অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-৪৫

0
37

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৪৫
সায়না বাসন্তী রঙের একটা শাড়ি পরেছে, হাত ভর্তি দোলনচাঁপা ফুল আরেক হাতে একটা কেক৷ গেটের সামনে আসতেই দারোয়ান জিজ্ঞেস করলো, কাকে চাই?
“ডাক্তার অনিকেত মাহমুদ।”
” স্যার তো এই এপার্টমেন্টে ছেড়ে চলে গেছেন৷”
“আপনি মিথ্যা বলছেন কেনো?”
” আপনাকে মিথ্যে কেন বলবো!সত্যি স্যার নতুন এপার্টমেন্টে উঠেছেন৷”
“সেটা কোথায় বলতে পারবেন?”
” নাহহ ম্যাডাম সেটা তো জানিনা৷”
“সায়না হতাশ হলো। চোখের কাজল খানিকটা লেপ্টে গেলো চোখের জলে। কেকটা রিকশায় রেখে কল করলো অনিকেতকে। সায়না বুঝতে পারলো অনিকেত তার নাম্বার দু’টো ব্লক করে দিয়েছে।”
” কই যাবেন ম্যাডাম?”
“রামপুরা নতুন বাজার।”
” রিকশা চলছে আপন গতিতে। সায়না ভেবে পাচ্ছে না কোথা থেকে ঠিকানা জোগাড় করবে। হঠাৎ মনে পরলো জিয়ানের কথা। সাত পাঁচ না ভেবে অসাধ্য সাধন করেই বসলো৷ জিয়ানকে কল করে বলে,অনিকেতের ঠিকানা বলো তো।”
“জিয়ান অবাক হয়ে বলে,তোর থেকে কমছে কম ১৩/১৪ বছরের বড় হবে ভাই বলে সম্বোধন কর।”
” ভাইয়া না ওই আবাল ডাক্তারকে ছ্যাইয়া বানাবো ঠিকানা দাও।”
“কিন্তু?”
“কোন কিন্তু মিন্তু নাই না দিলে এখন আমি গাড়ির নিচে ঝাপ দিবো।”
“দাঁড়া দিচ্ছি হোয়াটসঅ্যাপ চেক কর। বাপরে বোন আমার জুলিয়েট হয়ে উঠেছে।”
” তোমার বন্ধুকে বলে দিও বিয়ে আমি তাকেই করবো৷ যতই উড়ুক ঘাড় ধরে আমার আঁচলেই বাঁধবো। চুল বেঁধে নেই৷ আমিও যাবো আপনার সাথে।”
“ঠিক আছে চলো তবে বাসায় কাউকে বলবে না আমরা তোমাদের বাসায় যাচ্ছি।”
“কেনো আমরা কি চুরি করতে যাচ্ছি?”
” বেশি কথা না বলে রেডি হও।”
নিচে এসে সবার সাথে খেতে বসলো নয়না৷
নাজিম চৌধুরী নয়নার দিকে তাকিয়ে বলে,”আম্মাজান আপনি আমার সাথে দেখা করলেন না কেনো?”
“নয়না হতভম্ব হয়ে গেলো!তার বাবাও তাকে আম্মু ডাকে সব সময়। নয়নার চোখের কোন ভিজে উঠলো”
” নাজিম সাহেব মুচকি হেসে বলেন,আম্মাজান আমি আপনার শ্বশুর না আমি আপনার ছেলে মনে থাকবে তো?”
“নয়না বলল জ্বি আংকেল।”
” আঙ্কেল না বাবা বলবা।”
“জাহিন আড় চোখে নয়নার দিকে বার কয়েক দৃষ্টি দিলো৷ মনে মনে বলে,মেয়েটা অদ্ভুত রকমের মায়াবী!”
” মিতা বেগম জিজ্ঞেস করলো,তোমরা রেডি হয়ে খেতে বসেছো কোথাও যাচ্ছো নাকি?”
“জিয়ান বলল,হ্যা আম্মু ওর জন্য শপিং করবো।”
” খাওয়া শেষ হতেই নাজিম চৌধুরী জিয়ানের হাতে হাজার টাকার এক বান্ডিল ধরিয়ে দিয়ে বলে,আমার আম্মাজান আমার টাকায় শপিং করবে। নয়নাকে উদ্দেশ্য করে বলে,আম্মাজান যা ইচ্ছে কিনবেন। আপনার জন্য আপনার ছেলের টাকা অফুরন্ত।”
“সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নয়না,আর জিয়ান বের হয়ে আসলো। গেটের সামনে এসে রিকশা ডাকলো।
“নয়না বলে,এতোগুলা গাড়ি থাকতে রিকশা কেন!”
” সুন্দরী বৌয়ের সাথে রিকশা ভ্রমণ করার মজা কি আর গাড়িতে পাওয়া যায়? বৌ পাশাপাশি ঘেঁষে বসবে,রিকশার ঝাঁকিতে আমার বাহু চেপে ধরবে। এই ফিলিংস কি গাড়িতে পাওয়া যাবে বাটার মাশরুম।”
“রিকশায় উঠে বসলো দু’জন হুট তোলা রিকশায় দু’জন গা ঘেঁষে বসে আছে। নয়নার মনে হচ্ছে এটা কোন সিনেমা! তার পাশে বসে থাকা হ্যান্ডসাম ছেলেটা হিরোর থেকে কোন অংশে কম না, রয়েল ব্লু রংয়ের শার্ট ফরমাল প্যান্ট। শার্টের হাতা ভাজ করে রাখা, চুলগুলো স্পাইক করা,হাতে ব্র্যান্ডের ঘড়ি। উফফ কি মারাত্মক সুদর্শন এক যুবক তার পাশে বসে আছে!”
” জিয়ান নয়ান হাত নিজের হাতের মধ্যে আবদ্ধ করে বলে,তুই হাতে রাখলে হাত, পাড়ি দিবো আমি সুদীর্ঘ পথ, তুই পাশে থাকলে রাঙিয়ে দেবো গোধুলির বিকেল।”
“নয়নার ভালো লাগছে মূহুর্তটা সব কিছু যেনো স্বপ্নের মত লাগছে।”
” বৌ তুমি কিছু বলছো না কেন?”
“আপনি আমাকে ভালোবাসেন?”
” জিয়ান নয়নার এমন প্রশ্নে থমকে গেলো।”
“সব প্রশ্নের উত্তর হয়না। কিছু প্রশ্নের উত্তর অনুভব করে নিতে হয় প্রিয়তমা অর্ধাঙ্গিনী।”

🌿

তালুকদার বাড়ির পরিবেশ থমথমে।
মিজান তালুকদার, মাহবুব তালুকদার, লতা বেগম, নীলাঞ্জনা সবাই একত্রে ড্রয়িং রুমে বসে আছে।
” নয়না বাসায় ঢুকেই বাবা বলে,মাহবুব তালুকদারকে জড়িয়ে ধরলো।”
“জিয়ান সবাইকে সালাম করে বসলো একটা সিঙ্গেল সোফায়।”
” নীলাঞ্জনা জিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। এতো হ্যান্ডসাম এতো রিচ একটা ছেলেকে সে হাতছাড়া করলো! আফসোস করছে মনে মনে।”

“বাবা এখানে কি হচ্ছে?নয়নার প্রশ্নের উত্তরে মিতা বেগম বললেন, তোমার স্বামীর কুকীর্তির বিচার সভা৷”

“নয়না ভ্রু কুঁচকে বলে,জীবনে নিজের মেয়ের কুকীর্তির বিচার করলেন না আর আসছেন পরের ছেলের বিচার করতে! বাহহহহ সো নাইস!”
“জিয়ান নয়নাকে উদ্দেশ্য করে বলল,সুনয়না একদম চুপ করে থাকো। আঙ্কেল এবার বলুন আমাকে কেনো ডেকেছেন?”
” মাহবুব তালুকদার নরম স্বরে বলল,দেখো বাবা এভাবে তোমাকে নিয়ে বসা আমাদের উচিত না কিন্তু তোমার বিরুদ্ধে এতো বড় এলিগেশন আনার পরে আর উপায় পেলাম না।”
“আঙ্কেল আপনি যা বলতে চাইছেন নির্দ্বিধায় নিজের ছেলে ভেবে বলে ফেলুন।”
“তুমি পরশু রাতে নীলাঞ্জনার সাথে ছিলে? নীলাঞ্জনাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে গেছো?”
” নয়না বলল এসব কি বলছো বাবা! পরশু রাতে তো আমরা বিচে ছিলাম।”

“মিতা বেগম ফুঁসে উঠে বলে,এইটুকু মেয়ে কি পাঁকা পাঁকা কথা! তুই চুপ কর একদম।”

“আঙ্কেল দেখুন আমি এমন একজন মানুষ যে একবার কিছু ছেড়ে দিলে দ্বিতীয়বার তার দিকে দৃষ্টিও দেইনা। থুতু ফেলে যেমন দ্বিতীয়বার ফেরত নেয়না আমিও কিছু মানুষকে থুতুর মত ফেলে দেই চিরজীবনের জন্য।”
“নীলাঞ্জনা বলল,তুমি মিথ্যে কেন বলছো রেজা? তুমি এখনো আমাকে চাও সেটা বলো তাহলেই সমস্যা শেষ।”
“জিয়ান নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রাগ নিয়ন্ত্রণ করছে,জিয়ানের চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে কপালের রগ ফুলে উঠেছে চোখ লাল হয়ে গেছে।”
“নয়না জিয়ানের দিকে তাকিয়ে নীলাঞ্জনাকে উদ্দেশ্য করে বলল,তুমি যদি সম্পর্কে আমার বড় বোন না হতে তাহলে এতোক্ষণে তোমার গালে দুই চারটা থাপ্পড়ের দাগ থাকতো। তোমার নিজের চরিত্রে সমস্যা তাই অন্যকেও তেমন মনে করে। ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন,যেটা তুমিও জানো তবুও বলছি যে তোমার মত মেয়েকে কোলে তুলে বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে সে হলো আমার দেবর জাহিন চৌধুরী। সো এসব আষাঢ়ে গল্প বলে লাভ নেই৷ আমার হ্যাসবেন্ড তোমার মত মেয়েদের দিকে ফিরেও তাকায় না।”
“নয়না বড্ড বেশি বলছিস তুই! আমার আর রেজার মাঝখানে আসবি না।”
“নয়না জিয়ানের হাত ধরে বলে,উঠুন।”
” জিয়ান সেভাবেই বসে আছে৷”
“নয়না চিৎকার করে বলে,উঠতে বলেছি তো। যেখানে আমার হ্যাসবেন্ডের চরিত্রের দিকে আঙ্গুল তোলা হয়, যেখানে বাড়িতে ডেকে এনে আমার হ্যাসবেন্ডকে অপমান করা হয় সেই বাড়িতে আর এক মূহুর্তের জন্য থাকবো না।সারাজীবনের জন্য এদের আমি ত্যাগ করবো।”

” জিয়ান তার ষোড়শী বৌয়ের দিকে অপলক দৃষ্টি মুগ্ধ নেত্রে তাকিয়ে আছে। তার বাচ্চা বৌটা তার সম্মানের জন্য লড়াই করছে! জীবনে যা হারায় তা হারানোই যেনো মঙ্গল। নয়ত এমন অর্ধাঙ্গিনী কোথায় পেতাম!”

“জিয়ান নয়নার হাত ধরে বলে,শান্ত হও সুনয়না৷ আমি তোমার বাবার সাথে একটু কথা বলবো৷”
” কিছু বলতে হবে না। আমার বাবার কাছে তার ভাইয়ের মেয়েই সব৷ থাকুক সে তাদের নিয়ে৷”

“জিয়ান মাহবুব তালুকদারকে উদ্যোগ করে বলল,আঙ্কেল এই বাড়িতে শুধুমাত্র আপনি জানেন আমার জমজ ভাই আছে।আর নীলাঞ্জনাও জানে। ওর মত মেয়ের কাছে এসব করা আহামরি কিছুই না। কারন লজ্জা, বা মানসম্মান কোনটাই নেই ওর। আমি আর নয়না পরশুদিন চট্টগ্রাম ছিলাম। আপনাকে হোটেলের নাম বলছি আপনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন। আজকের মত আসি আঙ্কেল। আম্মা ফিরলে নয়নাকে নিয়ে অন্যদিন আসবো।”

“জিয়ান নয়না বের হয়ে গেলো৷

“মিজান তালুকদার মাথা নিচু করে বসে আছে,তার চোখ দুটো অশ্রুত টইটম্বুর পুরুষ না হয়ে মহিলা হলে এতোক্ষণ চিৎকার করে কান্না করতো। মিজান তালুকদার লজ্জিত কন্ঠে বলল,ভাই আমাকে ক্ষমা করে দিও কথায় আছে বাপ ভালো তার ছেলে ভালো, মায়ের গুণে ঝি। আমার মেয়ের মধ্যে এই অসভ্য মহিলার ছায়া দেখতে পাচ্ছি। ঠিক তার মায়ের মত হয়েছে। মানুষ নিজে খারাপ হলেও সন্তানকে ভালো পরামর্শ দেয় আর এই রাক্ষসী মহিলা মেয়েটাকেও শেষ করে ছাড়লো। সাথে আমার মানসম্মান সব শেষ করে দিলো।”

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে