অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-৬০

0
20

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৬০

সকালে ঘুম থেকে উঠে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রেজার টেক্সটের দিকে।
“গুড মর্নিং, হানি।
আচ্ছা, বলো তো, বিলাল আব্বাস খান না সাদাত হোসাইন—তোমার জীবনে এদের মধ্যে কে আসলে আমাকে ছেড়ে যাবে? ডার্লিং, সত্যি বলবে কিন্তু। আমি তোমার রিপ্লাইয়ের অপেক্ষায় থাকবো, সোনাবউ।”
নয়না হাসছে। “আচ্ছা, প্রেমে পড়লে ছেলেরা কি আসলেই বোকা হয়ে যায়? এমন উদ্ভট প্রশ্ন কেউ করে?”
নয়না রিপ্লাই করলো, “সুপ্রভাত।
দুজনের কারও জন্যই আপনাকে ছেড়ে যাব না। কল্পনার জগত আর বাস্তবতা ভিন্ন। তাদের কেউ আপনার জায়গা কখনো নিতে পারবে না, মিস্টার প্লেন ড্রাইভার। আপনি আমার চিরস্থায়ী ব্যক্তিগত প্রিয় পুরুষ।”
জিয়ান সাথে সাথে রিপ্লাই করলো, “তাহলে কার জন্য আমাকে ছেড়ে যেতে পারবে?”
“মৃত্যুর জন্য। যদি মৃত্যু আসে, তবে বলবো আমাকে কেড়ে নিয়ে আপনাকে বাঁচিয়ে রাখতে।”
“ভিডিও কল করি, ওয়েট।”
ফোনের অপর প্রান্ত থেকে দুজন মানুষ দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। নয়নার আধখোলা বেণী, ফোলা চেহারা, টি-শার্ট আর প্লাজো পরা।রেজা নয়নার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে, “তোমাকে মোহনীয় লাগছে, বেব। ইচ্ছে করছে এলোমেলো চুলগুলো কানের কাছে গুঁজে দিয়ে কপালে উষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়া দিতে।”
“তারপর?”
“তারপর? তারপর বললে তো কল কেটে দিবে। সামনাসামনি থাকলে বুঝতে পারতে তারপর কী।”
“বদলোক! সব সময় মাথায় উল্টোপাল্টা চিন্তা।”
“উল্টোপাল্টা চিন্তা কেন হবে? তোমাকে দেখলেই তো ভালোবাসা উথলে ওঠে, এতে দোষটা তো তোমার।”
“আহা, নিজের দোষ আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে চাও!”
“ক্লাস কবে থেকে শুরু হবে?”
“সামনের সপ্তাহ থেকে। শোনো, আমি বাসায় গিয়ে কয়েকটা দিন থেকে আসি?”
“যাও, থেকে আসো। তবে আমাকে কিন্তু পুরো মনোযোগ দিতে হবে, জানো।”
“তোমাকে ছাড়া আমার আর কে আছে?”
“আহা, আদুরী বউ আমার। যাও, উঠো, ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করো।”
“এই, শোনো।”
“এভাবে না।”
“তো কীভাবে?”
“বলো, ওগো, শুনছো?”
“শুনতে হবে না, টেক্সট পড়ুন, ডিয়ার হ্যাসবেন্ড। আমি এসে আপনাকে নক দিবো। টাটা।”

নয়না ফ্রেশ হয়ে ফুরফুরে মেজাজে নাস্তা করতে আসলো। প্রিয় মানুষ ম্যাজিকের মতো মন ভালো করে দিতে পারে। নয়না নাস্তার টেবিলে এসে তার নিত্যদিনের প্রিয় নাস্তা—পরোটা আর চা—নিয়ে আয়েশ করে খেতে লাগলো। আজ যেন সবকিছুই নয়নার কাছে রঙিন লাগছে!

হঠাৎ জাহিন চেয়ার টেনে নয়নার সামনে সোজাসুজি বসে বলল, “গুড মর্নিং।”
নয়না আড়চোখে একবার তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। এই মানুষটাকে নয়না একদম সহ্য করতে পারে না। দেখলেই রাগ লাগে। নয়না নিজের মতো চায়ের মধ্যে পরোটা ডুবিয়ে খেতে লাগলো।জাহিন বলল, “এটা কি খুব টেস্টি?”
নয়না উত্তর দিলো না।

সার্ভেন্ট এসে জাহিনের সামনে ফ্রুট সালাদ দিয়ে বলল, “স্যার, অ্যাভোকাডো টোস্ট দিবো?”
“না, আমার জন্য পরোটা আর চা নিয়ে আসো।”
সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তিনজন সার্ভেন্ট সবাই অবাক হলো জাহিনের কথা শুনে! যে সারাজীবন সকালে টক দই, চিয়া সিড, বিভিন্ন ফল দিয়ে সালাদ আর চিনি ছাড়া গ্রিন টি, আর অ্যাভোকাডো টোস্ট খায়, সে খাবে হেভি লিকারের দুধ চা দিয়ে পরোটা!
নয়না এক গ্লাস ফ্রেশ অরেঞ্জ জুস নিয়ে নিজের রুমে চলে আসলো।
মেহনুর সিঁড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। নয়নাকে দেখে বলল, “বাহ, আগে বড়টার মাথা খেয়েছো, এখন ছোটটার মাথা খাওয়ার প্ল্যান করছো!”

নয়না ভ্রু কুঁচকে মেহনুরের দিকে তাকালো। কিছু বলতে যেয়েও চুপ হয়ে গেলো। রেজা যাওয়ার সময় বলেছিল, “যে যা বলুক, চুপ থাকতে। কোনো কথার উত্তর দিতে না। কোনো কথা খারাপ লাগলে আমাকে শোনাতে, আমি বুঝে নেবো।”
নয়না রুমে এসে বেডের ওপর ওড়নাটা রেখে চুলগুলো খুলে বসলো। এসির পাওয়ার বাড়িয়ে দিয়ে রেজাকে কল করলো।
“হেই, সুইটহার্ট, এত দেরি কেন?”
নয়না চুপ করে রইলো।
জিয়ান খানিকক্ষণ নয়নার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, “কে কী বলল তোমাকে? হঠাৎ করে চাঁদে গ্রহণ লাগলো কেন?”
নয়না তবুও চুপ করে রইলো।
“দেখো, জান, আমি তো বলেছি, তুমি সবকিছু আমাকে বলবে। আমি তোমাকে জাজ করবো না। খুলে বলো, কী হয়েছে।”
নয়না সবটা খুলে বলল। জিয়ান বলল, “শোনো, জাহিন তো সব সময় ওইসব রুক্ষ খাবার খায়। আজ হয়তো তোমাকে মজা করে চা দিয়ে পরোটা খেতে দেখে ওর খেতে ইচ্ছে করলো। আর মেহনুরের ব্যাপারে আমি দেখে নিচ্ছি। এবার তো হাসো।”
“কিন্তু আমার তোমার ভাইকে একদম সহ্য হয় না।”
“সহ্য হয় না বলেই তো ওর কোনো কাজ তোমার ভালো লাগে না। তুমি সহজভাবে নাও। মনে করো জাহিন তোমার বড় ভাই।”
“ধুর, বাদ দাও। এমন ভাই আমার লাগবে না।”
“আচ্ছা, বাদ দিবো। তবে আমি না, তুমি। এখন আম্মুর কাছে যাও। গিয়ে বলো, আজ তুমি তার সাথে রান্না করবে।”
“আমি তো রান্না পারি।”
“হ্যাঁ, তুমি রান্না পারো, তাই তো রান্নার কাজে সাহায্য করবে। তাহলে তোমার বোরিং সময় কাটবে না।”
“ওখে, ডিয়ার। তোমার ফ্লাইট কবে?”
“আজ রেস্ট, কাল ব্যস্ত থাকবো।”
“আচ্ছা, রেস্ট করো।”
“আবার কথা হবে, খুব তাড়াতাড়ি।”

নয়না কল কেটে তুষিকে কল করলো।
“কিরে, আবার স্মরণ করলি যে?”
“তোর মনে আছে, আমি যে একবার বলেছিলাম, যমুনা ফিউচার পার্কে একটা ছেলের সাথে দেখা হয়েছিল? ওই যে ঘড়ি আটকে গেলো?”
“হ্যাঁ, মনে আছে। কিন্তু হঠাৎ এই কথা?”
“ওই ছেলেটা জাহিন।”
“জাহিন আবার কে?”
“তোর দুলাভাইয়ের জমজ ভাই।”
“এখন কী কোনো সমস্যা?”
“আরে, সমস্যা বলতে, মাঝখানে আমি ভুল বুঝে ওকে তোর দুলাভাই ভেবে রাগ-অভিমান দেখিয়েছিলাম। এখন ওকে দেখলেই আমার সহ্য হয় না।”
“সবই বুঝলাম, কিন্তু সহ্য না হওয়ার থিওরি বুঝলাম না।”
#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে