#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৫৭
“নয়না রাস্তায় বসে পরে৷ আমি কোথাও যাবো না বাসায় যাবো৷
“পাগলামি করছো কেন! তাড়াতাড়ি ওঠো। রাস্তায় কেউ বসে? নিব্বি বৌ জুটেছে আমার কপালে৷
” একদম নিব্বি বলবেন না৷ আমি সুনয়না চৌধুরী হু।
“মিসেস চৌধুরী এভাবে রাস্তায় বসে থাকতে নেই। দয়া করে উঠুন। আপনি যা বলবেন তাই হবে মিসেস চৌধুরী।
” নয়না দু”হাত প্রসারিত করে বলে,তাহলে কোলে নিন আমাকে।
“জিয়ান নয়নাকে কোলে তুলে নিলো৷
” নয়না জিয়ানে গলা জড়িয়ে ধরে বলে,শুনুন আমাকে আম্মুর কোল থেকে নিয়ে এসেছেন এখন আপনার কোলে তুলে রাখবেন৷
“আহাগো বৌয়ের কত আদুরে আহ্লাদ। চলো না যাই।
” নাহহ বাসায় যাবো।
“জিয়ান নয়নাকে বলল,এভাবে মানা করে দিচ্ছো নিষ্ঠুর বৌ।
” বাসায় যাবো তাড়াতাড়ি নিয়ে চলুন৷
জিয়ান নয়নাকে গাড়িতে বসালো নয়না জিয়ানের কাঁধে মাথা রেখে বলে,রাগ করেছেন মিস্টার প্লেন ড্রাইভার? নয়না জিয়ানর হাতের উপর হাত রেখে বলে,ছেলে মানুষের অভিমানী চেহারা এতো আকর্ষণীয় লাগে তোমাকে না দেখলে জানতাম না। তোমাকে এখন ঘুমন্ত গোলাপ মনে হচ্ছে জানো সখা।
“জিয়ানের ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসির ঝলক ফুটে উঠলো। তার পিচ্চি বৌটা জানে কিভাবে তার বরকে মানাতে হবে৷ তবুও তা প্রকাশ করলো না৷
” এই শুনছো। ওগো শুনছো রাগ করে না প্রাণের স্বামী রাগলে তোমায় লাগে পঁচা আলু।
“জিয়ান গাল ফুলিয়ে বলে,পঁচা আলু!
“তো রাগ করলে কাউকে ভালো লাগে নাকি জানো না?
” জিয়ান নয়নার দিকে ঘুরে বলে,কে বলেছে রাগলে কাউকে ভালো লাগে না৷ এক হাঁটুর বয়সী পিচ্চি আছে যে রাগলে তাকে স্টবেরী লাগে। মনে হয় টুপ করে খেয়ে ফেলি।
“নয়না জিয়ানের চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলে,তোমার চুলগুলো এলোমেলো থাকলে বেশী হ্যান্ডসাম লাগে। মানে মেসি হেয়ার এ মানায় তোমাকে।
” জিয়ান নয়নার হাত ধরে বলে,এই প্রথম কেউ পাইলট রেজা চৌধুরীর হেয়ার টাচ করার সাহস করেছে৷
“আহা মিস্টার প্লেন ড্রাইভার এটা তৃতীয়বার আমি তোমার মাথায় হাত বোলাচ্ছি৷ বলতে পারো এটা আমার ফেবারিট কাজ।
” তো মিসেস চৌধুরী তুমি কেনো আমার সাথে রিসোর্টে যেতে রাজি হচ্ছো না?
“আমার ইচ্ছে করছে তোমাকে বাসায় নিয়ে জড়িয়ে ধরে ঘুমোতে। ইচ্ছে করছে তোমার বাহুতে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে।
” জিয়ান নয়নার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলে,বুঝেছি মিসেস চৌধুরীর আদর আদর ফিল হচ্ছে। ইশশ বাসায় ঢুকে সোজা কোলে তুলে বেড রুমে নিয়ে যাবো৷
“নয়না লজ্জা পেয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।
” জিয়ান নয়নার চোখের উপর ফু দিয়ে বলে,লাজে রাঙা বৌ আমার।
“গাড়ি এসে থামলো চৌধুরী ম্যানশনের সামনে।
” নিজের রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে,হাত বাড়িয়ে ম্যারিনোকে ধরে কোলে তুলে নিলো। ম্যারিনোর কথা মনে পরে মন মলিন হয়ে গেলো জাহিনের। ম্যারিনো মারা গেছে তার ছোট একটা ভুলে ম্যারিনো নেই। এই যে ম্যারিনোে মত দেখতে যে বেড়ালটা তার কাছে আছে তাকে কেনো অতোটা আপন লাগে না! আচ্ছা মানুষ তবে কেন বলে,চেহারার দেখে ভালোবাসা হয়। এই যে একি চেহারা তবুও তো মন পোড়ে সেই আমার পুরনো ম্যারিনোে জন্য।
জাহিন হটাৎ খেয়াল করলো জিয়ান নয়নাকে কোলে তুলে নিয়েছে৷ জিয়ানের হাত নয়নার কোমড়ে৷ শাড়ি কিছুটা সরে যেয়ে কোমড়ের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে।
জাহিন হুট করে বেড়ালটাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।
“দ্বিতীয় তলা থেকে বেড়ালটা পরে ম্যাও ম্যাঁও করে উঠে।
” নয়না ভয়ে চিৎকার দিয়ে জিয়ানের গলা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
“জিয়ান নয়নাকে কোল থেকে নামিয়ে ম্যারিনো ভেবে নতুন বেড়ালটাকে কোলে তুলে নেয়৷ কিন্তু বেড়ালটা কেমন অপরিচিত লাগছে!
” নয়না জিয়ানের শার্ট খামচে ধরে বলে,আমি বেড়াল ভয় পাই ছাড়ুন ওকে।
“ওর নাম ম্যারিনো। জাহিনের আত্মা।
” সে যা হোক নামান।
“জিয়ান একজন সার্ভেন্ট ডাক দিয়ে ম্যারিনোকে তার কাছে দিয়ে বলে, ম্যারিনোকে ওর সঙ্গীর কাছে দিয়ে আসুন।
” জাহিন রুমে এসে একসাথে দুটো সিগারট ধরায়। সিগারেটের ধোয়ার সাথে উড়িয়ে দেয় তার উদ্ভট সব ভাবনা চিন্তা। সে জানেনা তার কি চাই সে জানে তার জিনিস তার ফেরত চাই। জাহিন দু’টো সিগারেটের ধোয়া টেনে নিয়ে বলে,যা আমার তা হয়ত আমার থাকবে নয়ত আর কারো হতে পারবে না৷
“জিয়ান বসায় এসে সোজা মিতা বেগমের রুমে ঢুকলো৷ মিতা বেগম তখন নামাজ শেষ করে সবে তাজবিহ নিয়ে বসছে।
” জিয়ান ডাকলো আম্মু আসবো?
“মিতা বেগম ঘাড় বাকিয়ে বলে,অনুমতি নিতে হবে না আয়৷
” জিয়ান এসেই মিতা বেগমের কোলে শুয়ে পরলো৷
“মিতা বেগম জিয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,কিরে খোকা কিছু বলবি?
” কিছু না বললে,তোমার কাছে আসা যাবে না?
“মায়ের কাছে আসতে সন্তানের কোন কারণ লাগে না। তবুও আমি জানি তুই কিছু বলবি।
” আম্মু আমি তো কাল চলে যাবো। নয়নাকে দেখে রেখো ও খুব সেনসিটিভ মেন্টালিটির। বাসায় যেতে চাইলে যেতে দিও বাবা যাতে বাঁধ না সাধে৷
“তোর বাবা রাগী স্বাভাবের যদিও এটা তোদের বংশগত তবে মনটা একদম কোমল। সে নয়নাকে খুব স্নেহ করে।
” নয়না দরজায় এসে বলে,আম্মু আমাকে আদর দিবে না?
“জিয়ান নয়নার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে৷ নয়নার পরণে তার টিশার্ট যদিও গায়ে ওড়না জড়ানো।
” আয় এদিকে আয় তোকেই তো আদর বেশী করবো। ছেলেটাতো চলেই যাবে তার পর দুই মা মেয়ে মিলে সারাক্ষণ একসাথে ঘুরবো ফিরবো।
“জিয়ান চট করে উঠে বলে,আম্মু তাহলে এখন রুমে যাই।
” নয়না বলল,আজ আম্মুর সাথে ঘুমাবো৷
“জিয়ান চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে নয়নার দিকে৷
” মিতা বেগম নয়নার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,নিশ্চিত অভিমান হয়েছে আমার ছেলেটার উপর? আজ অভিমান ছেড়ে দে ফের যখন আসবে তখন করিস৷ যাহহ তোর বৌকে নিয়ে যা।
“জিয়ান নয়নার হাত ধরে রুম থেকে বের করে সাথে সাথে কোলে তুলে নিয়ে বলে, লজ্জা করে না বরের আদর না চেয়ে শ্বাশুড়ি আদর চাও?শুধু শুধু হাঁটুর বয়সী বলি?
” ছিহহহ কিসব কথা৷ থাকবো না আপনার সাথে চরম অসভ্য আপনি৷
“একবার রুমে চলো তারপর দেখাচ্ছি অসভ্যতা কাকে বলে৷
” মেহনুর মুখে হাত দিয়ে দেয়াল ঘেঁষে বসে পরলো,চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরতো লাগলো নোনাজল৷ তার কপালে কেন ভালোবাসা নেই?আচ্ছা নয়নার জায়গায় সে থাকলে তার জীবনটা নিশ্চিত রঙিন হতো।
“জিয়ান রুমে এসে নয়নাকে বেডে চেপে ধরে বলে,এবার বলো, আদর দাও জান৷
” ইশশ শখ কত জীবনেও বলবো না৷
“না বললে কিন্তু খবর আছে।
” বলবো না, না না৷
🌿নীলাঞ্জনা হসপিটালে থেকে চেকআপ করে বের হয়ে রিকশা নিলো। গাড়িতে তার দম বন্ধ লাগে তাই গাড়ি নিয়ে বের হয়নি। রিকশা কিছুদূর এগোতেই লাবিব লাফ দিয়ে রিকশায় উঠে পরে৷
“রিকশা থেকো নামো।
” তুমি তো আমাকে ভালোবাসতে তবে ফিরিয়ে দিচ্ছো কেন?
“ভালোবাসতাম। তবে আমি থাকতেও যার অন্য নারীর সঙ্গ প্রয়োজন হয়। তাকে ভালোবাসা তো দূর ঘৃণা করতেও ঘৃণা হয় আমার। নীলাঞ্জনা একদলা থুতু ফেলে বলে,ফেলে দেয়া থুতু আর তোমার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই আমার কাছে৷ লক্ষ কোটিবার পায়ে ধরলেও ফেরত নেবো না৷
” গাড়ি থেকে না নামলে ওইযে সামনে পুলিশ বক্স সেখানে যেয়ে চিৎকার করবো৷
“লাবিব নেমে গেলো রিকশা থেকে৷
” নীলাঞ্জনা তাচ্ছিল্য হেসে বলে,পুরুষ মানুষ জানেনা নারী যত যত্ন করে ভালোবাসতে পারে তারচেয়ে দ্বিগুণ ভাবে উপেক্ষাও করতে পারে৷ প্রিয়তম মানুষ ও একসময় তাদের কাছে মৃত হয়ে থেকে যায়। তাদের ধোঁকা জানার পর তাদের অস্তিত্ব থাকা না থাকা সমান। তারা চোখের সামনে থেকেও যেনো না থাকার মত এক্সজিস্ট করে।
#চলবে।
বিঃদ্র-ব্যস্তার কারণে রিচেক করা হয়নি৷ ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন৷