অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-৪১

0
86

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব-৪১

প্লেনে যাওয়ার প্ল্যান থাকলেও শেষ মূহুর্তে জিয়ান আর নয়না বাসে ট্রাভেল করে, নাইট কোচ বেড সিস্টেম। নয়না প্রথমবার অপরিচিত কারো সাথে ট্রাভেলিং করছে। মানুষটা তো তারই, অপরিচিত কি করে হয়! আবার ভাবে,সে যদি এখন আমাকে হ’ত্যা করে গাড়ির নিচে ফেলে দেয় অথবা কারো কাছে বিক্রি করে দেয়!নিজের মনে মনে আকাশ কুসুম চিন্তা ভাবনায় মগ্ন নয়না৷

জিয়ান নয়নার কাছে এসে বলে,”তোমার চেহারায় এতো আতংক কিসের বেব? নয়নাকে নিজের কাছে এনে বলে,তুমি কি এনি চান্স আমাকে ভয় পাচ্ছো জান?”
“নয়না চোখ বাঁকিয়ে বলে,ভয় আর আপনাকে? সুনয়না তালুকদার কাউকে ভয় পায় না।”

“বিগ মিস্টেক মিসেস চৌধুরী আপনার পরিচয় সুনয়না চৌধুরী নট তালুকদার৷ বাবার বাড়িতে অনেক তালুকদারি করেছন এবার হ্যাসবেন্ডের নামের উপর রাজ করবেন।”

“আমাকে আপনি করে বললেই তো আর আপনার বয়স কমে যাবে না মিস্টার প্লেন ড্রাইভার?”

“এতো সুদর্শন একজন এয়ার ক্যাপ্টেন কে ড্রাইভার বলতে তোমার হৃদয় কাপলো না!”

“ড্রাইভারকে ড্রাইভার বলবো না তো কি বলবো! প্লেন ড্রাইভার, প্লেন ড্রাইভার, প্লেন ড্রাইভার।”

“জিয়ান নয়নার মুখ চেপে ধরলো নিজের হাত দিয়ে। এখন কিন্তু মোটেও ভালো হচ্ছে না বৌ। ঠোঁট আরেকবার নড়লেই ঠোঁট কিন্তু দখল করে নেবো আমার ঠোঁট দিয়ে৷ বাসর যদি গাড়িতে সারতে না চাও তাহলে ভুলভাল বকবে না৷”

“নয়না হেসে উঠলো। এই লোকের মুখে বাসর ছাড়া কি আর কোন শব্দ বের হয় না!”

“জিয়ান নয়নাকে নিজের কাঁধে মাথা রাখতে ইশারা করে৷”
“নয়না বলে,বয়েই গেছে আপনার কাঁধে মাথা রাখতে!আম্মু কই আমি আম্মুর কাছে যাবো।”

“তুমি বড় হবা কবে?”

” আমি কি ছোট নাকি?”

“তো কি? নাক টিপলে এখনো ম্যাঁ ম্যাঁ করো।”

“একদম উল্টোপাল্টা কথা বলবেন না৷”

“জিয়ান নয়নার আঙ্গুল ধরে বলে,তুই ছুঁলি যখন তোরি হলো এই মন।”

“আমি কিন্তু আপনাকে ভালো টালো বাসতে পারবো না।”

“ভালোবাসতে কে বলল? তুমি শুধু আমার ভালোবাসা সমাদরে গ্রহণ করলেই হবে রাঙাবৌ।”

“আমি কারো বৌ টৌ না৷”

“তাহলে তুমি কি?”

“ভবিষ্যত ডাক্টার সুনয়না তালুকদার।”

“জিয়ান নয়নার নাক টেনে বলে,বারবার তালুকদার তালুকদার করবা না তো। ভবিষ্যত ডাক্তার সুনয়না চৌধুরী। নামটার মধ্যে কেমন রাজকীয় ভাইব আছে তাই না বেব।”

“নয়না জিয়ানের কাঁধে মাথা রেখে বলে,জানেন একবার কি হয়েছে?”

“তুমি না জানালে কিভাবে জানবো?”

” আমি এক ছেলের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিলাম।”
“কেনো?”
“সে আমাকে টিজ করেছিলো তাই৷ রাস্তা থেকে একটা পাথর উঠিয়ে সোজা ছেলেটার মাথায় মেরে দিয়েছি৷”

“বাহহ তুমি এতো সাহসী!”

“নয়না কনফিডেন্সের সাথে মিথ্যা বলে মনে মনে নিজেকে সাহস দিচ্ছে।”

“জানো আমার প্রপোজ একটা মেয়ে রিজেক্ট করে দিয়েছিলো বলে,তাকে পাহাড় থেকে ধা’ক্বা দিয়ে ফেলে দিয়েছি।”

” নয়না এবার কেঁদেই ফেলল। আমি আম্মুর কাছে যাবো।”

“জিয়ান নয়নার মুখে হাত রেখে বলে একদম চুপ। একটুও কান্নাকাটি করবে না। আর কথায় কথায় ম্যা ম্যা করার স্বভাব কবে যাবে তোমার! এমন আদর দেবো এরপর কথায় কথায় জামাই জামাই করবা৷আমি শুবো তুমি লক্ষী মেয়ের মত আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়বা। ঠিক আছে?”

“কিসের ঠিক আছে!এটা তো জোর খাটানো বলে,এখানে ঠিক কি হলো?”

“বৌ আমার, জোরও আমার, ইচ্ছেও আমার সো চুপচাপ এসে বুকের উপর মাথা রাখো।

“নয়না মনে মনে বলে,ওটা বুক! নাকি আমাকে বশ করার তাবিজ! ওখানে মাথা রাখলেই আমার কেমন প্রেম প্রেম পায়৷ তখন নিজেকে কেমন উপন্যাসের হিরোইন মনে হয়৷ এই লোক কেনো যে প্লেন ড্রাইভিং ছেড়ে দেশে আসলো! নিশ্চিত আমাকে বশ করতেই এসেছে। নয়না বি কেয়ারফুল কয়দিন পর তোর বয়স সতেরো হয়ে যাবে এতো সহজে বশ হোস না বুদ্বু রানী।”

“তা তোমার জ্বিনের সাথে আলাপ আলোচনা আর কতক্ষণ চলবে?”

“নয়না এক ঝটকায় জিয়ানকে জড়িয়ে ধরে বলে,জ্বিন! কোথায় জ্বিন? দোয়া দুরুদ পড়েন, জ্বিন তাড়ান প্লিজ আমার ভয় করছে?”

“জিয়ান নয়নার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,যেভাবে আছো ঠিক এভাবেই জড়িয়ে রাখো আমাকে নয়ত জ্বিন চলে আসবে। আর শোন ডিয়ার ওয়াইফি আমি আটদিন আছি আটটা দিন আমার সাথে ঠিক এভাবে চিপকে থাকবে। আমি এক মূহুর্তের জন্য ও তোমাকে মিস করতে চাই না৷ প্রতিটা মূহুর্তে তোমার স্পর্শ অনুভব করতে চাই, বলেই নয়নার কানের লতিতে আলতে চুমু খেয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।”
জিয়ান ভাবছে যেখানে জীবন শেষ হয়েছে সেখান থেকে এতো সুন্দর জীবন উপহার পাবো কোনদিন ভাবিনি। মানুষ বলে না আমারা যা প্ল্যান করি তারচেয়ে আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য যা প্ল্যান করে রাখে তা সবচেয়ে উত্তম। তুমি আমার জন্য আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে শ্রেষ্ঠ উপহার প্রিয়তমা অর্ধাঙ্গিনী।

🌿

মিজান তালুকদার খোঁজ নিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। আসলেই সেদিন জিয়ান এখানে পৌঁছে দিয়ে গেছে নীলাঞ্জনাকে?
“নীলাঞ্জনা বলল, বাবা আমি ভুল করে হিরে ছেড়ে কাঁচকে বেঁছে নিয়েছিলাম। কাঁচের আঘাতে খন্ড বিখন্ড হয়ে গেছে আমার দেহমন৷ বাবা জিয়ান যদি আমার কাছে ফিরতে চায় তোমরা বাঁধা হবে না তো?”

“মিজান তালুকদার ঠাটিয়ে এক চড় মারলো নীলাঞ্জনার গালে। লজ্জা লাগে না নিজের ছোট বোনের হাসবেন্ডের দিকে নজর দিতে!নিজের জীবন নষ্ট করে এখন আমার ফুলের মত মেয়েটার জীবন নষ্ট করার জন্য উতলা হয়ে গেছিস?” মিজান তালুকদার নীলাঞ্জনার গলা চেপে ধরে বলে,”মেরে ফেলবো তোকে আমি। তোর মত মেয়ে আমার দরকার নেই। দরকার পড়লে তোকে মে’রে জেল খাটবো।”

“সূচনা দরজায় দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য দেখে চিৎকার করলো৷”
“লতা বেগম দৌড়ে এসে নীলাঞ্জনাকে মিজান তালুকদারের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিলো৷ পাগল হয়ে গেছো তুমি! আমার মেয়েটাকে মেরে ফেললেই তো তোমাদের রাস্তা সাফ তাই না? আমি বেঁচে থাকতে তা কখনো হতে দেবো না৷”

“মিজান তালুকদার নীলাঞ্জনার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,তোর জন্য যদি সুনয়নার সংসার ভাঙ্গে আগে তোর মা’কে মারবো তারপর তোকে। মনে রাখিস।”

” লতা বেগম কিছু বলাবে তার আগেই মিজান তালুকদার বাসা থেকে বের হয়ে গেলেন৷

🌿

অন্তর আনমনা হয়ে বসে আছে রাস্তার পাশের টং দোকানে। আজ জাহিনের সাথে সারাদিন কথা হয়নি ছেলেটা করতে কি চাইছে? অন্তর দোকানদারকে বলল, মামা এক কাপ কড়া লিকারের রং চা দাও তো।
“দোকানদার চায়ের কাপ অন্তরের দিকে বাড়িয়ে দিলো৷ হুট করে কোথা থেকে একটা মেয়ে এসে চায়ের কাপটা নিয়ে চুমুক দিলো।

“অন্তর রেগে বলে,সমস্যা কি আপনার? আমার জিনিসে হাত দেয়ার সাহস কি করে হলো?”

“তুষি কপাল কুঁচকে বলে,স্যরি ভাইয়া আমার অনেক বেশি চায়ের ক্রেভিং হচ্ছিলো তাই।”

“রাস্তায় দাঁড়িয়ে টংয়ের দোকানে চা কোন ভদ্র মেয়ে খায় না।”

“একদম ঠিক কথা বলেছেন ভাইয়া আমি তো চরম লেভেলের অভদ্র। এই মাত্র সাতদিন আগে আমার ব্রেকআপ হলো, সে ব্রেকআপ করার আগে এটা বলেছিলো তাই দুই চারটা চড় দিয়ে অভদ্রতার প্রমাণ দিয়ে এসেছি৷” তুষি দোকানদারকে বলল,”মামা দাম কত?”

“দশ টাকা৷”

“তুষি বিশ টাকা দিয়ে বলে,এই ভাইয়াকে এককাপ দিয়েন৷”

“তুষি রিকশা ডেকে উঠে পরলো।”
” অন্তর বলে,এই মেয়ে নামো রিকশা থেকে৷”
“তুষি কানে হেডফোন গুঁজে বলে,মামা চলেন।”
” অন্তর মোবাইল বের করে জাহিন কে কল করে বলে,শা’লা তুই বাসা থেকে বের হ।”

🌿

অনিকেত দু’দিন ধরে বাসা থেকে বের হচ্ছে না৷ হসপিটাল থেকে ছুটি নিয়ে বাসায় লুকিয়ে আছে। সে কিছুতেই সায়নার সামনাসামনি হতে চায় না। অনিকেত আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলে, তোর কপালে আসলে বৌ নেই বুঝলি অনিকেত সারাজীবন তুই সিঙ্গেল মরবি!
#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে