#অর্ধের অর্ধাঙ্গিনী
#লেখনিতেঃতানজিলা খাতুন তানু
#পার্টঃ৬
সুতপার মা মেয়ের কাছে বেজায় অবাক,আগে কখনো না সুতপা এরকম করেছে আর না এতটা মেজাজ দেখিয়েছে।আজকে কি হয়েছে যার জন্য এরকম করে সবার সামনে থেকে টেনে নিয়ে আসলো।
মাঃ কি হয়েছে এভাবে হাত ধরে নিয়ে আসলি কেন?
সুতপাঃ কেন করলে এটা।
সুতপার কথা শুনে ওর মা ওর দিকে তাকায়,সুতপার চোখগুলো অশ্রুসিক্ত। সুতপার মায়ের বুকটা ধ্বক করে উঠলো। মেয়েটা তার যে বড়ো আদরের,কখনোই কস্ট পেতে দেয়নি। আজকে তাহলে কি হলো,কি হয়েছে অর্ধের সাথে কি কিছু হয়েছে।
মাঃ কি হয়েছে মা।
সুতপাঃ জানো না এটা।
মাঃ তোর কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না কি হয়েছে বল আমাকে।
সুতপাঃ তুমি সমরকে কি বলেছো আমার নামে?
সুতপার মুখে সমরের নাম শুনে সুতপা চমকে উঠলো।
মাঃ সমর এখানে কোথা থেকে আসছে।
সুতপাঃ মা প্লিজ আর কোনো নাটক আমার ভালো লাগছে না। আমাকে সমর সবটাই বলেছে। তোমার লজ্জা লাগে না নিজের মেয়ের নামে এরকম কথা বলতে।
সুতপা রাগে চিৎকার করে উঠলো। সুতপার মা সুতপার দিকে তাকিয়ে আছে। সুতপার রাগের কারনটা সবটাই ওনার কাছে পরিস্কার হয়ে গেছে।
মাঃ আমার কথাটা শোন একবার
সুতপাঃ কি শুনবো মা আমি তো তোমার মেয়ে কেন আমার সাথে এরকম করলে। তোমাদের যখন এতই আমাকে নিয়ে অসুবিধা ছিলো আমাকে বলতে পারতে এসবের মানে কি?
মাঃ তোকে নিয়ে আমাদের কোনো সমস্যা ছিলো না আর না আছে। আমি শুধু মাত্র চেয়েছিলাম তোর সাথে অর্ধের বিয়ে দিতে।
সুতপাঃ তাহলেই ওর সাথেই বিয়েটা ঠিক করতে পারতে এত নাটক করার মানে কি, আমাকে সবার কাছে ছোটো করার মানে কি?
মাঃ তুই তোর বাবা কে খুব ভালো করে চিনিস,তোর বাবাকে অর্ধের কথা বলার আগেই তিনি তোর বিয়ে সমরের সাথে ঠিক করে ফেলে। আমি বা তোর মামনি এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না। তোর বাবাকেও বলে লাভ নেয় কারন সে এক কথার মানুষ। আমরা আর কোনো উপায় না পেয়ে সেদিন সমরকে ফোন করি..
সমরঃ হ্যালো
মাঃ আমি সুতপার মা বলছি
সমরঃ আরে আন্টি আপনি সবকিছু ঠিক আছে তো আপনি ফোন করেছেন।
মাঃ তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো
সমরঃ কি কথা
মাঃ আসলে কিভাবে বলবো আমি বুঝতে পারছি না।
সমরঃ আন্টি আমি আপনার ছেলের মতো,ছেলে ভেবেই বলুন না কথাটা।
মাঃ আসলে কি হয়েছে বলো তো। আমার মেয়ে মানে সুতপা একটা ছেলেকে ভালোবাসে। আর ওর বাবা তোমার সাথে বিয়ে ঠিক করেছে। এখন ওহ কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। মেয়েটা কান্না কাটি করছে। তোমার সাথে বিয়ে হলে তিন তিনটে জীবন নস্ট হয়ে যাবে।
সমর কিছুক্ষন ভেবে বললোঃ তাহলে আমি বাড়িতে বলছি বিয়েটা ভেঙ্গে দেবার জন্য
মাঃ না বাবা এটা করো না। এটা করলে ওর বাবা আবারো ওর বিয়ে অন্য জায়গায় ঠিক করবে
সমরঃ তাহলে
মাঃ তাহলে তুমি বিয়ের দিন এই বাড়িতে আসবে না। আর তোমার বাড়িতে এই ব্যাপারটা বলে দেবে কিন্তু আমাদের এখানে কাউকে কিছু জানিয়ো না। এই কথাটা রেখো বাবা
সমরঃ আচ্ছা।
সমর সুতপার মায়ের কথা মতোই কাজ করে। বিয়ের দিন এই বাড়িতে আসেনি। আর সুতপার বিয়ে অর্ধের সাথে হয়ে যায়।
মাঃ মারে আমরা যা করেছি তোর আর অর্ধের ভালোর জন্যই করেছি। আজকে সেটা না বুঝলেও পড়ে ঠিক বুঝবি। আর আমি যদি তোর সাথে কোনো অন্যায় করে থাকি তাহলে মাফ করে দিস।
সুতপার মা মুখে আঁচল চাপা দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে চলে যায়। সুতপা ও কাঁদতে কাঁদতে বসে পড়ে। কাছের মানুষ গুলো যখন প্রতারনা করে তখন খুব কস্ট হয়। আর সেটা যদি নিজের মা হয়ে তো কতটা কস্ট হয় সেটা শুধু সেই জানে।
সুতপাঃ মা কেন করলে এটা, তোমার তো জানতে আমি অর্ধকে পছন্দকরি না কেন আমার সাথে ওই নাটকটা করলে। কেন?
এই কথাটা আর কেউ না শুনলেও অর্ধ শুনেছিলো, অর্ধ সুতপার মাকে কাঁদতে কাঁদতে বেড়িয়ে যেতে দেখে ওই রুমের দিকে আসতেই সুতপার কথাগুলো শুনতে পাই। নিজের অজান্তেই অর্ধের বুকে একটা ব্যথা অনুভব হচ্ছে,কেন ওর খারাপ লাগছে ও তো সুতপাকে মেনে নেয়নি। আজকে সুতপা ওকে অপছন্দ করেনা বলে তাতে ওর কি?
১ সপ্তাহ পর…..
পরেরদিন বিকালেই সুতপা অর্ধেন্দুর বাড়িতে চলে আসে। সুতপা চুপচাপ হয়ে গেছে। ওর মায়ের সাথে কথাই বলেনা। অর্ধের সাথেও আর ঝগড়া করে না। কথাও বলেনা,অর্ধ বলেনা। সুতপার উপর অভিমান করে আছে।সুতপা সারাদিন একা একা চুপ করে থাকে। মামনির সাথেও খুব একটা কথা বলেনা। অর্ধ কালকে ক্যাম্পে ফিরে গেছে।সুতপা সারাদিন নিজের ঘরেই থাকে। সবাই সুতপার এই পরিবর্তনে অবাক হয় গেছে।
সুতপার মা অর্ধের মাকে সবটাই জানিয়েছে অর্ধের মাও সুতপাকে কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না।বারবার মনে হচ্ছে ওদের ভালো করতে গিয়ে কি খারাপ করে দিলো।
পুনমঃ মা সুতপার কি হয়েছে বলো তো।
মামনিঃ সবকিছুর জন্য আমরাই দায়ী।
পুনমঃ মানে?
মামনি সবকিছু পুনমকে বললো,পুনম সবকিছু শুনে শকে চলে গেছে।এসব ব্যাপারে কিছুই জানতো না। অর্ধ আর সুতপার বিয়েটা একটা প্ল্যান সেটা বিশ্বাস করতে পারছে না।
পুনমঃ মা এটা তোমরা কি করছো। কেন করেছো।
মামনিঃ বিশ্বাস কর পুনম আমার শুধু ওদের দুজনকে এক করতে চেয়েছিলাম আমাদের আর অন্যকিছু ইচ্ছা ছিলো না।
পুনমঃ তোমরা অন্যায় করেছো এটা করা ঠিক হয়নি।
মামনিঃ কি করতাম তাহলে আমরা নিজেদের ছেলে-মেয়েদের পছন্দ গুলোকে এভাবে অন্যের হয়ে যেতে দেখেছে পারতাম।
পুনমঃ মানে?
মামনিঃ কিছু না।
মামনি ওখান থেকে চলে যায়। পুনম ভাবতে থাকে ছেলে- মেয়েদের পছন্দ মানে কি? অর্ধ আর সুতপা তো একে অপরকে পছন্দ করেনা। তাহলে আময়ের কথার মানে কি?
সুতপা নিজের ঘরে বসে ছিলো, ভালো লাগছে না,মাথাটা প্রচন্ড ব্যথা করছে তাই কফি করবে বলে রান্নাঘরের দিকে যাবার সময় বসার ঘরে দেখলো টিভি চলছে।
কফি তৈরি করে আসার সময় টিভির দিকে চোখ পড়লো।সুতপার হাত থেকে কফিমগটা পড়ে যায়।
টিভিতে বলছে-“বর্ডারে থাকা আর্মিদের উপর উগ্রপন্থীরা আক্রমন করেছে, এর ফলে প্রচুর আর্মি নিহত হয়েছে,আর অনেকেই গুরুত্বর আহত হয়েছে”।
#চলবে……