অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-২৭

0
10

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -২৭
নয়না আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলে চিরুন করছে আর মিটি মিটি হাসছে, বারবার যেনো তার কানে রাঙা বৌ শব্দটা বাড়ি খাচ্ছে! ষোড়শী হৃদয়ের প্রেম ভয়ংকর তা কেবল প্রেম না প্রথম অনূভুতি হৃদয়ের দরজা খুলে কারো উপস্থিতি।
লম্মা চুলগুলো সম্পূর্ণ না আঁচড়ে বেডে এসে বসলো তার এখন ইচ্ছে করছে নাচতে। গান খুঁজতে লাগলো মনমত গান না পেলে নাচ জমে না৷ নাচটা তো ভেতর থেকে আসতে হবে৷
নয়না উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে নাহহ নীলাঞ্জনাকে কোথাও দেখতে পেলো না৷ দরজা বন্ধ করে সাউন্ড বক্সে গান ছেড়ে নাচ শুরু করতেই৷ নয়নার ফোনটা স্ব শব্দে বেজে উঠলো, বিরক্ত নিয়ে মোবাইল হাতে তুলে বলে,এই সময় আবার কার ডিস্টার্ব করতে হলো? স্কিনে তাকাতেই নয়নার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে। সাথে সাথে রিসিভ করেই বলে,কে যেনো বলেছিলো প্রথম এক্সামের পর কথা হবে!
“কারো অশ্রুসিক্ত নয়ন দেখার পর মনটা আঁকুপাঁকু করছিলো তাই মনটাকে বোঝাতে অক্ষম হয়ে কল দিলাম।জিয়ান নয়নার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে! মনে মনে বলে,মেয়েদের মন বোঝা নয়রে নয় সোজা। হটাৎ আমাবস্যা হঠাৎ জোছনা।
” এভাবে তাকিয়ে কি দেখছেন?
“একটু আগেই না কাঁদছিলে ফুলটুসি আর এখন যেনো দাঁত দিয়ে মুক্ত ঝড়ছে!
” আপনার জন্য কি সারাক্ষণ কান্না করব!
“সারাক্ষণ তো দূরের কথা আমার জন্য কখনো কান্না করবে না। চোখের পানি আমার সহ্য হয় না৷
” কিন্তু আমি তো কোন কারনে কান্না শুরু করলে পাক্কা দেড় দু’ঘন্টা কান্না করি। তারপর আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখি কান্না করে আমাকে কেমন লাগছে।
“জিয়ান অট্টহাসি দিয়ে বলে,আগে তোমাকে পাগল ভাবতাম আজ কনফার্ম হলাম।
” ফোন রাখুন তো এখন আমি নাচবো।
“জিয়ান চোখ বড় বড় করে বলে,তুমি নাচতে পারো!
“জিয়ানের কথায় ভ্রু কুঁচকে নয়না বলে,
নাচতে পারি মানে!আমার নাচ দেখলে আপনি নোরা ফাতেহির নাচ ভুলে যাবেন৷
‘নাহহহ এ আমি বিশ্বাস করি না৷
‘নয়না রাগে নাচা শুরু করলো৷
“এক পাগলি কে রাগিয়ে দিয়ে মোবাইলের অপর পাশের ব্যাক্তিটি মুগ্ধ নয়নে নাচ দেখতে ব্যস্ত।
” নয়নার হঠাৎ চোখ আটকালো জিয়ানের উপর। সাথে সাথে থেমে গেলো।
“জিয়ান এখনো যেনো আটকে আছে তার রাঙ বৌয়ের নৃত্যে।
” এই যে মিস্টার প্লেন ড্রাইভার এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থেকে নজর দিচ্ছেন কেন হু?
“আমার জিনিস আমার নজর আমি দেবো না তো কে দেবে?
” আপনার জিনিস মানে?
“জিয়ান বুঝতে পারলো হুঁশ হারিয়ে ভুল বলে ফেলেছে।আমারই তো। মোবাইলটা কে কিনে দিয়েছে হু।
” কিনে দিলেও কি এটার মালিক এখন আমি।
” তোমার মালিক তো আমি।
“ইশশ শখ কত!
” বহুত শখ সুইটহার্ট। এই মূহুর্তে শখ হচ্ছে তোমার গলার নিচের কালো তিলটাকে আমার ঠোঁটের উষ্ণ ছোয়া দেয়ার।
“নয়না ওড়না টেনে তিলটা ঢেকে বলে,মুখে কিছু আটকায় না?
” কে বললো আটকায় না! কত কিছুই তো আটকে রাখি৷ তুমি ষোল বছরের পুটিমাছ বলে।
“শুনেন মিস্টার জিয়ান রেজা চৌধুরী আমি সুনয়না তালুকদার বয়স আমার সবে ষোল তবে বিয়ে হলে আমার একটা বাচ্চাও থাকতো৷
” নিজেই এক বাচ্চা আবার আসছে বাচ্চা থাকতো৷ এই তোমার এতো ডার্টি মাইন্ড জানা ছিলো না তো!
“সরেন আপনার সাথে কথাই বলবো না৷
” রাঙা বৌ তোমার জন্য একদম পার্ফেক্ট শব্দ।
“আমি সিঙ্গেল এসব বৌ টৌ আমাকে কইবেন না কইয়া দিলাম।
” আইছে আমার সিঙ্গেল ছেমড়ি!অর্ধেক বাসর সেরে সে আবার সিঙ্গেল।
“নয়না দাঁত কিড়মিড় দিয়ে বলে,আপনাকে কিন্তু কামড় দিবো।
” কাম অন বেবি কোথায় কোথায় কামড় দিবে দাও। আমি রেডি তোমার কামড় খেতে। ইশশ এতো কিউট বৌয়ের কামড় খাবো ভাবতেই কেমন কেমন ফিল হচ্ছে।
“অসভ্য ড্রাইভার একদম চুপ করুন নয়ত ছ্যাপ দিয়ে দৌঁড় দিবো।
” জিয়ান চোখ টিপে বলে,বুড়া বয়সে আমার কুয়াড়ার কৌটা তুমি ছ্যাপ দিলে আমি তোমার আঁচলে মুছে নেবো৷
“নীলাঞ্জনা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বলে, নয়ন কইরে? আমাকে একটা তোয়ালে দে তো।
” জিয়ান নীলাঞ্জনার কন্ঠ শুনেই চিনে ফেললো,এতোদিন পর সেই চিরচেনা কন্ঠ ধ্বনি কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই জিয়ানের চোয়াল শুক্ত হয়ে গেলো। হাস্যজ্বল চেহারা রক্তিম বর্ণ ধারন করল, চোখ থেকে যেনো অগ্নি ঝড়বে!
“নয়না কিছু বলার আগেই জিয়ান বলে,তোর রুমে এই মেয়ে কি করে! কেন জায়গায় দিয়েছিস ওকে? তোদের বাসায় রুমের অভাব!
” আজকেই তুই আমার বাসায় চলে যাবি এর আগে তোর সাথে আমার কোন কথা নেই।
“জিয়ান নয়নাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজের ফোনটা ছুড়ে মারলো ফ্লোরে৷ সাথে সাথে ফোনটা ভেঙে ফ্লোরে পরে রইলো৷
” নয়না কান্না করছে৷ নয়নার শরীর কাঁপছে৷ ঠিক এই রুপটা সে আরো একবার দেখেছে। নয়না চিৎকার করতে চাইছে কিন্তু তার মুখ থেকে শব্দ আসছে না৷ প্যানিক আ্যাটাক করেছে নয়নার৷
“নীলাঞ্জনা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে, নয়নার হাত পা কাঁপছে চোখ থেকে অনবরত অশ্রু ঝড়ছে।
নীলাঞ্জনা নয়নাকে জড়িয়ে ধরে বলে,নয়ন তোর কি হয়েছে! বল আমাকে বোন আমার৷ নয়না কিছু বলতে পারছে না নীলাঞ্জনা আঁকড়ে ধরে আছে৷ সেদিন রাতের দৃশ্যগুলো চোখের সামনে ভাসতে লাগলো। ধীরে ধীরে নয়নার চারপাশ অন্ধকার হয়ে গেলো৷
🌿অনিকেত আজ খুব বিরক্ত। এই হসপিটালের পর চেম্বারে বসাটা তার কাছে মহা বিরক্তের কাজ৷ কিন্তু টাকার তো দরকার আছে জীবনে৷ একটা রোগি দেখলে সাতশ টাকা ভিজিট৷ এই ইনকাম তো কোন ডাক্তার মিস করতে চাইবে না৷
হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে এগারোটা ছুঁই ছুঁই ইচ্ছে করছে সব রুগে রেখে পালাতে! এটাই শেষ রোগি আজকের। ৫০ নাম্বার সিরিয়াল।
” রোগি এসে বসে আছে।
‘অনিকেত এতোক্ষণ চোখ বন্ধ করে রেখেছিলো৷ মাত্র চোখ খুলে বলে আপনি?
“ডাক্তার আমার হৃদয়ে ব্যথা আপনি তো কার্ডিওলজি ডাক্তার আমার হার্টের রোগ ঠিক করে দিন।
” সায়নার কথা শুনে অনিকেত বলে,আপনার কাছে কি এসব কৌতুক মনে হচ্ছে! সকাল আটটায় বের হয়েছি এখন পর্যন্ত ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারিনি৷ আর আপনি এই তিন ঘন্টা ধরে এই আজাইরা আলাপ করার জন্য বসে ছিলেন!
“আপনার মত রসিক মানুষ রাগও করতে পারে?
” অনিকেত কোর্ট গায়ে পরতে পরতে বলে,আমি এখন বের হবো।
“সায়না অনিকেতের পেছন পেছন বের হয়ে বলে,আপনার বৌ নেই আমার বর নেই। আমাদের মধ্যে কত মিল তাই না?
” মিল নেই। আপনার বাবা মা সব আছে আমার তিন কূলে কেউ নেই এক হলো কি করে!
“বিয়ে করবেন আমায়?
” অনিকেত থমকে দাঁড়ালো৷ রিকশা ডেকে সায়নাকে উঠতে ইশারা করলো। সায়না উঠে বসতেই অনিকেত রিকশা ওয়ালা মামাকে বলে,মামা এনাকে বাসায় পৌঁছে দিবেন।
“সয়না দ্রুত নেমে অনিকেতের হাত ধরে বলে,এই রাতে একা কি করে যাবো! দয়ামায়া নেই নাকি?
” হাত ছাড়ুন আমার শরীর আমার বৌয়ের জন্য সংরক্ষিত, এখানে টাচ করা অন্য নারীর জন্য অবৈধ।
🌿মান্নাত চোখ বন্ধ করে বলে,আই লাভ ইউ।
“জাহিন অবাক হলো না৷ মেয়ে মানুষ নার্ভাস হয়ে গেলে ভুলভাল কাজ করে বসে। জাহিন একটা পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বলে,আপনার মাথায় পানি ঢেলে মাথা ঠান্ডা করুন নয়ত পাগল ভেবে মানুষ আপনাকে মারবে।
” মান্নাত চোখ খুললো,আবার বলল,আমার আপনাকে ভাল্লাগছে। ম্যারি মি?
“জাহিন মান্নাতের দিকে তাকিয়ে বলে,বয়স কত তোমার! সর্বোচ্চ সতেরো কিংবা আঠারো।
” এরমধ্যেই মান্নাতের মা এসে বলে,এখানে কি হচ্ছে?
“জাহিন প্রস্থান করতে করতে বলে,আপনার মেয়ের মাথায় সমস্যা রাস্তাঘাটে তাকে একা ছাড়বেন না আন্টি।
” মান্নাত ভয়ে চুপসে গেলো। এইরে এবার আর রক্ষে নেই! মিন মিন করে বলে,আসলে আম্মু হয়েছে কি জানো?
“আমি কিছু জানতে চাই না। বাসায় চল আজ বোঝাবো কত ধানে কত চাল।
” আমি তো বুঝি আম্মু, যতটুকু ধান চাল তো ততটুকুই হবে। মান্নাত জিহ্বায় কামড় বসালো ভুল টাইমে ভুল কথা বলে ফেলেছে। আজ বাসায় গেলে তুলকালাম হবে।

“জাহিন ফিরে আসতেই অন্তর বলে,তুই আবার কবে থেকে মেয়েদের চেক আউট করছিস! সেদিন স্কুলে আজ আবার রাস্তায়!
“চুপ কর শা’লা জাহিন চৌধুরী মেয়েদের চেক আউট করে না। মেয়েরা জাহিন চৌধুরীকে চেক আউট করে।
” কতবার বলেছি শা ‘লা না সুমুন্দি বলবি।
“ঘাড়ের নিচে না খেতে চাইলে চল এখান থেকে।
” ছিহহহ আমি মেয়ে না তুই লেস.. কবে হলি।
“শা ‘লা এবার তোর রক্ষা নেই।
‘অন্তর দৌড় দিয়ে বলে,তুই সুযোগ পেলেই আমারে হেনস্তা করিস আজ দেখ কেমন লাগে।
” তোরে একবার পাই তোরে ঠিক জায়গায় কিক মেরে তোর পরবর্তী প্রজন্ম অন্ধকার করে দেবো।
#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে