#অর্ধের অর্ধাঙ্গিনী
#লেখনিতেঃতানজিলা খাতুন তানু
#পার্টঃ ৩
অর্ধ সুতপার কথা শুনে গালে দুধটা দিতেই চোখ বড়বড় করে ফেললো। সুতপা অর্ধেন্দুর দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।
অর্ধঃ এটা কি?
সুতপাঃ স্পেশাল ডিস আপনার জন্য।
অর্ধঃ দ্যাখো সুতপা এসব মজা আমার সাথে করবে না। এসব কি এসব খেলে অসুস্থ হয়ে যাবো তো।
সুতপাঃ আমার কি।
অর্ধ সুতপাকে নিজের কাছে টেনে নেয়,সুতপা অর্ধের চোখের দিকে তাকায়,কখনো এতটা কাছে থেকে অর্ধকে দেখেনি। আর না ভালো ভাবে পরিক্ষন করেছে,অর্ধের চোখের একটা আলাদা রকম মায়া আছে,যা সুতপাকে ওর দিকে টানছে।
অর্ধ সুতপাকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললোঃ কি দেখছো
সুতপাঃ আপনাকে
অর্ধঃ কি?
সুতপার ধ্যান ফিরলো ওহ কি বলছে।
সুতপাঃ কিছু না।ছাড়ুন আমাকে।
অর্ধঃ না মুখটা খারাপ করে দিয়েছো তোমাকেই ঠিক করতে হবে।
সুতপাঃ করলার রস এনে দেবো।
অর্ধঃ না মিস্টি চাই।
সুতপা বাঁকা হেসে বললঃ তাহলে আরশোলার চাটনি, ইন্দুরের কোপ্তা, মাকড়সার ঝাল, টিকটিকি কষা…
অর্ধ সুতপার খাবারের আইটেম শুনে বমি হবার অবস্থা।
অর্ধ সুতপাকে ছেড়ে দিয়ে বললোঃ এসব কি বলছো
সুতপাঃ স্পেশাল ডিস আপনাকে খাওয়াবো
অর্ধঃ দরকার নেয় আমার
সুতপাঃ না খেলে আপনি মিস করবেন আমার কি
সুতপা বিছানায় শুয়ে পড়লো।অর্ধ ওর পাশে শুতে শুতে বললোঃ তোমার ডিস তুমিই খাও।
সুতপা আর কিছুই বলে না। সুতপার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে অর্ধ সুতপার দিকে তাকিয়ে দেখলো, সুতপা ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে গেছে। অর্ধ সুতপার মুখের দিকে তাকিয়ে আলতো করে হাসলো তারপর নিজের মনে মনে বললোঃ ঘুমাতে কত নিস্পাপ লাগছে কিন্তু শয়তানের গাছ আসলে,আমার হাড় মাটি এক করে দিচ্ছে অসহ্য।
অর্ধ সুতপার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ওহ ঘুমিয়ে পড়লো।
১ সপ্তাহ পর….
অর্ধ আর সুতপার বিয়ে একসপ্তাহ হয়ে গেছে। অর্ধ আর সুতপা সবসময় ঝগড়া করে চলেছে। পুনম এটা নিয়ে বেজায় বিরক্ত। ওর মা ওদের কান্ড দেখে হাসতে হাসতে শেষ।
পুনমঃ মা তুমি ওদের কিছু বলো। ওরা তো সবসময় ঝগড়া করতেই থাকে?
মাঃ ঝগড়া করুক না ঝগড়া করলে ভালোবাসা বাড়ে।
পুনমঃ আর ভালোবাসা ওরা দুজন দুজনকে দেখতেই পারে না ওদের মাঝে নাকি আবার ভালোবাসা আছে।
মাঃ জানিস পুনম বিয়ে হলো এমন একটা বাঁধন যেখানে সকলকেই বাঁধা পড়তে হয়। বিয়ের বাঁধনে দুটি মানুষ শুধু সাময়িক ভাবে বাঁধা পড়ে তার নয় বরং দুটি মন একে অপরের সাথেও বাঁধা পড়ে। কিছু বুঝলি।
পুনমঃ হুম বুঝলাম কিন্তু ওদের তো কিছুই বুজতে পারছি না।
মাঃ আমরা কাছে থাকলে জিনিসের গুরুত্ব বুঝি না কিন্তু দূরে গেলে ঠিকই বুঝতে পারি।
পুনমঃ এমন করে বলছো কেন.
মাঃ অর্ধ যেই কাজ করে তাতে তো ওকে দূরে যেতেই হবেই তখন সুতপা অর্ধেন্দুর না থাকাটা বুঝবে,বুঝলি।
পুনমঃ হুম। ওদের দুজনের জীবনে কোনো ছায়া না পড়ে।
মাঃ আর যদিও পড়ে ওরা একে অপরকে রক্ষা করবে। বিশ্বাস রাখ ওদের উপর।
পুনমঃ তাই যেন হয়।
ওদিকে……
অর্ধঃ এত সেজে গুজে কোথায় যাচ্ছো।
সুতপাঃ আমি কোথায় যাবো আর যাবো না আমি কি সেটা আপনাকে বলে যাবো নাকি।
অর্ধঃ আমাকে না বলে যাও মাকে বলে যেও।
সুতপাঃ সেটুকু আমার জ্ঞান আছে আমি মামনি কে বলেই বের হবো।
অর্ধঃ কত জ্ঞান আছে আমার জানা আছে।
সুতপাঃ দেখুন একদম উল্টোপাল্টা কিছু বলবেন না আমার খুব রাগ হয়।
অর্ধঃ তোমার রাগ হয় তো আমার কি?
সুতপাঃ অসহ্য লোক একটা আপনি থাকুন আমি যাচ্ছি।
অর্ধঃ আমি দিয়ে আসছি চলো
সুতপাঃ আপনাকে আমার উপর দয়া করতে হবে না আমি নিজেই যেতে পারবো।
অর্ধঃ আমি জানি যেতে পারবে কিন্তু আমি তোমাকে একা ছাড়বো না
সুতপাঃ কেন?
অর্ধঃ কারনটা আমি তোমাকে বলতে বাধ্য না।
সুতপাঃ আমিও আপনার সাথে যেতে বাধ্য নয়।
অর্ধঃ আমার সাথে না গেলে তুমি বাড়ি থেকে বের হতে পারবে না।
সুতপাঃ কেন
অর্ধঃ আমার বাড়ি আমার ইচ্ছা।
সুতপাঃ আমার পা আমি কোথায় যাবো আমার ইচ্ছা।
অর্ধঃ একবার বের হয়ে দেখো পা কেটে রেখে দেবো।
সুতপাঃ আমি বের হবো ই।
অর্ধঃ যাও দেখি।
সুতপা বের হতে যাবে তখনি পুনম ওর সামনে এসে দাড়িয়ে বললোঃ কিরে এত পাখির মতো ক্যাচম্যাচ করিস কেন?
সুতপাঃ ক্যাচম্যাচ করবো না তো কি করবো, তোমার ওই গুন্ডা ভাই বলছে আমাকে বাইরে যেতে দেবে না বলেছে।
পুনমঃ কেন?
অর্ধঃদ্যাখ দি আমি ওকে বলেছি আমি ওকে নিজে দিয়ে আসবো ওহ যাবে আমার সাথে। তাই ও, বাড়ির বাইরেও যাবে না।
সুতপাঃ আমি যাবো
অর্ধঃতুমি যাবে না।
পুনম একবার এদিকে আর একবার ওদিকে তাকাতেই লাগলো দুজনেই চেঁচিয়ে চলেছে।কেউ চু করছে না পুনম কোনো উপায় না পেয়ে চেঁচিয়ে বললোঃ চুপ।
পুনমের চিৎকার শুনে দুজনেই চুপ করে যায়।
পুনমঃ চল তোর মায়ের কাছে।
পুনম ওদের দুজনকে মায়ের কাছে নিয়ে আসে।
মাঃ কি হয়েছে এদের ধরে নিয়ে এসেছিস কেন?
পুনমঃ মা তুমি বিচার করো আমার আর ভালো লাগছে না ওদের অশান্তি একটু শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না।
মাঃ কেন এখন আবার কি হলো
পুনমঃ আবার ঝগড়া করছ
মাঃ কেন?
পুনমঃ সুতপা বাইরে যাবে
মাঃ হ্যা তো যাক অসুবিধা কি?
পুনমঃ তোমার ছেলে ওকে একা ছাড়বে না।
মাঃ এটা তো ভালো কথা অর্ধ দিয়ে আসুক সুতপাকে।
পুনমঃ সুতপা অর্ধের সাথে যাবে না।
মাঃ তাহলে যেতে হবে না। একাই যাক।
পুনমঃ তোমার ছেলে ওকে একা যেতে দেবে না। ওকে দিয়ে আসবেই।
মাঃ তাহলে দিয়ে আসুক।
অর্ধ আর সুতপা ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর মা একবার ওর দলে কথা বলছে আর একবার ওর দলে। পুনম একবার সবার দিকে তাকিয়ে বললোঃ মা তুমি এরকম করে না বলে ভালো করে বলো। সুতপা একা যাবে নাকি অর্ধ দিয়ে আসবে ওকে
মা একবার অর্ধেন্দূর দিকে তাকিয়ে আর একবার সুতপার দিকে তাকালো তারপর পুনমের দিকে তাকিয়ে বললোঃ আমি এসব কিছু না তোদের ঝামেলা তোরা বোঝ।
মা ওখান থেকে চলে যায়। পুনম ওর মায়ের যাওয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে।
পুনমঃ আমিও নেয় তোদের মাঝে তোরা কি করবি ভাব।
পুনম ও চলে যায়। অর্ধ আর সুতপা দুজন দুজনের দিকে তাকাতাকি করতে লাগলো।
সুতপা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে হতাশ কন্ঠে বললোঃ আমি আর যাবো না।
অর্ধঃ কেন?
সুতপাঃ আমার ক্লাসের টাইম শেষের দিকে আমি গিয়ে কি করবো। আমি আর যাবো না।
সুতপা ও চলে যায়। অর্ধ হা করে তাকিয়ে থাকে। যার জন্য এতকিছু সেই শেষে বলে যাবো না।
পরেরদিন সকালে……
অর্ধ নিজের ব্যাগ গোছাতে ব্যস্ত,সুতপা কিছুই বুঝতে পারছে না।কালকের ঘটনার জন্য কি রাগ করে আছে নাকি।
সুতপাঃ আপনি ব্যাগ গোচ্ছাছেন কেন?
অর্ধঃ আমাকে যেতে হবে
সুতপাঃ কোথায়
অর্ধ সুতপার দিকে তাকিয়ে আলতো করে হেসে বললোঃ আমার কাজ যেটা আমাকে তো করতেই হবে।আমাকে বর্ডারে ফিরতে হবে।
অর্ধ চলে যাবে শুনে সুতপার মনটা অজান্তেই খারাপ হয়ে যায়, কিন্তু মন খারাপ করলে তো হবে না।অর্ধ একজন আর্মি আর আর্মিদের দায়িত্ব তাদের তো পালন করতেই হবে।
সুতপাঃ কবে ফিরবেন?
অর্ধঃ আমাদের ফেরার কোনো ঠিক থাকে না। আমি না ফিরলেই তো ভালো তোমাকে কেউ বিরক্ত করবে না।
সুতপার বুকটা কেঁপে উঠল,অর্ধের মুখে না ফেরার কথা শুনে। আচ্ছা ওর এরকম খারাপ লাগছে কেন,কেন অর্ধের জন্য এতটা খারাপ লাগছে।
অর্ধঃআমি আসছি নিজের যত্ন নিয়ো।
অর্ধ চলে যায়,সুতপা মন খারাপ করে বসে থাকে। অর্ধের মা,দিদির কিছু খারাপ লাগে না কারন অর্ধ এটা প্রথম বার নিজের কাজে যাচ্ছে অনেকবার গেছে ওনাদের অভ্যাস হয়ে গেছে আর না অভ্যাস হয়েও তো উপায় নেয় অর্ধ দেশকে রক্ষা করার দায়িত্ব নিয়েছে সেটা তো পূরন করতে হবেই। দেশকে তো রক্ষা করতে হবে। দেশের মানুষকে রক্ষা করতে হবে।
সুতপা ঘরেই বসে ছিলো হঠাৎ করে গাড়ি আসার শব্দ পেয়ে চমকে উঠলো।
#চলবে…..