#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৩২
নয়না পড়ার টেবিলে বইখুলে বসে আছে কিন্তু একটা শব্দ ও পড়তে পাড়ছে না!তার মস্তিষ্ক জুড়ে জিয়ানের কথাগুলো বাসা বেঁধেছে। নয়না ফোন নিয়ে তুষিকে কল করলো।
“ব্রিলিয়ান্ট ছাত্রী পড়ার সময় আমাকে কল করলো!এটা তো পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য!
” চুপ থাক আমার ভালো লাগছে না৷ পড়ায় মন বসছে না। সব কিছু অসহ্য লাগছে তুষি।
“তুষি হেসে বলে,বান্ধবী আমার প্রেমে মজেছে। ওহো পিরিতি কাঁঠালের আঠা লাগলে পরে ছাড়েনা।
” তুষি র বাচ্চা ভুষি তোরে আমি..
“আরেহহ ইয়ার মজা করছি রেগে যাচ্ছিস কেনো?এটা বলো দুলাব্রোর সাথে সব কিছু ঠিকঠাক আছে?
” তুই কি এই বা’লের কথা ছাড়া অন্য কথা বলবি! নাহলে কল কেটে দিবো।
“বুঝলাম তোর মুড এহন গরম তেলের মত আমি যে কথাই বলবো পানির ছিটার মত তুই ছ্যাত করে উঠবি।
” আমাকে পড়তে হবে বল পড়ায় মনোযোগ কি করে আনবো?
“তুই মনে করো এই মূহুর্তে পড়ালেখা ছাড়া দুনিয়া কোন কিছু তোর জন্য ইম্পর্ট্যান্ট না। পৃথিবীতে শুধু তুই আর তোর পড়ালেখা ছাড়া কিছু নেই৷ এটা মাইন্ডে সেট কর আর মনের দরজায় তালা দিয়ে মেধা খাটিয়ে পড়।
” তুষী।
“নয়নার কন্ঠে কাতরতা, তুই ঠিক আছিস নয়না৷ কি হয়েছে আমাকে বল। এতো বিধ্বস্ত কেন শোনাচ্ছে তোর কন্ঠ?
” নয়না বলল,আমার জীবনটা এমন হলো কেন? মনে হচ্ছে সাজানো গোছানো জীবনা হঠাৎ সুনামি এসে ধ্বংস করে দিয়েছি।
“তুই একটু বেশিই ভাবছিস। দেখ বিয়ে ভাগ্যের ব্যাপার। তুই তো নিজেও জানতি না তোর এভাবে বিয়ে হবে বা এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে হবে। কিন্তু যা হয়ছে সেটা ধরে বসে থাকলে তো হবে না। বর্তমানে প্রাক্তন থাকাটা স্বাভাবিক। বেশিরভাগ ছেলে মেয়ে বিয়ের আগে রিলেশন করে। কারোটা সফল হয় কারোটা হয় না। দুলাব্রোর প্রাক্তন তোর আপন চাচাতো বোন।এটা তোন জন্য মেনে নেয়া সহজ না। তবে তুই আর দুলাব্রো ঠিক থাকলে অতীত তোদের সামনের জীবনে কোন বাঁধা হবে না।
” নয়না নিজের মনের কথা বলতে চেয়ে বলতে পারছে না। মানুষ নিজের দুঃখ, কষ্টের কথা কখনো প্রকাশ করতে পারে না। চাইলেও তা শব্দ হয়ে বের হয়না ভেতর থেকে৷ দুঃখগুলোকে চাপিয়ে রাখে হৃদয়ে। হৃদয় দুঃখের ভার না সইতে পেরে মনে মেঘ জমাই চোখে বর্ষণ হয়৷ এই দুঃখের কোন সঙ্গী নেই। নয়না ফোন কেটে আবার চেষ্টা করছে পড়ার। ফোনটা আবার সশব্দে বেজে উঠলো নয়না ফোনটা কানে ধরলে, ওপাশ থেকে আওয়াজ আসলো আই লাভ ইউ ডিয়ার রাঙা বৌ। এইটুকু মাথাতে এতো এতো টেনশন না নিয়ে পড়ালেখা করো। তোমার প্লেন ড্রাইভার শুধু তোমার।
জিয়ানের কথা শুনে নয়না অবাক হলো! একটা মানুষ এতো রুপ কিভাবে দেখায়!”আপনি আমার সাথে নাটক করছেন কেনো!নয়নার কথায় স্পষ্ট রাগ ফুটে উঠেছে।
” জিয়ান মুচকি হেসে বলে, এসব কি বলো বেব!তোমার সাথে নাটক করবো কেন? তোমার সাথে তো সিনেমা করবো।
” একদম ফাউল কথা বলে মগজ খাবেন না৷
“ধুর বাবু আমি মগজ কেন খাবো! খেলে তো পুরো তুমিটাকে
খাবো।
” অসভ্য লোক।
“অনলি সুনয়নার জন্য আমি অসভ্য থাকতে চাই।
” এসব করে কি পান আপনি?
