#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৩১
নয়না বাসায় এসে ফাইল রেখে সোফায় বসলো৷
“জাহানারা বেগম এসে বলে,কোথায় ছিলে তুমি? তোমাকে খুঁজতে তোমার চাচ্চু বের হয়েছে। আর কিছু সময় দেরি করলে,তোমার বাবা তুলকালাম কান্ড বাধিয়ে ফেলতো৷ কথা বলছো না কেন!
” শ্বশুর বাড়ি গিয়েছিলাম।”
“মানে!”
“শ্বশুর বাড়ি গিয়েছিলাম বললাম তো আম্মু৷ সেই কবে শ্বশুর বাড়ি দেখেছি তারপর কতদিন দেখি না এরজন্য দেখতে গিয়েছিলাম শ্বশুর বাড়ি কেমন৷”
“নয়না তোর কাছে এসব হাসি তামাশা মনে হচ্ছে! ওনারা কি ভাবলো তুই এভাবে চলে গেলি? তারা নিশ্চয়ই ভাবছে মেয়ে বয়সের চেয়ে বেশি পাঁকা!”
“নীলাঞ্জনা নয়নার দিকে ঠান্ডা একগ্লাস জুস বাড়িয়ে দিয়ে বলে,তুই এখনো ছেলে মানুষি ছাড়তে পারলি না! যদিও আন্টি খুব মিশুক মানুষ তবুও তোর এভাবে ওই বাড়িতে যাওয়া উচিৎ হয়নি নয়না।”
“আমার শ্বশুর বাড়ি আমার ইচ্ছে আমি কিভাবে যাবো না যাবো সেটা আমার ব্যাক্তিগত বিষয়।”
জাহানারা বেগম রেগে বলেন,”এক চড় দিয়ে দাঁত ফেলে দেবো। বেয়াদব মেয়ে বড়দের মুখে মুখে কথা বলে! যা নিজের রুমে যেয়ে ড্রেস চেঞ্জ কর৷ আর তিনটা এক্সাম বাকি তো? দুই তারিখ এক্সাম শেষ এরপর তোকে পার্মানেন্ট ভাবে রেখে আসবো ওই বাড়িতে৷ ভেবেছিলাম আরো কিছুদিন রাখবো নিজের কাছে কিন্তু তুই তো পাগল হয়ে গেছিস শ্বশুর বাড়ির জন্য। তোকে সেখানেই রেখে আসবো । তখন বুঝবি শ্বশুর বাড়ি কত মধুর৷”
“নয়না ধুপধাপ করে পা ফেলে রুমে চলে এসে দ্রিম করে দরজা বন্ধ করে দিলো৷ রাগে ইচ্ছে করছে লম্বা চুলগুলো কেটে কুটিকুটি করে ফেলতে৷ আলমারি থেকে গতকালকের গিফটগুলো বের করলো৷ দ্রুত তা আনবক্সিং করতে শুরু করলো। অনেকগুলো হেয়ার প্রডাক্ট, মেকাপ প্রডাক্ট, চকোলেট,পার্পল কালারের একটা সুন্দর গাউন । আন নূর পেজ থেকে এসব এসেছে কিন্তু পাঠিয়েছে কে!সব কিছু তন্নতন্ন করে ঘাটতে লাগলো, একটা কার্ড পেলো সেখানে লেখা, রাঙা বৌ রাঙিয়ে দিও আমার শূন্য হৃদয়। অপর পাশে লেখা,
“আমার একটা আকাশ হোক, সেই আকাশ জুড়ে তোমার ভালোবাসার চাঁদ উঠুক,
আমার একটা নদী হোক,
সে নদীতে তোমার ভালোবাসার ঢেউ হোক।
আমার একটা সন্ধ্যা হোক,সেই সন্ধ্যা জুড়ে তোমায় নিয়ে গল্প হোক৷”
“নয়না কার্ডটি ছিড়ে চার টুকরো করে ফেললো৷ মোবাইল নিয়ে সার্চ করে পেজটা খুঁজে বের করলো, দুদিন আগের পোস্টে নয়নার চোখ আটকে গেলো,সূদুর কানাডা থেকে এক ভাইয়া তার প্রিয়তমার রাগ ভাঙ্গাতে এই সারপ্রাইজ গিফটটা পাঠিয়েছে। আপুটি কত ভাগ্যবতী৷ এভাবেই তাদের ভালোবাসা যুগ যুগ বেঁচে থাকুক।
” নয়না পেজের ইনবক্সে নক করলো, আমার একটা ইনফরমেশন দরকার ছিলো৷ কাইন্ডলি আমাকে একটৃু হেল্প করুন৷
“নয়না বুঝতে পারছে না৷ জিয়ান কেন তার সাথে এরকম দুমুখো আচরণ করছে? মোবাইল অন করার সাথে সাথে অগণিত টেক্সট আর মিসডকলের নোটিফিকেশন এসেছে জিয়ানের কন্টাক্ট থেকে৷
নয়নার মনটা বিষন্নতায় ছেঁয়ে গেলো,জানালার উড়তে থাকা পর্দার দিকে তাকিয়ে বলে,ছেলে মানুষ কি কখনো এক নারীতে আসক্ত হতে পারে না! এই উড়তে থাকা পর্দার মত তারাও কি উড়তে থাকে এক নারী থেকে আরেক নারীর মনে?
” জিয়ান তৈরি হচ্ছিলো ফ্লাইটের জন্য। ফার্স্ট ক্যাপ্টেন সে। সব কিছু পরিদর্শন করে সবে মাত্র জুসসস মুখে দিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে নয়নাকে এক্টিভ দেখা যাচ্ছে৷ মনটা হটাৎ ফুরফুরে হয়ে গেলো জিয়ানের। সাথে সাথে টেক্সট করলো,হেই লিটল প্রিন্সেস।
“নয়না টেক্সটের দিকে তাকিয়ে থেকে চোখ ঝাপসা হয়ে আসলো৷ একটু পরেই নয়নার ফোনটা বেজে উঠলো৷ রিসিভ করে কানের ধরতেই ওপাশ থেকে বলল, প্লিজ এই মুহূর্তে ঝগড়া করো না৷ জিয়ানের কন্ঠে করুনার স্বর।
“আপনার সাথে কথা বলার বিন্দুমাত্র ইন্টারেস্ট নেই আমার৷”
” করুনা করে হলেও একবার ভিডিও কল করো৷ আমি তোমাকে একটা বার দেখতে চাই কতগুলো দিন তোমাকে দেখি না৷ তোমাকে দেখার তৃষ্ণায় হৃদয় মরুভূমি হয়ে আছে!”
নয়না তাচ্ছিল্য হেসে বলে,”এমন ভাবে বলছেন যেনো আমাদের শত জনমের প্রেম! আপনার মিথ্যে কথায় আমার মন ভিজবে না৷ ফোন রাখুন আর কখনো আমাকে কল করবেন না৷ আমার দেখা জঘন্য পুরুষ আপনি। ঘৃণা করি আপনাকে।”
“আর দশ মিনিট পরে আমার ফ্লাইট দোয়া করে এ জীবনে তোমাকে যেনো এই জঘন্য পুরুষের মুখদর্শন করতে না হয়।”
নয়না নিম্ন স্বরে বলে,
“তোমার সাথে কথা না বলতে পারার যন্ত্রণায় আমার তীব্র জ্বর আসুক, তবুও তুমি এসো না আর কথা নিয়ে।
যে কথার আঘাতে হৃদয় হত্যা করেছো, সে কথার মোহ আমায় আর না টানুক।”
জিয়ান চুপ করে রইলো। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
” কোন স্মৃতি, কোন কথা, বা কোন লুকোনো অনুভূতি তুমি।
আমার নিশ্বাস , আমার বিশ্বাস আমার চিন্তা জুড়ে তোমার বিচরণ।
আমার দৃষ্টি সিমানার আড়ালে থেকেও
হৃদয়ের সবচেয়ে কাছে তুমি!”
লাইন বিচ্ছিন্ন হলো৷ নয়না সেভাবেই বসে আছে৷ বারবার জিয়ানের কথাগুলো তার কানে বাড়ি খাচ্ছে। একটা মানুষ ক্ষনে ক্ষনে এভাবে পরিবর্তন কি করে হতে পারে! অন্য নারীর সঙ্গ দিচ্ছে আবার আমাকেও প্রেমকাব্য শোনাচ্ছে! ভালোবাসা বোধহয় বইয়ের পাতায় হয়, বাস্তবে এর কোন অস্তিত্ব হয়ত নেই। আমরা ভালোবাসা বলতে শুধু শূন্যতা পাই!
🌿
অন্তর হেসেই যাচ্ছে। তার হাসি কিছুতেই থামছে না।
“তুই তোর দাঁত ঠিক রাখতে চাইলে হাসি বন্ধ কর শা’লা। আমি এই মুখ কই লুকাবো!”
“কই আর লুকাবি রাস্তায় কোন মেয়ে পাস নাকি দেখ তার আঁচলের তলায় মুখটা লুকিয়ে ফেল৷”
“সুমুন্দির পুত উল্টোপাল্টা বকলে,তোরে এহন আরব আলির ডোবার পানি খাওয়াবো।”
“অন্তর জাহিনের কাছ থেকে কয়েক হাত দূরে সরে বলে, আমি তোর সুমুন্দি এহনো বিয়ে করে নাই তাই তোর সুমুন্দির কোন পুত নাই।
“এহন আমি কেম্নে ভাবির সামনে দাঁড়াবো?”
“আমার কথা শোন,মনোযোগ দিয়া শুনবি কইলাম, সোজা বসুন্ধরা সিটিতে যা ব্র্যান্ডের পাঞ্জাবি কিন, পারফিউম তো আছেই, ঘন্টা খানেক সময় নিয়ে গোসল করবি, এরপর পাঞ্জাবি পরে,পারফিউম মাখবি পুরা শরীরে, এপর চুলগুলো স্পাইক করে সোজা ভাবির সামনে দাঁড়াবি তারপর কবি হেই লিটল ভাবি আমি আপনার হ্যাসবেন্ডের মত দেখতে কিন্তু আপনার হ্যাসবেন্ড না৷”
” চুপ কর শা’লা৷ ওই মাইয়া এমনেই আমারে ভাই মনে কইরা এতোদিনে মনে হয় ভাইয়ার সাথে ঝগড়া করে তার পিন্ডি চটকে ফেলছে। মেয়ে যেই ডেঞ্জারাস!”
“হ সহজ সরল রেজা ভাইয়ের ডেঞ্জারাস বৌ। আমি ভাবতাছি অন্য কথা।”
“ভাবাভাবি বাদ দিয়া সোজাসাপটা ক।”
” বিয়ের পর তোরা এক বাসায় থাকিস না। তোদের কন্ঠ, শরীরের গঠন সব সেম টু সেম৷ দেহা যাইবো বৌ বদল হইয়া গেছে।”
“জাহিন অন্তরের কলার চেপে বলে,তুই এইসব ফাউল চিন্তা করলি ক্যান এহন তোরে আমি চাটনি বানিয়ে খিচুড়ি দিয়া খাবো।”
” তুই আমারে ছাড় চল আমরা একটা রেস্টুরেন্টে থেকে খিচুড়ি খেয়ে আসি৷ আর কেসটার তদন্তের কাজও শুরু করতে হবে।”
“হুম আমাদের হাতে এখন প্রমান নেই সবার আগে প্রমান সংগ্রহ করতে হবে।”
🌿
নীলাঞ্জনা বালিশে মুখ গুঁজে কান্না করছে৷ মনে মনে বলে,আমি আসলে কারো ভালোবাসা ডিজার্ভ করি না৷
এমন সময় জাহানারা বেগম এসে বলে,নীলু তোর শ্বশুর শ্বাশুড়ি এসেছেন ড্রয়িং রুমে আয় তো।
” মাহবুব তালুকদার, মিজান তালুকদার এক সোফায় তার ঠিক সামনের সোফায় সৈকত সাহেব ও শিল্পী বেগম বসে আছেন৷
সৈকত সাহেব কিঞ্চিৎ হেসে বলে, “আজকালকার ছেলে মেয়েরা একটু কিছু হলেই ডিভোর্স পর্যন্ত চলে আসে!এরা সম্পর্ক বোঝেই না৷”
মাহবুব তালুকদার গম্ভীর কন্ঠে বলল,”আমরা আমাদের মেয়েকে আর আপনাদের বাসায় পাঠাবো না৷ আমাদের মেয়ে ভুল করেছে সে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরে এসেছে আমরা এতেই খুশি।”
“বেয়াই সাহেব এটা কোন কথা হলো! বিবাহিতা মেয়ে। সে আপনার বাড়ির মেয়ে আমার বাড়ির সম্মান৷ একটাই ছেলে আমাদের। ভুলভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখে মেয়েকে আমাদের সাথে পাঠিয়ে দিন৷”
“আমার মেয়ে যখন ফিরে এসেছে আপনাদের কাছে আর ফিরবে না৷”
নীলাঞ্জনা হুট করে এসেই বলে,”আমি যাবো আপনাদের সাথে। এই কয়দিনে আমি বুঝে গেছি বিয়ের পর মেয়েদের শ্বশুর বাড়ি ছাড়া আর কোন স্থান নেই। আপনারা বসুন আমি রেডি হয়ে আসছি।”
#চলবে