#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -২৬
জিয়ান বুঝতে পারলো না মেয়েটার হঠাৎ কি হয়েছে!
হঠাৎ রেগে যাওয়ার কি হলো! মাঝে মাঝে সিগারেট খাই এটার জন্য রাগলো নাকি শার্টের বাটন খুলে রাখার জন্য?
নাকি শেষে মজা করে যে কথাটা বললাম সেটার জন্য! বাচ্চা মেয়ে বুঝলো না আমি তাকেই মিন করে বলেছি।
জিয়ান খাবার খেয়ে নিজের মোবাইল থেকে পরপর কতগুলো পিক সেন্ট করলো নয়নাকে৷ সাথে দুটো ভিডিও।
“নয়নার ইচ্ছে করছে জিয়ানকে আলুভর্তা বানাতে৷ মোবাইলের নোটিফিকেশন কানে আসতেই চেক না করেই মোবাই সুইচড অফ করে দিলো৷ লম্বা লম্বা পা ফেলে ড্রয়িং রুমে আসতেই অবাক হলো৷ নীলাঞ্জনা বসে আছে তার মায়ের পায়ের কাছে৷
” নয়না দরজায় হেলান দিয়ে তাকিয়ে আছে নির্বাক দৃষ্টিতে। আশ্চর্য তার এতো রাগ লাগছে কেন! নীলাঞ্জনাকে দেখে?
“নীলাঞ্জনা নয়নার দিকে তাকিয়ে উঠে ছুটে আসলো নয়নার কাছে। নয়নাকে জড়িয়ে ধরে বলে,ভালো আছিস নয়ন?
” নীলাঞ্জনার সাথে খুব ভালো বন্ডিং ছিলো একসময় কিন্তু আজ হঠাৎ তাকে সহ্য না হওয়ার কারন নয়না ঠিক খুঁজে পেলো না৷ কেন ইচ্ছে করছে নয়নাকে ধ্বাক্কা দিয়ে তার কাছ থেকে সরিয়ে দিতে! মনে মনে নিজেকে সংযাত করে বলে,তোমার বর কই,?
“নীলাঞ্জনা করুন স্বরে বলে,সবার কপালে বর সুখ থাকে না নয়ন। আমি ও অভাগা যার জন্য সব ছেড়েছি সে আমার মূল্য বোঝেনি৷
” পরিবারের ভালোবাসা যারা উপেক্ষা করে তাদের কপালে সহজে ভালোবাসা জোটে না। আর কাউকে ঠকিয়ে সুখী হওয়া তো অসম্ভব।
“দরজা খোলা ছিলো নীলাঞ্জনা আসার পর আর লাগানো হয়নি৷
লাবিব হুট করেই ঝড়ের বেগে দরজা দিয়ে প্রবেশ করে নীলাঞ্জনাকে জড়িয়ে ধরে চুুমু খেয়ে বলে,কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলে তুমি? আমি কাল সারাটাদিন পাগলের মত খুঁজেছি তোমায়। তুমি বাড়িতে ফিরে আসবে আমাকে বলবে তো?
” নীলাঞ্জনা লাবিবের এই রুপ থেকে অবাক হলো না৷ একয়দিনে লাবিবের সম্পর্কে তার যা বোঝার বোঝা হয়ে গেছে৷ নীলাঞ্জনা লাবিবকে ধ্বাকা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বলে,ডোন্ট ডাচ৷ প্লিজ লিভ।
“জাহানারা বেগম কঠোর কন্ঠে বলল,কি হচ্ছে এখানে? এটা ভদ্রলোকের বাসা।
” লাবিব দূরে সরে দাঁড়ালো। জাহানারা বেগমকে সালাম দিয়ে বলে,আম্মা আমাদের ক্ষমা করে আপন করে নেয়া যায় না?
‘নীলাঞ্জনা লাবিবের হাত ধরে টেনে দরজার বাহিরে বের করে দিয়ে বলে,দ্বিতীয়বার এই চৌকাঠে আসবে না৷ তোমার সাথে আমার সম্পর্ক পরশু রাতেই শেষ হয়ে গেছে৷ তোমার শরীর দরকার তো? টাকা খরচ করলে এ শহরে আশাকরি তোমার শরীরের অভাব হবে না। কথা শেষ করেই ঠাসসস করে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বসে কান্না করতে লাগলো৷
“নয়না চলে এসেছে রুমে এসে নিজের মোবাইল অন করে কান্নারত ভিডিও করলো নিজের৷ এরপর সেন্ট করলো জিয়ানকে। কেনো হঠাৎ মন বলছে, জিয়ানকে জড়িয়ে ধরতে? নয়না মনে মনে বলে,আপনি পাইলট না হলে তাতে কি!আমাকে সত্যি তো বলতে পারতেন? আপনি মেয়েবাজ এটা আমি কি করে মেনে নেবো?
