অর্ধের অর্ধাঙ্গিনী পর্ব -০৪

0
1902

#অর্ধের অর্ধাঙ্গিনী
#লেখনিতেঃতানজিলা খাতুন তানু
#পার্টঃ৪

সুতপা ঘরে বসে আছে তখনি গাড়ির শব্দ পেয়ে চমকে উঠলো। সুতপা তাড়াতাড়ি করে দৌড়ে বারান্দায় গিয়ে দেখলো অর্ধের গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। সুতপা অবাক হলো এই গেলো আবার চলে আসছে‌ কেন?

সুতপা নিচে গেলো তাড়াতাড়ি।

মাঃ কিরে চলি কেন?

অর্ধঃ আমার এখন ছুটি চলছে।

মাঃ মানে।

অর্ধঃ খুব একটা দরকার নেয় তাই আমাকে স্যার বললেন আর কয়েকদিন ছুটিতে থাকতে সামনের সপ্তাহে আমাকে যেতে বলেছেন।

মাঃ তাহলে ভালোই হলো তুই আর সুতপা ওই বাড়ি থেকে ঘুরে আয় একটু।

অর্ধঃ মা

মাঃ তোমরা দ্বিরাগমনেও যাওনি।যাও ঘুরে আসো।

অর্ধঃ আচ্ছা।

মাঃ হ্যা আজকে দুজন একটু কেনাকাটা করে আয়।

অর্ধঃ সুতপাকে বলে দেবে জানো রেডি থাকে।

মাঃ আচ্ছা

অর্ধ চলে যেতে গেলে সুতপার মুখোমুখি হয় এতক্ষন কেউ সুতপা কে খেয়াল করেনি সুতপা দাঁড়িয়ে সবটা শুনেছে। অর্ধ সুতপাকে কিছু না বলে চলে গেলো।

সুতপাঃ মামনি আমি তোমার ছেলের সাথে কোথাও যাবো না।

অর্ধ যেতে যেতে দাড়িয়ে পড়লো সুতপার এমন কথা শুনে।

মাঃ কেন রে আমার ছেলের সাথে যাবি না কেন।

সুতপা কিছু বলার আগেই অর্ধ বলে উঠলোঃ মা ওকে বলে দিয়ো আমি কাউকে জোড় করতে পারবো না। যার যাবার ইচ্ছা সে যাবে আমি অপেক্ষা করবো না।

অর্ধ কথাটা বলেই চলে যায়,সুতপা গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

মাঃ মারে ঘুরে আয় মনটা ভালো হবে আর বাড়ির জন্য কেনাকাটা করিস কালকে যাবি তো কিছু তো নিয়ে যাবি।

সুতপাঃ হুম।

বিকালে….

সুতপা দাঁড়িয়ে আছে, এখনো অর্ধ আসেনি। সুতপা তো রেগে বোম হয়ে গেছে।

সুতপাঃ আমি কারোর জন্য অপেক্ষা করতে পারবো না।আর দ্যাখো বাবুরই কোনো দেখা নেয় অসহ্য।

অর্ধঃ‌ উঠো।

সুতপা অর্ধেন্দুর গলা শুনে পেছনে তাকিয়ে দেখলো অর্ধ বাইকে বসে আছে, অর্ধ বেশ হ্যান্ডসাম লাগছে কালো রঙের শার্টে তে। ( যদিও অর্ধ দেখতে বেশ হ্যান্ডসাম,কেউ আবার নজর দিয়েন না যেন। )

অর্ধঃ‌ হা করে না তাকিয়ে থেকে বাইকে উঠো।

সুতপা অর্ধেন্দুর বাইকে উঠে পড়লো।

অর্ধঃ ধরে বসবে নাহলে পড়ে যাবে।

সুতপাঃ ধরবো না

অর্ধঃ পড়ে গেলে আমাকে বলবে না।

সুতপাঃ দেখা যাবে।

অর্ধ গাড়ি চালাতে লাগলো হঠাৎ করেই বেক করলো তাতে সুতপার হাতটা অর্ধের গায়ে পড়লো। অর্ধ আয়না দিয়ে সুতপার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বললঃ কি ম্যাডাম হাত দিলেন তো।

সুতপাঃ শয়তান ছেলে।

অর্ধঃ আমি জানি ।

অর্ধঃ নামো চলে এসেছি।

সুতপাঃ এখানে কেন আনলেন,এখানে পুরো গলা কাটা দাম

অর্ধঃ আমার টাকা কম হয়নে। তোমাকে এত চিন্তা করতে হবে না।

সুতপাঃ টাকার অহংকার করবেন না।

অর্ধঃ করিনি তুমি বেশি বকবক না করে ভেতরে চলো।

অর্ধ আর সুতপা শপিং মলে ঢুকলো।

অর্ধঃ কি নেবে।

সুতপাঃ মামনি,দি আর মায়ের জন্য শাড়ি নেবো।‌ বাবাই আর বাবার জন্য পাঞ্জাবি নেব। তৃধা আর প্রীতির জন্য জামাকাপড় আর কিছু কসমেটিকস নেবো কিছু।

অর্ধঃ‌আর আমার জন্য।

সুতপাঃ আপনি কিনুন।

অর্ধঃ এটা ঠিক না আমি শপিং করতে আনলাম আর আমার জন্য কিছুই কিনবে না।

সুতপাঃ নিজে কিনে নিন

সুতপা নিজের মতো কেনাকাটা করতে লাগলো। অর্ধ দূর থেকে ওকে নজরে রাখছে। একটুও চোখের আড়াল করেনি।

কেনাকাটা শেষ করে ওরা দুজন বাড়ি ফেরে।

সুতপাঃ মামনি এটা তোমার জন্য।

অর্ধের মাঃ আমার জন্য আবার আনতে গেলি কেন?

সুতপাঃ আমি মা বাবার জন্য কেনাকাটা করবো আর তোমাদের জন্য করবো না এরকম কি কোনো দিন হয়েছে নাকি।

মাঃ পাগলি মেয়ে।

সুতপাঃ দি কোথায়?

মাঃ রুমে আছে

সুতপাঃ যাচ্ছি।

সুতপা পুনমের ঘরে গিয়ে দেখলো পুনম একা একা বসে আছে।

সুতপাঃ‌ কি হয়েছে দি এভাবে চুপচাপ বসে আছো কেন?

পুনমঃ কিছু না এমনি।

সুতপাঃ দ্যাখো তোমার জন্য আমি কি এনেছি।

পুনমঃ কি দেখি।

সুতপাঃ এই দ্যাখো।

সুতপা প্যাকেট থেকে একটা লাল শাড়ি বের করলো।শাড়িটার দিকে তাকিয়ে পুনম বললোঃ সুতপা শাড়িটা তোর কাছেই রেখে দে।

সুতপা পুনমের এমন কথায় অনেকটা অবাক হয়ে বললোঃ কেন?

পুনম তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললঃ যার জীবন থেকে ভালোবাসাটাই হারিয়ে গেছে সে আবার লাল শাড়ি পড়ে কি করবে।

সুতপাঃ এরকম করে বলছো কেন? আমি তো তোমাকে কস্ট দেবার জন্য ওই শাড়িটা আনিনি,তোমাকে শাড়িটাই ভালো লাগবে তাই এনেছি।

পুনমঃ কস্ট দেবার জন্য আনিস নি ঠিকই কিন্তু ওই জিনিসটা আমাকে কস্ট দিচ্ছে প্লিজ নিয়ে যা।

সুতপাঃ না আমি নিয়ে যাবো না। কেন তুমি ওই মানুষটার জন্য নিজেকে কস্ট দিচ্ছো কেন ঘুরে দাড়াচ্ছো না।

পুনমঃ আমি এতটাই শক্ত মেয়ে নয় যে আবার নতুন করে সবকিছু শুরু করবো। আমি পারবো না শক্ত হতে পারবো না।

পুনম কাঁদতে লাগলো। মেয়েটা সামনে যতই শক্ত দেখাক না কেন,ভেতরে অনেক কস্ট লুকিয়ে আছে,সব কিছু প্রকাশ না করলেও মনের মাঝে ঠিক থেকেই যায়।

সুতপাঃ দি তুমি কেঁদো না সরি আমি আর কোনোদিন তোমাকে লাল রঙের কিছু দেবো না।আমাকে মাফ করে দাও।

পুনমঃ তোর কোনো দোষ নেয় সবটাই আমার ভাগ্য।

সুতপা পুনমকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছিলো অর্ধ ওর চোখে জল। নিজের দিদি কে এত কস্ট পেতে দেখেও ওহ কিছুই করতে পারছে না। নিজেকে খুব অসহায় মনে হয় মাঝেমাঝে।

অর্ধের কাঁধে কেউ হাত রাখতে ও পেছনে তাকিয়ে দেখলো ওর মা অশ্রুসিক্ত নয়নে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

অর্ধঃ মা।

অর্ধ ওর মায়ের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো,ওর মায়ের চোখেও পানি।

অর্ধঃ মা কেন দিদির সাথেই এমন হয় কেন?

মাঃ পুনম ওই ভাগ্য নিয়ে এসেছে আর কি করবো বল। আমার মেয়েটাই কপালটাই খারাপ।

অর্ধঃ আমি কি কখনো আমার দিদির মুখে হাসি ফোটাতে পারবো না।

মাঃ জানি না রে।

অর্ধঃ আমার ভালো লাগে না দিদিকে ওরকম ভাবে দেখেতে।

মাঃ আমার ওহ কি ভালো লাগে নিজের মেয়েটাকে এভাবে কুঁড়ে কুঁড়ে মরতে দেখছি আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে কিন্তু আমি কিছু করতে পারবো না। এতটা অসহায় আমি।

অর্ধঃ যেই মানুষটার জন্য আজকে দিদির এই অবস্থা আমি তাকে ছেড়ে দেবো না কিছুতেই ছাড়বো না

মাঃ কি করবি তুই কিছুই পারবি না তোর দিদির ভাগ্যের লিখন বদলাতে পারবিনা তুই। তোর দিদি এভাবেই মরে যাবে।

অর্ধঃ এরকম করে বলো না মা।

মাঃ কি করবো বল আমি আর পারছি না ওকে এভাবে দেখতে।

কার কি ভাগ্যে কি লেখা আছে সেটা উনি ছাড়া কেউ জানে না। কেউ আমরা বিধির বিধান খন্ডন করতে পারবো না। এটাই প্রকৃতির নিয়ম।উনি পুনমের কপালে কি লিখে রেখেছে সেটা কেউ জানে না।

অর্ধ সুতপার দুজনেরই মন খারাপ। সুতপা চাইনে পুনমকে কস্ট দিতে কিন্তু দিয়ে ফেলেছে‌ অর্ধ নিজের দিদির কস্ট দেখতে পারছে না তাই দুঃখিত।

অর্ধঃ মন খারাপ করো না তুমি তো ইচ্ছা করে কিছু করো নি।

সুতপাঃ আপনি

অর্ধঃ হ্যা আমি সবটাই শুনেছি

সুতপাঃ বিশ্বাস করুন আমি বুঝতে পারিনি দি এতটা কস্ট পাবে লাল শাড়ি দেখে।

অর্ধঃ তুমি কস্ট পেয়ো না।আমি দেখেছি সবটা।

সুতপাঃ আচ্ছা দি কখনোই কি সুখ পাবে না।

অর্ধঃ জানি না। ওর ভাগ্য কতটা নিস্ঠুর হবে ওর প্রতি। এসব চিন্তা তুমি বাদ দাও ব্যাগ গোছাও তুমি।

সুতপাঃ‌হুম।

সুতপা কাপড় গোছাতে লাগলো তখনি অর্ধ বিছানায় রাখা একটা প্যাকেট খুলে দেখে অবাক হয়ে গেলো।

#চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে