অর্ধের অর্ধাঙ্গিনী পর্ব -০৮

0
1906

#অর্ধের অর্ধাঙ্গিনী
#লেখনিতেঃতানজিলা খাতুন তানু
#পার্টঃ৮

কলিং বেলের শব্দ পেয়ে অর্ধের মা দরজা খুলতে যায় দরজা খুলে তিনি চমকে উঠলেন।এতদিন পর চোখের সামনে তাকে দেখে চমকে উঠলো।

মাঃ সোনিয়া তুমি?

সোনিয়াঃ আন্টি কেমন আছো?

মাঃ ভালো তুমি।আর এতদিন কোথায় ছিলে?

সোনিয়াঃ ভালো আছি,আসলে আন্টি আমি দেশের বাইরে ছিলাম, দেশে এসেছি এই কয়েকদিন হলো।

মাঃ ওহ

সোনিয়াঃ আন্টি অর্ধ কেমন আছে,ওহ ঠিক আছে তো। আমি তো দেখলাম খবরে এখন কেমন আছে ওহ।

মাঃ হ্যা মা অর্ধ এখন ঠিক আছে।

সোনিয়াঃ আন্টি আমি আগে ওর সাথে দেখা করে আসি তারপর আপনার সাথে কথা বলবো।

মাঃ আচ্ছা যাও।

সোনিয়া অর্ধের রুমে চলে যায়। সুতপা অর্ধেন্দুর খাবার তৈরি করে রুমে ঢুকতে যাবে তখনি থমকে গেলো। একটা মেয়ে অর্ধকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে, অর্ধ ওহ কিছু বলছে না। সম্ভবত মেয়েটা তার পরিচিত।

অর্ধের চোখ যায় বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা সুতপার দিকে।

অর্ধঃ সুতপা ভেতরে আসো।

সুতপা অর্ধের কথা শুনে ধীর পায়ে ভেতরে প্রবেশ করলো, ততক্ষনে সেই মেয়েটা অর্ধের বুক থেকে সরে গিয়ে পাশে বসেছে,সুতপা মেয়েটাকে পরক্ষ করতে লাগলো মেয়েটার চোখ মুখ লাল হয়ে আছে ,কাজল লেপ্টে গেছে,চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। হয়তো কান্নাকাটির জন্যই। সুতপার বুকে একটা তীব্রতর ব্যথা হচ্ছে। অর্ধকে হারানোর ভয়ে হয়তো।

অর্ধঃ সুতপা এটা আমার বান্ধবী সোনিয়া আর সোনিয়া ওটা আমার স্ত্রী সুতপা।

সোনিয়া চমকে উঠে সুতপার দিকে তাকালো। ওর চোখে মুখে বিস্ময় হয়তো অর্ধের বিয়ে হয়েছে এটা বিশ্বাস করতে পারছে না।

অর্ধঃ এতটা অবাক হওয়ার কিছুই নেয় সবটা আমি তোকে পড়ে বলবো ক্ষন।

সোনিয়াঃ আচ্ছা।

সুতপাঃ আপনার খাবার।

অর্ধঃ রেখে যাও। আর সোনিয়ার জন্য কফি আনো।

সুতপাঃ আচ্ছা।

সুতপা খাবারটা রেখে চলে যায়, কেন জানো সুতপার মনটা খারাপ হয়ে উঠলো। সুতপা চলে যেতেই সোনিয়া বললঃ তুই বিয়ে করেছিস কবে?

অর্ধঃ সেটা অনেক কাহিনী।

সোনিয়াঃ সবটা খুলে বল প্লিজ।

অর্ধ সোনিয়াকে সবটা বললো। সবটা শুনে সোনিয়া বললোঃ তুই কি সুতপাকে ভালোবাসিস?

সোনিয়ার প্রশ্ন শুনে অর্ধ চুপ করে যায় কি উত্তর দেবে খুঁজে পাইনা।

সোনিয়াঃ অর্ধ প্লিজ সত্যি টা বল।

অর্ধঃ জানি না।

সোনিয়া অর্ধের উত্তর শুনে হতাশ হলো।‌ সুতপা ও কেন জানো মেয়েটা অর্ধের পাশে সহ্য করতে পারছে না।

সোনিয়া আর অর্ধ ভালো বন্ধু কলেজে থেকে ওদের বন্ধুত্ব। দীর্ঘ ৩ বছর পর সোনিয়া আর অর্ধের দেখা হয়েছে। সোনিয়া এতদিন অর্ধের সাথে কোনো যোগাযোগ রাখেনি, আর আজকে হঠাৎ ফিরে এসেছে।

রাত্রিবেলা…..

সোনিয়াঃ তুমি আমাকে বলোনি কেন,অর্ধ বিবাহিত?

সোনিয়াঃ দ্যাখো আমি এসব করতে পারবো না। আমি আজকেই এখান থেকে চলে যাবো।

সোনিয়াঃ কেন এমন করছো। প্লিজ এরকম করো না।

সোনিয়া ফোনটা কেটে দিয়ে কাঁদতে লাগলো। আমাদের কাছে এমন কিছু পরিস্থিতি আসে আমরা না পারি সেগুলো সহ্য করতে আর না পারি এড়িয়ে যেতে।

৩দিন পর…

অর্ধ আর সুতপার দূরত্বটা বেড়ে গেছে, সোনিয়া সবসময় অর্ধের কাছে থাকে। সুতপা অর্ধেন্দুর কাছে আসে কিন্তু ওকে একা পাইনে। পুনম সুতপার খারাপ লাগাটা বুঝতে পারছে,অর্ধের মাও ব্যাপারটা খেয়াল করেছে কিন্তু মাথা ঘামায় নি ওদের সমস্যা ওরা নিজেরাই মিটিয়ে নেবে এই আশা রেখে। কিন্তু পুনম বললো।

পুনমঃ সুতপা

সুতপাঃ দি বলো

পুনমঃ খারাপ লাগছে তোর তাই না।

সূতপাঃ কেন খারাপ লাগবে।

পুনমঃ তুই আমার কাছ থেকে লুকাবি। বল কি হয়েছে।

সুতপা পুনমকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। পুনম সুতপাকে সামলে নিয়ে বললোঃ কি হয়েছে বল।

সুতপাঃ দি তোমার ভাইটা না খুব খারাপ।

পুনম সুতপার এমন কথা শুনে হাসলো।

পুনমঃ ভালোবাসিস আমার ভাইকে?