“আমি তো পান খাইনি বেবি।
” মেজাজ খারাপ করবেন না।
“কি যে বলো,পিচ্চি একটা ফুলের মত বৌ আমার তার মেজাজ খারাপ করার দুঃসাহস আমার আছে?
” মিস্টার চৌধুরী প্লিজ এমন দুমুখো আচরণ বন্ধ করুন৷ কেন আমাকে এভাবে ধোঁকা দিচ্ছেন?
“মিসেস চৌধুরী আজ এই মূহুর্তে থেকে ক্যাপ্টেন জিয়ান রেজা চৌধুরী শুধু আপনার ব্যাক্তিগত প্রপার্টি। আপনার হৃদয়ের দামে আমি নিজেকে বিক্রি করতে চাই আপনার কাছে৷
” নয়না খট করে কল কেটে দিয়ে মোবাইল সুইচড অফ করে পড়ায় মনোযোগ দিলো। বিরক্ত লাগছে এসব তার৷ বাসায় আরেক মেয়ে আর ফোনে প্রেম!
“জিয়ান মুচকি হেসে বলে,আগে কখনো ফ্লাইট ক্যানসেল হলে বিরক্ত লাগতো। আজ শান্তি লাগছে! ডিয়ার ওয়াইফি তুমি শুধু ক্যাপ্টেন জিয়ান রেজা চৌধুরীর। তোমার রাগকে ভালোবাসার ছোঁয়ায় গলিয়ে দেবো৷ যাস্ট ওয়েট এন্ড সি।
🌿নাজিম চৌধুরী জাহিনের হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে ছুড়ে মারলো।
” বাবা কি হচ্ছে এসব!
“তোমাকে আমি কতবার বলেছি আমাদের ব্যবসায় জয়েন করো? এখন আবার পক্ষে চৌধুরী ইন্ডাস্ট্রি একা সামলানো সম্ভব হচ্ছে না। এরপরেও তুমি কোন সাহস সিক্রেট গোয়েন্দা সংস্থায় যোগ দিয়েছো? প্রথমে র্যাপ হতে চাইলে আমি মানা করলাম আর এখন এসব?
” বাবা আমার কি কোন চয়েস থাকতে পারে না! রেজা তো পাইল ওকে কিছু বলছো না কেনো!
“রেজা আর তোমার জন্ম একদিন তবে গ্রহ নক্ষত্র সব ভিন্ন। নিজেকে রেজার সাথে তুলনা করো?
” আমি শুধু আমার প্যাশন বেছে নিয়েছে কোন ক্রাইম করিনি৷
“তোমার জন্য আমার ছেলের উপর বিন্দু পরিমাণ আঁচ আসলে আমি ভুলে যাবো তুমিও আমার সন্তান।
” এতে আমার কি দোষ বলো?আমরা জমজ এটা আমার অন্যায়! তাহলে লন্ডন যেয়ে প্লাস্টিক সার্জারি করিয়ে চেহারা বদল করে ফেলবো নিজের।
“তোমার এসব ফাউল কথা আমার সামনে চলবে না। সামনের সপ্তাহে মেহনুর আসবে ওর সাথে তোমার বিয়ে ফিক্সড করেছি। আমি আর কোন কথা শুনতে চাইনা।
” ভাইয়া যা করে তোমরা সব সময় সাপোর্ট করো তো আমার বেলায় কি সমস্যা!
“জিয়ান আজ পর্যন্ত একটা ভুল করেছে সেটা হলো প্রেম।এছাড়া ও কোন ভুল করে না৷ ভদ্রতা, সভ্যতা সব আছে ওর মধ্যে। আর তোমার মধ্যে কি আছে? রাস্তার ছেলেদের মত মারামারি, বুকখোলা শার্ট, মাঝে মাঝে হাতে সিগারেট ও দেখা যায়। তুমি তো এটাও ভুলে যাও তুমি চৌধুরী পরিবারের সন্তান!ছোট বেলা থেকে তোমার আর রেজার সেম চেহারার অনেক এডভান্টেজ নিয়েছো। এখন তুমি ছোট না৷ এসব গোয়েন্দাগিরি ছেড়ে অফিস জয়েন করো৷ নাজিম সাথে নিজের রুমে চলে গেলেন।
” জাহিন মিতা বেগমের কাছে এসে বলে,এসবের মানে কি আম্মু!আমি কি ছোট বাচ্চা আমাকে যা বলবে তাই করতে হবে!
“ছোট বাচ্চা না তাইতো বিয়ে ঠিক করেছি৷ মেহনুর ভালো মেয়ে। তাই না বলার কোন অপশন নেই তোমার কাছে৷ আর যদি ভাবো বাহিরের দেশে যাবে৷ তোমার বাবা তোমার ভিসা সহ যাবতীয় সব কার্ড সিস করে দিয়েছে। বড় হয়েছো ম্যাচিউর হও৷
” ভাইয়া একটা টুনি মেয়েকে বিয়ে করলো সেটা ভুল না?
“তোমার ভাইয়া কি করলো সেটা না দেখে আজ পর্যন্ত তুমি কি কি অঘটন ঘটিয়েছো সে-সব দেখো।
” রাগে জাহিনের ইচ্ছে করছে, সব কিছু ভেঙে চুরমার করে ফেলতে৷ কিন্তু সে সাহস তার নেই আর সে শিক্ষা ও নেই৷ বাবা,মায়ের সাথে বেয়াদবি করার দুঃসাহস তার নেই৷ তাই নিজের রাগ সংবরণ করে রুমে চলে আসলো। এসেই বক্সিং ব্যাগে পাঞ্চ মারতে লাগলো।
🌿অনিকেত সায়না সামনাসামনি বসে আছে, সায়না অনিকেতের হাতের উপর হাত রেখে বলে,আমার কি মনে হয় জানেন৷ আমি শুধু আপনার।
“অনিকেত দ্রুত হাস সরিয়ে নিয়ে বলে,দেখো তুমি আমার বন্ধুর বোন নয়ত ঠাটিয়ে দুটো চর মারতাম।তুমি আমার চেয়ে বেটার কাউকে ডিজার্ভ করো। আমি সাধারণ একজন মানুষ অতি সাধারণ। যার নিজের পিতৃ পরিচয় নেই। আমি আমার টাইট কাউকে বিয়ে করবো। যাকে বিয়ে করার জন্য আমার নিজেকে ছোট মনে হবে না৷
“আমাকে বিয়ে করলে আপনাকে ছোট কেন হতে হবে!
” কারন আমি অনাথ। তোমার বাসায় গেলে সবার আগে আমার বংশ পরিচয় জিজ্ঞেস করবে। আমি কোথায় পাবো বংশ পরিচয়?
“আমি বলবো, আমি আপনাকে ভালোবাসি এটাই আপনার পরিচয়।
” পাগলামো করো না। জীবন এতো সহজ না৷ সমাজে তোমাদের অনেক নাম ডাক নিজের সম্মান আমার জন্য নষ্ট করবে না।
“আপনি আমাকে বিয়ে করবেন এটাই শেষ কথা করবেন মানে করতেই হবে৷ ভুলে গেছেন আপনার ঠোঁট কিন্তু আমি স্পর্শ করে ফেলেছি তাই আপনি আর কোন মেয়ের হতে পারবেন না। আর একবার না না করলে,পুরো শরীরে টাচ করে দেবো কিন্তু তখন বৌ পাবেন আর এজন্মে!
” অনিকেত অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সায়নার দিকে,মেয়েটা দেখতে ভারি মিষ্টি কিন্তু আমার মত ছেলের কাছে ওর বাবা মা কিছুতেই দিবে না৷ সমাজে বংশ পরিচয় না লাগলেও পিতৃ পরিচয় লাগে। আমার কাছে তো কোনটাই নেই! সেবর যখন মেয়ে দেখতে গিয়েছিলাম কত ছোট করেছিল তারা আমাকে। আচ্ছা অনাথ হওয়াটা কি দোষের? আমি জানিনা কে আমাকে জন্ম দিয়েছে! সেখানে আমার দোষটা কোথায়?
“সায়না তুরি বাজিয়ে বলে,এই যে মিস্টার কোন ভাবনার সাগরে ডুবে গেলেন? কোন মেয়ে হলে কিন্তু তাকে আমি মে’রেই ফেলবো৷
#চলবে।