অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-৩৩

0
9

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৩৩
জিয়ান মোবাইলের স্কিনে এক ষোড়শী কন্যার হাসোজ্জল মুখশ্রীর পানে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ মনে মনে আওড়ালো মেয়েটার চোখদুটো আসলেই সুন্দর। এতো সুন্দর দুটি চোখের অধিকারীনির জন্য সুনয়না নামটা হয়ত পৃথিবীতে এসেছিলো। মায়াবী চোখের অধিকার তুমি,আমার প্রিয়তমা অর্ধাঙ্গিনী। হঠাৎ কিছু একটা ভেবে হেসে ফেললো। প্রেমে পরলে ম্যাচিউর পুরুষ ও বোকা বোকা কর্মকাণ্ড করে বসে!আর সেখানে তো বাচ্চা একটা মেয়ে! সে তো করবেই নিব্বিগিরি। কিছুক্ষণ পূর্বের কথা….. জিয়ান ফ্লাইট ক্যানসেল হওয়ায় সে মিটিং বোর্ড থেকে বের হয়ে চেয়ারে বসতেই তার ফোনে জাহিনের হোয়াটসঅ্যাপ একাউন্ট থেকে কল আসে৷ জিয়ান রিসিভ করে বলে,কি ব্রো হঠাৎ স্বরণ করার কারন?
“জাহিন বলল,তোমাকে কল দিতে কি আমার কারন লাগবে!
“তা লাগবেনা কিন্তু তুই তো দরকার ছাড়া কল করিস না৷
” আমি প্লাস্টিক সার্জারি করিয়ে চেহারা পরিবর্তন করে ফেলবো।
“কি বলছিস এসব! মাথা ঠিক আছে? নাকি ছাইপাস খেয়েছিস?
” আমার মাথা একদম ঠিক আছে। আমি ওসব খাই না। মাঝে মাঝে সুখটান দেই এই যা বদঅভ্যেস।
“বাবার হাতে ঝাড় খেয়েছিস? এবার কাহিনি কি?
” ওসব বাদ দাও ওতো পুরনো কথা নতুন কাহিনি শোন।
“আচ্ছা শুনছি বল।
” তোমার বৌয়ের নাম কি?
“সুনয়না তালুকদার। কেন?
” বৌ তোমারে ঝাড়ে নাই?
“আর বলিস না বাচ্চা মানুষ মুড কখন কি হয় বোঝা মুশকিল। কিন্তু এসব কথা কেনো?
” তোমার বৌ আমাকে তুমি ভেবে সেই ঝাড়া ঝেড়েছে৷ আর গতকাল তো। যা হয়েছে এরপর তোমার কাছে ডিভোর্স চায়নি?
“জিয়ান কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে,তোর সাথে ওর দেখা হয়েছে? এরপর কি হলো?
” জাহিন সবটা খুলে বলল,
“জিয়ান হেসে বলে,তুই তাড়াতাড়ি চেহারা বদল কর৷ নয়ত দেখা যাবে বৌ বদল হয়ে যাবে৷
” জাহিন বলে,তুমি এই বাচ্চা মাইয়া বিয়া করবা আমি তো আমার কল্পনায় এ কল্পনা করি নাই।
“চুপ থাক ওই বাচ্চা মেয়ে তোর ভাবি। সম্মান দিয়া কথা বলবি।
” সম্মানিত বাচ্চা মেয়ে সুনয়না তালুকদার আমার ভাবি।
“জিয়ান হেসে বলে,আচ্ছা এখন রাখি। আগুনে একটু পানি ঢেলে আসি। নয়ত সে আগুনে আরেকজন আমাকে পুড়িয়ে ছাই করে ফেলবে। জাহিনের কল কেটে নয়নাকে কল করে, যদিও পুরো কথা বলার সময় হয়নি। তবে অভিমানী নয়নাকে জিয়ানের কেনো যেনো খুব ভালো লাগছে।
” জিয়ান নয়নার হোয়াটসঅ্যাপে টেক্সট পাঠালো… ” ভালোবাসকে ততক্ষণ ভালোবেসো না
যতক্ষণ ভালোবাসা তোমাকে ভালো না বাসে।
যখন ভালোবাসা তোমাকে ভালোবাসবে
তখন ভালোবাসাকে এতো ভালোবাসো,
তোমার ভালোবাসা যেনো অন্য কাউকে ভালোবাসতে না পারে। এরপর আরেকটা টেক্সট পাঠালো,ভালোবাসা ভালো থাকে ভালোবাসার যত্নে, ভালোবাসাকে ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখতে হয়।
“নয়না প্রায় চারঘন্টা একটানা পড়লো৷
” জাহানারা বেগম নয়নার সামনে এক গ্লাস দুধ একটা সেদ্ধ ডিম চার পাঁচটা খেজুর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷
“আম্মু আমি কিছুতেই খাবো না৷ এখন আমার একদম খাওয়ার মুড নেই।
” কেউ মুডের জন্য খায় না৷ খাবার খেতে হয় স্বাস্থ্যের জন্য।
“নয়না জাহানারা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে,আম্মু আমি খাবো তবে আমার একটা কথা রাখবে?
” আগে খেয়ে নাও তারপর বলো,
“নয়না খাবারটা শেষ করে বলে,আমি কিন্তু আবার বিয়ে করবো। এটা তোমাকে মানতেই হবে। কে একজন আসলো বিয়ে করলো এমন বিয়ে মানি না৷
” এসব কথা ভাবতে বলেছে কে?এসব কথা বাদ দিয়ে পড়ালেখা করো। আর একটা এক্সাম আছে এটা শেষ হলেই আমরা চট্রগ্রাম যাবো।
“আম্মু বিয়ে কিন্তু আরেকটা করবোই আমি। ওই ব্যাডার সাথে যাবে না কিছুতেই না।
” তোমার বিয়ে হয়ে গেছে আর তাছাড়া তুমি নিজেই শ্বশুড় বাড়ি যাওয়ার জন্য পাগল তোমাকে দ্রুত পাঠিয়ে দেবো তোমার বাসায়।
“এটাই আমার বাসা আমি এখানেই থাকবো।
” দেখা যাবে। এবার একটু ঘুমাও মাথা ঠান্ডা থাকবে৷ জাহানারা বেগম চলে যেতেই নয়না নিজের ফোন সুইচ অন করলো। ডাটা কানেক্টেড হতেই দ্যা হিটলার ড্রাইভার দিয়ে সেভ করা নাম্বার থেকে টেক্সট। নয়না মনোযোগ দিয়ে লেখাটা পড়লো। তারপর হাসির রিয়াকশন দিলো। এরপর লিখলো,ভালোবাসা দিয়ে ভালোবাসার খিচুড়ি রান্না করে ভালোবাসা দিয়ে ভালোবেসে খেয়ে নিন৷
“জিয়ান তখন এক্টিভ ছিলো,নয়নার রিপ্লাই দেখে বলে,ছেমড়ি আস্তা বিটলা। চারআনা মাথায় ষোলআনা দুষ্টমিতে ভর্তি। জিয়ান রিপ্লাই করলো,ও আমার ভালোবাসা, আসো তোমাকে ভালোবেসে খিচুড়ি রান্না করে ভালোবাসায় সিক্ত করে ভালোবেসে খেয়ে নেই।
” নয়না রাগী ইমোজি দিয়ে বলে,আজ নয়না গতকাল নীলাঞ্জনা এরপর কে হবে আপনার ভালোবাসা খিচুড়ি?
“জিয়ান হা হা রিয়েক্ট দিয়ে বলে,একবার আসি তোমাকে ভালোবেসে চাটনি বানিয়ে খেয়ে বুঝিয়ে দেবো এরপর মরন পর্যন্ত আমার ভালোবাসা তুমি।
” আইছে আমার রসের কথা নিয়ে! ওসব শুকনো কথায় নয়না গলে না৷
“তো নয়নার জন্য কি ভেজা কথা লাগবে?লিটল বেবি ওসব ভেজা কথা নিতে পারবে তো তুমি?
” আপনার শুকনো কথা ভেজা কথা সব একটা গ্লাসে ঢেলে খেয়ে নিন৷ কোনটাতেই নয়না গলবে না।
“আমি ছুঁয়ে দিলে পরে অকালেই যাবে ঝড়ে, গলে যাবে যে বরফ গলে না৷
” নয়না লিখলো,কারো একদিন হবেন কারো এক রাত হবেন এর বেশি কারো রুচি হবে না৷
“জিয়ান সেন্টি ইমোজি দিয়ে বলে,বুঝেছি বৌটাকে ছুঁয়ে দিয়ে বোঝাতে হবে একবার তার হলে আমি আর কারো হবো না।
“নয়না রিপ্লাই করলো,বেডা মানুষ এক্সও চায় নেক্সট ও চায় আবার প্রেজেন্ট ও ঠিক রাখে!এরপর সাথে সাথে ডাটা অফ করে দিলো। নয়না উঠে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তার লম্মা চুলগুলো চিরুনি করতে করতে বলে,হেই সুনয়না তুমি সিন্ড্রেলা। তোমার রাজকুমার অবশ্যই আসবে আর তোমাকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে। শা’লার ড্রাইভার তুই সারাজীবন গলা বেচেই খাবি। তোর কপালে তো সিন্ড্রেলা জুটবে না৷
” জিয়ান নয়নার টেক্সটের দিকে তাকিয়ে হাসলো,মনে মনে কিছুটা ক্ষুব্ধ হলো,সে চাইছিলো,নয়না তাকে রেগে একবার বলুক মিস্টার প্লেন ড্রাইভার,আপনি একটুও ভালো না৷ শতশত রাগ অভিমান করুক তবুও কেনো যেনো নয়নার এই প্লেন ড্রাইভার ডাকটা ভিষণ মিস করছে জিয়ান। অথচ এই ডাকটা এক সময় সবচেয়ে বিরক্ত কর ছিলো! ভালোবাসলে প্রেমিকার বিরক্তিকর কথাও কত মধুর মনে হয়!
🌿লাবিব নীলাঞ্জনার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে,নীলাঞ্জনা ভেবেছিলো এবার সবকিছু নরলাম হয়ে গেছে। লাবিব নিজেকর শুধরে নিয়েছে,এই কয়েকদিন এ বাড়ির সবাই তার সাথে ভালো ব্যবহার করেছে।
“লাবীব নীলাঞ্জনার হাত আঁকড়ে ধরে বল,নীলু আমাদের ব্যবসায় বিশাল বড় এক লস হয়েছে। মনে হচ্ছে আমাদের এ বাসাটা বিক্রি করে দিতে হবে।
” নীলাঞ্জনা বলল,ব্যবসায় ভালো খারাপ উভয় সময় আসে৷ এসব কোন ব্যাপার না। আমরা সবাই মিলেমিশে ঠিক করে নেবো আবার।
“লাবিব মনে মনে রাগ হলো,সে ভেবেছিলো নীলাঞ্জনা বলবে,আমার বাসা থেকে সাহায্য আনবো। লাবীব আবার ডাকলো নীলু, তুমি চাইলে কিন্তু আমাদের সমস্যার সমাধান করতে পারে এক তুড়িতে।
” কি বলো? কিভাবে?
“মাত্র পঁচিশ লাখ টাকা৷ তোমার বাবা চাচাদের হাতের ময়লা তুমি একবার তাদের সাথে কথা বলে দেখো।
“নীলাঞ্জনা নিজের হাত সরিয়ে আনলো,রাগ দেখিয়ে বলল,দরকার পরলে তোমার সাথে রাস্তায় থাকবো তবুও ওই বাড়ি থেকে কোন সাহায্য আনবো না।
” লাবিব উঠে বসলো,তার চেহারার রাগ স্পষ্ট, নিজের রাগ সংযাত করে বলল,দেখো তুমি ওই বাড়ির মেয়ে তুমি আমাদের বিপদে এতোটুকুও হেল্প করতে পারবে না৷
“নীলাঞ্জনা উঠে দাঁড়ালো,লাবিবের দিকে তাকিয়ে বলে,আমার দ্বারা এসব সম্ভব না। তুমি আর যা বলো আমি করবো কিন্তু কিছুতেই ওই বাসায় টাকার কথা বলতে পারবো না।
” তোর ওই বাসায় টাকার কথা বলতে হবে না,চল হোটেলে তোর শরীর বেচে টাকা কামাবো।।
🌿জাহিন মান্নাতের সামনে বসে আছে, মান্নাত মাথা নিচু করে বসে আছে৷
“জাহিন স্বান্ত স্বরে বলল,সত্যিটা তোমাকেই বলতে হবে? তাই চুপ করে না থেকে সত্য বলো।আর আমি চাইছি না তোমাকে এদেশে রাখতে, তোমার সব কাগজ পত্র ঠিক করতে দিয়েছি তোমাকে বাহিরে দেশে সেটেল্ড করে দিবো৷ সেখানে নিরাপদ থকতে পারবে৷ তার আগে বলে,আজান ছেলেটার সাথে তোমাদের পরিবারের কি সম্পর্ক? দেখো তুমি আমাদের সঠিক তথ্য না দিলে আমরা তোমাতে কোন রকম সাহায্য করতে পারবো না৷
” অন্তর বলল,দেখ জাহিন আমার মনে হচ্ছে এই মেয়েটা আমাদের কাছ থেকে বড় কোন সত্যি কথা গোপন করছে। তুই আমাকে অনুমতি দিলে,ওকে আমি পুলিশের হেফাজতে দিয়ে আসবো। অন্তর কথা শেষ করার আগেই জাহিন বলল,এদিকে কেউ আসছে মনে হচ্ছে, এই মেয়ে দ্রুত ওয়াশরুমে লুকিয়ে পরো।
“মান্নাত ওয়াশরুমে লুকিয়ে পরলো, সে এখন এই প্রশ্নের কি উত্তর দেবে! তার যে এই জঘন্য সত্যি প্রকাশ করার সাহস নেই!আচ্ছা এমন ভয়াবহ কালো অতীত কেনো আবার ফিরে আসছে! কেনো এই অধ্যায় জীবন থেকে মুছে যাচ্ছে না!
#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে