#অর্ধের অর্ধাঙ্গিনী
#লেখনীতেঃতানজিলা খাতুন তানু
#পার্টঃ৫
অর্ধ প্যাকেটটা খুলে অবাক হয়ে বললোঃ এটা কি সুতপা।
সুতপাঃ কেন ওটা চোখে দেখতে পারছে না নাকি,এই বয়স থেকেই চোখের এই অবস্থা পড়ে কি হবে কে জানে। আপনাকে কি দেখে যে আর্মিতে চান্স দিয়েছিলো কে জানে।
অর্ধঃ উল্টো পাল্টা কথা বলবে না একদম।
সুতপাঃ আমি কোথায় উল্টোপাল্টা বললাম আপনি দেখতে পাচ্ছেন ওটা কি তাও জিজ্ঞাসা করছেন কেন?
অর্ধঃদেখতে তো পাচ্ছি। কিন্তু এই শার্ট,প্যান্ট কার জন্য।
সুতপাঃ আমার তো আর প্রেমিক নেয় যে তার জন্য কেনাকাটা করবো।
অর্ধঃ তাহলে কার জন্য।
সুতপাঃ তাহলে আবার কি আপনার জন্য কিনেছি।
অর্ধ চোখ বড়বড় করে তাকালো সুতপার দিকে।সুতপা ওর জন্য কেনাকাটা করেছে বিশ্বাস হচ্ছে না।কিছু কিনতে বলেছিলো বলে যে এতটা ঝগড়া করলো সেই আবার কিনেছে এটা মেনে নিতে পারছে না ঠিক।
সুতপাঃ চোখগুলো এত বড়বড় হয়ে গেলে কেন?
অর্ধঃ না ভূতের মুখে রাম নাম শুনে
সুতপাঃ একদম উল্টোপাল্টা কিছু বলবেন না।আমি এতটাও খারাপ নয় যে সবার জন্য কিনবো আপনার জন্য কিছু কিনবো না।
অর্ধঃ তুমি তাহলে ভালো তাই তো।
সুতপা অর্ধেন্দুর দিকে তাকিয়ে বললোঃ আমি ভালো না খারাপ সেটা আমি আপনাকে বলবো না।
অর্ধঃওকে।
অর্ধ ওখান থেকে চলে যায়। সুতপার সামনে থাকা মানেই ঝগড়া করা । মেয়েটা ঝগড়া করতেও পারে।
পরেরদিন…….
অর্ধ আর সুতপা ওদের বাড়িতে যাবার জন্য বের হয়েছে।
অর্ধঃ বাড়ির জন্য কি খাবার নেবে।
সুতপাঃ আপনার যা ভালো লাগে তাই নিন।
অর্ধঃআচ্ছা।
অর্ধ বাইকটা একপাশে রেখে সুতপাকে দাঁড় করিয়ে খাবার কিনতে গেলো। অর্ধ খাবার কিনে ফিরছে তখনি দেখতে পেলো একটা গাড়ির তুমুল বেগে ছুটে আসছে সুতপার দিকে।অর্ধ চিৎকার করে সুতপাকে সরে যেতে বলছে কিন্তু চারপাশের কোলাহলে সুতপা অর্ধেন্দুর কথা শুনতে পাচ্ছে না।অর্ধ কোনো রকম উপায় না পেয়ে খাবার গুলো ফেলে দৌড় লাগলো। কিন্তু অর্ধ সুতপার থেকে অনেকটা দূরে থাকায় গাড়িটা চলে যায়।
অর্ধ করুন চোখে তাকিয়ে থাকলো, গাড়ি টা চলে যেতেই হঠাৎ সামনে তাকিয়ে সুতপাকে দেখে অর্ধের প্রান ফিরে আসলো। দৌড়ে গিয়ে সুতপাকে জড়িয়ে ধরলো,সুতপা রীতিমত হতভম্ব, অর্ধ হাঁপাচ্ছে। অর্ধের কোনোদিকে খেয়াল নেয়,চারপাশে কি হচ্ছে সেই সমন্ধেও জ্ঞান নেয়।পাশ থেকে কারোর ডাকে অর্ধের জ্ঞান ফিরলো।
অর্ধঃ আপনাকে ধন্যবাদ আপনার জন্যই সুতপা সুস্থ আছে, আপনি ঠিক সময়ে ওকে টেনে না নিলে হয়তো আজকে কি হতে কি জানে
ছেলেটা অর্ধের দিকে তাকিয়ে আলতো করে হেসে বললোঃ খুব ভালোবাসেন তাইনা।
ছেলেটার এমন কথায় অর্ধ,সুতপা দুজনেই চমকে দুজনের দিকে তাকালো। ওদের দুজনকে অস্বস্তি বোধ করতে দেখে ছেলেটা আবারো বললোঃ আমি সবটাই জানি।
সুতপা অর্ধেন্দুর ভ্রু কুঁচকে গেলো,ছেলেটা কি জানে। সুতপা ছেলেটাকে বললোঃ কি জানেন আপনি।
ছেলেটাঃ তুমি আমাকে চিনতে না পারলেও আমি কিন্তু তোমাকে চিনতে পেরেছি। সমর নামটা কি শুনেছো তুমি।
সুতপাঃ সমর নামটা খুব চেনা চেনা লাগছে।
সমরঃ আমিই সমর তোমার সাথে আমারই বিয়ে ঠিক হয়েছিলো।
সুতপা,অর্ধ দুজনেই চমকে উঠলো। অর্ধ সুতপার দিকে তাকিয়ে কি যেন একটা ভেবে বললোঃ তোমরা কথা বলো আমি বাড়ির জন্য কিছু কিনে আনি ওইগুলো তো নস্ট হয়ে গেছে।
সমর বা সুতপাকে কিছু না বলতে দিয়ে অর্ধ চলে যায়। সমর অর্ধের এমন কাজের মানে বুঝতে পারলো না।
সুতপাঃ আমার আপনার কাছে কিছু প্রশ্ন আছে।
সমরঃ কি প্রশ্ন
সুতপা মনে মনে বললোঃ আমি বিয়ে করতে চাইনি ঠিকই,আপনি আসেননি ভালো হয়েছে কিন্তু আপনার না আসার জন্য ওই গুন্ডাটা আমার গলায় ঝুলেছে আপনাকে তো আমি ছেড়ে দেবো না।
সমর সুতপাকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললোঃ কি বলো।
সুতপাঃ বিয়ের পিঁড়িতে আমাকে রেখে চলে যাবার মানে কি?
সমর সুতপার এমন কথায় চমকে উঠে বললোঃ কেন তুমি তো এটাই চেয়েছিলে।
সুতপা আকাশ থেকে পড়ল,এই ছেলে জানলো কিভাবে সুতপা এটাই চাইছিলো মনোবিদ নাকি।
সুতপাঃ মানে?
সমরঃ মানে আবার কি তুমি একজনকে ভালোবাসতে তাই তো এই বিয়েটা ভাঙ্গলে।
সুতপা আকাশ থেকে পড়লো,ওহ আবার কবে কোন ছেলেকে ভালোবাসতো নিজেই জানে না। আর এই ছেলে বলছে কাকে ভালোবাসতো কপাল।
সুতপাঃ আপনি এসব কি বলছেন,এসব আপনাকে কে বললো?
সমরঃ …..
সমরের কথা শুনে সুতপার চোখ বড়বড় হয়ে গেলো।
সুতপাঃ কি?
সমরঃ হ্যা কিন্তু তুমি এত অবাক হচ্ছো কেন,মনে হচ্ছে সব মিথ্যা।
সুতপা কিছু বলতে যাবে তখনি সমরের কল আসে একটা।কলটা রিসিভ করে কিছুক্ষন কথা বলে সমর সুতপার উদ্দেশ্য বললোঃ আচ্ছা আজকে আসি পরে কোনোদিন কথা হবে।
সমর সুতপাকে বিদায় জানিয়ে চলে যায়। অর্ধ ওহ সেইসময় ফিরে আসলো।
অর্ধঃচলে গেছে
সুতপাঃ হুম
অর্ধঃএবার যায় আমরা।
সুতপাঃহুম।
সুতপা আর অর্ধ ওদের বাড়িতে চলে আসে। সুতপা কে দেখেই ওর মা কান্না জুড়ে দিয়েছে কিন্তু সুতপার রীতিমতো বিরক্ত লাগছে এসব।সুতপার মনটা খারাপ হয়ে আছে সমরের বলা কথাটা শোনার পর থেকেই। ওহ সুযোগ খুঁজছে ওর মাকে একা পাবার আজকে অনেককিছু জানার আছে। অনেক অজানা তথ্য জানতে হবে।
অন্যদিকে….
– আজকে বেঁচে গেছো বলে ভেবো না প্রতিবার বেঁচে যাবে,তোমাকে তো অর্ধের জীবন থেকে সরে যেতেই হবে। #অর্ধের_অর্ধাঙ্গিনী তুমি কখনোই হতে পারবে না সুতপা।
সুতপার মা অর্ধকে জামাই আদর করছে, সুতপার এসব একদম অসহ্য লাগছে।
প্রীতিঃ জিজু তোমাকে না আমার হেভি লাগে তুমি কেন দিদিকে বিয়ে করলে আমাকে তো করতে পারতে।
অর্ধ বাঁকা হেসে সুতপার দিকে তাকালো। সুতপা কিছু বলছে না। গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে আছে।
অর্ধঃ শালিকা এরকম বলতে নেয়।
প্রীতিঃ কেন?
অর্ধ কিছু বলতে যাবে তখনি সুতপার মা ওখানে আসলো।
মাঃ কি কথা হচ্ছে
প্রীতিঃ কিছু না। মা
মাঃ বাবা অর্ধ কেমন আছো তুমি
অর্ধঃ ভালোই আছি আপনি।
মাঃ ভালোই আছি।
সুতপার মা গল্প জুড়ে দিলো অর্ধের সাথে। সুতপা আর সহ্য করতে না পেরে ওর মাকে বললোঃ মা তোমার সাথে কথা আছে।
মাঃ কি কথা পড়ে বলবি
সুতপাঃ পড়ে নয় এখনি বলবো।
সুতপা ওর মাকে হাত ধরে একটা ঘরে নিয়ে আসলো,অর্ধ কিছুই বুঝতে পারছে না। সুতপার এমন কাজের কারন। সমরের সাথে কথা বলার পর থেকে ওহ চুপচাপ হয়ে আছে কারনটা কি?
অর্ধঃ এটা কি হলো।
প্রীতিঃ জানি না আমি।
মাঃ কি হলো এভাবে আমাকে আনলি কেন?
সুতপাঃ আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দাও।
মাঃ কি প্রশ্ন?
সুতপা যেটা বললো তাতে ওর মা চমকে উঠলো।
#চলবে….