‘আকাশ তীরে আপন সুর’
|পর্ব ০৩|
লাবিবা ওয়াহিদ
প্রণয়ার চোখ-মুখে একরাশ লাজের বিচরণ। মুখ ছোটো করে নুহাশ সাহেবের সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছে সে। নুহাশ সাহেব ফোলা চোখে মেয়ের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নির্মলের কাছে আবারও দুঃখিত বলল। নির্মল একপলক প্রণয়ার পানে তো আরেক পলক নুহাশ সাহেবের দিকে তাকাচ্ছে। নির্মল এবার অধর নাড়িয়ে বলল,
–“প্লিজ চাচা, বারবার সরি বলে আমাকে লজ্জিত করবেন না। উনি ছোটো মানুষ, ভুল হওয়াটা স্বাভাবিক।”
প্রণয়া কোণা চোখে নির্মলের দিকে তাকাল। প্রণয়ার নির্মলকে বলতে ইচ্ছা করল, “আমি মোটেও ছোটো মানুষ নই।”
কিন্তু বাবার সামনে বলার সাহস পেল না।
তখন প্রণয়ার চিৎকার শুনে নুহাশ সাহেবের ঘুম ভেঙে যায়, সঙ্গে ফাহিমারও। মেয়ের এমন চিৎকারে দুজনই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। দ্রুত পায়ে সব লাইট জ্বালিয়ে বাইরে আসতেই দেখল উঠোনে নির্মল দাঁড়িয়ে আছে আর প্রণয়া বসা ছেড়ে উঠে ভেতরে আসতে নিচ্ছিল। নুহাশ সাহেবকে দেখে প্রণয়া যেম প্রাণ ফিরে পেয়েছিল। তর্জনী তুলে বাহিরে ইশারা করে বারবার বলছিল,
–“বাইরে কালো পোশাকধারী চোর এসেছে বাবা।”
নির্মল তখন ডেকে বলল,
–“আমি চোর নই চাচা। আমি নির্মল!”
নির্মলের নাম শুনে প্রণয়া দমে যায়। পিছে ঘুরে হলদে আলোয় চট করে দেখে নেয় নির্মলকে। পরমুহূর্তেই নির্মলকে চোর ভেবে কী ধরণের বোকামী করেছে ভাবতেই প্রণয়ার মুখ ছোটো হয়ে যায়। নুহাশ সাহেব প্রণয়াকে বেশ বকল এত রাতে বাইরে বসে থাকার জন্য। কে বলেছিল এই গভীর রাতে বাইরে এসে বসতে? ঘটল তো এখন অঘটন? নির্মলের সামনে বাবার বকা খেয়ে প্রণয়া আরও লজ্জায় কাবু হয়ে পড়ে। তাইতো নির্মল কয়েকবার বারণ করল নুহাশ সাহেবকে। নুহাশ সাহেব ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
–“তুমি এত রাতে কোথায় গিয়েছিলে নির্মল?”
–“কারেন্ট চলে যাওয়ার পর ঘুম আসছিল না চাচা। এছাড়াও রাতের বেলা চা বাগান ঘোরার আলাদা শখ ছিল অনেকদিনের। এজন্যে কিছুক্ষণের জন্যে ঘুরে চলে আসি!”
বলেই নির্মল থামে। একপলক প্রণয়ার দিকে চেয়ে আবার বলল,
–“বাড়ির কাঠের গেটটা অবধি আসতেই ফোনের চার্জ ফুরিয়ে গেল। তাই অন্ধকারে হাতড়ে কিছু দূর এগিয়ে আসতেই কারেন্টের তার প্যাঁচিয়ে পড়ে গেলাম।”
নুহাশ সাহেব উঠোনের মাঝে তারের গোছা দেখে বেশ রাগ করল। আপনমনে বললেন,
–“এগুলো না আমি মজিবকে পাশে সরিয়ে রাখতে বলেছিলাম? এই গাধার জ্ঞান হবে কবে?”
পরক্ষণেই নুহাশ সাহেব আবার বললেন,
–“ঠিক আছে নির্মল, তুমি তবে ঘরে যাও। রাত-বিরেতে অনেক বিরক্ত করে ফেলেছি।”
নির্মল আলতো হেসে বলল,
–“না, না আঙ্কেল। সেরকম কিছু না!”
নুহাশ সাহেব এবার প্রণয়ার দিকে চেয়ে তাকে ভেতরে যেতে বলল। সকলে মিলে ভেতরে প্রবেশ করলেও প্রণয়া আবার ফিরে এলো। নির্মলকে পিছুডাক দিল সে।
–“এই যে শুনুন!”
মেয়েলি ডাকে নির্মল থমকে পিছে ফিরে দাঁড়ায়। হলদে বাতির আলোটা প্রণয়ার মুখশ্রীতে এসে পড়েছে। প্রণয়া তার কপালে পড়া চুল কানে গুঁজতেই নির্মল বলল,
–“জি?”
–“রাতের বেলা ঘুরতে বের হন ভালো কথা, তবে কালো পোশাক পড়ে বের হবেন না। কালো পোশাক দিনে যেমন সুন্দর রাতে তেমনই ভয়ংকর!”
নির্মল কিছুটা শব্দের সাথে হাসল। প্রণয়া আবছা আলোয় প্রথমবারের মতো আপাদমস্তক নির্মলকে লক্ষ করল। নির্মলের শ্যামলা মুখের নকশা, মুখ জুড়ে থাকা খোঁচা খোঁচা দাড়ি, বাতাসে মৃদু দুলে ওঠা চুল সবই দেখল। এও ভাবল, নির্মল তার থেকে হাইটে কত বড়ো হতে পারে? কাছাকাছি দাঁড়ালে হয়তো ধারণা নিতে পারবে। তবে এটুকু বোঝা যাচ্ছে নির্মল বেশ লম্বা। মোটকথা হচ্ছে, নির্মল এক দেখায় একজন সুপুরুষ।
নির্মল হাসি থামিয়ে বলল,
–“ঠিক আছে, আপনার কথা মাথায় থাকবে৷ এখন গিয়ে ঘুমান। আমি আসছি!”
বলেই নির্মল যেতে নিলে প্রণয়া আবার থামিয়ে দিলে বলল,
–“আরেকটা কথা!”
নির্মল জিজ্ঞাসু চোখে চাইলে প্রণয়া আবার বলল,
–“আমি ছোটো নই!”
নির্মল অধর বাঁকিয়ে হেসে বলল,
–“এটাও মনে রাখার চেষ্টা করব।”
নির্মল চলে গেল। কিন্তু প্রণয়া ঠায় একই স্থানে দাঁড়িয়ে রইল আনমনে। হঠাৎ পেছন থেকে ফাহিমা প্রণয়ার কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললেন,
–“এই, ভূতে ধরেছে নাকি? এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? যা ঘরে। আমি দরজা লাগিয়ে শুতে যাব!”
প্রণয়া চমকে মায়ের দিকে চেয়ে আবার উঠোনে তাকাল। যেই স্থানে নির্মল দাঁড়িয়ে কথা বলেছে সেই স্থানেই তার চোখ জোড়া থমকে।
–“চলো আম্মা।”
প্রণয়া রুমে এসে কাঁথা গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়ল। চোখে ঘুম ধরা দেওয়ার অপেক্ষায় আছে সে। ততক্ষণে নিশ্চুপে তাকিয়ে রইল সিলিং-এর দিকে। কেমন ঘটঘট শব্দের সাথে সিলিং ফ্যানটা চলছে। আচমকা প্রণয়া বুকের বা পাশটায় হাত দিল। দ্রিমদ্রিম শব্দ হচ্ছে যেন সেথায়। কিন্তু কেন? এই কেন-র কোনো উত্তর মিলল না প্রণয়ার। চোখে ভাসছে আবছা নির্মলকে। প্রণয়া নিজের প্রতি বিরক্ত হয়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে চোখ বুজল।
পরেরদিন ঘুম থেকে উঠে প্রণয়া সর্বপ্রথম রান্নাঘরে গেল। ফাহিমা ততক্ষণে দ্রুত হাতে নাস্তা তৈরি করছে। প্রণয়া রুটির দিকে তাকাতেই দেখল রুটির সংখ্যা নিত্যদিনের চাইতে কিছুটা বেশি। তা দেখে প্রণয়া ভ্রু কুচকে বলল,
–“কেউ আসবে নাকি?”
প্রণয়ার কথা শুনে ফাহিমা শক্ত চোখে মেয়ের দিকে চেয়ে বললেন, “তুই গতকাল যা কীর্তি করেছিস তাতে কারো না এসে উপায় আছে?”
ফাহিমা থেমে আবার বললেন,
–“তোর বাবা নির্মলকে এবং ভাবীকে নাস্তার দাওয়াত দিয়েছে। ওরাই আসবে।”
এ কথা শুনে প্রণয়া হঠাৎ বলল, “তাহলে আমাকে নাস্তা আগে আগেই দিয়ে দাও। আমি খেয়ে উঠে যাই।”
প্রণয়ার প্রস্তাবে ফাহিমা নাকোচ করল না। শুধু বলল, “নিজের প্রয়োজন মতো পরোটা আর তরকারি নিয়ে বোস টেবিলে।”
প্রণয়ার খাওয়া যখন মাঝপথে তখনই হঠাৎ প্রবেশ করল নুহাশ সাহেব এবং নির্মল। তাদের দেখে প্রণয়ার খাওয়া থেমে যায়। চটজলদি ওড়নাটা মাথায় জড়িয়ে নেয়। ততক্ষণে নুহাশ সাহেব এবং নির্মল কথা বলতে বলতে খাবার টেবিলে এসে বসেছে। নির্মল প্রথম ইতঃস্তত হয়েছিল প্রণয়ার সাথে টেবিলে বসতে। নুহাশ সাহেব সেসব ইতঃস্ততার ধার ধারলেন না অবশ্য।
প্রণয়া প্লেট নিয়ে উঠে যেতে নিচ্ছিল, তখন নুহাশ সাহেব তাকে থামিয়ে বললেন, “খাওয়ার মাঝপথে উঠতে নেই। শেষ করো খাবার।”
অগত্যা, প্রণয়া না চাইতেও বসে পড়ল। ফাহিমাও দ্রুত হাতে নুহাশ সাহেবদের খাবার নিয়ে আসলেন। ফাহিমা নীলুফাকে না দেখে নির্মলকে তার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে নির্মল বলল, “মা একটু পরে আসবে চাচী। কী যেন গোছাচ্ছে।”
প্রণয়া খেতে শুরু করলেও মাথা উঠিয়ে, স্বাভাবিক ভাবে খাচ্ছে না। চোরের মতো করে রুটির অংশ মুখে পুরছে সে। যেন নির্মল প্রণয়ার খাওয়ার দিকেই চেয়ে থাকবে। তবে এরকম কিছুই হলো না। প্রণয়া যতবারই নির্মলের দিকে আড়চোখে তাকিয়েছে ততবারই নির্মলকে হয় একমনে খেতে দেখেছে নয়তো তার বাবার দিকে তাকাতে দেখেছে। এতে প্রণয়া কিছুটা স্বস্তি পায়।
আজ নির্মলের চোখে চিকন ফ্রেমের চশমা। যা প্রণয়া দেখে ভাবছিল, “এত কম বয়সে চোখের সমস্যা বাঁধিয়ে ফেলেছে নাকি?”
নুহাশ সাহেব হঠাৎ নির্মলকে প্রশ্ন করলেন,
–“আমি ডাকার আগে কোনো চাকরিতে ঢুকেছিলে নাকি?”
–“হ্যাঁ আঙ্কেল। একটা বেসরকারি স্কুলে চাকরি পেয়েছিলাম!”
–“তাহলে তো ভালোই ছিল। খামাখা আমার ডাকে চলে আসলে। সেখানেই তো একটা ব্যবস্থা হতে পারত।”
নির্মল উত্তরে কিছু না বললেও চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। পরমুহূর্তে শুকনো হেসে বলল,
–“চাইলে ভালো ব্যবস্থা সম্ভব ছিল, কিন্তু আমি চাইছিলাম না মাকে কেউ কটু কথা বলুক। আমি এমন একটি জায়গা খুঁজছিলাম যেখানে কেউ আমার ছোটোবোনের অন্যায়ের জন্য আমার মাকে কথা শোনাবে। জানেন তো চাচা, মানুষদের তিক্ত কথা ধারালো অস্ত্রের মতো অপরজনকে আঘাত করে।”
এই পর্যায়ে নু্হাশ সাহেব নীরব হয়ে গেলেন৷ ফাহিমা রান্নাঘর থেকে সব শুনলেন। খুব মায়া হচ্ছে তাঁর নির্মলের প্রতি। নুহাশ সাহেব প্রসঙ্গ বদলে বললেন,
–“যাক, তুমি যেহেতু স্কুল টিচার ছিলে চাইলে প্লাবনকে পড়াতে পারবে। আমার ছেলে এতটা চঞ্চল হয়েছে যে নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না।”
নির্মল হাসল। বলল, “নিয়ন্ত্রণেই আছে চাচা, আপনি বোধহয় ওকে নিয়ে বেশি চিন্তিত।”
প্রণয়ার ততক্ষণে খাওয়া শেষ। সে প্লেট নিয়ে উঠে যায়। আড়চোখে একবারের জন্য নির্মলকে পরখ করতে ভুলেনি।
এখন বিকাল। বিকালের কমলা আলো প্রণয়ার মুখে এসে পড়েছে। সে এই আবেশী রোদ নীরবে গায়ে মাখিয়ে ঝুল বারান্দায় দাঁড়িয়ে। নজর স্থির অবশ্য উঠোনে। উঠোনে কিছু পর্যটক এসেছে। তাদের সাথেই মজিব দাঁড়িয়ে।
বাড়িতে নুহাশ সাহেব না থাকলেও মজিব সারাদিন বাড়িতেই থাকে। বাড়ির পরিচর্যা, বাইরে থেকে কে আসছে কেন আসছে সেসব নজরে রাখা। যতই হোক চা বাগানের মাঝে দুজন মেয়ে মানুষ একা বাড়িতে থাকছে, এই বিষয়টা নুহাশ সাহেব মানতে পারতেন না। এজন্য একদিন কোথা থেকে মজিবকে ধরে আনল। মজিবের বয়স প্রায় পঞ্চাশের কাছাকাছি। তার গ্রামও বেশ দূরে। মাসে দুদিন ছুটি পায় পরিবারকে চোখের দেখায় দেখে আসার জন্য। স্বভাবসুলভ মজিব কিছুটা সরল। কিছু সরল মানুষকে “বোকা” বলা হয়। মজিব সেই বোকা শ্রেণির সরল। কাজে ভুল করাও তার অন্যতম স্বভাবের মধ্যে পড়ে। নুহাশ সাহেব তার কাজে খুশি হয়েছেন এমনটা খুব কম চোখে পড়েছে। তবে সবকিছুর মাঝে তার একটি বিশেষ গুণ রয়েছে। তিনি দারুণ তর্ক করতে জানেন। কেউ যদি কখনো তার সাথে লাগতে আসে, তিনি সিলেটি ভাষায় সেই মানুষটাকে একদম ধুঁয়ে দেয়। তর্ক করতে পারা মানুষ কীভাবে বোকা হতে পারে প্রণয়ার বুঝে আসে না। তবুও এই বোকা-সোকা মজিব আঙ্কেল যখন দুদিনের জন্য গ্রামে যায়, তখন পুরো চা বিলাস কেমন শূন্য শূন্য লাগে। যেন গুরুত্বপূর্ণ একজনের অস্তিত্ব নেই।
এই মুহূর্তে মজিব নিজেই পর্যটকদের বাড়ি সম্পর্কে টুকটাক বলছেন, তারা যখন ছবি তুলছে মজিব একপাশে দাঁড়িয়ে দেখছেন। পর্যটক আসলেও তাদের বাড়ির ভেতর প্রবেশ নিষেধ। নয়তো কতজন যে ব্যাকুল চোখে ঝুল বারান্দায় চেয়েছিল তার হিসেব নেই। আজও একই ঘটনা ঘটল। একজন পর্যটক ঝুল বারান্দা দেখে বেশ কয়েকবার অনুরোধ করল উপরে যাওয়ার জন্য। কিন্তু মজিবের গলা দিয়ে “না, অনুমতি নেই!” ব্যতীত আর কোনো শব্দই আসছে না। প্রণয়া অবশ্য সরে গিয়েছিল তাদের উপরে তাকানোর আগেই।
সন্ধ্যার সময় প্রণয়া আবারও একই জায়গায় গিয়ে দাঁড়াল। পর্যটক’রা ততক্ষণে চলে গিয়েছে। প্রণয়া একমনে সবুজ চা বাগানে চোখ বুলালো। সন্ধ্যা হওয়ার আগ মুহূর্তে এই বাগান কতটা স্নিগ্ধ লাগছে। যতই দেখুক না কেন প্রাণ জুড়াতে চায় না। কাঠের গেট খোলার শব্দ শুনে প্রণয়া চট করে নিচে তাকাল। প্রণয়া দেখল নির্মল হাতে কিছু খাতা-পত্র নিয়ে চা বিলাসে প্রবেশ করছে। প্রণয়া নিজের অজান্তেই চেয়ে রইলো এক মনে। নির্মলের আশেপাশে খেয়াল নেই। সে নিজ খেয়ালে হিসাব-নিকাশের বিস্তর ব্যস্ত। খাতায় চোখ বুলাতে বুলাতেই বাম পাশের পথ দিয়ে বাড়ির পেছন দিকে চলে গেল। তাকে ঘরে ফিরতে দেখে প্রণয়ার কপালে ভাঁজ পড়ল। কিছুক্ষণ আগেই না দেখল নীলুফাকে তাদের ঘরে আসতে? অবশ্য প্রণয়ার ভাবনার মাঝেই নির্মল আবার বেরিয়ে গেল। বেরিয়ে যাওয়ার সময় তার হাত জোড়ায় কোনো খাতা-পত্র ছিল না। তবে প্রণয়ার মনে এক প্রশ্ন হানা দিল। “বাবার পছন্দের পাত্র এই সন্ধ্যাবেলায় কোথায় যাচ্ছে?”
#আকাশ_তীরে_আপন_সুর
চলবে~~