সুতপাঃ না কখনো না ওই গুন্ডাকে কে ভালোবাসবে আমি ওকে ভালোবাসি না।

পুনমঃ তোর কথাতেই প্রমান হয়ে যাচ্ছে তুই ঠিক কতটা অর্ধকে ভালোবাসিস।

সুতপা চুপ করে থাকে।

পুনমঃ‌ সব ঝামেলা মিটিয়ে নতুন করে সবকিছু শুরু কর। সময়টা এভাবে যেতে দিস না। তাহলে দেখবি আর সময়ই পাবি না।

পুনম চলে যায়,সুতপা পুনমের কথাগুলো ভাবতে থাকে। হ্যা ওহ সত্যি সত্যি অর্ধকে ভালোবাসে আর সেটা আজ থেকে নয় অনেকদিন আগে থেকেই।মায়ের মুখে অর্ধের গুনগান শুনতে শুনতে কখনো নিজের মনের মাঝে অর্ধকে জায়গা দিয়ে দিয়েছে সেটা ওহ নিজেও জানে না। সবার সামনে অর্ধকে রাগ দেখালেও ভেতরে ভেতরে পছন্দ করতো ঠিকই। ইচ্ছা করে বারবার অর্ধেকে রাগিয়ে দিতো। সবকিছুই স্বাভাবিক ছিলো কিন্তু যখন ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছিলো তখন খুব কান্নাকাটি করেছিলো সুতপা। কিন্তু বাবার কথাকে মেনে নিয়েছিলো অর্ধকে ভুলতে চেস্টা করেছিলো। অর্ধ যেদিন সুতপার বিয়ে উপলক্ষে ওদের বাড়িতে গিয়েছিলো সেদিন ওর মনে হয়েছিলো নিজের প্রানটা কেউ বের করে নিচ্ছে। যার জন্য কনের সাজ সাজতে চেয়েছিলো আর তার সামনেই অন্য জনের জন‌্য সেজেছিলো। অর্ধের সাথে বিয়ে হওয়াতে সুতপা খুব খুশি হয় কিন্তু ওর মায়ের‌ করা ষড়যন্ত্র মেনে নিতে কস্ট হয়।

সুতপাঃ‌ আমি আর দেরি করবো না।‌আমি আজকেই ওকে বলে দেবো আমার মনের কথা।‌

সুতপা অর্ধেন্দুর জন্য কিছু জিনিসপত্র কিনতে বাইরে বের হয়।

সোনিয়াঃ অর্ধ আমি তোকে কিছু বলতে চাই।

অর্ধঃ‌কি বলবি বল।

সোনিয়াঃ‌আসলে সুতপা

অর্ধঃ‌ এই কয়েকদিনে ওর সাথে আরো অনেক দূরত্ব বেড়ে গেছে। বল কি বলবি

সোনিয়াঃ‌ সুতপার খুব..

সোনিয়া পুরো কথাটা শেষ করার আগেই অর্ধের মা হাঁপাতে হাঁপাতে ভেতরে প্রবেশ করলেন।

অর্ধঃ কি হয়েছে মা হাপাচ্ছো কেন?

মাঃ সুতপা

অর্ধঃ কি

মাঃ‌ সুতপা সেই বিকালে বের হয়েছে এখনো বাড়ি আসেনি। অনেকবার ওকে ফোন করেছি কিন্তু ফোন পাচ্ছি না। আমার খুব চিন্তা হচ্ছে।

অর্ধ চমকে উঠলো।

অর্ধঃ‌ আমাকে বলোনি কেন,ওহ একা একা বাইরে গেছে?

মাঃ সুতপা বারন করেছে।

অর্ধঃ মা তোমারাও না।‌এখন কি করবো আমি।

অর্ধ সুতপার খোঁজ করতে থাকে। অর্ধের মনে‌পড়ে সুতপারর এক বান্ধবীর কথা।

অর্ধঃ‌হ্যালো আমি অর্ধেন্দু বলছি।

– হ্যা বলুন

অর্ধঃ‌ বলছি সুতপা কোথায় জানো।

– না তো, ওহ তো বলবো একবার… মার্কেটে যাবে কিছু কেনার জন‌্য কেন কি হয়েছে।

অর্ধঃ ওর সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না।‌তুযি খোঁজ পেলে আমাকে বলো।

-আচ্ছা।

অর্ধ সুতপার খোঁজ লাগাচ্ছে। পুলিশকেও ইনফর্ম করেছে।‌কিন্তু কেও খোঁজ দিতে পারছে না।

ওদিকে…..

একটা অন্ধকার ঘরে সুতপাকে বেঁধে রাখা হয়েছে।

সুতপাঃ আমাকে কেন এনেছেন এখানে,আমাকে ছেড়ে দিন আমি বাড়ি যাবো।

তখনি একটা কন্ঠস্বর ভেসে আসলোঃ বাড়ি নয় তুমি উপরে যাবে।

বলেই অট্রহাসিতে ফেটে পড়লো।

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে