‘আকাশ তীরে আপন সুর’
|পর্ব ০৯|
লাবিবা ওয়াহিদ
সেদিনের পর থেকে প্রণয়ার দিনগুলো বইয়ের মধ্যে ডুবে থেকেই কাটছে। বই একেক করে শেষ করার পর তার বইয়ের প্রতি আরও নেশা কাজ করে। বই পড়া রীতিমতো প্রণয়ার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। প্রিয় মানুষের দেওয়া প্রিয় অভ্যাস হারাতে দেয় কী করে? তাইতো নুহাশ সাহেবের কাছে গিয়েও বলল তার আরও বই চাই।
নুহাশ সাহেব মেয়ের চাওয়ায় ভীষণ খুশি হলেন যেমন, তেমনই নির্মলের প্রতি তার সন্তুষ্টি আরও যেন বেড়ে যায়। শুনেছেন নির্মলই নাকি উপন্যাসের বই তাঁর মেয়েকে উপহার দিয়েছিল। নুহাশ সাহেব এতে হেসে জানান বইয়ের লিষ্ট দিতে, উনি আনিয়ে দিবেন।
সে কথা শুনে প্রণয়ার মুখ-চোখে আনন্দাভাব ফুটে ওঠে। সেই আনন্দ নুহাশ সাহেব চোখ জুড়িয়ে দেখেন। মেয়ে যে সারাদিন একা শুয়ে বসে কাটান সেটা নুহাশ সাহেব খুব করে বুঝেন। এ নিয়ে বেশ চিন্তিতও ছিলেন তিনি। আদরের মেয়েটা একাকিত্বে না জানি ভুল পথে চলে যায়। যদিও তিনি প্রণয়াকে চিনেন, তবুও। বাবা-মায়ের সন্তানকে ঘিরে দুশ্চিন্তা থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। আর এই মুহূর্তে নির্মলই তাকে স্বস্তিটা দিলো।
প্রণয়া চিন্তা করছিল, সে বইয়ের যুগে নতুন। তার জানা নেই, কোন বই ভালো? পড়লে স্বস্তি দিবে? সে তো এসবের কিছুই জানে না। তাই ভাবলো এবারও নির্মলের পছন্দে বই কিনবে।
বিকালে প্রণয়া ঝুল বারান্দায় পাটি বিছিয়ে শুয়ে আছে। দুই হাতে মেলে ধরে আছে একটি বই। গোটা গোটা বাংলা অক্ষর পড়ার ফাঁকে আনমনে আকাশের পানে চাইছে। এই মুহূর্তে সে যেই বইটা পড়ছে তার একতরফা প্রেমের কাহিনীটা প্রায় প্রণয়ার মতোই। তবে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে গল্পের নারী চরিত্রটা তার ভালোবাসাকে পায়নি। প্রকাশই করতে পারেনি, তার আগেই ভালোবাসার মানুষটা অন্য একজনের ভাগ্যে লিখে গেছে। এটা পড়ার পর প্রণয়ার ভেতরটা বারংবার কেমন মুঁচড়ে উঠছিল, ক্ষণে ক্ষণে নাক টানতে শুরু করে দেয়। অজান্তেই চোখের কোণে অশ্রু জমে যায়। তার মনে হচ্ছে যেন মেয়েটার জায়গায় সে আর ছেলেটা নির্মল।
এই প্রথম বুকভরা হাহাকার, না পাওয়ার ভয় প্রণয়া অনুভব করলো। এতদিন যাবৎ শুধু ভালোবাসাটাই বুঝেছে, কিন্তু আগামী ভবিষ্যৎ যে কতটা কঠিন হতে চলেছে সেটা প্রণয়া ভাবতে চাইছে না। ছোটো ছোটো সুখগুলো হারিয়ে ফেলার কথা ভাবলেও তার দম বন্ধ হয়ে আসে। আচ্ছা, নির্মলের দিক থেকে সাড়া আসলে কী খুব ক্ষতি হতো?
সেদিন অত্যন্ত মন খারাপের কারণে নির্মলের সামনে অবধি গেল না সে। রুমের লাইট বন্ধ করে অন্ধকারে চুপ করে শুয়ে রইলো। বাইরে থেকে যখন প্লাবনের সঙ্গে নির্মলের কণ্ঠস্বর ভেসে আসত প্রণয়ার মন চাইত ছুটে বাইরে যেতে৷ একপলকের জন্য নির্মলকে দেখা জরুরি। কিন্তু আজকের এই জরুরি অনুভূতিকে সে দাঁতে দাঁত চেপে দমিয়ে রাখল।
পরেরদিন নিত্যদিনের মতো করেই নাস্তার টেবিলে বসেছে সবাই। প্লাবনের চোখ তখনো ঘুমে ভার। ফাহিমা জোর করে উঠিয়েছে। প্লাবন এতে চরম বিরক্ত। আজ তার স্কুলে যাওয়ার একদমই নিয়্যত নেই। আজ একটা পরীক্ষা আছে স্কুলে, ক্লাস টেস্ট। ক্লাস টেস্টের নাম শুনলেই যেন তার গায়ে জ্বর আসে। তাই সে যেকোনো ভাবেই মাকে ইনিয়ে বিনিয়ে রাজি করাতে চেয়েছিল। কিন্তু তার মা সুঁচের ন্যায় সোজা। তাকে টলানো সহজ নয়। তবুও আজ সে হাল ছাড়বে না ভেবে নেয়।
নুহাশ সাহেব খেতে খেতে উষ্কখুষ্ক প্লাবনকে পরখ করে নিলেন। ভেবে-চিন্তে বললেন,
–“কী ব্যাপার প্লাবন? স্কুলের পোশাক পরোনি কেন?”
প্লাবনের কিছু বলার আগেই ফাহিমা বললেন,
–“ছাড়েন ওকে। এই ছেলের সবসময় যত বাহানা!”
নুহাশ সাহেব চুপ থাকলেন। প্লাবন বলল,
–“বাবা শোনো, আমি কিন্তু এখন মামার বাসায় যেতে চাই না। রোজ নির্মল ভাইয়ার কাছে পড়ছি। তাহলে আমি একদিন স্কুলে না গেলে কী হয়? রোজ রোজ এত পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে স্কুল যেতে ভালো লাগে না বাবা। আজকে যাব না, মাকে বলো না!”
নুহাশ সাহেব ছেলের দিকে তাকালেন। প্লাবন এক বুক আশা দিয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে। নুহাশ সাহেব খাবার চিবুতে চিবুতে বললেন,
–“আচ্ছা, আজ যাওয়া লাগবে না। ফাহিমা, ওকে আর জোর করিও না আজ। এছাড়া নির্মলও দুদিন পড়াতে আসবে না।”
নির্মলের কথা শুনে প্রণয়ার গলায় খাবার আটকে গেল। কোনোরকমে গ্লাসভর্তি পানি খেয়ে নিল সে। ফাহিমা অবাক কণ্ঠে বললেন,
–“কেন আসবে না?”
প্রণয়াও একই ভাবে কৌতুহলী। নুহাশ সাহেব বললেন,
–“বাজারের কাছাকাছি একটা জমি আছে না একটা? ওটা তো অনেকদিনই খালি পড়েছিল। বিক্রি করব করব করে আর করা হয়ে উঠছিল না। ওটা নির্মল নিবে বলল।”
ফাহিমার অবাকের সুর পালটালো না। বললেন,
–“তাহলে সুনামগঞ্জ গেছে কেন?”
–“দোকান একটা আর একটা জমি বিক্রি করবে, সেসব ঝামেলা আর কাগজপত্র গোছাতেই গিয়েছে। সেখান থেকে সব ঝামেলা মিটিয়েই এখানে জমি কেনার কাগজপত্রে হাত দিবে।”
ফাহিমা বললেন,
–“হোক তাহলে সব ধীরে-সুস্থে। ছেলেটা অল্প বয়সে অনেক দুঃখ সয়েছে। এছাড়াও নির্মল এখন বিয়ের উপযোগী। পাত্রীপক্ষ তো আর ওকে খালি পকেটে মেয়ে দিবে না তাই না? হয়তো সব ভেবেই নীলুফা আপা নির্মলকে সব বলেছেন। সেদিনও আপা বলল নির্মলকে বিয়ে দিতে চান, কিন্তু ঝামেলার প্যাচে পড়ে কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।”
প্রণয়ার গলা দিয়ে খাবার নামলো না একদম। একে তো নির্মল নেই, কেমন শূন্য শূন্য লাগছে, এমন অবস্থায় মায়ের এই ধরণের কথাবার্তা। প্রণয়া যেন স্বস্তিতে নিঃশ্বাসও ফেলতে পারছে না। কান্না দলা পাকিয়ে গলায় এসে জমেছে। এই প্রথম প্রণয়া উপলব্ধি করল তার এবং নির্মলের অবস্থানের ব্যাপক ফারাক। যাকে সমাজ উঁচু-নিচু নাম দিয়েছে।
প্রণয়া শক্ত হয়ে চেয়ে রইলো খাবারের প্লেটে। একটা রুটির অর্ধেক খেয়েছে মাত্র, তবুও পেট খুদায় জ্বলছে না। নুহাশ সাহেব এবার প্রণয়ার উদ্দেশ্যে বললেন,
–“তোমার বই কেনার কী খবর? টাকা তো নিলে না!”
প্রণয়া কথা বলার শক্তি পেল না। মুখ খুললেই যেন কেঁদে ফেলবে ভাব। ঘনঘন পলক ফেলে কান্নার দমক থামিয়ে প্রণয়া বলল,
–“নির্মল ভাইয়া আসুক, আগে। তার থেকে লিষ্ট নিয়ে তোমাকে জানাব।”
–“আচ্ছা, মা। জানিয়ে দিয়ো।”
প্লাবন সারাদিন টিভিতে কার্টুন দেখে, বাইরে বাইরে ঘুরে বেরিয়ে কাটালো। আর প্রণয়া ঘর ছেড়েই বেরুলো না তেমন। দুপুরে চোখ-মুখ ধুঁয়ে নিচে যেতেই দেখলো নীলুফাকে ফাহিমা নিয়ে এসেছেন। নির্মল নেই, এজন্য তিনি আজ রাতটা নীলুফাকে তাদের সাথেই রাখবেন জানালেন। শুধু আজকের রাত নয়, নির্মল না ফেরা অবধি ফাহিমা নীলুফাকে এ বাড়ি থেকে নড়তেই দিবেন না বলে জানালেন।
নীলুফাকে দেখে প্রণয়ার বুকের ভারী ভাব আবারও বেড়ে গেল। আচ্ছা, ভালোবাসা না পাওয়ার কষ্টটা এত তীব্রতর কেন? ভালোবাসা না পেলে কেন ভেতরটা গুমরে ওঠে? প্রণয়া কেন নিজেকে সামলাতে পারছে না? ক্ষণিকের জন্য দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে শক্ত করলো সে।
——————-
কয়েকদিন কেটে গিয়েছে। নির্মল এখনো ফিরেনি। দোকান, জমি বিক্রি করতে গেলে প্রায়ই ঝামেলার কবলে পড়তে হয়। নির্মলও সেসব খুঁটিনাটি ঝামেলায় জড়িয়ে গেছে। সেগুলো একা হাতে সামাল দেওয়াই তার জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে গিয়েছে। এজন্য নুহাশ সাহেবের অনুরোধে প্রণয়ার মামাও তাকে সাহায্য করছেন।
প্রণয়া ভার্সিটির সামনে দাঁড়িয়ে খালি অটর অপেক্ষা করছে। তার পাশে রয়েছে পিয়াসা। পিয়াসা এবং সে একসঙ্গেই বাড়ি ফিরবে। প্রণয়ার উদাসীন মুখ চোখ এড়ায় না পিয়াসার। এজন্য জিজ্ঞেস করল,
–“প্রণয়া, তুমি কী ঠিক আছ?”
প্রণয়া চমকে তাকায় পিয়াসার দিকে। পরমুহূর্তেই হেসে বলল,
–“ঠিক না থাকার কী আছে?”
পিয়াসা তবুও বুঝলো কিছু একটা হয়েছে। প্রণয়া তাড়া দিল অটোর জন্য। সে ভার্সিটির সামনে থাকতে চাচ্ছে না। কিন্তু পিয়াসা অপেক্ষা করতে বলল। এর মাঝেই হঠাৎ প্রণয়ার সামনে এসে দাঁড়ালো সেই কুৎসিত মানসিকতার লোক। তাকে দেখে প্রণয়া অনেকটা ঘাবড়ে যায়। এর মাঝে বেশ কয়েকদিন এই লোক প্রণয়ার পথ আগলে দাঁড়িয়েছে, তাকে বাজে কথা বলেছে।
লোকটা এদিক সেদিক না চেয়েই চোখ ভরা কাম নিয়ে বলল,
–“নাহ রে ময়না, তোরে বিয়া না কইরে থাকা যাচছে না। তোরে আমার লাগবই।”
পিয়াসাও চমকালো এই লোকের কথা শুনে। লোকটার চোখ জুড়ে থাকা লালসা তারও চোখ এড়ালো না। সে প্রণয়াকে টেনে এগোতে এগোতে বলল,
–“কিছুদূর হেঁটেই যাই নাহয়।”
প্রণয়া স্বভাবতই সেরকম বান্ধবী বানাতে পারেনি। উপরে উপরে সবার সাথে মোটামুটি ভাব। কিন্তু এই মুহূর্তে পিয়াসা যেভাবে তাকে সুরক্ষিত করল ভাবতেই প্রণয়া অনেকটা নরম হলো পিয়াসার প্রতি। পিয়াসা সাহসী, এসব লোককে সে ভালো মতোনই শায়েস্তা করতে পারে। এজন্য টুকটাক প্রণয়া তার উপর গলে ছিল। আজকের মতো পরিস্থিতিতে পিয়াসা যেভাবে তার ঢাল হলো, তাতে প্রণয়া পিয়াসাকে বন্ধু ভাবা শুরু করে দিল অনেকটাই। ওদিকে পিয়াসা ধরে নিল প্রণয়ার মন খারাপের কারণ এই বাজে লোকটা। নিশ্চয়ই বেশ কিছুদিন যাবৎ তাকে উত্ত্যক্ত করছিল?
অটো প্রণয়ার গলিতে থামতেই পিয়াসাও তার সাথে নেমে গেল। এই ব্যাপারে নুহাশ সাহেবকে জানানো জরুরি। প্রণয়াও আটকালো না। নিজে বলতে না পারুক, আরেকজন তো বলছে। এ-ই বা কম কিসের?
———————–
প্রণয়া দুদিন যাবৎ ভার্সিটি যায়নি। বলা বাহুল্য নুহাশ সাহেবই যেতে দেননি। সেদিন পিয়াসার মুখে সব শুনে সে হতভম্ভ হয়ে পড়েছিল। লোকটার নাম আনোয়ার। বউ পি*য়ে তালাক দেওয়ার গুঞ্জন পুরো দমে ছড়িয়ে আছে। সেই থেকে আনোয়ারকে সবাই বাঁকা চোখেই দেখে৷ এছাড়াও আনোয়ারের মধ্যে দোষের অভাব নেই। গাঞ্জা টানে, জুয়া খেলে, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করেছে এরকম বহু রেকর্ড আছে তার। নুহাশ সাহেব এতদিন চায়ের টং কিংবা বাজারে ভাসা ভাসা শুনেছিল এই লোকের কথা। সঙ্গে কিছুদিন যাবৎ এও শুনেছেন আনোয়ারের শক্ত নজর পড়েছে প্রণয়ার উপর। নুহাশ সাহেব ব্যাপারটা আমলে নেননি। এখন পিয়াসার মুখে যা শুনলো তাতে এই ব্যাপার আমলে না নিয়েও থাকা যাচ্ছে না।
নুহাশ সাহেব এবং ফাহিমা সমান তালে চিন্তিত মেয়েকে নিয়ে। মেয়েকে সবসময় চোখে চোখে রাখছেন তারা। এমনকি প্রণয়াকে বাড়ির সামনের উঠোনেও যেতে দিচ্ছেন না। মজিব সবসময় কড়া নজরদারির সাথে বাইরের বেতের সোফায় বসে থাকেন। হাতে থাকে নুহাশ সাহেবের বাবার এক রাইফেল। এটার খুব যত্ন নিতেন নুহাশ সাহেবের বাবা। বাবার পর নুহাশ সাহেব এটার রক্ষণা-বেক্ষণ করেন। তাইতো আজ অবধিও এটা নতুনের মতো চকচক করছে।
এতকিছুর মধ্যে বিরক্ত শুধু প্রণয়া। সামান্য তিল যে তাল অবধি গড়াবে কে জানত? এখন যেন ঘরের মধ্যে বন্দী হয়ে আছে। ঘরে যত বন্দী থাকছে নির্মলের ভাবনাও তাকে আরও গাঢ় করে আষ্ঠেপৃষ্ঠে রাখছে। কয় দফা যে কেঁদেছে সেটা শুধু সেই বলতে পারবে। ওদিকে নির্মলও আসছে না। কেন আসছে না? প্রণয়ার দম বন্ধ হয়ে আসছে যেমন।
ফাহিমা মেয়ের চিন্তায় প্রায় অসুস্থ হয়ে গিয়েছেন। তার উপর নুহাশ সাহেবকেও কেমন চিন্তিত দেখছেন। স্বামীর মুখে শুনেছেন আনোয়ারের সাথে উনার পথে দেখা হয়েছে। দেখা হতেই নাকি আনোয়ার নুহাশ সাহেবকে তার মেয়ের জন্য বিয়ের প্রস্তাব দেন। এতে নুহাশ সাহেবের গা ঘিনঘিন করে উঠেছিল। নুহাশ সাহেব সাফ গলায় বারণ করলেও আনোয়ার তাকে ঠান্ডা মাথায় মেয়েকে নিয়ে হুমকি দিয়ে চলে যায়। এমতাবস্থায় নুহাশ সাহেবও মেয়ের সুরক্ষা নিয়ে দারুণ চিন্তিত। সে চাইলেই মামলা দিয়ে আনোয়ারকে জেলের ভাত খাওয়াতে পারবেন বহুদিন, কিন্তু আশেপাশে অনেক আনোয়ার ঘুরা-ফেরা করছে। নুহাশ সাহেব কয় আনোয়ার থেকে বাঁচাবেন মেয়েকে?
ফাহিমা একপ্রকার বাধ্য হয়ে তাঁর বড়ো ভাই অর্থাৎ প্রণয়ার মামাকে বিস্তারিত জানান। নুহাশ সাহেবের আত্নীয় বলতে তেমন কেউ নেই যে তিনি এই বিপদে পরামর্শ নিবেন। জটিল সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। তা বুঝতে পেরেই ফাহিমা বড়ো ভাইকে অনুরোধ করলেন যেন নুহাশ সাহেবের সাথে কথা বলে একটা সিদ্ধান্তে আসে। এভাবে ভয়ে ভয়ে তো আর দিন কাটানো যাচ্ছে না।
বোনের কথা চিন্তা করেই মামা আসলেন শ্রীমঙ্গল পরেরদিন। মুখোমুখি নুহাশ সাহেবের সাথে বসে আলোচনা করলেন এ বিষয়ে। নুহাশ সাহেব বিস্তারিত জানাতেই মামা বললেন,
–“আমার কাছে একটা সমাধান আছে নুহাশ।”
নুহাশ সাহেব যেন আশার আলো দেখতে পান। অস্থিরচিত্তে বললেন,
–“কী ভাইজান?”
মামা থেমে বললেন,
–“প্রণয়াকে বিয়ে করিয়ে দাও। বয়স অনুযায়ী মেয়ে বিয়ের উপযুক্ত। তাই এই বিপদে বিয়ের চাইতে ভালো সমাধান আর নেই। বিয়েটা দিয়েই ওই জা*য়ারের নামে সোজা মামলা করে দিবা। তুমি চাইলে আমি চেনা-জানার মধ্যে ছেলে দেখতে শুরু করে দেই। কী বলো?”
চলবে—