#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব-৪২
বাস যখন যাত্রাবাড়ী পৌঁছেছে রাত চারটা বাজে। নয়না গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। জিয়ান আগেই কল করে ড্রাইভারকে আসতে বলেছিলো৷ জিয়ান নয়নাকে কোলে নিয়ে গাড়ী থেকে নামলো।ড্রাইভার কে বলল ব্যাগপত্র নিয়ে গাড়িতে রাখতে৷ জিয়ান নয়নাকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বসলো৷ নয়নার ঘুম ভেঙে গেছে ততক্ষণে, নয়না সরে এসে বলে সারাদিন আপনি এমন চিপকে থাকলে আমার অস্বস্তি হয় দূরে সরে বসুন৷
“জিয়ান ভ্রু কুঁচকে বলে,আহা গো ম্যাডাম যখন কোলে করে নিয়ে আসলাম গাড়ি থেকে তখন মনে ছিলো না?”
“আমি কি বলেছি আমাকে কোলে নিতে! ওটাতো আপনার স্বভাব সুযোগ পেলেই চিপকে যান। চিপকু ড্রাইভার ।”
“ড্রাইভার নট, ক্যাপ্টেন রেজা চৌধুরী।”
” ওই একি পাইলট আর ড্রাইভারের মধ্যে আর তেমন কি পার্থক্য!”
“পার্থক্য নেই?”
” নাহহ নেই। আপনি আকাশে ড্রাইভিং করেন তারা রাস্তায় ড্রাইভ করে।”
“এতো ঝগড়ুটে কেন তুমি!”
” আমি ঝগড়ুটে?ঝগড়া তো করতেই পারি না আমি।”
“পারো না?”
‘চুপ করুন আমি ঘুমাবো। বলেই নয়না চোখ বন্ধ করে নিলো।”
“জিয়ান নিজেও গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে ঘুমানোর ট্রাই করছে।”
“পাঁচ মিনিট ও যেতে পারেনি নয়না ঘুমিয়ে ঢলে পরলো জিয়ানের উপর।”
জিয়ান নয়ার মাথা নিজের কাঁধে নিলো সযত্নে।
গাড়ি চলছে আপন গতিতে। বাসার কাউকে জানানো হয়নি তাদের ফেরার কথা। একবার ভাবলো কল করবে, পরক্ষণেই ঘড়ির টাইম দেখে ভাবলো কাউকে ঘুমে ডিস্টার্ব করবে না৷
****
গাড়ি চৌধুরী ম্যানশনে এসে থামলো। জিয়ান নয়নার মাথা আলতো হাতে সিটের উপর রাখলো। এরপর কোমল কন্ঠে ডাকলো, এই শুনছো উঠো। দু’বার ডাকার পরেও নয়নার মধ্যে কোন হেলদোল নেই৷
জিয়ান একটু জোরে বলল,”আর একবার ডাকবো উঠলে উঠবা না উঠলে সোজা কোলে তুলে নিবো৷”
” নয়না মিটমিটিয়ে তাকালো৷ চুলগুলো হাত খোপা করে নিলো।ওড়নাটা সুন্দর করে গায়ে জড়িয়ে নিয়ে বলে,আমার লজ্জা করছে।”
“আহাগো লাজুকলতা। চোখ বন্ধ করে আমার পিছু পিছু চলে আসো বৌ।”
“এভাবে কেউ শ্বশুর বাড়ি আসে?”
“তো কিভাবে আসে মিসেস চৌধুরী?”
” রিচুয়েল আছে তো।”
“আমার বৌ আমার সম্পদ রিচুয়েল কোন খেতের মুলা!”
” তবুও কেমন কেমন যেনো লাগছে।”
“বুঝেছি তুমি চাইছো আমি তোমাকে কোলে তুলে নিয়ে যাই।”
“নয়না মাথা নাড়িয়ে না সূচক মন্তব্য জানালো৷”
“জিয়ান নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,হাতে হাত রাখো আর এগিয়ে চলো আমার পথে পথ মিলিয়ে।”
” নয়না হাত বাড়িয়ে দিলো৷”
“মনে রেখো এই হাত কিন্তু এজন্মে আর ছাড়তে পারবে না।”
“নয়না হাত সরিয়ে নিতে চাইলো৷”
“ততক্ষণে জিয়ানের হাতে আবদ্ধ হয়ে আটকে পরেছে নয়নার হাত। জিয়ান নয়নার দিকে তাকিয়ে বলে,আমি যখন হাত ধরেছি এ হাত ছাড়ানোর শক্তি, সাহস কোনটাই তোমার নেই। এবার পা মিলিয়ে সামনে এগিয়ে চলো৷”
” নয়না গুটিগুটি পায়ে চৌধুরী ম্যানশনে প্রবেশ করলো৷
“জাহানারা বেগম ফজরের নামাজ পরে কিচেন এসেছিলেন চা বানাতে পুরো বাড়ির সবাই তখন ঘুমে।”
নয়না জিয়ানের হাত আঁকড়ে ধরে বলে,”আমার মনের মধ্যে কেমন জেনো করছে?”
” কি হয়েছে সুনয়না? ঠিক আছো তুমি?”
“নয়না কিছু বলার আগেই জাহানারা বেগম কিচেন থেকে বের হয়ে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,জিয়ান তুই!”
” জিয়ান বলে,হ্যা আম্মু এসেছি দু’দিন হলো। এবার ফ্লাইট ল্যান্ড করেছিলো চট্রগ্রামে ভাবলাম ওখানেই যখন নেমেছি সুনয়নাকে সাথে করে নিয়ে ফিরি৷”
“জাহানারা বেগম এগিয়ে এসে নয়নার মাথায় হাত রেখে বল,একদম ভালো কাজ করেছিস৷ রুমে যেয়ে ফ্রেশ হ আমি খাবার পাঠাচ্ছি খেয়ে রেস্ট নিবি৷ আমার বৌমায়ের কোন কষ্ট হয়নি তো?ঠিকঠাক মত নিয়ে এসেছিস তো? তোমাকে কষ্ট দেয়নি মা?”
” নয়না না সূচক মাথা নাড়ালো।”
“যাও নিজের রুমে যাও। এটা তোমারই বাসা এতো ইতস্তত বোধ করতে হবে না।”
” নয়না সামনে এগোতে নিল।
জাহানারা বেগম বললেন, “একটু দাঁড়াও নতুন বৌ বাড়িতে এসেছে তাকে মিষ্টিমুখ করাতে হবে তো৷ তুমি দাঁড়াও আমি ফ্রিজ থেকে মিষ্টি নিয়ে আসছি।”
“নয়না আর জিয়ান দাঁড়িয়ে রইলো৷ জাহানারা বেগম মিষ্টি আনতে গেলো৷ জিয়ান বলে,এই যে মিসেস বাটার মাশরুম এই বাড়িটা আপনার সো লজ্জা টজ্জা পাওয়ার দরকার নেই।”
“নয়না নিম্ন স্বরে বলে,মিস্টার প্লেন ড্রাইভার আপনার ডুপ্লিকেট ভার্সন কই? আসলেই আছে তো নাকি মিথ্যে বলেছেন।”
“সে হলো বাউণ্ডুলে ছেলে এই ভোরে তার দর্শন পাবে না৷ বারোটার পরে তোমাকে তার দর্শন করিয়ে দেবো।*
“জাহানারা বেগম কাটা চামচে মিষ্টি তুলে,নয়নাকে খাইয়ে দিলো,সেই মিষ্টির বাকি অর্ধেক জিয়ানকে খাইয়ে দিয়ে বলল, “সারাজীবন নিজেদের সুখ,দুঃখ এভাবে ভাগ করে নিয়ে একে অপরের পরিপূরক হও৷ মনে রেখো তুমি আমার রেজার অর্ধাঙ্গিনী। তুমি ছাড়া রেজা অপূর্ণ। জাহানারা বেগম নিজের গলায় থাকা চেইনটা খুলে নয়নাকে পরাতে নিলো।”
“নয়না বলল,না না এসবের দরকার নেই আন্টি৷”
“দরকার আছে তুমি আমাদের পরিবারের প্রথম পুত্র বধু তোমার সম্মানের দরকার অবশ্যই আছে।আর হ্যা আন্টি না আম্মি/আম্মু ডাকবে আমাকে৷ যাও রুমে যাও।”
” জিয়ান নয়নাকে নিজের রুমে নিয়ে আসলো৷
“নয়না রুমে ঢুকেই শুয়ে পরলো।
” জিয়ান তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে দিকে পা বাড়ালো, যেতে যেতে বলল,ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে তবেই ঘুম সো আমি না আসা পর্যন্ত জিরিয়ে নাও বেব৷”
“এই বেবি, বাবু, বেব এসব ছাড়া আর কোন ডাক নেই আপনার!”
“আছে তো, সুইটহার্ট, রাঙাবৌ, ময়নামতি, আদুরীনি, ডার্লিং, হানি আর আমার মোস্ট ফেবারিট বাটার মাশরুম বলেই চোখ টিপল৷”
“নয়না বিরবির করে কিছু বলল।
” বিরবির করতে থাকেন ম্যাডাম না খেয়ে ঘুমানো যাবে না৷ সো মনে মনে বকতে থাকুন আমি ফ্রেশ হয়ে আসি ততক্ষণে।”
🌿
রাতে খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছিলো মেহনুর। তার মনের মধ্যে চলছে ইভিল প্ল্যান৷ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে জিয়ানদের জিম রুমে এসে জিম করছে মেহনুর৷ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ভোর ছয়টা বাজে সবে মাত্র! মেহনুর আয়নার দিকে তাকিয়ে বলে, মেহনুর শেখ কখনো নিজের জিনিস অন্য কাউকে শেয়ার করে না। যা আমার তা আমার। নিজের জিনিস নিজের কাছে ফেরাতে মেহনূর কতটা ভয়ংকর হতে পারে তা কেউ কল্পনাও করতে পারবে না।মেহনুর যা চায় তা যেকোনো মূল্যে নিজের করেই ছাড়ে। মেহনুর পানির গ্লাস হাতে নিয়ে ঢকঢক করে গ্লাসের সব পানি পান করে গ্লাসটা ফ্লোরে ছুড়ে মারলো। সাথে সাথে ঝংকার তুলে গ্লাসটা ভেঙে খন্ড খন্ড হয়ে ছড়িয়ে পরলো৷ মেহনুর জিম রুম থেকে বের হয়ে গেস্ট রুমে চলে আসলো। পরক্ষণেই কিছু একটা ভেবে থ্রিপিস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
🌿
লতা বেগম নীলাঞ্জনার পাশে বসে বলছেন,”তুই কেন রেজার মত ছেলেকে ছেড়ে দিলি! এমন ছেলে কেউ হাত ছাড়া করে? তোর বাপ চাচাও অপেক্ষা করেনি তুই চলে গিয়েছিস তারা নয়নাকে ঝুলিয়ে দিয়েছে রেজার গলায়।”
“নীলাঞ্জনা বলল,আম্মু রেজা কিভাবে মেনে নিলো এই বিয়ে! ওর মতো ছেলেকে কেউ ফোর্স করে কিছু চাপিয়ে দিতে পারবে না কোন কিছু। আমি জানি ওকে। তাহলে দোষটা তো ওর ও আছে।”
“দোষ তোর তুই কেন ছাড়লি এমন ছেলেকে? চাঁদ নিজে তোর হাতে ধরা দিয়েছে আর তুই সেই চাঁদকে পায়ে ঠেলে দিয়েছিস! এখন বল কাল রাতে রেজা তোকে কোথা থেকে নিয়ে এসেছে?”
“নীলাঞ্জনা সবটা বলল৷ তারপর বলল,আম্মু আমি শিউর না ওটা জিয়ান নাকি জাহিন।”
“জাহিন আবার কে?”
“জিয়ানের জমজ ভাই। জিয়ান তো পাইলট এই সময় ও কিভাবে দেশে থাকবে? আমার এখন মনে হচ্ছে ও জাহিন ছিলো।”
“চুপ কর এই কথা আর মুখ দিয়ে বের করবি না। যদি রেজা না হয়েও থাকে তুই বলবি ওটা রেজা ছিলো। কাউকে নিজের না করতে পারলে কি হয়েছে সম্মান তো নষ্ট করতে পারবি৷ আমি যেটা বলছি তুই সেটাই বলবি সবার সামনে।”
“কিন্তু বড় আব্বু তো জানে জাহিন আর জিয়ান জমজ ভাই।”
#চলবে