#অলক্ষ্যে_তুমি
#দ্বিতীয়_প্রহর
#Yasira_Abisha (#FATHA)
যে মেয়ের বিয়ে হওয়ার ঠিক একুশ দিন আগে বিয়েটা ভেঙে যায় তার ভেতরের হাহাকার একমাত্র তারই মতোন ভুক্তভোগীরা বুঝতে পারে। আমি আগে এই জিনিসটা বুঝতে পারতাম না, কিন্তু আজকে থেকে এই কষ্টটাও সহ্য করার ক্ষমতা ধারণ করতে শুরু করেছি। আমি খুব সহজে সবকিছু মেনে নিতে পারি তাই এই ব্যাপারটার সাথেও খুব সহজেই খাপ খাইয়ে ফেলতে পারবো ইনশাআল্লাহ। তবে ভেতরটা তখনই বেশি পুড়ে যায় যখন ৬ বছরের প্রেমের মুহুর্ত গুলো মনের জানালায় উকিঁ দেয়। আমাদের দেখা, সেই থেকে প্রণয় এবং তারপর তার বাগদত্তা হওয়া এসব কিছুই আমার ভেতরটাকে আরো শূন্য করে দিচ্ছে। আমার জ্ঞ্যান হওয়ার একদম শুরু থেকে এই পর্যন্ত সবগুলো স্মৃতি চোখে ভেসে উঠছে।
প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে, আমি কোনোরকমে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছি। এরকম এক সন্ধ্যার সময়েই তার সাথে আমার জীবনে প্রথম কথা হয়েছিলো। আর আজকে এমন এক সন্ধ্যায় আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। কি অদ্ভুত রঙ জীবনের এই কখনো রংধনুর সাতটি রঙ নিয়ে সাজিয়ে দেয় আবার এই কখনো সাদা কালো করে ফেলে।
.
এরই মাঝে আমাদের ২-৩জন কাছের বন্ধুরা ফোন করছে। সবাই নিশ্চিত খবর পেয়ে গেছে ইতিমধ্যে যে আমাদের বিয়েটা হচ্ছে না। আর তাই আমাকে ফোন দিচ্ছে সবটা জানার জন্য। কিন্তু আমি কাউকে জবাবদিহি করতে পারবো না। মুখ দিয়ে আসলে কথা বলার কোনো রকম শক্তি বা সাহস আমার নেই। জীবন থেকে ২টা খুশি একসাথে আমার দূর হয়ে গেছে। প্রথম ভালোবাসার মানুষের স্ত্রী হওয়ার আর দ্বিতীয় হলো কোনোদিন মা হওয়ার। এটাযে একজন নারীর জন্য কতোটা কষ্টকর তা একমাত্র সে মেয়েটাই বুঝতে পারে। তবে আমি জানি আমার ভেঙে পড়লে চলবে না, শক্ত হতে হবে। এভাবে নিজের কষ্টটা যদি সবাইকে দেখিয়ে দেই তাহলে তো কোনো রকমেই আমার পরিবার স্বাভাবিক হতে পারবে না আমার ভালোবাসার প্রতিটা মানুষ আমার জন্য কষ্টে থাকবে। আর আমি দুর্বল হলে এই সমাজ আমার ওপরে হাসবে তারা আমাকে বাচতে দিবে না। আর আমার জীবন দিয়ে দেওয়া ও সহজ না। আমি যদি স্বার্থপরের মতো নিজেকে শেষ করি তাহলে আমার বিধবা মা, বুড়ো দাদু বেচে থেকেও মরে যাবে তাদের সাথে আমি অন্যায় করতে পারি না। যে বিধান বিধাতা আমাকে লিখে দিয়েছে তা আমি নিশ্চয়ই খন্ডাতে পারবো না কিন্তু হ্যাঁ মেনে নিয়ে ধৈর্য্য ঠিকি ধরতে পারবো।
.
আজকে কোনো পেশেন্ট দেখেনি ইরাদ। এই কতোদিন খুব বেশি কাজ নিয়েছিলো ইরাদ যেনো আগামী ১৪ দিনের ভেতর নিজের বেশিরভাগ রোগী সে দেখে নিতে পারে এরপর দীর্ঘ একমাস ছুটি কাটাবে তার স্ত্রী রুহির সাথে। তবে এখন আর প্রয়োজন নেই, কারণ বিয়েটাই তো হচ্ছে না, যেখানে এমন কিছু হবেই না সেখানে ছুটি কাটানোটা বোকামি ছাড়া আর কিছুই না।
খুবই স্বাভাবিকভাবে আজকের সব কাজ ক্যান্সেল করে বাসায় ফিরে গিয়েছে। ইতিমধ্যে ইরাদের মা ইমা খবর পেয়ে গেছে যে ইরাদ আর রুহির মধ্যে ঝামেলা হয়েছে কিছু একটা নিয়ে, আর ইরাদ নাকি বলেছে রুহির সাথে তার বিয়ে হবেনা। সাধারণত যে কোনো মায়ের অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ার কথা এমন একটা কথা শুনতে পেলে যেখানে তার সন্তানের বিয়ে মাত্র ২১ দিন পরে। তবে এখানকার স্থিরচিত্র ভিন্ন, শুধু ভিন্ন না পুরোই অন্যরকম। ইমা ফোনের ওপার থেকে এই খবর পাওয়া মাত্রই খুশিতে ঝুমে ওঠে। ফোন রাখার পর থেকে তার মুখে ফুটে উঠেছে একটা প্রশস্ত হাসি। এই হাসিটা তার জীবন থেকে চলে গিয়েছিলো প্রায় ৩বছর আগেই। যখন ইমা জানতে পারে রুহির মতো একটা অতি সুন্দরী কিন্তু আপার-মিডেল ক্লাস পরিবারের বাধ্য মেয়ের সাথে তার ছেলে প্রণয়ে জড়িয়েছে। হ্যাঁ একটা সময় ইরাদের বাবার চেয়ে কোনো অংশে কম ছিলো না রুহির বাবা কিন্তু যাই হোক মারা যাওয়ার পর তো তেমন কিছু রেখে যেতে পারেন নি সব বিলিয়ে গিয়েছিলেন পরিবারের জন্য। আর এমন বোকা লোক যাকে ইমার ভাষায় সে “ব্রেইনলেস ফুল ” বলে এমন লোকের মেয়েকে নিজের পরিবারের বউ করে এনে কোনো লাভ নেই পাবে না। যেখানে ইরাদ নিজে একজন বড় পলিটিশিয়ানের ছেলে, দেশের বিশিষ্ট ব্যাবসায়ীদের মধ্যে একজন তার বাবা সেখানে এমন রুহি হাতের তুড়ি বাজিয়েই পাওয়া যায়। হয়তো বা অন্যসব মেয়েগুলো রুহির থেকে রূপে গুণে একটু কম কিন্তু তাতে কি? পারবারিক অবস্থান ভালো হওয়া সবচেয়ে বেশি জরুরি। সেম স্ট্যাসারের কতো মেয়ের পরিবার আছে যারা ইমা আহসানের ছেলের সাথে সম্পর্ক করতে আগ্রহী ছিলো, শুধু ছিলো কেনো বলবো? এখনো আছে। এমন বুদ্ধিমতি মায়ের সন্তান হয়েও ইরাদের এইটুকু জ্ঞ্যান হয়নি। সহজ জিনিসটা ইরাদের মা ইরাদকে কোনোদিন বুঝাতেই পারতেন না তার ছেলেকে।
ইমার ধারণা মেয়েটা তার ছেলের টাকাপয়সা দেখে জাদুটোনা করে তার ছেলেকে বশ করেছে। এইজন্যই তো ইরাদ কোনোভাবে মানতেই চাইতো না ইমার কথা গুলো।
আর প্রায় এতোদিন পরে ছেলের জেদের কাছে বাধ্য হয়েই এই মেয়েকে নিজের একমাত্র ছেলের বউ করার জন্য ইমা রাজি হয়েছিলো। তবে এখন একটা বাধা পড়েছে আর এই বাধার আগুনে ইমা নিজেই ঘি দেবে। এই সম্পর্কটা সে হতে দিবে না কোনোমতেই। ছেলে ঘরে ফেরার অপেক্ষা করছে ইমা। মিনিট কাটছে, ঘন্টা কাটছে। অপেক্ষার প্রহর তো শেষ হচ্ছে না, রাত ১১টা বেজে গেছে ইরাদ এখনো এলো না বাসায়। ড্রাইভারকে ইরাদ আগেই ছুটি দিয়েছে তাই তার কাছেও কোনো খোঁজ নেই, এবার ইমার টেনশন হচ্ছে। ইমা তার স্বামী দাহিন সাহেবকে ফোন করলো যিনি বর্তমানে মিয়ামিতে আছেন একটা মিজনেস ডিলিংস করার জন্য,
-হ্যালো, ছেলে তো এখনো বাসায় ফিরে নি আমি প্রচুর টেনশন করছি।
– কিছু হয়েছে?
– ও রুহিকে বিয়ে করবে না। আজকে ডিসিশন নিয়েছে।
– আর ইউ শিওর?
– হুম শুনলাম তো তাই।
– আমি দেখছি।
এবার ইমা একটু রিল্যাক্সড হতে পারছে কারণ সে জানে কিছুক্ষণের ভেতর চাইলেই ইরাদের বাবা ওর খোঁজ সে বেড় করে ফেলতে পারবে।
ফোন রাখতেই ইরাদ বাসায় আসে, ইরাদকে দেখে ইমা ছুটে যায়।
– কোথায় গিয়েছিলে তুমি?
– সবকিছু ঠিক করতে।
কথাটা শুনে ইমা এক পা পেছনে চলে যায়। ইরাদ কি রুহি আর তার মধ্যকার সব ঝামেলা মিটিয়ে ফিরলো?
-কি ঠিক করতে?
কিছুটা ভীতি নিয়ে কথাটা জিজ্ঞেস করলো ইমা।
ইরাদের চোখ দুটো করমজার লাল হয়ে আছে সে ঠিক মতো যে দাড়াতে পারছে না এটা মাত্র লক্ষ্য করলো ইমা। এবং আরো কিছুটা উদগ্রীব হয়ে উঠে উত্তরের অপেক্ষা না করেই প্রশ্ন করে,
-ইরাদ হোয়াট হ্যাপেন্ড? বলো।
-মম, আমি রুহিকে বিয়ে করবো না। এভ্রিথিং ইজ ওভার। সবকিছু ঠিক করতেই গিয়েছিলাম সব কিছুই ক্যান্সেল করে আসছি।আর কেউ এই ব্যাপার নিয়ে একটাও প্রশ্ন তুলবে না ফ্রম টুমররো মর্নিং।
-ইরাদ? কি বলছো?
-ইটস ওভার মম। আমি ঘুমাবো প্লিজ ডোন্ট ডিসটার্ব মি।
কথাটা বলে ইরাদ আর এক মিনিট ও অপেক্ষা করে না মায়ের কোনো উত্তর শোনার জন্য। ওপরে এসে শাওয়ার নেয় ইরাদ। ফ্রেশ হয়ে কোনোভাবে ঢুলতে ঢুলতে এসে বিছানায় বসে ও। হাতের ক্ষতটা থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিলো ওর এখন রক্ত আসা বন্ধ হয়ে গেছে। ক্ষতটার জ্বালাপোড়ার অনুভূতি টা ফিকে লাগছে মনের ক্ষতের কাছে। ফর্সা চেহারাটা লাল বর্ণ ধারন করেছে, মাথাটা প্রচুর ঘুরছে। একদম অসহনীয় মাত্রার শীর্ষবিন্দু কাকে বলে এটা ইরাদ বুঝতে পারছে। তবে অতিরিক্ত ড্রিংক করার কারণে চোখের পাতা আস্তে আস্তে বুঝে আসছে। একটা সময় না চাইতেও ইরাদ ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো, অথবা এটাও বলা যায় সে কিছুক্ষণের জন্য অতিরিক্ত ড্রিংক করার দরুন জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলে।
.
এদিকে সারাটা রাত চোখের দুটো পাতা এক করতে পারে নি রুহি, কিছুক্ষণ পর পরই ডুকরে কেঁদে উঠছে। আগে যখন খুব কষ্ট লাগতো তখন তো ইরাদকে বলতো রুহি। রুহির জীবনে এই ছয় বছরের ভেতর যত দুঃখ এসেছে সবটার মধ্যে ইরাদ এসে রুহির ঢাল হয়ে দাড়িয়েছে। কষ্ট গুলো রুহিকে ব্যাথিত করেছে কিন্তু ক্ষতি করতে পারে নি, ইরাদ রুহিকে ছুতেঁও দেয় নি। আর আজকে রুহির জীবনের সেই ইরাদই একদম চলে গেছে। ফজরের নামাজে রুহি সেজদায় গিয়ে প্রচুর কান্না করলো আর মনে মনে শপথ নিলো আর কান্না করবে না আল্লাহ যেনো সব সহ্য করার ক্ষমতা তাকে দেয়। শক্ত না থাকলে যে সমাজ ওকে কুড়ে খেয়ে ফেলবে আর এই আগুনে শুধু রুহি না ওর পুরো পরিবারটা জ্বলে যাবে। “সকাল থেকেই বাইরে গেলে বিয়ে নিয়ে ৫০টা প্রশ্ন উঠবে যে সব প্রশ্নের উত্তর রুহিকে দিতে হবে কোনো রকম কান্না কাটি ছাড়া। নিজেকে প্রচুর কঠিন রেখে।” নামাজ সেড়ে রুহি নিজের মোবাইলটা বন্ধ করে দিলো, কিছুক্ষণ পরে সিমটা ভেঙে ফেলো দিলো। কারণ যদি ইরাদ আবার উইক হয়ে যায়? কোনোভাবে ওকে কল দিয়ে ফেলে? তাহলে রুহি যে নিজেও দুর্বল হয়ে যেতে পারে আর এইভাবে সে ইরাদকে ঠকাতে পারবে না। “ইরাদ তুমি আমাকে যতো কটু কথাই শুনাও না কেনো তুমি আমাকে আজ পর্যন্ত যতটা ভালোবাসা দিয়ে এসেছো তার কাছে আমি একে তুচ্ছ বিষয়ই ভাববো। তুমি দূরে থেকেও খুব ভালো থাকো, আমি এটাই চাই।”
কথা গুলো হলো নিজের ঝড় ওঠা হৃদয়কে শান্ত করার জন্য। রুহির অপরূপ সুন্দর চেহারাটা একদিনেই মলিন হয়ে গেছে। বিয়ের কথা লাগার পর থেকে সে রূপ আরো বেড়ে গিয়েছিলো সেই রূপ আজকে কয়েক ঘন্টার ব্যাবধানে ম্লান হয়ে গেছে।
রুহি জানে ইরাদ এমনিতেই ওর চেয়ে ভালো মেয়ে ডিজার্ভ করতো। তবুও তো ইরাদের আপ্রাণ চেষ্টা ভালোবাসা আর জেদের কাছে রুহি হেরে গিয়ে ওর জীবনে এসেছিলো। কিন্তু এখন রুহির এমন অক্ষমতার পরে কিভাবে রুহি ইরাদকে বিয়ে করে নেবে? এটা অসম্ভব, আর এই জিনিসটা ইরাদ নিজে থেকেই যে বুঝেছে, মনকে দূরে রেখে যে ডিসিশন নিয়েছে ইরাদ, বিবেক দিয়ে ভাবতে গেলে রুহি পরিপূর্ণ খুশি হয়েছে। কিন্তু ওইযে মানুষের মন? স্বার্থপরের মতো কষ্ট পায়। ভালোবাসাটাই এমন আমরা জানি কোনটা ভালো তবুও দুঃখ পাই।
দুপুর ২ঃ৩০টা। রুহি ঘুমাচ্ছে তাই রাফিয়া রুহিকে ঘুম থেকে জাগাচ্ছে না। মেয়েটার কষ্ট গুলো বা অতীত নিয়ে আর একবারো কোনো শব্দ উচ্চারণ করবে না কেউ এই বাসায় অথবা ইরাদ নামের কেউ যে ছিলো তার কথাটাও মনে করবে না কেউ।
সালেহার (রুহির দাদি) কোনোভাবেই মানতে নারাজ ইরাদ এভাবে রুহিকে কষ্ট দিয়েছে, উনি চান ইরাদের সাথে কথা বলতে তবে রাফিয়া মেয়ের জন্য শাশুড়িকে সবকিছু বুঝিয়ে বলেছেন সে যেনো ইরাদের সাথে কিছু না বলে। এতে তার মেয়ের জীবনের কালো অধ্যায়টা বারবার খুলে যাবে আর মেয়েটার যন্ত্রণাই বাড়বে। ইরাদের প্রতি রাফিয়ার অনেক অভিমান আছে, ইরাদ রুহিকে আগলে রাখবে সারাজীবন কোনোদিন কোনো দুঃখ পেতে দিবে না এই ওয়াদা করেছিলো আর আজকে এভাবে বিয়ের আগেই শুধু তার মেয়েটা সন্তান জন্মদান অক্ষম বলে ফেলে চলে গেলো? কেনো এই রকম করলো ইরাদ? বাচ্চা কি দত্তক নেওয়া যেতো না? রাফিয়া রুহিকে আর ১০জন মেয়ের চেয়ে বেশি যত্ন করে বড় করেছে, গুণী করেছে বুয়েট থেকে পাশ করা একটা ইঞ্জিনিয়ার তার মেয়ে বিশাল এক ম্যাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে সে চাকুরী করছে। দেখতেও তার মেয়ে ১০০জনের থেকে সুন্দরী।
তাহলে কেনো ইরাদ এমন করলো? এই মেয়েটার মনটা এতো স্বচ্ছ যা মা হিসেবে রাফিয়াকে সবসময় গর্বিত করে। এইজন্য মেয়েকে যতটুকু সাপোর্ট একটা মা হিসেবে রাফিয়ার দ্বারা দেওয়া সম্ভব সে দেবে ইরাদকে ভুলতে, নতুন করে নিজেকে গুছিয়ে নিতে। তাই তো সুন্দর মতো মেয়ের পছন্দ রান্না করেছে সব আজকে রাফিয়া। গতদিন থেকে মুটামুটি রাফিয়া না খাওয়া, মেয়ে যেখানে এক ফোটা পানিও দিচ্ছে না মুখে সেখানে মা হয়ে কিভাবে খাবার পেটে যায় রাফিয়ার? তবে না খেলে তো চলবে না। সবকিছু ঠিক করতে হবে হয়তো সময় দরকার কিন্তু সবটা ভুলে একদিন রুহিও সুখী হবে এই আশাই রাফিয়া করছে আর রাখছে আল্লাহর ওপরে প্রবল বিশ্বাস।
তবে ইমা এই প্রথম রুহির ওপরে খুশি, আপদটা আমার ছেলেকে ছেড়ে গেছে তবে। অন্য মেয়ে হলে একবার তো আসতোই সব ঠিক করতে তবে এই রুহি মেয়েটা বেহায়ার মতো সবকিছু ঠিক করতে ছুটে আসে নি বরং রুহির ফোন বন্ধ সাথে রুহির মায়ের ও। এটা অবশ্য শান্তি দিচ্ছে ইমাকে।
বিকেলের দিকে ইরাদের ঘুম থেকে ওঠে, হাতের ব্যাথা ও মাথার ব্যাথা পাল্লা দিয়ে অতিষ্ট করে তুলেছে ইরাদকে তাই ইরাদ অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে নিলো হাতে আর মাইগ্রেনের মেডিসিন নিলো।
হঠাৎ করেই রুহির চেহারাটা ভেসে উঠলো,
যখন রাতে রুহি আর ইরাদের ঝগড়া হতো রুহি সারারাত কথা না বললেও ভোরে ইরাদের বাসার কেয়ারটেকার জুম্মন চাচাকে ফোন করে ইরাদের মাইগ্রেনের মেডিসিন খাওয়ানোর ব্যাবস্থাটা ঠিকি করতো। ইরাদ নিজে ডাক্তার হলেই কি? রুহি ছিলী ইরাদের পার্সোনাল ডাক্তার। যে একান্ত ইরাদের সকল রোগব্যাধি চট করে ধরে ফেলতো এবং তার দ্রুততম চিকিৎসা ও করে দিতে পারতো। আজকে এসব স্মৃতির পাতায় নাম লিখিয়ে চলে গেছে। তবে ইরাদের একটুও আফসোস নেই তার এই নির্ণয়ের ওপর।
আর এদিকে ইরাদের জন্য কিছু প্ল্যান করে রেখেছে ইমা যা আস্তে আস্তে ওকে সবকিছু থেকে বেড় করে আনবে। তবে একবারে এই চাপ দেওয়া যাবেনা, ছেলেটা এখনো ঘুম থেকেই ওঠে নি।
ইরাদের ঘরে কয়েক বার কাজের লোক পাঠিয়ে খোঁজ করিয়েছে ইমা কিন্তু ছেলের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ আর জবাব আসছিলো না। ইমা কাল রাতে ছেলেকে দেখে বুঝেছে, রুহিকে হয়তো ইরাদ ছেড়ে দিয়েছে ঠিকি কিন্তু ভালোবাসাটা এখনো আছে এক রাতে তার ভালোবাসা হাওয়া তো হবে না, যে মেয়ের জন্য ছেলেটা অসম্ভব পাগলামি করেছে তাকে কি এক নিমিষেই ভুলে যাওয়া সম্ভব? নাহ এটা সম্ভব না। আর তাই ইমা খুব বুদ্ধিমত্তার সাথে এবার রুহিকে ইরাদের মন থেকে ছুড়ে ফেলে দিবে।
(রুহির আর ইরাদের পথ আলাদা হয়ে গেছে নিজের ইচ্ছায় তবে এবার তাদের মায়েরাও সব পুরোনো স্মৃতি মুছে ফেলতে নিজেদের সন্তানদের সাহায্য করবে….. কিন্তু কাউকে অনেক ভালোবাসলে কি তার সব স্মৃতি গুলো মিটিয়ে দেওয়া সহজ?)
চলবে……..