#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব-৪৩
নয়না বেড থেকে উঠে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়ালো৷ ড্রেসিং টেবিল জুড়ে নামি-দামি ব্র্যান্ডের পারফিউম, বডি স্প্রে আর ঘড়ি। নয়না একটা পারফিউম বের করে তার ঘ্রাণ নিচ্ছিলো হটাৎ আয়নায় জিয়ানের প্রতিবিম্ব দেখে সামনে ফিরে তাকাতেই নয়ানা জিয়ানের বাহুতে ধাক্কা খেলো৷
নয়না দু’কদম পিছিয়ে যেতেই জিয়ান নয়নাকে নিজের বাহুতে আগলে নিলো। নয়নার হার্ট বিট, শ্বাস নেয়ার ধ্বনি সব বেড়ে গেছে।প্রথম বার কোন পুরুষের নগ্ন দেহের ছোঁয়া। নয়নার কেমন হাসফাস লাগছে। সদ্য শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে জিয়ান। উন্মুক্ত শরীর জুড়ে বিন্দু বিন্দু জল। কোমড়ে তোয়ালে জড়ানো।
জিয়ান নয়নাকে নিজের সাথে আরএকটু মিশিয়ে নিয়ে নয়নার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,”এতোটুকুতেই জমে গেলে এই পুরো আমি টাকে কি করে সামলাবে পুটি মাছ!”
‘নয়নার মুখ থেকে কোন কথা বের হচ্ছে না। নিশ্বাসের শব্দ ক্রমশ বেড়ে চলেছে। এ কেমন দম বন্ধ কর অদ্ভুত অনূভুতির সাথে পরিচিত হচ্ছে নয়না?
‘জিয়ান নয়নাকে ছেড়ে দিয়ে বলে,”তোমার নাম নয়না একদম পার্ফেক্ট।”নয়না একটু ছোঁয়াও সয় না” না মানে এতোটুকু পরিমান কাছে আসাতেই তোমার প্রাণ যায় যায় অবস্থা! পুরোপুরি কাছে গেলে শ্বাস বন্ধ হয়ে পুটি মাছের মত লাফাতে লাফাতে শেষ না হয়ে যাও! গভীর ভালোবাসা দিলে তো প্রাণ বেড়িয়ে যাবে বোধ হয়। তখন তো আমার জে*ল,ফাঁ*সি হবে।”
নয়না নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,”আপনি কি ফিডার খাওয়া বাচ্চা! আপনাকে আমি সামলাবো। উল্টো আপনি আমাকে কিভাবে সামলাবেন সেই চিন্তা করুন। কারণ কথায় আছে বউ পালন করা হাতি পালন করার চেয়ে কঠিন!”
“এইটুকু পুটি মাছ সে আবার নিজেকে হাতির সাথে তুলনা করে!তোমার মত পুটিমাছকে সামলানোর জন্য আমার একটা আঙ্গুল যথেষ্ট।”
“কথায় আছে ছোটা প্যাকেট বড়া ধামকা। সো বি কেয়ারফুল। বৌকে এতো হালকা ভাবে নিতে নেই মিস্টার প্লেন ড্রাইভার। প্লেন ড্রাইভ করা সহজ হলেও বৌ চালানো সহজ না। মিস্টার প্লেন ড্রাইভার।”
“আয়হায় ভয় পেয়েছি আমি। তা বড়া ধামাকা টেক্কা দেয়ার জন্য আপনার সামনে পাইলট জিয়ান রেজা চৌধুরি উপস্থিত।”
“এই যে মিস্টার প্লেন ড্রাইভার, শুনে রাখুন রাজা, বাদশাহও তার বিবিদের কাছে সামান্য প্রেমিক পুরুষ ছিলেন। আপনার মত প্লেন ড্রাইভার তো কিছু দিনের মধ্যেই আমার নেশায় বুদ হয়ে আমার ইশারায় নাচবেন।তখন বলবেন বৌ বললে তাই না বললে নাই।”
“এই তোমার বয়স সবে ষোল! কিন্তু তোমার কথা শুনে মনে হয় ম্যাচিউর। প্রাপ্ত একজন নারী আমার সামনে। যাক ভালোই হলো। আর অপেক্ষায় রইলাম তোমার নেশায় বুদ হওয়ার। কথাটা বলেই জিয়ান এক চোখ টিপলো।তবে নেশাখোরকে সামলাতে পারবে তো আফিমের ড্রাম?”
“আমি আফিমের ড্রাম?”
“জিয়ান নয়নাকে একদম নিজের কাছে নিয়ে এসে বলে,উঁহু তুমি তো আফিমের সমুদ্র। তোমার আফিমের উত্তাল ঢেউয়ে বেসামাল হতে চাই।”
“নয়নার শ্বাস বেড়ে যাচ্ছে। জিয়ান নয়নার কাছে আসার সিমা অতিক্রম করতে চাইলেই নয়নার সাথে এমন হয়।
“জিয়ান দ্রুত নয়নাকে ছেড়ে দিয়ে বলে,তাড়াতাড়ি যাও ফ্রেশ হয়ে আসো আম্মু খাবার নিয়ে চলে আসবে তো।”
“নয়না ড্রেসিং টেবিলের এককোণ আঁকড়ে ধরে বলে পানি৷ আমাকে একটু পানি দিন আমি নয়ত মরে যাবো৷”
“জিয়ান দ্রুত নয়নাকে পানি এগিয়ে দিলো। সবটুকু পানি পান করে জিয়ানকে জড়িয়ে ধরে বলে,আপনাকে ঘৃণা করি আমি। বলতে বলতে ঢলে পরলো জিয়ানের বাহুতে।”
“জিয়ান নয়নাকে কোলে তুলে বেডে নিয়ে শুইয়ে দিলো। সকাল তখন ছয়টা পঞ্চাশ। জিয়ান নিজের ফোন বের করে অনিকেতকে কল করলো। রিং হয়ে কেটে যাচ্ছে রিসিভ হচ্ছে না৷ জিয়ান লাগাতার কল করেই যাচ্ছে।”
অনিকেত ঘুম জড়ানো চোখে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে জিয়ানের কল৷ দ্রুত রিসিভ করে বলে,”কি হয়েছে সব ঠিক আছে? ”
জিয়ান বারান্দায় চলে আসলো,গ্লাস টেনে দিয়ে বলল,”আমার জন্য সুনয়নার এই অবস্থা। তুই কেমন ডাক্তার এই রোগের ঔষধ দিতে পারছিস না!”
“রিলেক্স ব্রো সব ঠিক হয়ে যাবে তুই আমাকে বল কি হয়েছে।”
“জিয়ান সবটা বলল।”
“তুই একটু দূরে দূরে থাকবি ভাবির কাছ থেকে। সে যতক্ষণ তোকে নিজ থেকে কাছে না ডাকবে ততক্ষণ তার কাছাকাছি যাওয়ার লিমিট ক্রস করবি না৷ভাবি এখনো ওই ট্রমা থেকে বের হতে পারেনি৷ তোর স্পর্শ গভীর হলেই ভাবি ট্রামায় চলে যায়। যার ফলে প্যানিক আ্যাটক হয় আবার জ্ঞানও হারিয়ে ফেলে৷ একটা মেয়ের জন্য এতো জঘন্য অতীত ভুলে যাওয়া সহজ নয়। আজ একবার ভাবিকে নিয়ে আমার বাসায় চলে আয়। নতুন বাসা বাড্ডাতে লোকেশন সেন্ট করে রাখবো।”
“জিয়ান কল কেটে নয়নার মাথার পাশে বসলো,নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে জিয়ানের। আজ তার জন্য এই অবস্থা ফুলের মত মেয়েটার। অনুশোচনায় কুড়ে কুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে ভেতর থেকে। নয়নার কপালে আলতোভাবে ঠোঁট ছোঁয়ালো। মাঝখানে কোলবালিশ রেখে শুয়ে পরলো নয়নার পাশ ফিরে৷ ঘুমন্ত নয়নাকে অপরুপা লাগছে। যেনো নয়নার চেহারা জুড়ে ফুটে উঠেছে সরলতার প্রতিমা। সুন্দর স্নিগ্ধ লাগছে!
জিয়ানের মনে পড়লো তার নানুর কথা।তার নানু একবার বলেছিল মানুষ কতটা ভালো তার পরখ করার জন্য ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে পরিদর্শন করলেই বোঝা যায়। ঘুমালে চেহারায় ফুটে উঠে কে কেমন। এই কথার সত্যতা জানা নেই জিয়ানের।
🌿
জাহিন অন্তর হসপিটালের মর্গে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের সামনে শিল্পি বেগমের লাশ। কেউ তাকে হ*ত্যা করেছে। লাশটা পাওয়া গেছে আরো দু’দিন আগে বুড়িগঙ্গার তীরে বস্তা বন্দি অবস্থায়।
অন্তর বলল,”দেখে মনে হচ্ছে শ্বাস রোধে মা*রা হয়েছে।”
জাহিন বলল,”ফরেনসিক রিপোর্টটা নিয়ে নে। জামাল সাহেব কেও কি মে*রে ফেলেছে নাকি সে জীবিত আছে?”
“আমি বুঝলাম না এমন কি কারন থাকবে যে যার জন্য ওনারা শহর ছেড়ে চলে আসার পরেও তাদের ছাড়লো না!”
“আমাকেও বিষয়টা ভাবাচ্ছে! রে*প করেছে তার মেয়েকে তারপর এমন কি হলো যার জন্য তাদেরকে মেরে ফেলতে হচ্ছে!”
অন্তর বলল,”আমরা কোন গভীর জালে আটকে যাচ্ছি।”
“জাল কাটবো বলেই তো নেমেছি। চল এবার বাসায় যাই৷ আচ্ছা কাল রাতে কল করলি কেন!”
“জানিস না টং দোকানে এক ফালতু মেয়ের সাথে ঝামেলা হয়েছে।”
“জাহিন হেসে বলে,তোর কপালে এডিই জুটবে, শা’লা একটা প্রেমও করতে পারলি না৷ প্রেম করা তো দূর তোকে তো কোন মেয়ে পাত্তাই দেয়না৷ মনে হয় তোর না কন্যারাশি।”
“কতবার বলছি শা ‘লা না সুমুন্দি বলবি৷”
“চুপ কর সুমুন্দির পুত। বাসায় চল।”
🌿
আজ অনিকেতের বার্থডে ছিলো৷ তাই আজ অনিকেত চেম্বারে বসেনি। সকালে শুধু ডিউটি করে চলে এসেছে৷ অনিকেত বারান্দায় বসে আছে। বাহিরের ব্যস্ত মানুষের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে মনে ভাবছে, “আচ্ছা আজ কি আমার সত্যি সত্যি জন্ম হয়েছিল! নাকি এটা এতিমখানায় যে আমাকে রেখে গিয়েছিলো তার দেয়া জন্ম তারিখ৷ আমার বাবা, মা কে? ওনারা জন্ম দিয়ে আমাকে এতো বড় দুনিয়াতে একা কিভাবে ছেড়ে গেলো!আমার কথা কি একটুও তাদের মনে পরে না? আচ্ছা যে মা আমাকে নয় মাস গর্ভে ধারণ করলো তারও কি একবারও আমার কথা মনে পরে না! নাড়ীর টান নাকি বড় টান তার কি সেই টানও অনুভব হয়না কোনদিন! অনিকেতের চোখের কোন ভিজে উঠেছে ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কান্না করতে। এই শহরের ইট পাথরের পাঁচিলের আড়ালে কত হৃদয় ভাঙ্গার আত্মা চিৎকার লুকিয়ে আছে সে-সবের কে খেয়াল রাখে!”
#চলবে