#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৬৫
জাহিন নয়নাকে ড্রপ করে দিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে নিলো।
অন্তর বলল, “তোর মনে কী চলছে, বল তো?”
“আমার মনে কী চলবে?”
“তুই কি কোনোভাবে ভাবির প্রতি দুর্বল বোধ করছিস?”
জাহিন হার্ড ব্রেক করে গাড়ি থামিয়ে, রক্তচক্ষু নিয়ে অন্তরের দিকে তাকিয়ে বলল, “তোর সাহস হয় কী করে এতো লেইম কথা বলার?”
“এতো হাইপার হচ্ছিস কেন? তুই আজ যা করলি, এসব তো তোর ব্যক্তিত্বের সঙ্গে যায় না। আর আমার চিরচেনা জাহিনকে দিয়ে এসব কল্পনাও করা যায় না। দেখ, আমি খেয়াল করেছি, তুই বারবার ভাবিকে টিচ করার চেষ্টা করেছিস।”
জাহিন নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে, জোরে শ্বাস ছেড়ে বলল, “আরে, ইয়ার, আমি জাস্ট ফান করছিলাম। নয়না আমাকে দেখলে কেমন উদ্ভট ব্যবহার করে। মনে হয় যেন আমি তাকে খেয়ে ফেলবো! তাই আমিও আজ সুযোগ পেয়ে ফান করলাম।”
“আচ্ছা, তুই যে শামসুল হক খান স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতি, ওই মেয়েটার কী খবর?”
“কোন মেয়ে? আর আমি দাঁড়িয়ে থাকতাম? কী বলছিস এসব? মাথা ঠিক আছে তোর? জাহিন চৌধুরীর যোগ্য মেয়ে পেলে জাহিন চৌধুরী সোজা তুলে নিয়ে বিয়ে করে নিতো। এসব দাঁড়িয়ে থাকা, ইম্প্রেস করা—এসব জাহিন চৌধুরীর সঙ্গে যায় না।”
অন্তর আর কথা বাড়ালো না। তবে জাহিনের সূক্ষ্ম মিথ্যে কথা শুনে বেশ অবাক হলো। অন্তর সবটা জেনেই প্রশ্ন করেছিল। সত্যিটা জানার পর মিথ্যে গল্প শুনতে ভালোই লাগে।
জাহিন অন্তরকে নামিয়ে দিয়ে বলল, “তুই বাসায় যা, আমার একটু কাজ আছে। দু’দিন পর ফিরব।”
জাহিন নিজের সিক্রেট অ্যাপার্টমেন্টে এসে দরজা বন্ধ করে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ল। বাথটাবে শুয়ে গিজার অন করে দিল। উপর থেকে শাওয়ার ছেড়ে চোখ বন্ধ করে রাখল। আজকের ঘটনা একে একে মেলাতে লাগল। হঠাৎ চোখ খুলে বলল, “বি কেয়ারফুল, জাহিন। এমনভাবে এগোতে হবে যাতে সাপও মরে, লাঠিও না ভাঙে।”
প্রায় ঘণ্টাখানেক শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে এলো। হাফপ্যান্ট পরে লাইটার হাতে নিয়ে সিগারেট ধরাল। আয়েশ করে বিছানায় হেলান দিয়ে বসল। দেওয়ালজুড়ে নয়নার শতসহস্র ছবি টাঙানো। উঠে এসে একটা ছবির ওপর হাত রেখে বলল, “তোমার তো শুধু আমার হওয়ার কথা ছিল। তাহলে তুমি আমার ভাইয়ের কী করে হলে? প্রেম করবে আমার সঙ্গে, আর বিয়ে করবে আমার ভাইকে! তা হবে না, সুইটহার্ট। জাহিন চৌধুরী এতটা ভদ্র নয়।”
নিজের মোবাইল নিয়ে একজনকে কল করল। ওপাশ থেকে রিসিভ হতেই জাহিন বলল, “কী, মন্ত্রী সাহেব, ডিসিশন ফাইনাল করলেন, নাকি আমি শাস্তি ফাইনাল করব? সব প্রমাণ কিন্তু আমার হাতে।”
“মিস্টার চৌধুরী, আপনি যা বলবেন, তাই হবে। আপনি আমার ফার্মহাউসে চলে আসুন আজ রাতে। আপনার জন্য আপ্যায়নের ব্যবস্থা করে রেখেছি।”
“কোনো মেয়ে যেন না থাকে। আর কোনো ধরনের চালাকি করলে আমি কী কী করতে পারি, তা কল্পনাও করতে পারবেন না।”
“মিস্টার চৌধুরী, আপনি যেমনটা চাইবেন, ঠিক তেমনটাই হবে। ডোন্ট ওয়ারি। আপনি আমার স্পেশাল গেস্ট, আপনার যত্নে কোনো ত্রুটি হবে না।”
🌿
নয়না বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে খেতে বসল। তুষিও খাচ্ছিল। নয়নার মুড অফ। বাসায় এসে শুধু জাহানারা বেগমকে বলেছিল, “আমরা ফ্রেশ হয়ে আসছি। তুমি খাবার রেডি করো তো, আম্মু। আর এখন কিছু জিজ্ঞেস করবে না। বাকি কথা রাতে বলব।”
নীলাঞ্জনা এসে নয়নার পাশের চেয়ারে বসল। এই মুহূর্তে নীলাঞ্জনাকে নয়নার সহ্য হচ্ছিল না। নীলাঞ্জনা এক গ্লাস পানি ঢেলে নিয়ে নিজের রুমে চলে গেল। মানুষের দৃষ্টি দেখলেই নীলাঞ্জনা এখন সেখানে তার জন্য ঘৃণা দেখতে পায়। নীলাঞ্জনা নিজের পেটে হাত রেখে বলল, “আমি তো ঘৃণিত মানুষ, তুইও কি আমাকে ঘৃণা করবি? নাকি তুই এসে তোর মায়ের পৃথিবী ভালোবাসা দিয়ে রাঙিয়ে দিবি? তোকে নিয়ে না হয় অন্যরকম এক ভালোবাসার পৃথিবী গড়ে তুলব।”
নীলাঞ্জনার ফোন বেজে উঠল। ফোন হাতে নিয়ে দেখল, নম্বরটা অপরিচিত। ফোন বাজতে বাজতে কেটে গেল। আবার বেজে উঠল। নীলাঞ্জনা ফোন রিসিভ করে কানে ধরতেই লাবিব বলল, “বাইরে আয়, নয়তো তোমার বিবস্ত্র ভিডিও ক্লিপ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে দেব।”
নীলাঞ্জনা বোরকা পরে, গায়ে একটা ওড়না জড়িয়ে বেরিয়ে পড়ল। লাবিব ইশারা করে নীলাঞ্জনাকে গাড়িতে উঠতে বলল। দুজনে পাশাপাশি বসল, অথচ মনের মধ্যে বিশাল ফারাক।
লাবিব বলল, “তোর এসব কিসের দেমাগ? চল আমার সঙ্গে।”
নীলাঞ্জনা শান্ত স্বরে বলল, “আপনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আপনি আমার জন্য অপরিচিত।”
“তুই কি বুঝতে পারছিস, তুই লুজার। হেরে গেছিস পুরোপুরি। তোর এখন এক পয়সারও দাম নেই এই সমাজে।”
“আমি কিছুই হারাইনি। বরং আপনি এমন একজনকে হারিয়েছেন, যে আপনাকে ভালোবাসত। আমি তো এমন একজনকে হারিয়েছি, যে মানুষটা কোনোদিন আমাকে ভালোবাসেনি! এবার আপনিই বলুন, কে হেরে গেল, আর কে জিতে গেল?”
“আমি হারব কেন? হারবি তুই। এই বালের ভালোবাসা আবার কী?”
নীলাঞ্জনা আর কথা বাড়ালো না। এর মধ্যেই পুলিশ এসে রিকশা ঘিরে ধরল। লাবিব রক্তচক্ষু নিয়ে নীলাঞ্জনার দিকে তাকাল। নীলাঞ্জনা ততক্ষণে রিকশা থেকে নেমে গেছে। পুলিশ নীলাঞ্জনাকে ধন্যবাদ দিল।
লাবিবের হাতে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। নীলাঞ্জনা বলল, “এক মিনিট, স্যার।” নীলাঞ্জনা লাবিবের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল, “আমি কিছু হারাইনি, জানো?
হয়তো হারিয়েছি একটি মাত্র মানুষ,
কিন্তু সে তো কখনো ছিলই না আমার।
ভালোবাসার নামে শুধু ছিল কিছু মিথ্যে শব্দ,
আর আমি সেগুলোকেই সত্যি ভেবেছিলাম!
হারিয়েছ তুমি,
একজন এমন মানুষকে, যে তোমাকে ভালোবাসত নিঃস্বার্থভাবে, যার হৃদয়টা ছিল কেবল তোমার জন্য। তুমি বুঝোনি… তখনও না, এখনও না। আমি তো শুধু হারিয়েছি একটি ছায়া, একটি মুখ, একটি অস্তিত্ব, যার মধ্যে আমার জন্য কোনো ভালোবাসা ছিল না। তোমার ক্ষতি গভীর, আমার নয়। কারণ আমি ভালোবাসতে পেরেছি। আর তুমি?
তুমি তো ভালোবাসা কী জিনিস, সেটাই অনুভব করোনি কখনো।কিতাহলে বলো, কে হেরে গেল? আর কে জিতে গেল?”
নীলাঞ্জনা রিকশায় উঠে বসল। লাবিব পুলিশের গাড়িতে। এই প্রথমবার কোনো কথা তার হৃদয়ে লাগল। এই সাধারণ কথাগুলো যেন লাবিবের হৃদয় ভীষণ ভারী করে তুলল!
🌿
নয়না খেয়ে সটান হয়ে শুয়ে পড়ল। মোবাইল নিয়ে কল করল জিয়ানকে। কল যাচ্ছে না। নয়না টাইম দেখল। মনে পড়ল, আজ জিয়ানের ফ্লাইট আছে। এখন নিশ্চিতভাবে বিমানে।
নয়না জিয়ানের টেক্সট দেখতে লাগল।
“তুমি কখনো আমাবস্যা, তো কখনো পূর্ণচন্দ্র। তবে তুমি যেরূপেই ধরা দাও, সব রূপেই মোহনীয়। মিসেস চৌধুরী, মুড সুইং হলো কেন হঠাৎ? আপনার কি পি**ড ডেট কাছাকাছি চলে এসেছে নাকি? শুনুন, ম্যাডাম, মাথা ঠান্ডা করুন, দুটো চকোলেট খান। এরপর আমাকে নক দিয়ে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলবেন। মনে থাক যেন।”
লাস্ট টেক্সটে লেখা, “তুমি রেগে গেলে তোমাকে টুপ করে কামড় দিতে ইচ্ছে করে। তোমার ওই লাল টুকটুকে গালে, নাকের টোকায়। আমি না তোমাকে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি। তুমি আমার সবটা দখল করে নিয়েছ। ভালোবাসি তোমাকে। প্রিয় সুনয়না, তুমি শুধু ক্যাপ্টেন রেজা চৌধুরীর। আই লাভ ইউ সো মাচ, ডিয়ার ওয়াইফি।”
নয়না হাসছে। লোকটা একেবারে রসগোল্লার মতো কিউট। ইচ্ছে করে টুপ করে খেয়ে ফেলতে। “ইশ, আমার বরটা এত কিউট কেন! ইচ্ছে করছে দৌড়ে গিয়ে তার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তে। কতদিন তার উষ্ণ বক্ষে মাথা রাখিনি।”
পাশ থেকে তুষি বলল, “ভাই, একটু আস্তে বল পিরিতের কথা। ভুলে যাস না, তোর পাশে একটা সিঙ্গেল, অসহায় মেয়ে আছে। তার প্রতি একটু তো দয়ামায়া কর।”
#চলবে