#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব-৫৮
রাতে জিয়ান সোফায় শুয়েছে নয়না বেডে৷ সকালে ঘুম থেকে উঠে নয়না জিয়ানের পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে থাকে৷ হটাৎ তার চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে জিয়ানের পায়ের উপর পরে৷ নয়নার সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই সে নিঃশব্দে কেঁদে চলেছে৷ ছোট একটা কথার জন্য এতো অভিমান কেন হলো তাদের মাঝে? কেনো শেষ রাতটা নিজের মানুষটার বুকে মাথা রেখে শুতে পারলো না?নয়নার ভেতরে দগ্ধ দগ্ধ করছে রাতের ক্ষত। কেন জেদ করলো সে নিজের উপর মহা রাগ হচ্ছে তার।
“জিয়ান চোখ মেলেই দেখে নয়না দাঁড়িয়ে কাঁদছে৷ রাতের সব মান অভিমান ভুলে নয়নাকে জড়িয়ে নিলো বুকের মাঝে।
” জিয়ানের স্পর্শে নয়নার কান্না যেনো আরো বেড়ে গেলে হেঁচকি তুলে কাঁদতে লাগলো৷
“প্লিজ কেঁদো না। স্যরি জান৷ সব দোষ আমার। প্লিজ কেঁদো না।
” জিয়ানের কথা যেনো আগুনে ঘী ঢালার মতই নয়নার কান্নার গতি আরো বাড়িয়ে দিলো।
“জিয়ান নয়নাকে বুক থেকে সরিয়ে নয়নার থুতনিতে হাত রেখে বলে,জান এই কানে ধরলাম আর কখনো এমন আবদার করবো না যা তুমি অপছন্দ করো। কেঁদো না প্লিজ। এতো সুন্দর সকাল তোমার কান্না দেখে বিষাদে ছেয়ে গেছে৷ দেখে ঝলমলে রোদটাও কেমন মেঘের আড়ালে লুকিয়ে যাচ্ছে।
” নয়না নাক টেনে বলল,স্যরি। আমি জানি ভুলটা আমার৷ কিন্তু তাই বলে,আমাকে রেখে ঘুমাবা! আমার কি কষ্ট হয়নি তোমার সঙ্গ ছাড়া। কাল রাতে তো থাকবে না তখন আমি কি করে এই দুঃখ ঘুচাবো?
“জিয়ানের খুব মায়া হচ্ছে এবার সাথে অনুশোচনাও৷ তার বোঝা উচিৎ ছিলো নয়নার বয়সটা কম। তার সাথে সে কেন অভিমান ধরলো!
” জিয়ান নয়নার গালে চুমু দিয়ে বলে, আমি স্যরি জান৷ দোষটা আমার৷ আমার তোমাকে বোঝা উচিৎ ছিলো৷
“নয়না জিয়ানকে জড়িয়ে ধরে বলে,আমাকে অনেক ভালোবাসা দাও জান৷ আমি এতোদিন কি করে থাকবো তোমাকে ছেড়ে! আমার যে তোমার স্পর্শের অভ্যাস হয়ে গেছে।
” জিয়ান নয়নাকে জড়িয়ে নেয় নিজের সাথে। চুলে চুমু দিয়ে বলে,বাহহহ রাতের অপূর্ণতা এখন ভোরের আলোয় পূরণ করতে চাও। বৌটা একটু অবুঝ হলেও ভীষণ সরল আর স্নিগ্ধ। ঠিক ভোরের শিশিরের মত।
“নয়না জিয়ানকে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,আদর করো জান৷ গভীর ভাবে ভালোবাসো আমাকে৷
” জিয়ান নয়নার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে বলে,এ মাতাল করা আবদার উপেক্ষা করার সাধ্য জগতে কারো নেই। তুমি আমার শিশিরস্নাত ভোরের ভেজা বকুলফুল আমি শুষে নেবো তোমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে থাকা সমস্ত ঘ্রাণ। আমার শরীর জুড়ে লেপ্টে রবে তোমার স্পর্শের মাতাল করা সৌরভ৷
ঘন্টা দুয়েক জড়িয়ে রইলো একে অপরের চাদর হয়ে৷
“ফ্রেশ হয়ে দু’জনে একসাথে নাস্তা করতে নিচে আসলো৷
” নয়না ব্ল্যাক আর রেড কালারের কম্বিনেশনে একটা ড্রেস পরেছে। রেজার গায়ে জড়িয়ে আছে ব্ল্যাক টিশার্ট ব্ল্যাক প্যান্ট।
“নাস্তার টেবিলে সবাই উপস্থিত।
” নাজিম চৌধুরী বলল,রেজা আজ ক’টা বাজে তোমার ফ্লাইট?
“বাবা দুপুর তিনটে বাজে৷
” আজ রাতে আমারও সিঙ্গাপুর যাওয়ার টিকেট বুক করা৷ এই বয়সে আর ভালো লাগে না এসব৷
“জিয়ান জাহিনকে উদ্দেশ্য করে বলল,তুই তো ফ্রী আছিস ব্যবসাটা সামলা৷ বাবা আর কত টানবে একার ঘাড়ে?
” ভাই এসব প্যারা আমাকে দিয়ে হবে না৷ তারচেয়ে বরং পাইলটের জবটা ছেড়ে অফিস জয়েন করো তাহলেই তো হয়।
“নাজিম চৌধুরী রেগে গেলেও রাগটা সংযাত করে ফেললো৷ শান্ত স্বরে বলল,তোরা দুজন একি সাথে পৃথিবীতে এসেও দু’জন দুই মেরুর৷ জাহিনকে দেখলে মনে হয় আমি অতীতে নিশ্চিত কোন পাপ করেছি এই কারণে ও মানুষ হতে পারেনি৷ নয়ত এতো ভালো পরিবার এতো সুন্দর পরিবেশে থেকেও এতো অভদ্রতা কি করে শিখলো! জিয়ানের হওয়ার কথা ছিলো সিঙ্গার৷ এতো ভালো গান গাইতো ছেলেটা। ক্লাস টেনে যখন পড়িস তোরা সেদিন জিয়ানকে বললাম,জানিস আমার অনেক শখ আমার ছেলে পাইলট হবে৷ আকাশে প্লেন চালাবে৷
” জিয়ান তখন কি বুঝলো জানিনা৷ জড়িয়ে ধরে বলল,অবশ্যই তোমার স্বপ্ন পূরণ হবে বাবা৷
“জাহিন খাবার অর্ধেক প্লেটে রেখে উঠে চলে গেলো৷
” জিয়ান নাজিম চৌধুরীর কাঁধে হাত রেখে বলে,বাবা নাহিদকে আমি আমাদের অফিস জয়েন করতে বলবো৷ ওর সাথে জোড়াজুড়ি করে তো কোন লাভ হবে না জানোই। কোন খারাপ কাজ তো করেনা। চলুক ওর মনমতো যতদিন চলতে চায়। একদিন ঠিক নিজের দ্বায়িত্ব বুঝে নেবে।
“সকালের নাস্তা শেষ করে জিয়ান নয়নাকে বলল,চলো তো আমার কিছু কেনাকাটা করতে হবে।
” আপনি ওয়েট করেন আমি রেডি হয়ে আসছি।
“আর কি রেডি হবা! তোমাকে মাশা আল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে। চুলটা শক্ত করে হাত খোপা করে নিয়ে মাথায় ওড়না টেনে চলে আসোতো।
” নয়না জিয়ানের কথা মতো চলে আসলো৷ বাড়ির সামনের গার্ডেনে এসে জিয়ান নয়নার সাথে সেল্ফি নিলো৷
“জিয়ান নিজের বাইক নিয়ে এসে বলে,আসো জান৷
” নয়না জিয়ানের পাশে বসে জিয়ানের কাঁধে হাত রাখলো।
“শুনো বৌ হ্যাসবেন্ডের সাথে বাইকে বসলে মাঝখানে কোন ফাঁকা রাখতে নেই। একদম লেপ্টে বসো আমার শরীরের সাথে। তবেই না ফিল হবে বৌকে নিয়ে বাইক চালানোর।
” নয়না চুপচাপ জিয়ানের শরীরের সাথে মিশে বসলো। জিয়ান মুচকে হেসে বলে,তোমার আমাকে ভয় পেতে হবে না প্রিয়তমা। তোমার যা ইচ্ছে মানা করতে পারো। আমি তোমারই।
“নয়না দু’হাতে জিয়ানের বুক জড়িয়ে ধরে বলে,শোন আমি হ্যাসবেন্ডের সাথে বাইকে বসেছি সো এভাবে চিপকে না বসলে ফিল করবো কি করে। চুপচাপ ড্রাইভ করুন তো আই ফিল বেটার।
” জিয়ান ড্রাইভা করছে। ইশশ এই অনুভূতি ব্যখ্যা করার মত না। মনের মধ্যে যেনো শত ডানার প্রজাপতি উড়ছে।
“নয়না জিয়ানে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে একটা গান ধরুন মিস্টার প্লেন ড্রাইভার। থুরি বাইক ড্রাইভার।
” এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতো তুমি বলতো?
“গাড়ি এসে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে থামলো।
জিয়ান বাইক পার্ক করে নয়নাকে নিয়ে শপিংমলে ঢুকলো। নিজের জন্য নয়নার পছন্দের, শার্ট, টিশার্ট, প্যান্ট, টাউজার কিনে নিলো।
” নয়না বলল,আমার না আপনাকে লুঙ্গী পরা দেখার শখ।
“লুঙ্গী!এই না আমি কোনদিন লুঙ্গী পরিনি। এসব না।
” আরেহহহ জান আমিই তো। প্লিজ প্লিজ।
” জিয়ান চোখ ছোট করে বলে তাহলে তোমাকেও বিকিনি পরে দেখাতে হবে।
“ছিহহহ আপনাকে কি আমি জাঙ্গিয়া পরতে বলছি!
” আরেহহ ঠিক আছে আমি লুঙ্গী পরবো এবার না পরেরবার।
“শপিং শেষ করে দ্রুত বাসায় এসে সব গুছিয়ে নিচ্ছে।
” নয়নাও হেল্প করে জিয়ানকে৷
“হুট করে জিয়ান প্যাকিং ছেড়ে নয়নাকে জড়িয়ে ধরলো।
” নয়না বললো,কি হলো?
“জানিনা আমার ভেতরটা কেমন শূন্য শূন্য লাগছে। তোমাকে ছেড়ে কি করে থাকবো পাখি!
” নয়না নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,মোবাইল আছে তো মিস্টার পাইলট মহাশয়। ফোনে প্রেম জমে ক্ষীর হবে।
“তবুও ইচ্ছে করছে তোমাকে একদম নিজের মধ্যে লুকিয়ে ফেলতে।
” এতো উতলা হতে নেই। আমি আপনার সারাজীবনের জন্য পাশে আছি ফুরিয়ে যাচ্ছি না৷ আপনার অর্ধাঙ্গিনী শুধু আপনার৷
“জিয়ান নয়নার উষ্ণ ঠোঁট দুটি দখল করে নিলো নিজের ঠোঁট দিয়ে।
আচ্ছা ভালোবাসার সময় এতো দ্রুত ফুরিয়ে যায় কেন! এইযে জিয়ানের মনে রাজ্যের শূন্যতা এসে ভর করেছে। এই আকুলতা কেই বুঝি ভালোবাসা বলে?চেনা নেই জানা নেই তবুও কবুল বলার মাধ্যমে দুটি প্রাণ আজ যেনো মিলেমিশে একাকার। একজন অপরজনকে ছাড়া যেনো শূন্য। লাভ ম্যারেজ ইট’স ওকে বাট এরেঞ্জ ম্যারেজ হিট ডিফারেন্ট।
” নয়না আজকাল অনুভব করে তার নিজের একটা মানুষ আছে। বাবা মায়ের বাইরে তার একান্ত ব্যাক্তিগত মানুষ। ইশশ মানুষটা শুধু তার নিজের। তার শরীর থেকে মন সব জায়গায় শুধু তার রাজত্ব। সিংহাসন বিহীন এক রাজ্যের রানী সে৷ যা সে দখল করেছে হৃদয়ের বিনিময়ে। হৃদয়ের লেনাদেনার মাধ্যমে হয়ে উঠেছে এক কঠিন যুবকের হৃদয়ের রানী।
#চলবে।