অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-৩৫

0
49

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৩৫
প্রতিবার দেশে ফেরার সময় জিয়ান এক্সাইটেড থাকে তবে এবার যেনো তার চেহারায় আলাদা রকমের আনন্দ দোল খাচ্ছে। সিটে বসে মনে মনে বলে,সুইটহার্ট এবার ফেরার সময় আমি একা ফিরবো না তোমাকে নিয়ে ফিরবো। আর কয়েকঘন্টা তারপর তোমার সব অভিমান মুছে দেবো রাঙাবৌ। জিয়ানের ভাবনার ছেদ ঘটে পাশের সিটের কারো কান্নার আওয়াজে। জিয়ান একবার ভাবলো জিজ্ঞেস করবে আবার কিছু একটা ভেবে জিজ্ঞেস করলো না৷
“পাশের সিটে বসে থাকা মেয়েটা মাথা তুলে তাকাতেই,জিয়ান বলে,আবার আপনি!”
“ইরার কোন হেলদোল নেই সে নিষ্প্রাণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিচের দিকে চোখ থেকে অঝোর ধারায় বর্ষণ হচ্ছে।”
“এভরিথিং ইজ অলরাইট মিস?”
“ইরা নিচের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলো যার মা দুনিয়ায় ছেড়ে চলে গেছে তার সবকিছু অলরাইট কি করে হয়?”
“সো স্যাড। কিন্তু মানুষের জীবন তো চিরস্থায়ী নয়, তাই না? আমরা জন্মের পরেই জানি আমাদের মৃত্যু নিশ্চিত।”
“আপনি জানেন আমার মম লাইফে কিছু পায়নি। না ঘর,না সংসার, না ওই লোকটার পরিচয়। ধ্বংস করে দেবো তাকে আমি। আমি এখানে আর আমার মা কফিনে৷”
“কোন লোকটা? আর আপনার বাবা কোথায়?”
” বাবা শব্দটাকে ঘৃণা করি আমি। আমার মম সারাজীবন তাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবেসে গেছে সে আমার মমকে জাস্ট টিস্যু পেপারের মত ইউজ করেছে।”
“আপনার বাবার সাথে কথা হয়েছে মনে হয়নি ভদ্রলোক এমন হতে পারে।”
” ওটা আমার বাবা না। আমার আঙ্কেল। ছোট খালামনির হ্যাসবেন্ড। বাবা নামক মানুষটাতো আমার মমকে সারাটা জীবন ঠকিয়ে এসেছে। আচ্ছা স্ত্রীর পরিচয় যদি নাই দিতে পারবে তাহলে সেই স্ত্রীর সাথে রাত কাটাতে লজ্জা লাগলো না! তার শরীরে যদি এতোই কারেন্ট পতিতালয়ে না যেয়ে আমার মমকে কেনো ব্যবহার করলো? জবাব চাই আমার, আমি ওই লোকটাকে খু’ন করে তবেই শান্ত হবো।”
“জিয়ান পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বলে, আপনাকে শান্তনা দেবার মত ভাষা আমার জানা নেই। তবুও বলবো একটু শান্ত হোন, ঠান্ডা মাথায় কাজ করুন৷ আল্লাহ তায়ালা আপনার মমকে জান্নাতবাসী করুক।”

পুরো জার্নিতে আর তেমন কোন কথা হলোনা। পুরোটা পথ মেয়েটা শুধু কেঁদেছে। জিয়ান আগ বাড়িয়ে আর কথা বাড়ায়নি কারন সব মানুষ সিমপ্যাথি পছন্দ করে না৷

🌿

নয়না রাগে গজগজ করতে করতে গাড়িতে এসে বসেছে৷ তার মোটেও যাওয়ার ইচ্ছে নেই। তার মা জোর করে নিয়ে যাচ্ছে।
“জাহানারা বেগম নয়নাকে উদ্দেশ্য করে বললেন চেহারার নকশা ঠিক করো। বাপ বেটি এক রকম হয়েছো। কোথাও যাওয়ার নাম শুনলেই কপালে বজ্রপাত পড়ে! তা আত্মীয় স্বজনদের সাথে সম্পর্ক রাখতে হয় না?”
“তো তোমার ভাতিজার বিয়ে তুমি যাও না, আমাকে কেন টানছো?”
“তোমাকে বড় মামি কত আদর করে আর তুমি এভাবে বলছো!”
“আম্মু, আম্মি ছাড়া আর কিছুই আমার মনমত না ওই বাড়িতে। তাছাড়া আলিফ ভাইয়াও তো আসবে। বাবা জানলে কি হবে?”
” আলিফ যথেষ্ট ভদ্র ছেলে আমার তো ভয় তোমাকে নিয়ে। কি উল্টোপাল্টা কান্ড ঘটিয়ে বসো কে জানে!”
“তো আমাকে নিচ্ছো কেনো? নামিয়ে দিয়ে যাও।”
“শোন জামাইয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে কোন উল্টোপাল্টা কথা বলবে না৷ ভালো ভালো কথা বলবে৷ জামাইকে নিয়ে একদম ভুলভাল কিছু বলে,আমার নাক কাটাবে না৷”
“তোমার জামাইকে নিয়ে আমি কোন দুঃখে কথা বলবো৷ ওই ব্যাডা চিটার।”
” চুপ একদম বেশি কথা বললে,মুখে স্ট্র্যাপ লাগিয়ে দিবো।”
“নয়নার ইচ্ছে করছে জিয়ানের চুলগুলো ধরে ইচ্ছেমত টানতে। গোছানো চুলগুলো টেনেটুনে ছিড়ে নষ্ট ভষ্ট করে দিতে। ইচ্ছেমত কামড় দিয়ে রক্ত বের করে আনতে। শা”লা আমার সাথে বাটপারি করে!বিয়ে করেছে আমাকে ঘরে তুলে এনেছে আরেক মেয়েকে!এই বেডা মানুষ, কবরে গেলেও আরেকটা বিয়ে করার সুযোগ পেলে হাতছাড়া করবে না৷ শা”লা একবার আসি শুধু চট্টগ্রাম থেকে তোকে বোঝাবো সুনয়না তালুকদার কি চিজ!
“জাহানারা বেগম একটা কোণ আইসক্রিম নয়নার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,অন্যের ছেলের গুষ্টি উদ্ধার না করে,আইসক্রিম খেয়ে বংশগত বদ মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করো৷”
“আমাদের বংশ নিয়ে এতোই যখন সমস্যা কে বলেছিলো এই বংশে আসতে?”
“আমি আসিনি আমাকে নিয়ে এসেছে।”
“এবার এসে বলবো ফেরত দিয়ে আসতে।”
“চুপ করো একদম। সবাই জানে তুমি ভদ্র সো নিজের ইমেজ নষ্ট করবে না। আর হ্যা চুলের দিকে খেয়াল রাখবে এই চুল তো আমার যত্নে গড়া।”
” নয়না গাড়ির জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালো, মনে মনে ভাবলো ইশশ লেখকের লেখা চরিত্রের মত কেউ আমার জীবনে আসলে কত ভালো হতো! সে আমার চুল দেখে কবিতা আবিষ্কার করে ফেলতো। চোখ দেখে বলতো,”শোন কাজল চোখের মেয়ে আমার দিবস কাটে বিবশ হয়ে তোমার চোখে চেয়ে, (সাদাত হোসাইন) তা’না কপালে জুটেছে এক চিটার, বাটপার শা’লা হনুমান।”

🌿

জাহিন এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে আছে মেহনুরের জন্য। বেশ কিছুক্ষণ পর একজন বলল,হ্যালো?
“জাহিন সামনে তাকিয়ে দেখে কালো স্যুট পরা এক নারী। ফর্সা মুখশ্রীতে কালো চশমাটা যেনো ফুটে উঠেছে। মেয়েটি হাত ঘড়ির দিকে টাইম দেখে বলে,এই ড্রাইভার আমার ব্যাগগুলো গাড়িতে নিয়ে রাখো৷ আর হ্যা গাড়ি স্লো চালাবে।

” জাহিন দাঁতে দাঁত চেপে বলে,আমাকে দেখে আপনার ড্রাইভার মনে হচ্ছে! চোখ আছে তো চশমার আড়ালে?”
“মেহনুর কথার উত্তর না দিয়ে বলে,আমার হাতে সময় নেই আপনাকে জাজ করার দ্রুত যেতে হবে আমাকে।”
” অন্তর হেসে বলে,বাহহহ ভাই এতো মেয়েদের ক্রাশ থেকে সোজা গাড়ির ড্রাইভার বানিয়ে দিলো!বিদেশি ম্যাম তো, তাই হয়তো।”
“চুপ কর বেশি কথা না বলে,ব্যাগ তুলতে সাহায্য কর।বাসায় যেয়ে একে দেখে নিচ্ছি৷ ছোট বেলায় ম্যা ম্যা করতে করতে পিছু পিছু ঘুরতো এখন ভাব নিচ্ছে! দুই দিনের বৈরাগী ভাত কে বলে রাইস!”
” মেহনুর গাড়ির পেছনের সিটে বসলো।তার এমন এক ভাব যেনো আশেপাশে কেউ নেই৷ মোবাইল স্ক্রল করতে ব্যস্ত সে।”
“গাড়ি এসে থামলো চৌধুরি ম্যানশন। মেহনুর ছুটে বাড়ির ভেতরে ঢুকেই আম্মি বলে জড়িয়ে ধরলো মিতা বেগম কে৷”
” মিতা বেগম মেহনুরকে জড়িয়ে ধরে বলে,কেমন আছিস? আমার বাঁদরটা তোকে বিরক্ত করেনিতো?”
“তোমার বাঁদর মানে আম্মি?”
” জাহিনকে পাঠিয়েছিলাম তোকে আনতে।”
“আমি তো ভেবেছি রেজা! তাই একটু মজাও নিয়েছি।”
“রেজা তো দেশে নেই। আচ্ছা এখন রুমে যা ফ্রেশ হয়ে আয়, আজ সব তোর পছন্দের খাবার রান্না হয়েছে। আর হ্যা এখন থেকে কিন্তু সেলোয়ার-কামিজ পরতে হবে। আমি তোর জন্য কিছু সেলোয়ার-কামিজ বানিয়ে আলমারিতে রেখে দিয়েছি৷”
“বাবা কেমন আছে?”
“সে আছে ভালো। সে ভালো আছে বলেই তো আমরা ভালো আছি।”
“মেহনুর সার্ভেন্টকে সাথে নিয়ে নিজের রুমে আসলো।দীর্ঘ চব্বিশ বছর পর নিজের দেশে পার্মানেন্ট ভাবে ফিরে এসেছে মেহনুর। রুমে এসে বেডে বসে বলে,রেজা এবার তুই আমাকে ভালোবাসবি তো?আমি তোর অর্ধাঙ্গিনী হয়ে বাকিটা জীবন কাটিয়ে দিতে চাই।

” জাহিন রেগে মেগে আগুন, বাসায় ঢুকে সোজা কিচেনে আসলো,আম্মু তোমার বান্ধবীর মেয়ের কত বড় সাহস আমাকে ড্রাইভার বলে!দ্যা মোস্ট হ্যান্ডসাম জাহিন চৌধুরিকে! ওরে একবার পাই তারপর বোঝাবো ড্রাইভার কিয়া চিজ।
“আসছে আমার মোস্ট হ্যান্ডসাম! হ্যান্ডসাম হলে এই বয়সেও তুই একা থাকতি?এতো দিনে দুই চারটা বাচ্চার বাপ থাকতি। নিজেকে আয়নায় দেখ।”
” আম্মু তুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছো।”
“বিয়ে করতে রাজি হলে সম্মান করবো।”
” এই অহংকারী মেয়েকে কিছুতেই বিয়ে করবো না৷ জাহিন চৌধুরীর সাথে ভাব নেয়!”

🌿

জিয়ান দেশে ফিরে নয়নাকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য সোজা তালুকদার বাড়িতে গেলো,সেখানে যেতেই সূচনা বলে,তুই এই বাসায় কি করিস? তোকে না সেদিন দেখলাম মেয়েদের গান শোনাতে?
“ওরে দাদিআম্মা আমার। তা তোমার সাগরেদ কই?”
” তুই কি টয়নার কথা বলছিস.?
“টয়না তো আম্মুর সাথে বিয়ে করতে গেছে চট্রগ্রাম।”
জিয়ান দ্রুত উঠে এসে দারোয়ানেে কাছ থেকে ফুল ঠিকানা নিয়ে সোজা চলে গেলো এয়ারপোর্টে। সেখান থেকে চাটার্ড বিমানে সোজা চট্টগ্রাম চলে আসলো।
“নয়নাদের আসতে আসতে অনেক রাত হয়েছে৷ দো’তলা বাসা তবে সিঁড়ি হচ্ছে বাহিরের সাইডে। নয়না তার মায়ের সাথে দোতলায় ঘুমিয়ে আছে।
নয়না তার মায়ের পাশে ঘুমিয়ে আছে,এমন সময় অনুভব করলো কেউ তার মুখ চেপে ধরেছে৷ ভয়ে চিৎকার করতে চাইছে কিন্তু আওয়াজ বের হচ্ছে না মুখ থেকে। কেউ সেভাবেই নয়নাকে কোলে তুলে নিলো৷ অন্ধকার রুমে আবছায়ার মত একটা ছায়ামূর্তি নয়না ভয়ে কাঁপতে লাগলো,কেউ কানে কানে ফিসফিস করে বলল,এক পুরুষের স্পর্শেই কাঁপা-কাঁপি অবস্থা আবার নাকি বিয়ে করবে শখ কত ম্যাডামের!
“এই কন্ঠ নয়নার চেনা৷ যেনো,যুগ যুগ ধরে পরিচিত কোন কন্ঠস্বর।”

#চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে