অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-৬৬

0
7

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৬৬
জিয়ান টিভি বন্ধ করে বলল, “ধুর, এত হট আর সুইট বৌ থাকতে টিভি দেখব কেন? আমি তো লাইভ শো দেখব, বেবি। লেটস ড্যান্স, জানু।”
“ওয়ে, মিস্টার ড্রাইভার! আপনি বললেই আমি নাচব?”
“জানু, আজ রাত’কা সিন বানা দো।”
“ছিহ! কী সব কথা!”
“তোমার ডার্টি মাইন্ড। আমি ‘ছিহহ বলার মতো কি বললাম, জানু?”
“এই তো একটু আগেই বললেন।”
জিয়ান উঠে এসে নয়নার কোমড় জড়িয়ে ধরে তাকে নিজের একেবারে কাছে টেনে এনে বলল, “কী বললাম?”
নয়না জিয়ানের শার্ট খামচে ধরে বলল, “ছাড়ুন।”
“ছাড়ব বলে তো ধরিনি, জানু।”
“আপনার মাথায় সব সময় এসব ঘুরতে থাকে!”
“কোন সব?”
“ওই যে, ওইসব।”
“সেটা আবার কী, জানু?”
“বুঝতে পেরেছি, জানুর গভীর আদর লাগবে।”
জিয়ান নয়নার ঠোঁটে চুমু দিয়ে তাকে কোলে তুলে বলল, “চলো, নাচব দুজন।”
নয়না মৃদু স্বরে বলল, “আমার এখন নাচতে ইচ্ছে করছে না।”
জিয়ান নয়নার কানের কাছে মুখ এনে বলল,
“বন্ধু, তোমার ভালোবাসায় থাকব মাটির পিঞ্জিরায়,
তুমি ছাড়া এই দুনিয়ায় আর তো কোনো বন্ধু নাই।
মাথা রেখে আমার বুকে, ঘুমাও তুমি সুখে।
তোমায় দেখিয়া দেখিয়া নয়নও জুড়ায়,
তোমায় দেখিয়া, দেখিয়া, জীবনও ফুরায়।”
নয়না হঠাৎ খেয়াল করল, সে বিছানায় বসে আছে। তাহলে জিয়ানের কোলে ওই মেয়েটা কে? নয়না উঠে জিয়ানের সামনে দাঁড়াল। অশ্রু টলমল চোখে জিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল, “আপনি আমার সঙ্গে এরকমটা করতে পারেন না, মিস্টার পাইলট রেজা চৌধুরী। আপনি শুধু আমার। আপনি আমার ব্যক্তিগত প্রিয় পুরুষ।”
নয়না ধড়ফড়িয়ে উঠে বসল। ঘর জুড়ে কেমন অন্ধকার। হাত দিয়ে বেডসাইড সুইচ অন করল। আশপাশে তাকিয়ে বুঝল, এতক্ষণ সে স্বপ্ন দেখছিল। বুকের ভেতর অসহ্য যন্ত্রণা অনুভব হচ্ছে! নয়না মোবাইল হাতে নিয়ে দেখল, রাত সাড়ে তিনটা বাজে। দ্রুত ফোনে ডাটা অন করল। জিয়ান তাকে রিপ্লাই করেনি? এখন তো তার ফ্লাইট নেই। বিশ্রাম নেওয়ার সময়, তবুও কোনো রিপ্লাই নেই কেন! নয়না নিজেই কল করল। সোজা ভিডিও কল।
জিয়ান নিজের পোশাক খুলে সবে বাসার পোশাক পরেছে। ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিয়েছে। চোখ বন্ধ করে আছে, এমন সময় ফোনটা বেজে উঠল। কপাল কুঁচকে হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিল বেডসাইড টেবিল থেকে। ‘রঙ্গনা’ নিকনেমটা দেখেই যেন জিয়ানের সব ক্লান্তি দূর হয়ে গেল। ঠোঁটের কোণে উঁকি দিল হাসির ঝলক। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কথা শুরু হল।
ফোন রিসিভ হতেই নয়না এক নাগাড়ে বলতে শুরু করল, “একদম ভালোবাসেন না আমাকে? দু’দিনেই ভালোবাসা ফুরিয়ে গেছে। পুরোনো হয়ে গেছি, তাই এখন আর ভালোবাসবেন কেন!”
জিয়ান চুপচাপ নয়নার দিকে তাকিয়ে তার কথা শুনছে।
নয়না আরও ক্ষেপে গেল। “আশ্চর্য! এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? কথা বলার জন্য মুখ নেই নাকি?”
জিয়ান মৃদু হেসে বলল, “এই গভীর রাতে এমনভাবে সামনে এলে আর কিছু খেয়াল থাকে, রঙ্গনা?”
নয়না নিজের দিকে তাকাল। শর্ট টি-শার্ট, যার ফলে পেট থেকে নাভি পর্যন্ত উন্মুক্ত। প্লাজো উঠে এসেছে বেশ খানিকটা। নয়না দ্রুত চাদর টেনে নিল। রাগে গজগজ করতে করতে বলল, “অসভ্য!”
জিয়ান বুকে হাত দিয়ে বলল, “আই নিড ইউ, ডিয়ার বাটার মাশরুম। উফ! আজ আর ঘুম আসবে না। কেন এত রাতে এমন মোহনীয় রূপে ধরা দিলে? এখন নিজেকে কন্ট্রোল করব কী করে, বেব?”
নয়নার রাগ হচ্ছে। লোকটার মাথায় কি সাধারণ কোনো বোধবুদ্ধি নেই? জিজ্ঞেস করছে না, আমি এত রাতে কেন কল করেছি?
জিয়ান নিরাশ গলায় বলল, “কী স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে গেছে, মিসেস চৌধুরী?”
“আপনি আমাকে সত্যি ভালোবাসেন?”
“সুনয়না, ফোনটা কাটো। এই মুহূর্তে এসব কথা বলার কোনো ইন্টারেস্ট আমার নেই।”
নয়না কল কাটার আগেই জিয়ান কল কেটে দিল। নয়না স্পষ্ট দেখতে পেল, জিয়ানের রুমে এক নারীমূর্তির ছায়া। কাঁধ পর্যন্ত চুল, জিন্স আর শার্ট পরা মেয়েটা। নয়নার হৃদয়ে মুহূর্তে শূন্যতা ছড়িয়ে পড়ল। পুরো পৃথিবীর সব সত্য তার কাছে মিথ্যে মনে হতে লাগল।
🌿
অন্তর কয়েকদিন ধরে জাহিনের ওপর নজর রেখেছে। সে খোলা মাঠের এক প্রান্তে বসে আছে। “আচ্ছা, সত্যি সত্যি কি জাহিন আমার বোনের খুনিদের সহযোগী? এটা কী করে সম্ভব? সেই ক্লাস থ্রি থেকে আজ পর্যন্ত আমরা কখনো একে অপরকে ছাড়া একটা চকোলেট পর্যন্ত খাইনি। আমাদের বন্ধুত্ব রক্তের সম্পর্কের চেয়েও গভীর। সেই বন্ধু কি এমন জঘন্য কাজ করতে পারে? নাকি আমার কোথাও ভুল হচ্ছে?” মাটির দিকে তাকিয়ে অন্তর বলল, “আমি চাই না এসব সত্যি হোক। আমি চাই, পৃথিবীর সব মিথ্যে হোক, তবুও তুই আমার বোনের খুনিদের সহযোগী না—এটা কখনো সত্যি হোক।”
অন্তর নিজের মনে বসে ছিল। এমন সময় কেউ তার কাঁধে হাত রাখল।
অন্তর পেছনে তাকিয়ে বলল, “আপনি?”
“আমার আপনার হেল্প দরকার। প্লিজ আমাকে হেল্প করুন।”
“কিসের হেল্প?”
“তার আগে বলুন, আপনার চোখ ভেজা কেন? পুরুষ মানুষের চোখে পানি তো সহজে আসে না! এত কঠিন কাজ?”
অন্তর বলল,”মানুষের হৃদয়ে কিছু কষ্ট থাকে, যেগুলো ভাষা হয়ে বের হয় না কখনো। বলতে চাইলেও শব্দেরা মুখ ফিরিয়ে নেয়। বেদনাগুলো কেবল বুকের গহীনে চাপা পড়ে থাকে, অপ্রকাশিত এক নিঃশব্দ আর্তি হয়ে। সে কষ্ট কোনোদিন প্রকাশ পায় না। শুধু জমে থাকে, জমে থাকা মেঘের মতো, অনুভবের আকাশে।
হৃদয় যখন আর সেই ভার সইতে পারে না, তখন মনে কালো মেঘ নামে, নীরবতা ঘনিয়ে আসে, আর চোখের কোণেই হয় যেন সেই বেদনার একমাত্র আশ্রয়স্থল। অশ্রুগুলো ঝরে পড়ে, ঠিক যেন নির্জন বর্ষায় একলা কোনো বৃক্ষ কাঁদে।
এই দুঃখের নেই কোনো সঙ্গী, নেই কোনো আশ্রয়। এ এক নিঃসঙ্গ পথচলা, অন্তরের অন্তরালে জমে থাকা এক অমলিন মৌনতা।”
তুষি কিছুক্ষণ নীরব থেকে বলল, “জানেন, আমি কঠিন কথা বুঝি না। খুব সহজ একটা মানুষ আমি। তবে এমন এক কঠিন জালে আটকে পড়েছি, বুঝতে পারছি না এই জাল ছিঁড়ে কীভাবে বের হব।”
“আমি কী হেল্প করতে পারি, সেটা বলুন।”
🌿
সায়না আর অনিকেতের বিয়ে হয়ে গেল। রাতের আঁধারে চারজন মানুষকে সাক্ষী রেখে, আল্লাহ তা’আলার ওপর ভরসা করে সায়না হয়ে গেল অনিকেতের বৌ। সায়নার চোখের কোণে অশ্রু চিকচিক করছে।
অনিকেত কাজি সাহেবকে বিদায় দিয়ে সায়নার দিকে তাকিয়ে বলল, “জীবনটা ছেলেখেলা নয়। আর বিয়ে মানে এক বিশাল জার্নি। আপনি বুঝদার হয়েও অবুঝের মতো কাজ করলেন, মিস সায়না।”
সায়না শাড়ির আঁচল টেনে মাথায় তুলে বলল, “আসসালামু আলাইকুম, ডিয়ার হাসবেন্ড। আমি আপনার ওয়াইফ। মিসেস অনিকেত মাহমুদ। সুতরাং নিজের সদ্য বিয়ে করা বৌকে ‘আপনি’ করে বলবেন না।”
নাহিদ হেসে বলল, “ভাবি, আপনার মতো মেয়েই দরকার ছিল অনিকেতের।”
“আমাদের জন্য আপনাকে কষ্ট করতে হলো?”
“কষ্ট কিসের? এত আনন্দের। আমার বন্ধুর বিয়ে বলে কথা, এত মহাখুশির কাজ।”
অনিকেত রাগ দেখিয়ে বলল, “এসব মজা মনে হচ্ছে তোর?”
“বিয়ে মানেই তো মজা, দোস্ত। তুই জানিস না? না জানলে সমস্যা নেই, ভাবিজি তোকে জানিয়ে দেবে।”
“চুপ কর, নাহিদ। আমার কিছু ভালো লাগছে না।”
নাহিদ অনিকেতের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল, “বৌকে আদর-সোহাগ করলেই ভালো লাগা শুরু হয়ে যাবে। আজকের মতো টাটা।”
নাহিদ বের হওয়ার আগে সায়নাকে বলল, “ভাবি, বেশি কিছু করতে পারিনি। যতটুকু সম্ভব, এই রাতে ততটুকু সাজিয়ে দিলাম। বাকিটা কাল করব। শুভকামনা রইল, ভাবি।”
🌿
জিয়ান কল কেটে সামনে তাকাতেই রাগে তার কপালের রগ ফুলে উঠল। চোখ দুটো লাল হয়ে উঠছে। “আপনার সাহস কী করে হয় আমার রুমে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করার?”
#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে