখবেন। তাতে কী? ইঞ্জিনিয়ারদেরও আজকাল লোকে ‘ভাতে মরা’ বলে ডাকে।”
তোমার একই সঙ্গে কুযুক্তি এবং সুযুক্তির প্রেমে আমি আবারও পড়বো, সব ছেড়েছুড়ে চলে আসতে চাইবো।

হঠাৎ আমার খুব চিঠি লিখতে ইচ্ছা করেছে। তুমি কবে যেন একবার বলেছিলে, মন খারাপ হলে তুমি মন দিয়ে চিঠি লিখতে ভালোবাসো। আজকে আমার মন ভালো নেই একেবারেই। তোমাকে চিঠি লেখার ছাড়া মন ভালো করার আর কী উপায় হতে পারে? আরো হাজার হাজার উপায় থাকলেও আমি তোমাকেই লিখব, পরম নির্ভরতায় দিয়ে দিচ্ছি আমার সকল মন খারাপ বহনের ভার। স্বামী হিসেবে আমি মন্দই, তুমি সত্যি বলেছিলে।

শেষে একটা প্রশ্ন জুড়ে দিচ্ছি, পৃথিবীতে আমার প্রতিনিয়ত কত মানুষের সঙ্গে দেখা হচ্ছে, গল্প জমছে টুকরো টুকরো, বাড়ছে আমার আত্মজীবনীর দৈর্ঘ্য। তবুও আমার কাছে কেবল তোমার এবং আমার গল্পটুকুই গুরুত্বপূর্ণ কেন? অল্প কটা স্মৃতি নকশীকাঁথায় পুরোনো গৃহবধূদের মতো ফুটিয়ে রাখতে চাইছি বারংবার, যেন এইটুকুর জন্যই আমি আমার সারাটি জীবন অপেক্ষা করে ছিলাম। চিঠি বড় করব না করব না বলেও এত বড় হয়ে গেলো, স্বামী হিসেবে আমি কী মিথ্যেবাদীও?

ইতি,
তোমার মন্দ স্বামী।

**
আজ হঠাৎ একজন ম্যাম অর্পাকে দাঁড় করিয়ে বললেন, “চাকরি বাকরি করার কী কিছু ইচ্ছা আছে? নাকি স্বামীর ঘাড়ে বসে বসে খাওয়ার স্বপ্ন দেখছো?”
এভাবে বলার কারণ আছে। এবারের সিজিপিএ থ্রি পর্যন্ত আসেনি। পরপর ভালো রেজাল্ট করার কিছু নেতিবাচক দিক আছে। এটা তার মধ্যে একটা। লোকে ভেবে বসেই থাকে, সে কখনো খারাপ করতে পারবে না।
নতুন ফোন কেনার টাকা নেই। হয়ত রুমিও তাগিদ অনুভব করে না কথা বলার। কেমন যেন শীতল সম্পর্ক যাচ্ছে তাদের। অজান্তেই ভারী মন খারাপ হতে শুরু করলো। ক্যান্টিনের চেয়ার টেবিলে বসে তিন টাকায় কেনা একটা নীল রঙা কাগজে চিঠি লিখতে শুরু করলো। অনেকক্ষণ ভেবেও কোনো সম্বোধন খুঁজে পেলো না। শেষে সম্বোধন ছাড়াই লিখলো –

“আজকে আমার একটি অহেতুক কারণে মন খারাপ। আমি বেশিক্ষণ মন খারাপ করে থাকতে পারি না। মন খারাপ টানা জমিয়ে রাখতে নেই। বাতাসে উড়িয়ে দিতে হয়। আমি তাই একটা চিঠি লিখছি। আমার চিঠি লেখার মানুষের খুব অভাব, একান্ত নিরুপায় হয়ে আপনাকে লিখলাম। আবার অন্যকিছু ভাববেন না। আপনি স্বামী হিসেবে অত্যন্ত মন্দ প্রকৃতির মানুষ, আপনার অভাববোধ করার তো প্রশ্নই আসে না। যাইহোক, কাজের কথায় আসি। ইদানীং আমার মনে হচ্ছে,

আমাদের সবকিছু কেমন যেন বাধা ধরা নিয়মই। কেউ বলে, ধর্ম নারীদের আটকে রেখেছে। কিন্তু, আমার প্রশ্ন হলো, তারা নিজেরা কী আটকে রাখেনি? আমার স্বামী যদি আমার পূর্ণ দেখভাল করে, আমার যদি একটা ব্যস্ত সংসার থাকে, আমি কেন নিজের ওপর ডাবল চাপ নিয়ে কাজ করতে যাবো? ইটস টোটালি মাই চয়েস। হু আর ইউ টু জাজ মি? অর্থনীতি এত এত মতবাদ, একেকজনের একেক মত, তার আবার সমালোচনা। তার মানে কী? তারা কেউই পুরোপুরি সঠিক নয়। আসলে, আমার মনে হয় ভুল ভ্রান্তি ছাড়া মানুষ হতেই পারে না। আমরা কেউই নিজেদের চিন্তা ভাবনার একশ পার্সেন্ট ভরসা দিতে পারিনা, এক্সেপশন ইজ অনলি আওয়ার ক্রিয়েটর,আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা, যদি আমরা বিশ্বাসী শিবিরের কেউ হয়ে থাকি। আপনারও মনে হয় একজন গৃহিণী মা কিংবা স্ত্রী ঘরে কেবল বসেই থাকে? তাহলে টাকা খরচ করে বুয়া কেন রাখা হয়? মায়ার একটা দরদাম করুন তো দেখি! বলে দিন, এত এত দামে যত্ন পাওয়া যায়, ভালোবাসা পাওয়া যায়। যে ভালোবাসা দাম দিয়ে কেনা, সে কী আদোও ভালোবাসা?

পুঁজিবাদ অর্থনীতি পড়তে গিয়ে ক্লাস নাইনেই আমার অর্থনীতির প্রতি একটা বিরূপ ধারণা চলে এসেছিলো। আমাদের খাতায় দাগাতে হতো, মায়ের কাজ একটি অ-অর্থনৈতিক কাজ, বাজারমূল্য নেই। একটাবার ভেবেছেন? যদি মায়েরা বাসায় না থাকতো, স্কুল থেকে ফিরে এত এত গল্প আমি কাকে শোনাতাম? আমার ছোট্ট মনের অনর্থক বলে যাওয়া অনর্গল সব আকথা-কুকথা। পৃথিবীতে সবকিছু মানুষের চিন্তায় মাপলে আমরা নিজেদের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলবো। জগতে সবকিছু নিক্তি দিয়ে হিসাব কষতে নেই।

এই যেমন ধরুন, আমি আর আপনি? আপনি আমায় বিয়ে না করলেও পারতেন। একটা বড় অঙ্কের আয় হয়। একা একাই আয়েশে ঘুরতে পারতেন। বউ বাচ্চার ভার নিতে হতো না। জমাতে পারতেন। তবুও আমি থেকে আমরা হলাম। চোখ বন্ধ করে ধর্মীয় বিধান পালন। বিশ্বাস করছি আরশে আজিমে থাকা কাউকে। আমরা সারাদিন কথা বলছি না। একে অপরের উপর বিরক্ত থাকি। মাঝেমাঝে মনে হয়, এত খারাপ মানুষ আমি আমার জীবনে দেখিনি। তবুও ভাবছি, আমার কেউ একজন আছে। তিন অক্ষরের একটা শব্দ “কবুল” বলে ফেলার পরপর জীবন উল্টেপাল্টে যাচ্ছে, তবুও মায়া হচ্ছে না। মনে হচ্ছে, যা হচ্ছে ভালো।

এই যে অর্থনীতির হিসাব নিকাশের বাইরে গিয়ে আমরা একে অপরকে নিয়ে ভাবছি, এর চেয়ে প্রশান্তির বিষয় সম্ভবত পৃথিবীতে নেই।
“আমি আপনাকে ভালোবাসি” বলাটা কী খুব গুরুত্বপূর্ণ? নিরবতার আবেদন, মনে মনে কথোপকথনের স্নিগ্ধতা, প্রকাশ করলে থাকে না বলেই আমার ধারণা।

শীঘ্রই বাসায় আসবেন। আমাকে কখনো ভুল করেও “নীরা” বলে ডাকবেন না। আমি অর্পা। পৃথিবীর সবচেয়ে অসুন্দর একজন রমণী। আমার চোখের পানে চেয়ে নির্দ্বিধায় মিথ্যা বলা যায়।
ইতি,
ভুলবশত, আপনার বউ।

প্রথমটুকুতে ম্যাডামের উপর রাগগুলো ঝেড়েছে সে। শেষটুকুতে তার রাগের মোড় ঘুরে অন্যদিকে চলে এসেছে। কোনদিকে সে ঠিক জানেনা। বলতে ইচ্ছা হয়েছে, তাই বলেছে। রিভিশন দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলো না। তখন আবার ইচ্ছা করবে, চিঠি কুটিকুটি করে ডাস্টবিনে ফেলে দিতে।

চিঠি পোস্ট করে এসে হেলেদুলে সড়ক ধরে হাঁটতে লাগলো। কয়েকবার সে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলো। এমনও তো হতে পারে রুমি তার পাশাপাশি হাঁটছে, বিনা নোটিশে চলে এলো। অর্পা আবদার করলো রিকশায় ঘোরার। লোকাল বইয়ের দোকানগুলো দেখে দামদামি করে কয়েকটি বই নিলো। আইসক্রিম খেতে খেতে বাসায় ফিরলো, সবার জন্য নিলো শ খানেক টাকার ঝালমুড়ি। মানুষ কল্পনায় সুন্দর করে বাঁচে। ভাবতে মন্দ লাগে না। বিবাহিত জীবনের কতদিন পেরিয়ে গেলো দিনক্ষণ গুনে রাখা হয়নি। আমাদের একসাথে কতকিছু করা বাকি —র তালিকা অপ্রতিরোধ্য হারে বাড়ছে বই কমছে না।

সে ভাবছে একটা লিস্ট করে ফেলবে, “কোন কোন জায়গায় মা আমাকে বিয়ের পর যেতে বলেছিলেন” শিরোনামে।
রুমিকে পড়ে শোনাবে। মারওয়া টিপিক্যাল ননদের নকল করে বলবে, “যা ঘুরেছেন বিয়ের আগে। ধেই ধেই করে মুখ উঠিয়ে ঘুরতে চলে যাওয়া, এ বাড়ির নিয়ম কানুনে নেই।”
অর্পা হেসে বলবে, “তাহলে আমাকে এবার নিয়ম সংশোধন করতে দাও। সবাই মিলে ধেইধেই করে যাবো, তোমাকে বিয়ে দিয়ে তোমার স্বামীকে সহ নিয়ে যাবো।”
মারওয়া ঠোঁট বাঁকাবে তার চিরায়ত নিয়ম মেনেই, বিবাহের মতো মরণ ফাঁদে সে জড়াতে চায় না।

চলবে ~

আজকে আমার মন ভালো নাই।।
নাহিদা সানজিদ।।

১৫.
“কীইইই! ৩৪ বার রিজেক্ট! তুই বলতি, একেবারে হাফ সেঞ্চুরি শেষ করে আসুন। এরপর দেখা যাবে।”

সাফা-মারওয়া ব্যাগপত্র গুছিয়ে অর্পার ঘরে শিফট করেছে। তাদের কিছু জরুরি বিষয়ে শলাপরামর্শ করা দরকার। আর এজন্য একজন বিবাহিত রমণী উত্তম সমাধান। সাফা কিছু কিছু ঘটনা বললো আর কিছু এড়িয়ে গেলো সন্তর্পণে। মারওয়ার কথা শুনে অর্পা হেসে ফেললো। সে সাফার মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছে। সিঁথি কাটতে কাটতে বলল, “আমার মনে হচ্ছিলো ছেলেটা খুব সাদাসিধা, কিন্তু বোকা না।”
মারওয়া ভ্রু কুঁচকে চেয়ে রইলো। সাফার দাদী ছেলে একদমই পছন্দ করেননি। তিনি প্রথমবারেই বলে বসলেন,
“না না। ছেলে কালো হইলে সমস্যা। নাতিপুতিও কালাছালা হবে। আমার নাতিনের কী ছেলের আকাল নাকি?”

বিয়েকে পবিত্র জিনিস বলা হলেও আদতে তা যে কদর্য ব্যাপার দ্বারা পরিপূর্ণ সাফার বুঝতে খানিকটা সময় লাগলো। কেউ যে কাউকে ভালো লাগলেই চট করে বিয়ে করে ফেলতে পারে না তা কখনো তার মাথায় আসেনি। পারিবারিক মহলে দুই পক্ষের সমস্ত খুঁত মেলে ধরে দর কষাকষিতে বিয়ের পবিত্রতা কোথায় মিঁইয়ে যায় মানুষ বুঝতেই পারে না। যতবারই জহিরের প্রসঙ্গ উঠছে, ততবারই স্মরণ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে তার গায়ের রঙ। সাফার খুব খারাপ লাগছে লোকটার জন্য।

কেউ কী নিজেকে নিজে তৈরি করেছে? আর কোথাকার কে সাদাকে সুন্দর আর কালোকে অসুন্দরের মানদণ্ড হিসেবে সেট করলো? তার মানদণ্ডই বা কেন সকলকে মেনে চলতে হবে? শরীরে কেবল মেলানিনের উপস্হিতি অনুপস্থিতি দুটো মানুষকে এভাবে কেন আলাদা করে দেয়?
অর্পা সাফার বিমর্ষ মুখ খেয়াল করে মারওয়াকে ইশারায় বললো যেন কিছু না বলে আর। এখন বর্ষাকাল চলছে। যখন তখন বৃষ্টি। সাফা কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে গেল। কি যেন ভাবছে একমনে। মারওয়া পড়ছে। দিনদিন পড়াশোনার প্রতি সিরিয়াস হচ্ছে সে। অর্পা সাফার কাঁথার ভেতর ঢুকে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো এক হাতে, “সাফা.?”
“হুম?”
“তোমার কী ছেলেটাকে খুব পছন্দ?”
সাফা কিছু বলল না। অর্পা আবার বলল, “তোমার যদি ওকে খুব বেশি ভালো লাগে, তাহলে আমি বাবা-মার সঙ্গে কথা বলব। ছেলে ভালো হলে তো কোনো ঝামেলাই নেই। আমরা খোঁজখবর নিয়ে দেখব।”

**
রূমীদের অনার্স প্রায় শেষের দিকে। আজকে একটা বিশেষ দিন। জুমা বার। মিন্টু আজকে বিয়ে করতে যাচ্ছে তার সেই কথায় কথায় বিচ্ছেদ করে ফেলা প্রেমিকাকে। একজন পুরুষবাদী ও একজন কট্টর নারীবাদীর সংসার কেমন হবে তাই দেখার বিষয়। রূমী অবশ্য কোর্ট ম্যারেজের পক্ষপাতী না। বাবা-মাকে মানিয়ে দিতে বলায় মিন্টু তাকে গালি দিয়েছে। মিন্টুর প্রেমিকার যে জায়গায় বিয়ে হচ্ছিলো সে ছেলে মদ্যপ, অতি বড়লোকের উগ্র ছেলে। আপাতত তাই তার মদ্যপের চেয়ে সিগারেটখোর জামাই বেশি শ্রেয় মনে হচ্ছে। মিন্টুর প্রেমিকার নাম প্রিয়া। আপাতত প্রিয়া আর সে একটা রেঁস্তোরায় বসে আছে।

রূমী বারবার ফোন দিয়ে বিরক্ত করছে,
“হ্যালো বন্ধু! বিয়ে শাদী কইরো না। নারী একটা আজাব। তুমি তো জানো মিয়া।”
মিন্টুর কাছে টাকা কম। সে ফিসফিস করে বলল, “এই শালা! কয়ডা টাকা বিকাশে দে। আর্জেন্ট।”
রূমী হেসে ফেলল, কিন্তু বুঝতে দিলো না, “না মামা। কিয়া কও এডি? বেডি মানুষেরে খাওয়ানোর জন্য টাকা দিমু?”
মিন্টু নিজের কথা বলার স্বাধীনতা রদ করছে, প্রিয়া গালিগালাজ করা একেবারেই পছন্দ করে না। রাগ করে পরে বিয়ে না করলে সমস্যা।

ওর ফোনটা আবার বেজে উঠেছে। রূমী। দাঁতে দাঁত চেপে সে ফোন রিসিভ করলো। রূমী গম্ভীর গলায় বলছে, “মামা ফ্যামেলি প্ল্যানিং কিন্তু বুঝে শুনে করতে হইবো। বাচ্চা হবে জোড়ায় জোড়ায়। নয়ত ভাগ বাটোয়ারায় অসুবিধা হবে। একটা তুই পালবি, আরেকটা ভাবী। সমান সমান কন্ট্রিবিউশান। আবার, একটা ছেলে একটা মেয়ে হলে সমস্যা। মেয়েটা ভাবীরে দেওয়ার চেষ্টা করবি। মেয়েদের কসমেটিকসের যে দাম! ফাঁইসা যাবি। আর পোলা তোর মতো হইলে তো মাশাল্লাহ! একটা গেঞ্জি দিয়ে বছর কাবার।”
মিন্টু চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, “তুই ফোন রাখবি?”
রূমী সরল কন্ঠে বলল, “এজন্য বলে মানুষের উপকার করতে নাই। শোন! বিল তুই অর্ধেক দিবি। বেডিদের খাওয়াইয়া দুই পয়সার দাম নেই, কয়দিন পরে দেখবি বলব, এই লোককে বিয়ে করাই আমার ভুল হয়েছে।”
ভাইব্রেট হয়ে ফোন কেটে গেলো আরেক দফা। রূমী পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছে। মিন্টু ফোন সাইলেন্ট করে ফেলেছে।

রূমী এসেছিলো চা খেতে। একটা ফুলের দোকানে ওর চোখ আটকে গেলো। বালতিতে রাখা তাজা গোলাপ। পথশিশুরা হয়ত রাস্তায় বিক্রি করতে বেরোবে। বেলী ফুলের মালা ঝুলছে একপাশে। আচ্ছা, অর্পা কী ফুল পছন্দ করে? ঠিক তখুনি ফোনটা বাজলো। বাবা কল করেছেন, “তুই কোথায়?”
— “এইতো আছি, কেন?”
— “যেখানে আছিস দাঁড়া। আমরা আসতেছি।”
— “আমরা মানে?”
বাবা ফোন কাটলেন। রূমী বিভ্রান্ত মুখে দাঁড়িয়ে রইলো। বাবা আসছেন, সঙ্গে একটা মেয়ে। অর্পা! রূমী কিছুক্ষণ অবাক হয়ে চেয়ে রইল। অর্পা ওর চোখের সামনে হাত নাড়ছে। হাসিখুশি কন্ঠে বলে, “কী হলো?”
রূমীর বাবা ছেলের কাঁধে চাপড় দিয়ে বললেন, “বউকে দেখে রাখিস। কাজে যাচ্ছি। মেয়েটা জোর করে চলে এলো।”
রূমীর বিশ্বাস করতে অনেকটা সময় লাগলো, এরপর বলল, “তুমি কী মনে করে এলে?”
অর্পা আবার হেসে ফেললো। একটা মানুষ এত কী করে হাসতে পারে? অর্পা হাসি চেপে স্বাভাবিক হওয়ার ভান করলো, “এমনি। বউকে দেখতে আসছেন না। ভাবলাম, নিয়ম উল্টে ফেলি। আজকাল সমান অধিকারের যুগ।”

রূমী এতক্ষণ চেয়ে থাকা বেলীর মালার একটা ব্যবস্হা করতে পারলো। দুটো মালা কিনলো সে। আর পাঁচটা গোলাপ। একটা মালা অর্পার হাতে পেঁচিয়ে দিতে লাগলো,“ভালো সময়ে এসেছো। চলো এক জায়গায় নিয়ে যাবো তোমাকে। ফ্রি-তে একটা সিনেমা দেখে চলে আসবে। হালাল সিনেমা।“
এসময়ই মিন্টু কল দিয়ে জানালো, ও মালা আনতে ভুলে গেছে। বিয়ের পর মালাবদলের জন্য তার এক্ষুনি দুটো মালা দরকার। নিয়ে যেন কাজী অফিসে চলে আসে। রূমী সম্মতি না জানিয়ে কুটিল গলায় বলল, “দুটো মালা কেন নিতে হবে? তোরটা তুই নিবি। বউয়ের টা বউ। সমান সমান অধিকার। নারীর সঙ্গে তোর এত দ্রুত হেরে গেলে কীভাবে হবে? সারাজীবন পড়ে আছে সামনে।”
মিন্টু তাকে গালি দিয়ে ফোন রাখলো। রূমী হাসি চেপে আবারও দুটো মালা কিনলো। অর্পার হাতে দিয়ে বলল, “চলো, বিয়ে খাবো।”
অর্পাও হাসছে, “এটা কী সেই মন্তুবাবা?”
রূমী মাথা নাড়ালো।

***
ওদের বিয়েটা হলো একেবারে সাদামাটা। প্রিয়া একটা জামদানি শাড়ি পরে এসেছে। মিন্টুর গায়ে রূমীর সাদা পাঞ্জাবি। বিয়ে শুরু হবার আগে রূমী ওর কানে ফিসফিসিয়ে বলল, “দেখিস, যত টাকা কাবিন, ততটাকা যৌতুক। নো ঠগবাজি। ফট করে দেখবি একদিন নারী নির্যাতনের মামলা খেয়ে বসে আছিস।”
অর্পা ওকে টেনে দূরে সরিয়ে আনলো। বিয়ের আগেই অলক্ষুণে কথা বলতে নেই। যা হয়েছে হয়েছে। নবদম্পতিকে তারা শুভেচ্ছা জানালো। স্বাক্ষীও হলো। আসার আগে রুম সাজিয়ে এসেছিলো অর্পা। ওদের বন্ধুদের ভাড়া করা একটা ব্যাচেলর বাসা। আজকের জন্য খালি করা হয়েছে।

প্রিয়া সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় মিন্টু হাত বাড়িয়ে দিলো। শাড়ি পড়ে ওর হাঁটতে অসুবিধা হচ্ছে। হিল জুতায় ফোসকা পড়ে যাচ্ছে। মিন্টু ধমকে বলল, “এসব জুতা পড়ারই বা কী দরকার?”
ফুটপাত থেকে একটা নরমাল জুতা নেওয়া হলো। অর্পা ওদের একা ছেড়ে দেওয়ার জন্য তাগাদা দিচ্ছে। মিন্টুর গানের গলা ভালো। ভরাট কন্ঠস্বর। সে খালি গলায় গাইলো,

“Well, I found a girl,beautiful and sweet.
Oh, I never knew you were the someone,
Waiting for me…
Cause, We were just kids when we fall in love,
Not knowing it was,
I’ll not give you up this time…”

রূমী যাওয়ার আগে ওকে আরেকবার কানে কানে বলে গেল, “ভাবীর জুতা ভাবী কিনবে। হুদাই টাকাডা খরচ করলি। যাইহোক সময়মতো টাকাটা দিয়ে দিস। মেয়ে হলে মাফ করে দিতাম।”
চোখ টিপে চলে এলো। অর্পা ওকে টেনে নিয়ে গিয়ে কৃত্রিম রাগ নিয়ে বলল, “মেয়ে হলে মাফ করে দিতাম মানে?”
রূমী ঠোঁটে আঙুল চেপে ধরলো, ”নো কমেন্টস। চলো বউ, ঘুরে আসি অজানাতে।”
বলে ওর কাঁধে হাত রাখলো। অর্পা কাঁধ থেকে হাত ঝাড়িয়ে রাগ করে বলল, “সব পুরুষ মানুষই এক। আমার আগেই বোঝা উচিত ছিলো।”

বলে সে একা একা হাঁটতে লাগলো। এই জায়গায় তার প্রথম আসা। তার আসলে তেমন রাগ লাগছে না। এমনিই মনে হচ্ছে, অনেকদিন রাগারাগি হয় না। ঝগড়াঝাঁটি করি কিছুক্ষণ। অদ্ভুত ক্রেভিংস। রূমী ওকে মানানোর চেষ্টা করছে। শ খানেকবার “সরি” ও বলা শেষ। অর্পা হাসি চেপে রাখছে কষ্ট করে। আজকের দিনটা অনেক প্রতিক্ষার ছিলো তার।

***
আজকের আবহাওয়ার সংবাদ বলছে, দিনটা রৌদ্রজ্জ্বল থাকবে। It’s a sunny day! রূমী নোটিফিকেশন কেটে একটা রিকশা ডাকলো। ভাড়া নিয়ে দরদামের ক্যাঁচালে গেল না। একদিন আগেও তার মন প্রচন্ড খারাপ ছিল। সব ছেড়ে ছুঁড়ে চলে যেতে মন চাইছিলো প্রিয়তমার শহরে। প্রিয়তমা আজ নিজেই এসে হাজির। অর্পার হাত ধরে ওঠালো। জীবনটা নদীর মতো টলমল নিঃশব্দে চলে যাচ্ছে। অর্পার রাগ ভাঙানোর মতো বড় বড় বোঝা প্রতিদিন বইতে হয় না। ও মাঝেমাঝে এও ভুলে যায় কি নিয়ে রাগ করেছিলো। এটা কিনব, ওটা কিনে দেন বলে মাথা খায়, কিন্তু দোকানের সামনে গিয়ে তাও ভুলে যায়। অর্পা এখন বলছে,
— “প্রেমের মতো আনরিয়েলিস্টিক ব্যাপার আর নেই, বুঝলেন?”
রূমী মাথা নাড়িয়ে বলল, “না, আপনিই বুঝিয়ে দিন, অর্পা ম্যাডাম।”
অর্পা হেসে ফেললো রিমঝিম বৃষ্টির মতো। ও হাসতে শুরু করলে অনেকটা সময় ধরে হাসতে থাকে। চোখে পানি এসে যায়। এত ভালো লাগে!

অর্পা হাসি থামায় খুব কষ্টে, “না। এ যেমন ধরুন, প্রিয়া আপু আজকে কী সুন্দর সেজেগুজে এসেছেন! বিয়ে করলেন! কদিন পর এই শাড়ির রঙ মলিন হবে। কাজের চাপে গুছিয়ে পরার মতো শখ তিনি করতে যাবেন না। তখনই চোখ থেকে প্রেমের চশমা খুলে যায় সবার। এতদিনের পরিপাটির প্রেমিকা চটচটে মুখ নিয়ে দরজা খুললে মেজাজ বিগড়ে যাবে। ছেলেদের কী বিশ্বাস আছে?”
রূমী ভ্রু কুঁচকে তাকালো। রাগ করেছে নাকি বোঝা যাচ্ছে না।
—- “তোমার সমস্যাটা কী বলো? আরেকজনের সংসারের মাথাব্যথা নিয়ে নিজের সংসারে অশান্তি করছো!”
অর্পা মাথা দুদিকে নাড়িয়ে মুখ টিপে হাসলো। এরপর রূমীর এক হাত জড়িয়ে ওর কাঁধে মাথা এলিয়ে দিলো, বলল,
—- “আচ্ছা বাদ দেন। সবাই সুখে থাকুক।”

অর্পার হাতে পোড়া দাগ। রঙচটা চুড়ির ফাঁক গলে সে দাগ উঁকি দিচ্ছে অস্পষ্টভাবে। রূমী ওর হাতটা মেলে ধরলো, “কী হয়েছে এখানে?”
অর্পা চোখ টিপলো, “স্বামী সেবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। দাগ না থাকলে তো বিশ্বাস করতেন না। হাত ফাত পুড়িয়ে পুরুষজাতির জন্য জীবন কুরবান করে দিচ্ছি। এদিকে এদের আরো এক হালি বউ চাই।”
রূমী কান ধরে নাটকীয় গলায় বলল, “আমার অন্যায় হয়েছে।”

ঠিক তখুনি ঝমঝম করে বৃষ্টি নামলো। রূমী হুড তুলতে চাইলেও অর্পা দিলো না। সে মাথা এলিয়ে বৃষ্টির শব্দ শুনতে লাগলো। রূমী শান্ত হয়ে বসে থাকলো সারাটি দুপুর। ওরা কোথায় যাচ্ছে ঠিক নেই। অর্পাকে একবার ক্যাম্পাস ঘুরিয়ে দেখালে ভালো হয়। কিন্তু একি! এই মেয়ে ঘুমিয়ে আছে নিরালায়। খুব ভোরে রওনা দেয়ায় হয়ত ঘুমাতে পারেনি ঠিকঠাক। কেমন ভেজা ভেজা ভালোলাগার আবেশে জড়িয়ে আছে সব! সে ভাড়া মিটিয়ে বলল, “মামা, আমরা কিছুক্ষণ বসি?”
মামা রাজি হলেন।

অর্পার যখন ঘুম ভাঙলো, তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল। ওরা নেমে গেলো পিচ ঢালা রাস্তায়। বর্ষাকাল এখন। মাঝের কয়েকটা গাছে মাথা নেড়ে সায় দিচ্ছে কদমফুল। রূমী ওকে প্রতিটি ভবন ঘুরিয়ে দেখালো। ফ্রেশ হবার জন্য নিয়ে গেলো মেয়েদের হলে। ওদের সঙ্গেরই একটা মেয়ে বেশ আগ্রহ করে ভেতরে নিয়ে গেলো অর্পাকে। মেয়েটা বাকপটু। কয়েকটা মেয়ে ঘুরেফিরে দেখছে, কিছুক্ষণ পরই রূমীর বউ দেখতে কেমন তা নিয়ে বসবে সমালোচনার আসর।

****
“আপনিও আমাদের সঙ্গে চলুন? সাফার জন্য তো ছেলে দেখছে। আমার মনে হচ্ছে খুব তাড়াতাড়িই বিয়েটা হয়ে যাবে। ছেলে ভালোই।”
রূমী মাথা নাড়িয়ে বলল, “না, শুক্রবার যাব। আমার অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়া বাকি।”
অর্পা আর কিছু বলল না। বাবা এসে গেছেন। একটু পর ট্রেন ছেড়ে যাবে স্টেশন। রূমী কাছের দোকান থেকে ওকে কিছু খাবার কিনে দিলো। অর্পা ট্রেনে পা দিয়ে পেছন ফিরে বলল, “এবার তাহলে যাই। হ্যাঁ?”
রূমী হেসে ফেলল, “না। বলতে হয়, আসি।”
অর্পাও হেসে ফেললো। মায়া মায়া চোখগুলো মেলে শান্ত গলায় বলল, “আপনি চলে যান। ট্রেন তো এখনই ছেড়ে দেবে।”
রূমী তবুও দাঁড়িয়ে থাকলো। ওর বুক ট্রেনের শব্দের মতো ধুকপুক করে কাঁপছে। খরা বয়ে যাওয়া জীবনে অর্পা এক পশলা বৃষ্টির মতো কিছুক্ষণ ছুঁয়ে চলে যাচ্ছে। বিয়ের পরও যেন মাগরিব বাদ তার ঘরে ফেরার দায় শতভাগ।

ট্রেন ধীর গতিতে চলতে শুরু করেছে। রূমীর মনে হলো ওর হৃদয় থেকে কি যেন আলাদা করে ফেলা হলো। সে প্রাণপনে দৌঁড়াতে লাগলো ট্রেনের সঙ্গে। অর্পা ওকে জানালা দিয়ে না করছে। সম্ভবত ওর চোখে পানি। গতির জন্য বোঝা যায় না। অর্পা সবসময় নিজেকে অদ্ভুত সাজানোর চেষ্টা করলেও রূমী জানে অর্পার মন আদতে শরতের কাশফুলের মতো নরম। অর্পা কাঁদে লুকিয়ে। ওকে কে যেন বলেছে, কান্না দূর্বলতা প্রকাশ করে। তাই সে শক্ত মূর্তির মতো আজব এক চাদরে ঢেকে রাখে রোজ। রূমী এই চাদর উপড়ে ফেললো কি করে জানেনা। মাঝেমাঝে মানুষকে আমরা জেনে ফেলি অবচেতনে। হৃদয়ে হৃদয়ে টেলিফোনে কথা বলার কোনো সিস্টেম থাকতে পারে।

ট্রেনটা ছেড়ে চলে যায় সময়ের মতো। তাদের মানুষের মতো পিছুটান, আবেগ কিচ্ছু নেই। রূমী সে জায়গায় হাঁটু মুড়ে বসে রইলো সারাটি সন্ধ্যা। বিয়ে করা বউয়ের জন্য এত পাগলামি করছে জানলে মিন্টু ওকে ক্ষেপাবে। বিনা শর্তে পাশে থেকে যাওয়া মানুষের দাম কী আর ও বুঝবে?

চলবে ~

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে