অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-২৯

0
1

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -২৯
সূচনা কোমড়ে দু’হাত গুঁজে বলে,”এই তুই এখানে কি করিস? আবার গিটারও বাজাতে পারিস!”
“জাহিন বেশ অবাক হলো!এইটুকু পুঁচকে মেয়ে তাকে তুই করে কথা বলছে! এই যে দাদি আম্মা সাহস তো ভালোই এইটুকু ছানাপোনা হয়ে জিরাফের মত ছেলেকে তুই সম্বোধন!”
“এই একদম আমাকে দাদি আম্মা বলবি না বলে দিলাম৷ আমি সূচনা তালুকদার। বড় আম্মুকে বলে দিলে তোকে পিট্টি দেবে।”
“দারোয়ান এসে সূচনাকে ডেকে নিয়ে গেলো৷”
“সূচনাকে নিতে গাড়ি চলে এসেছে। বাসায় ফিরে দৌড়ে নয়নার রুমে গেলো৷ কিরে ময়না তুই সারাদিন পড়ার টেবিলে পরে থাকিস আর এদিকে তোর বর কি কি করে খবর রাখিস না?”
“নয়না ভ্রূ কুঁচকে তাকালো সূচনার দিকে৷ এই তুই স্কুল থেকে এসেই আমার রুমে কেন এসেছিস?”
“তোর বর স্কুলে গান গাইছিল সাথে গিটারও বাজাচ্ছিল৷”
“তোর ফাউল কথা রেখে যা তো। আমাকে পড়তে দে পরশু আমার কেমিস্ট্রি এক্সাম৷”
“এই কেমিস্ট্রি আবার কোনটারে টয়না? আমারে কেন পড়ায় না?”
“তুই যাবি?”
“তুই আমার সাথে যাবি? বিকেলে স্কুলে অনুষ্ঠান, তোর বর গান গাইবে শুনবি?”
“নয়না কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,ঠিক আছে তোর সাথে যাবো। কিন্তু এই কথাটা কাউকে বলবি না৷”
“বিকেলে নয়না ব্ল্যাক কালার আর সোনালি পারের জামদানি পড়লো, লম্বা চুল গুলো হিজাবের আড়ালে লুকিয়ে ফেললো৷ চোখে কাজল, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। সূচনাকে সাথে নিয়ে গাড়িতে বসলো৷ নয়নাদের আসতে আসতে একটু দেরি হয়ে গেছে স্কুলের গেট পার হয়ে কিছুদূর আসতেই কানে আসলো….
“আমি তোমাকে আরো কাছে থেকে
তুমি আমাকে আরো কাছে থেকে
আমি তোমাকে আরো কাছে থেকে
তুমি আমাকে আরো কাছে থেকে
যদি জানতে চাও, তবে
ভালোবাসা দাও ভালোবাসা নাও
ভালোবাসা দাও ভালোবাসা নাও
নদী কেন যায় সাগরের ডাকে?
চাতক কেন বৃষ্টির আশায় থাকে?
যদি বুঝতে চাও
আমি তোমার ওই চোখে চোখ রেখে
তুমি আমার এই চোখ চোখ রেখে
স্বপ্ন দেখে যাও, তবে
ভালোবাসা দাও ভালোবাসা নাও
ভালোবাসা দাও ভালোবাসা নাও
কাছে এলে যাও দূরে সরে
কত দিন রাখবে আর একা করে
মনে টেনে নেও
আমি তোমার ওই হাতে হাত রেখে
তুমি আমার এই হাতে হাত রেখে
আমি তোমার ওই হাতে হাত রেখে
তুমি আমার এই হাতে হাত রেখে
এসো এগিয়ে যাই।।”

নয়না সূচনার হাত ধরে এক প্রকার দৌড়ে স্টেজের সামনে চলে আসে, অশ্রু টলমল নয়নে সামনে তাকিয়ে থাকে অভিমান, অভিযোগের দৃষ্টিতে৷ এই মানুষটাকে কি নয়না ভালোবেসে ফেলেছে! নয়তো তাকে দেখে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে কেনো ইচ্ছে করছে! কেনো ইচ্ছে করছে শার্টের কলার শক্ত করে ধরে জিজ্ঞেস করতে আপনি আমাকে কষ্ট কেনো দিচ্ছেন!
“জাহিনের দৃষ্টি নয়নার দৃষ্টিতে স্থির হলো, কয়েক সেকেন্ডের জন্য জাহিন থামলো। এরপর আবার গাইতে শুরু করলো৷ গান শেষ হওয়ার আগেই অভিমানে নয়না বাহিরের দিকে চলে যাচ্ছিলো৷
জাহিন গান শেষ করেই দ্রুত পায়ে নয়নার পিছুপিছু আসে। সূচনাকে গাড়িতে বসিয়ে নয়না উঠতে যাবে তখনই নয়নার হাতে টান পড়ে ৷ নয়না পিছু ফিরে রাগী কণ্ঠে বলে ডোন্ট টাচ।
“আচ্ছা ছেড়ে দিচ্ছি বলে তো যাও এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে কেনো?”
“নয়না অবাক দৃষ্টিতে সামনের মানুষটির দিকে তাকিয়ে থেকে ভাবলেশহীন ভাবে বলে,আপনি সুদর্শন তাই আপনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম৷ দ্রুত গাড়িতে বসে ড্রাইভারকে বলে,চলুন দ্রুত৷”
“জাহিন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে! কি হলো? মেয়েটা বারবার তার সাথে এমন অদ্ভুত বিহেভিয়ার কেন করে? চেহারাটা নিষ্পাপ মনে হয় শত বছরের মায়া জমা হয়ে আছে৷”
“অন্তর এসে বলে,তুই এই মেয়ের প্রেমে একদিন মরবি।”
“শা’লা প্রেম কই পেলি!”
“তুই আমারে আর কোনোদিন শা’লা কইলে তোর ভবিষ্যৎ বৌ আমার।”
“হ আমার ভবিষ্যতে বৌ তোর বোন।”
” তাহলে সমুন্দী বল।”
“সুমুন্দির ছেলে কথা কম ক এবার এই মাইয়ার খোঁজ নে৷ এটার কাহিনি বের কর৷”
🌿
নয়না বাসায় এসে রুমের দরজা বন্ধ করে হাঁটুতে মুখ গুঁজে কান্না করতে লাগলো৷ হাতের উল্টো পিঠে চোখের জলটুকু মুছে নিয়ে আলমারি থেকে নিজের ফোন বের করে সুইচড অন করলো৷ সামনাসামনি কিছু বলতে পারেনি কিন্তু এবার ফোনে ইচ্ছেমতো বকে দেয়ার ইচ্ছে নিয়ে ভিডিও কল করল।
“ওপাশ থেকে কোন রেসপন্স নেই৷ তৃতীয়বার কল রিসিভ হতেই নয়না চিৎকার করে বলে,আপনার কি হয়েছে! আপনাকে মাত্রই সুস্থ দেখে আসলাম।কোন হসপিটালে আছেন আমাকে বলুন৷”
“জিয়ান কোন কথা না বলে, নয়নার দিকে তাকিয়ে আছে। কোন এক অদ্ভুত কারণে সে নয়নাকে দেখলে তার সব কষ্ট উবে যায় সব পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।”
” কি হলো কথা বলুন..”
“স্যরি”
“নয়নার চোখ টলমল করছে৷ একটা সপ্তাহ পর লোকটাকে দেখলো কিন্তু একি মানুষ একি সময় দু’দিকে কীভাবে সম্ভব।”
“আপনি কোথায়?”
” জিয়ান ফোন ঘুরিয়ে দেখালো৷ কানাডার একটা হসপিটালে।”
“নয়না কিছু বলতে গিয়েও চুপ করে রইলো৷”
“এই শুনছো আমার রাঙা বৌ আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এজন্মে আর তোমাকে ছাড়বো না।”
“নয়না কান্না করছে৷”
“প্লিজ কান্না করো না৷ আমি এতোদিন পর তোমার চোখের অশ্রু দেখতে চাইনা৷ স্যরি আর কোনোদিন তোমাকে হার্ট করবো না৷”
“আপনি অসুস্থ হলেন কি করে?”
” এক ষোড়শী বালিকার হৃদয় ভাঙার অনুশোচনা আমাকে হসপিটালে নিয়ে এসেছে৷ তুমি কি জানো আমি তোমার সরলতার মায়ায় আবদ্ধ হয়ে গেছি। আমাকে কখনো ছেড়ে যাবে নাতো?”
‘নয়না ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো৷ কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পরেছিলো হঠাৎ এমন স্বপ্নে নয়নার ঘুম ভেঙে যায়। উঠে চোখে মুখে পানি দিয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত দশটা বাজে।
আলমারি খুলে ফোন হাতে নেয়।
🌿
মান্নাত ওয়াশরুমের ফলসছাদে অন্ধকারে মুখ চেপে রেখে কান্না করছে। কিছুক্ষণ আগেই কিছু মানুষ এসে তার বাবা,মাকে তুলে নিয়ে গেছে। এখনো তারা তন্য তন্য করে পুরো বাসা তালাশ করছে। মান্নাতের কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়ছে,ইঁদুর এসে একটু পর পর পায়ে আঁচড় কাটছে৷ এ কেমন অমানিশা গ্রাস করছে মান্নাতের সুন্দর জীবনকে? তার বাবা মাকেই বা কোথায় নিয়ে গেছে? মান্নাতের ভেতর থেকে চিৎকার আসছে। অথচ সে নিরুপায়। মান্নাতের মন বলছো, এই শহরের মানুষগুলো বড্ড নিষ্ঠুর ইট পাথরের মতই৷ পাশ ঘেঁষে এতো বাসা অথচ কেউ এগিয়ে আসলো তাদের সাহায্যে! হয়ত আমাকেও কোনো শকুন গিলে খাবে দিবালোকে কেউ ফিরেও তাকাবে না৷
🌿
জিয়ান এই এক সপ্তাহে দুইবার ফ্লাই করেছে এই ব্যতীত রুম থেকে বের হয়নি৷ হঠাৎ তার নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে।বারবার নয়নার নিষ্পাপ মুখশ্রী তার চোখের সামনে ভেসে উঠেছে৷ চোখ বন্ধ করলেই কানের সামনে নয়নার দুষ্ট মিষ্টি কথাগুলো বাজতে থাকে। জিয়ান চেয়েও নয়নাকে নিজের মন মস্তিষ্ক থেকে বের করতে পারছে না! অবশেষে আজ সে ছুটির জন্য অ্যাপ্লিকেশন করে বসেছে।তার মন এখন নয়নার উষ্ণতা ছাড়া শান্ত হবে না। তার চোখের তৃষ্ণা মিটবে না নয়নার দর্শন ব্যতীত৷ কত শতবার কল করেছে টেক্সট করেছে অথচ সেসব কিছুই পৌঁছায়নি৷ মনের কাছে পরাজিত হয়ে সে ছুটে যাচ্ছে তার প্রেয়সীর দাঁড়ে।
🌿
নাজিম চৌধুরী পায়ের উপর পা তুলে,চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলেন,তোমার ছোট ছেলেকে বোঝাও। আমার পক্ষে একা একা এত বড় বিজনেস সামলানো এখন আর সম্ভব না। আর ওই বাড়িতে খবর নিয়েছো মেয়েটা এখন কেমন আছে? এক্সাম শেষ হলে যত দ্রুত সম্ভব আমার বৌ আমি নিয়ে আসবো৷
“মিতা বেগম বললেন,জাহিন কি আমার কথা শুনবে? তুমি একবার বলে দেখো। আর সুনয়নাকে দেখতে আবার যাবো কাল৷ তুমিও আমার সাথে যাবে?”
“নাজিম চৌধুরী চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে বলে,ভেবে দেখছি৷”
🌿
রাত বারোটা পঁয়তাল্লিশ নয়নার চোখে ঘুম নেই বই নিয়ে পরে আছে। হঠাৎ জাহানারা বেগম রুমে এসে বলে,তুই কি অর্ডার করেছিস নয়না? এত রাতে ডেলিভারি ম্যান এসে বিরক্ত করছে?
“নয়না অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,আমি কিছু অর্ডার করিনি৷”
“আয় দেখে যা গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ডেলিভারি বয়। তোর হাতে ছাড়া দেবে না।”
“নয়না ভ্রূ কুঁচকে উঠে আসলো৷ দরজা খুলতেই লোকটা বলল, আপনি সুনয়না চৌধুরী?”
“নাহহ আমি সুনয়না তালুকদার।”
“চৌধুরী বাড়ির বড় বৌ না আপনি?”
” জাহানারা বেগম বলেন হ্যাঁ আমার মেয়ে চৌধুরী বাড়ির বৌ।”
“হাতে থাকা দুইটা বুকে নয়নার দিকে বাড়িয়ে দিলো,একটাতে ফুল আরেক টাতে চকোলেট। আরেকটা বেশ বড়সড় বক্স দিয়ে বলে,ম্যাম এগুলো আপনার জন্য।”
“নয়না কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই লোকটা চলে গেলো৷”
“রুমে এসে সব কিছু নিয়ে চুপচাপ বসে আছে৷ এতোগুলা চকোলেট, ফুল কে তাকে একসাথে পাঠাবে! এই বক্সেই বা কি আছে?”
‘নীলাঞ্জনা হেসে বলে,তোর বর তোকে বড্ড ভালোবাসে মনে হচ্ছে। দেখ কত কিছু পাঠিয়েছে। আমাকেও কম কিছু বলেই চুপ করে গেলো৷
“নয়নার ইচ্ছে করছে নীলাঞ্জনার চুল ছিড়ে ফেলতে৷ এইগুলোও যদি প্লেন ড্রাইভার আপনার কাজ হয় তবে আপনার একদিন তো আমার যতদিন লাগে প্লেন ড্রাইভার বাচ্চা।
#চলবে
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক/পাঠিকা সবাইকে পবিত্র মাহে রমজান শুভেচ্ছা ❤️

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে