#আইরাত_বিনতে_হিমি
#এক_বুক_ভালোবাসা
#পর্বঃ০২
রানী ভবন,
চারপাশে বাউন্ডারি করা একটা বাড়ি। বাড়ির একপাশে পুল। অন্যপাশে গার্ডেন। গার্ডেনে আছে নানান বিচিত্র রকমের ফুল গাছ। গার্ডেনের এক সাইটে গাড়ি রাখার গ্যারেজ। বাড়িটা দুতলা বিশিষ্ট। ডুপ্লেক্স ভবন। ভবনে ঢুকতেই সিড়ি পড়ে। সাপের মতো পেচানো সিড়ি। তারপর ড্রয়িংয়ে ঢুকার জন্য বড় দরজা। এইটা হচ্ছে বাড়ির দ্বিতীয় দরজা। ড্রয়িংয়ে ঢুকলেই ডান সাইটে ডাইনিং রুম। ডাইনিং রুমের পাশেই বড় কিচেন। ড্রয়িং রুমের দুপাশে দুইটা শোয়ার কক্ষ। একটা গেসট রুম। আর একটাই বাড়ির কর্তা কর্তী থাকে। দুতলায় চারটা রুম। চারটাই বেড রুম। সেখানে বাড়ির ছেলেরা থাকে। কিচেনে কোমরে আঁচল বেধে রান্না করছে। বনুলতা চৌধুরী। তাকে সাহায্য করছে দুজন মহিলা সার্ভেন্ট। বনুলতা চৌধুরী আজ বিশাল বড় আয়োজন করেছে। কারণ আজ তার ছোট ছেলের জন্মদিন। কিন্তু কোথায় কোথায় তার ছেলে। ছেলের পছন্দের সব আইটেম করছে সে। কিন্তু ছেলে যে লাপাত্তা। এইবার তার রাগ হচ্ছে। আর সেই রাগ ঢালার জন্য নিজের স্বামীকেই বেছে নেন সবসময় সে। তাই আজও তার ব্যতিক্রম নয়। রাগটা ঢালার জন্য সে রশীদ চৌধুরীকে ডাকা শুরু করে।
– কই গো শুনছো। কোথায় তুমি। কোন রাজ্যের কাজ করতে ব্যস্ত আছো শুনি। আরে শুনছো। কোথায় গেলে। কি হলো সাড়া দেও না কেন।
বনুলতা চৌধুরীর বাজ খায় গলার ডাক শুনে রশীদ চৌধুরী ছাদে রুমে থেকে দৌড়ে কিচেনে আসে। তারপর বলে,
– কি গো লতা। বাড়িতে ডাকাত পড়ছে নাকি যে এইভাবে ডাকছো।
বনুলতা হাতে খুন্তি নিয়ে রশীর চৌধুরীর দিকে তেড়ে আসে আর বলে,
– ডাকাত পরবে কেন? ডাকাত পরবে কেন? শুনি। আমার এই বাড়িতে তিনটা ছেলে থাকে। চার পাঁচজন সবসময় গার্ডে থাকে। আর তুমি বলো ডাকাত পড়ছে।
রশীদ দুহাত দিয়ে নিজেকে বাঁচিয়ে নিয়ে বলে,
– লতা রাগ করছো কেন? কি হয়েছে সেটা বলো। হঠাৎ এমন রাগলে কেন?
বনুলতা একটু কান্না করে বলে,
– হ্যা তুমি তো শুধু আমার রাগটাই দেখলা ভেতরটা দেখলা না। আমার ছোট ছেলেটা যে বাড়ি ছেড়েছে তা কি তুমি দেখো নাই। আজ তার জন্মদিন এখনো বাসায় ভিরলো না ছেলেটা।
– বাহ নিজেই ছেলেকে বাড়ি থেকে বেড় করে দিলে এখন আবার নিজেই কান্না করছো।
বনুলতা এইবার আরও ক্ষেপে যায়। সে অতি রাগ নিয়ে বলে,
– আমার ছেলে আমি কাটবো মারবো যা ইচ্ছে তাই করবো তোমার কি? যাও ছেলেকে ফোন করো।
রশীদ চৌধুরী সোফায় বসে খবরের কাগজ টা হাতে নিয়ে পড়তে পড়তে বলে,
– পারবো না। তোমার ছেলে তুমি করে নাও।
বনুলতা এইবার যেই কড়া গলায় কিছু শুনাতে যাবে। ঠিক তখনই কেউ কলিং বেল বাজায়। বনুলতা রশীর চৌধুরীর দিকে কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
– তোমায় আমি পড়ে দেখে নেবো।
তারপর সে সদর দরজা খুলে দেয়। দরজা খুলেই হাউমাউ করে কেদে দেয়,
– বাবা তুই আসছোস। কথায় ছিলি বলতো। কত চিন্তা হয়ছে আমার জানস। তোর কথা কত মনে হয়েছে। আর মাকে তোর এখন মনে পড়লো।
বনুলতা ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। আর তার ছেলে মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। কারণ সে জানে তার মা তাকে অনেক ভালোবাসে। মাঝে মাঝে দু একটু বকা দেয়। তবে সেটা রেগে গেলে। বনুলতার ছেলে এইবার বলে,
– আম্মু ভেতরে তো ঢুকতে দাও। আর এইভাবে কেঁদো না আমার ভীষণ কষ্ট হয়।
বনুলতা অভিমানি কন্ঠে বলে,
– হ্যা তা তো দেখলামই।
রশীদ চৌধুরী সদর দরজার সামনে এসে বলে,
– লতা ছেলেকে ভেতরে আসতে দাও। একদম ঘেমে গেছে।
বনুলতা ছেলেকে ছেড়ে দিয়ে বলে,
– আমার ছেলের খেয়াল আমি রাখতে পারি। তোমার এত মাথা ঘামাতে হবে না। আই বাবা ভেতরে আয়।
বনুলতার ছেলে ভেতরে এলে। বনুলতা দরজা আটকে দেয়। আর তার ছেলে দরজার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,
– তোমার সাথে না আমার খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা আছে।
– সব কথা পড়ে হবে কৌশিক। এখন তুই আগে ফ্রেশ হবি। তারপর আমার হাতে বানানো পায়েশ খাবি। আজ তো তোর জন্মদিন।
– প্লিজ আম্মু শুনো না।
বনুলতা নাছড় বান্দা। সে কোনোভাবেই এখন কিছু শুনতে চায় না। কিন্তু কৌশিক সেও না বলে যাবে না। শেষে উপায় না পেয়ে বনুলতা বলে,
– বল কি বলবি।
কৌশিক মায়ের কাধে হাত রেখে বলে,
– আচ্ছা আম্মু ধরো কেউ আত্মহত্যা করতে গিয়েছে আর তাকে একটা ছেলে বাঁচালো। বাঁচানো কি ঠিক না অন্যায়।
– অবশ্যই ঠিক। কারণ আত্মহত্যা মহাপাপ। কাউকে বাঁচানো পূর্ণের কাজ।
– ওকে। তারপর ধরো তাও মেয়েটি মরতে চায়। তাই ছেলেটি তার মানসিক চিন্তা ভাবনা ঠিক করার জন্য সুন্দর একটি জায়গায় নিয়ে যায়। কিছু জ্ঞানমূলক কথা বলে। মেয়েটির টনক নরে। সে বাঁচতে চায়। কিন্তু বাঁচার জন্য সুরক্ষিত জায়গা চায়। শিক্ষার ব্যবস্থা চায়। যেগুলো মেয়েটার কাছে নায়। যাওয়ার কোনো জায়গা নেয়। মেয়েটির করুণ দৃষ্টি ছেলেটির মনকে একটু কাপায় তাই সে তার সাথে মেয়েটিকে তার বাড়িতে নিয়ে আসে। ছেলেটি কি অন্যায় করছে।
– একদম না খুব ভালো কাজ করছে।
– কিন্তু আম্মু। ছেলেটির আম্মু যে মেয়েটিকে বাসায় জায়গা দিলো না। নানান কথা শুনিয়ে বাড়ি থেকে বেড় করে দিলো। এইটা কি সে ঠিক করছে।
– কখনোই না। একজন অসহায় নারীকে সাহায্য করা আমাদের দায়িত্ব। আমরা মেয়ে মায়ের জাত। আর আমরা মেয়েদের কষ্ট বুঝবো না। এইটা কি করে হয়। ঐ মহিলার জায়গা আমি থাকলে ঐ মেয়েকে মাথায় করে রাখতাম।
কৌশিক খুশি হয়ে বলে,
– সত্যি আম্মু।
– একদম।
– তাহলে ভেতরে নিয়ে আসি।
– ভেতরে নিয়ে আসবি মানে।
কৌশিক মাথা নিচু করে বলে,
– আমিই মেয়েটিকে বাচিয়েছি। এই বাসায় নিয়ে এসেছি। বাহিরে দাড়িয়ে আছে।
বনুলতা কোমরে হাত দিয়ে বলে,
– ওরে শয়তান। এতক্ষণ মাকে কথার জালে ফাসানো হচ্ছিল। দাড়াও তোমার মজা দেখাচ্ছি আমি।
– আম্মু না না আম্মু। তুমি কিন্তু বলছো মেয়েটিকে মাথায় করে রাখবে।
– মেয়েটিকে তো আমি মাথায় করেই রাখব। তবে তোর খবর আছে। এখন মেয়েটিকে ভেতরে নিয়ে আয়। রোদে দাড়িয়ে আছে। যা নিয়ে আয়।
কৌশিকে খুশিতে গদগদ। সে দৌড়ে বাহিরে যায়। পূর্ণায় হাত ধরে বলে,
– চল পূর্ণা।
পূর্ণা প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে বলে,
– কোথায়?
কৌশিকের চোখে খুশির ঝিলিক।
– আরে চল তো।
কৌশিক পূর্ণার হাত ধরে টানতে টানতে বাড়ির ভেতরে নিয়ে আসে। মায়ের সামনে নিয়ে গিয়ে বলে,
– মাহ ওহ পূর্ণা। আর পূর্ণা এইটা আমার আম্মু। বনুলতা চৌধুরী।
পূর্ণা একবার বনুলতার দিকে তো আর একবার কৌশিকের দিকে তাকায়। তার বিশ্বাসই হচ্ছে না কৌশিক তাকে তার নিজের বাড়িতে নিয়ে এসেছে। পূর্ণার খুশিতে চোখে পানি চিকচিক করছে। পূর্ণাকে কাঁদতে দেখে বনুলতা বলে,
– একি মা কাঁদছো কেন? দেখি দেখি একদম কাঁদে না।
চোখের পানি মুঝিয়ে দিয়ে বললো বনুলতা। পূর্ণা একটু হেসে বললো,
– কখনো ভাবিনি কেউ এইভাবে আমার চোখের পানি মুঝে দিবে।
বনুলতা হাসে। সে পূর্ণার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,
– তা মা তোমার চাঁদবরণ মুখখানা একটু দেখি।
পূর্ণার কেমন জানি লজ্জা লাগে। সে লজ্জা নিয়ে মুখের নিকাব টা খুলে। পূর্ণার এমর রূপ দেখে বনুলতার মুখটা হা হয়ে যায়। এযে আকাশের এক টুকরো চাঁদ। বনুলতা চোখের কাজল দিয়ে পূর্ণার কানের পেছনে কাজল লাগিয়ে দিয়ে বলে,
– নজর যেনো না লাগে।
পূর্ণা হাসে। সাথে কৌশিকও। বনুলতা বলে,
– কৌশিক যা নিজের রুমে যা। ফ্রেশ হয়ে নে। নিশ্চয়ই দুজনের খিদে পেয়েছে। আর পূর্ণা মা তুমি আমার সাথে চলো আমি তোমায় তোমার ঘরটা দেখিয়ে দিচ্ছি।
পূর্ণা মাথা নাড়িয়ে বলে,
– আচ্ছা।
কৌশিক বলে,
– আম্মু আব্বুর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
– যা দেহ। তোর আব্বুর সাথে আমার কোনো কথা নেয়।
কৌশিক হাসে। কিন্তু পূর্ণা অবাক হয়। এ কেমন কথা। কৌশিক বলে,
– আম্মু এত রাগ করো না তো। চল পূর্ণা আব্বুর সাথে তোর পরিচয় করিয়ে দেয়।
পূর্ণা কৌশিকের সাথে যায়। রশীদ চৌধুরী সোফায় বসে বসে এতক্ষণ কাহিনি দেখছিলো।পূর্ণা তার সামনে গেলে সে উঠে দাড়ায়। পূর্ণা তাকে সালাম করতে নিলে সে পূর্ণার বাহু ধরে উঁচু করে বলে,
– থাক মা সালাম করতে হবে না। তোমায় দেখে অনেক ক্লান্ত লাগছে একটু ফ্রেশ হয়ে নাও।
পূর্ণা মাথাটা নিচু করে বলে,
– জ্বি আংকেল।
রশীদ চৌধুরী মুচকি হাসে। বনুলতা চৌধুরী পূর্ণাকে নিয়ে উপরে চলে যায়। দুতলায় চারটা রুম। দক্ষিণ দিকে দুটি কক্ষ। যেটা বাড়ির পেছন দিকে পড়েছে। সেখানের একটা ঘরে তার মেজো ছেলে আর একটা দিকে তার ছোট ছেলে কৌশিক থাকে। আর বাড়ির সামনের দিকে দুটি কক্ষের মধ্যে একটা খালি পড়ে আছে। আর একটায় তার বড় ছেলে থাকে। যেই কক্ষটা খালি ছিলো সেই কক্ষে বনুলতা পূর্ণাকে নিয়ে যায়। পূর্ণার রুমের ভেতরে ঢুকে হা হয়ে যায়। এতবড় একটা রুম। আলিসান বাড়ির আলিসান রুম। রুমের ভেতরে একটা বিছানা। বিছানার পাশে ড্রেসিং টেবিল। তার পাশেই ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য দরজা। আর রুমে ঢুকার দরজার একপাশে একটা বড় সোফা। বেলকনির দরজার পাশে একটা স্টাডি টেবিল। বেলকনির সাইটে রুমের একটা জানালা আছে। জানালায় সাদা রঙের পর্দা উড়ছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে রুমটা অনেক যত্ন করে সাজানো। পূর্ণা বনুলতার দিকে তাকিয়ে বলে,
– এই ঘরে আমি থাকবো।
বনুলতা পূর্ণার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে বলে,
– হ্যা অবশ্যই তুমি থাকবে। যাও মা তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও।
পূর্ণা আমতা আমতা করে বলে,
– কিন্তু আন্টি আমার তো কোনো জামা কাপড় নেয়।
বনুলতা জিহ্বা কেটে বলে,
– দেখছো আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল। দাড়াও আমি তোমার জন্য একটা পোশাক নিয়ে আসি। আমার বোনের মেয়ে মাঝে মাঝে এই বাসায় আসে। ওরই পোশাক। পড়ে তোমায় জামা কিনে দিব।
এই কথা বলে বনুলতা নিচে চলে যায়। আর পূর্ণা নিরবে চোখের পানি ফেলে বলে,
– আল্লাহর এই দুনিয়ায় শুধু খারাপ মানুষ নেয় ভালো মানুষও আছে।
বনুলতা আসলে পূর্ণা ফ্রেশ হতে চলে যায়। পূর্ণা ফ্রেশ হয়ে বাহিরে আসলে দেখে কৌশিক তার বিছানায় বসে একটা বই পড়ছে। পূর্ণা তাওয়াল দিয়ে চুল মুঝতে মুঝতে বলে,
– কিরে কৌশিক তুই এখানে।
কারো ডাক শুনে কৌশিক বই পড়া বাদ দিয়ে সামনে তাকায়। দেখে পূর্ণা তার লম্বা চুলগুলো তাওয়াল দিয়ে মুঝছে। পড়নে নীল কুর্তি। গোসল করার পর তার শরীরের চামড়া যেনো মুক্তোর মতো জলজল করছে। কৌশিক একটা হাসি দিয়ে বলে,
– তোর জন্য অপেক্ষা করছি। আম্মু বললো তোকে নিয়ে নিচে যেতে। তোর তো খিদে পেয়েছে তাই না।
পূর্ণা চুল আচড়াতে আচড়াতে বললো,
– তা তো একটু পেয়েছে। চল যাওয়া যাক।
– আচ্ছা চল।
পূর্ণা মাথায় ঘোমটা টেনে নেয়। কৌশিক আর পূর্ণা রুম থেকে বেড় হলে। কারো গলার কঠিন ধমকানোর আওয়াজ শুনে থেমে যায়। পূর্ণা ভয় পেয়ে বলে,
– কে এইভাবে ধমকাচ্ছে কৌশিক।
কৌশিক পূর্ণার মুখ চেপে ধরে বলে,
-:আগে এখান থেকে চল। আর শোন ভুলেও তোর রুমের পশ্চিম পাশের রুমটার দিকে যাবি না। তাহলে কিন্তু তোকে বাঁচানোর ক্ষমতা এই বাড়িতে কারো নেয়।
পূর্ণা কৌশিকের হাতটা ছাড়িয়ে বলে,
– কেন? ঐখানে কি তোরা বাঘ পালিস।
– বলতে পারিস এখন চল।
পূর্ণা কৌশিকের সাথে নিচে নামতে নামতে ভাবে।
– এ কোথায় আসলাম। সত্যি ই কি ঐ ঘরে বাঘ আছে।
পূর্ণা বাঘ উচ্চারণ করতে গিয়ে ভয়ে তার বুকে ধুকপুক শব্দ হতে শুরু করে। সে বুকে আইতাল কুরসি পড়ে ফু দিয়ে তারপর নিচে নামে। পূর্ণাকে নিচে নামতে দেখে বনুলতা বলে,
– আয় মা আয় এখানে বস।
পূর্ণা গিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে। তার পাশে চেয়ার টেনে কৌশিক বসে। বনুলতা ওদের দুজনকে ভাত বেড়ে দেয়। তারপর বলে,
– কৌশিক বিকেলে তোর জন্মদিনের অনুষ্ঠান আছে। অনেক মানুষ আসবে। তুই পূর্ণাকে একটা ভালো পোশাক কিনে দিস। প্রয়োজনে ওকে সাথে নিয়ে যাবি।
কৌশিক মাথা নাড়িয়ে বলে,
– আচ্ছা আম্মু।
পূর্ণা বলে,
– কি দরকার এইসবের আন্টি।
বনুলতা বলে,
– আন্টি নয় মামনি বল। আর আপনি নয় তুমি বল। তুই এখন থেকে আমার মেয়ে। আমার অনেক দিনের শখ আমার একটা মেয়ে হবে। কিন্তু আল্লাহ্ দিল না। কিন্তু আল্লাহ্ এখন আমায় তোকে দিয়েছে তাই আমি সেটা অবহেলা করবো না বুঝলি। কৌশিক তুই খেয়ে দেয়ে বেড়িয়ে পড়।
– আচ্ছা আম্মু।
পূর্ণা আর কিছু বলার মতো পায় না। সে খেয়ে দেয় রুমে চলে আসে। তারপর লম্বা একটা ঘুম দেয়। ঘুম থেকে উঠে দেখে পায়ের কাছে একটা ব্যাগ রাখা। ব্যাগটা খুলে দেখে একটা কালো রঙের গাউন। পূর্ণার বুঝতে বাকি রইলো না এইটা কার কাজ। মাগরিবের আযানের ধ্বনি ভেসে এলে পূর্ণা বুঝতে পারে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। তাই সে ওয়াশরুমে গিয়ে অযু করে নামাজ টা পড়ে নেয়। তারপরই বাসায় সাউন্ড বক্সের আওয়াজ ভেসে আসে। অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। পূর্ণা মনে মনে বলে,
– বড় লোক মানুষের বড় কারবার।
পূর্ণা জামা পাল্টে গাউন টা পড়ে নেয়। কানে কালো ঝুমকা পড়ে নেয়। ঠোঁটে হালকা রঙের লিপস্টিক লাগায়। চোখে কাজল পড়ে নেয়। চুলগুলো খোপা করে নেয়। ছোট ছোট চুলগুলো সামনে টেনে দেয়। ওরনাটা বুকে নিয়ে রুমের মধ্যে পায়চারি শুরু করে। সে কি করবে একা একা নিচে যাবে। কিন্তু তার যে অসস্থি হচ্ছে। কাউকে তো তেমন করে চিনে না। ইসস কৌশিক টা না। নিজের জন্মদিনের পার্টি পেয়ে আমায় ভুলে গিয়েছে। আমার যে নিচে নামতে অসস্তি হচ্ছে সে কি বুঝতে পারছে না।পূর্ণা হাতের মধ্যে ওরনা পেচাচ্ছে। এমন সময় ঘরে প্রবেশ করে বনুলতা। বনুলতাকে দেখে পূর্ণার অসস্তিটা একটু কমে। সে হেসে দিয়ে বলে,
– মামনি।
বনুলতা পূর্ণার দিকে তাকিয়ে বলে,
– মাশাল্লাহ্। ভারী সুন্দর লাগছে। চল মা নিচে চল। মেহেমান চলে এসেছে। আমি বুঝতে পেরেছিলাম তোর অসস্তি হচ্ছে। তাই তোকে নিতে এলাম।
– ধন্যবাদ মামনি।
– এতে ধন্যবাদ দেওয়ার কি আছে। আমি না তোর মা। চল চল।
পূর্ণা বনুলতার পেছন পেছন নিচে যায়। গিয়ে দেখে এলাহি আয়োজন। দুপুরে বাড়িটা কেমন ছিলো আর এখন কেমন দেখাচ্ছে। চারদিকে লাল নীল আলো জ্বলছে। মিউজিক বাজছে। ড্রয়িংয়ের একটা টেবিলের সামনে বড় কেক রাখা। কিন্তু কৌশিক কৌশিক কোথায়। বনুলতা পূর্ণার হাত ধরে বলে,
– কৌশিক কে খুজছিস।
পূর্ণা আমতা আমতা করে বলে,
– আসলে হুম।
– এত অসস্তি পাওয়ার কি আছে। কৌশিক গার্ডেনে ওর কিছু বন্ধু এসেছে সেখানে গল্প করছে। তুই চল।
– হুম।
হঠাৎ বনুলতাকে একজন মহিলা এসে ডেকে নিয়ে যায়। আর পূর্ণি সে একা হয়ে যায়। আশেপাশে অনেক লোকের ভীর কাউকে পূর্ণা চিনে না। তাই সাইডের একটা সোফায় গিয়ে বসে পড়ে। তখন একছন ছেলে এসে পূর্ণার পাশে বসে। ছেলেটিকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। ছেলেটি ড্রাঙ্ক। পূর্ণার একটু সরে বসে। ছেলেটি পূর্ণার আরো কাছে যায়। পূর্ণা এইবার উঠে দাড়ায়। ছেলেটি এইবার পূর্ণায় হাত ধরে ফেলে। পূর্ণা ভয় পেয়ৃ বলে,
– ছাড়ুন আমায় কি করছেন।
ছেলেটি ঢুলতে ঢুলতে বলে,
– হ্যালো বেবিগার্ল।
পূর্ণা এইবার কেঁদে দেয়।সে বার বার নিজের চোখ মন দিয়ে কৌশিক কে খুজছে। কোথায় কৌশিক। ছেলেটি এইবার পূর্ণার কোমরে হাত দিলে। সে ছেলেটিকে একটা থাপ্পর দিয়ে সেখান থেকে দৌড়ে উপরে আসতে থাকে। ঠিক তখনই তার একটা ছেলের সাথে ধাক্কা লাগে। ধাক্কা লাগার সাথে সাথে পূর্ণার মনে হয় সে কোনো খাম্বার সাথে ধাক্কা খেয়েছে। মাথাটা জ্বলে যাচ্ছে তার। সে ভ্রু কুচকে ছেলেটিকে যেই কিছু বলতে যাবে তার আগেই ছেলেটির অগ্নিমূর্তি দেখে সে চুপসে যায়। তার সামনে কালো ব্লেজার পড়ে দাড়িয়ে আছে এক যুবক। মুখ ভর্তি দাড়ি। চুলগুলো ব্যাকব্রাশ করা। গায়ের রঙ ওত ফর্সা না হলেও কালো নয়। শ্যাম পুরুষ। তবুও পূর্ণার বুকে ধাক্কা লাগে। সে এর আগে এত সুন্দর ছেলে কখনো দেখে নি। হাইট তো পাঁচ ফুট দশ হবেই। মাছেল দেখো। ছেলেটি পূর্ণাকে ধমক দিয়ে বলে,
– হাউ ডেয়ার ইউ। তোমার সাহস হয় কি করে আমাকে ধাক্কা দেওয়ার। চোখ কি মাথায় নিয়ে ঘুরো নাকি। রাবিস।
পূর্ণা ছেলেটির রাগ দেখে মুখটা ভেঙচি কেটে বলে,
– আপনার সাহস হয় কি করে আমাকে ধাক্কা দেওয়ার। আপনি জানেন আমি চাইলে এখুনি আপনাকে এই বাড়ি থেকে বেড় করে দিতে পারি। অসভ্য ছেলে।
ছেলেটি ভেবাচেকা খেয়ে বলে,
– হোয়াট তুমি জান আমি কে?
পূর্ণা দ্বিগুণ সাহস দেখিয়ে বলে,
– আপনি জানেন আমি কে?
ছেলেটি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
– শুনি তুমি কে?
মেয়েটি একটু সাহস নিয়ে বলে,
– আমি এই বাড়িয় মেয়ে।
ছেলেটি এইবার আরও বড় ঝটকা খায়। সে এইবার দ্বিগুন রেগে গিয়ে মেয়েটির দিকে তেড়ে এসে বলে,
– হোয়াট এই বাড়ির মেয়ে। তুমি কি আমায় বোকা ভাবছো যে যা বলবা আর তাই বুঝবো।
পূর্ণা ছেলেটির দিকে দুকদম এগিয়ে এসে আবার পিছিয়ে গিয়ে শুকনো ঢক গিলে বলে,
– আপনি তো শুধু বোকা না একটা হাদারাম। গাধা। এন্ড ঝগড়ুটে।
ছেলেটি এইবার রেগে গিয়ে পুর্ণার বাহু চেপে ধরে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
– আর একটা বাজে কথা বললে এইখানে মেরে পুতে দিবো। একদম চুপ। বাচাল মেয়ে। হু আর ইউ। এই বাড়িতে ঢোকার পারমিশন তোমায় কে দিছে।
পূর্ণা এইবার ভয়ে চোখ মুখ খিচে দাড়িয়ে আছে। তার মনে হচ্ছে কেউ তাকে চোখ দিয়ে ভস্স করে দিবে। পূর্ণার মনে হচ্ছে তার দুহাত আর নিজের সাথে নেয়। ব্যথায় কুকড়ে উঠছে পূর্ণা। চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু ছেলেটির রাগ এখনো কমেনি। সে এখনো ঠিক ঐভাবেই পূর্ণাকে ধরে আছে। তখনই ঐখানে উপস্থিত হয় বনুলতা আর কৌশিক। বনুলতা ছেলেটিকে বলে,
– একি রাফাত ওকে এইভাবে ধরে দাড়িয়ে আছিস কেন। মেয়েটি ব্যথা পাচ্ছে তো।
#চলবে