” গুনে গুনে দেড় ঘন্টা পর জিয়ানের ফোনে নোটিফিকেশন আসলো৷
‘জিয়ান দ্রুত মোবাইল হাতে নিলো৷ নয়নার কান্নারত ভিডিও দেখে হঠাৎ করেই হৃদয়ে আঘাত অনুভব হলো! সাথে সাথে ভিডিও কল করলো৷
“ষোড়শী বালিকা কল রিসিভ করেও কান্না করছে?
তার চোখ দুটো থেকে যেনো প্রবেল বেগে বর্ষণ হচ্ছে।
“”এই পাগলী এভাবে কান্না করছো কেন!
তুমি কি? জানো তোমার আঁখি পল্লব থেকে ঝড়া প্রতি ফোটা অশ্রু বিন্দু কারো হৃদয়ে রক্তক্ষরণ বইয়ে দিচ্ছে?
” কোন কথা বের হচ্ছে না মুখ থেকে কান্না করতে করতে হিচকি তুলে ফেলেছে৷
“আমার প্রতি দয়া করো প্লিজ কান্না করো না৷ এই কান ধরছি আর কোনদিন সিগারেট খাবো না৷ বাটন খোলা রেখে শার্ট পরবো না। কোন মেয়েকে লাইন মারা তো দূর কোন মেয়ের দিকে ফিরেও তাকাবো না৷
” নয়না কোনমতে বলল,আপনি কি সত্যি আমাকে ছেড়ে দেবেন? আমি কি নীলাঞ্জনা আপির চেয়ে দেখতে খারাপ?
“জিয়ান নয়নার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকালো,কোমল স্বরে বলল,তুমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী রমনী, তোমার চোখ, তোমার চাহনি তোমার হাসি তোমার কথা বলা পৃথিবীর সবচেয়ে আকর্ষণীয়। তুমি ইচ্ছেমতী, তুমিই মায়াবতী তুমিই লাজুকলতা তুমি সরলতার প্রতিমা৷ চোখের জলটুকু মুছে নাও রাঙা বৌ।
” নয়নার কান্নার গতি কিছুটা কমেছে৷ মনের মধ্যে কেমন অদ্ভুত এক অসুখ ডাক দিচ্ছে! এ অসুখের নাম প্রেম নয়তো!
“এই শুনছো আমার কথা ময়নাপাখি?
” নয়না অস্ফুট স্বরে বলল,আমাকে স্বান্তনার বাণী শোনাচ্ছেন! আমি কিন্তু অতোটাও অবুঝ না৷
“তোমার চোখের জল কারো হৃদয়ের ভুমিকম্প। জলটুকু মুছে নাও মেঘ বালিকা।
” নয়না হাতের উল্টো পিঠে চোখের জল মুছে নিলো৷ খুব করে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে আমাকে আপনি মিথ্যা বলে কেন দূরে সরাচ্ছেন? আপনি তো হাতের নাগালেই তবুও দূরে কেন?
“এই যাদুকরী কন্যা কিছু তো বলো?
” নয়না ছোট করে কিছু কাব্যিক লাইন বলতে শুরু করলো,
” তুমি হাসো আমি দেখি, হয়ত মনে মনে ভাবো বড্ড বোকা আমি!
আমি বুঝি,আমি অনুভব করি তোমার বদলে যাওয়া সত্তাকে। তবুও প্রকাশ করতে ভয় হয় এইটুকু তোমাকে কাছে পাওয়ার লোভে!আমি জানি তোমার মনে আমি আর নেই তবুও তোমার মিথ্যে আশায় ঘর সাজাই নানা রঙে!
“এতো সুন্দর উপস্থাপনা?
” মন ভালো করার টনিক।
“শুনো মেয়ে রঙ্গনা তোমার এখন প্রেম করার বয়স না৷ চোখ মুখে পানি দিয়ে পড়তে বসো, আর তিনদিন পর তোমার পরিক্ষা। তোমার সাথে আমার কথা হবে প্রথম এক্সামের পরে৷ তখন তোমার সব কথা শুনবো সব প্রশ্নের উত্তর দেবো। যা যা জানতে চাও সব৷
” আপনি বড্ড নিষ্ঠুর।
“হুম।
” একটুও ভালো না আপনি৷
“হুম জানি৷
” মিথ্যেবাদী।
“তারপর?
” পৃথিবীর সবচেয়ে বাজে পুরুষ।
“মানলাম তারপর।
” বলবো না আর৷ আপনি মজা নিচ্ছেন?
“আমার এতো সাহস আছে?
” নীলাঞ্জনাকে রুমে ঢুকতে দেখেই খট করে কল কেটে দিলো নয়না৷
“জিয়ান টেক্সট করলো, তোমার ভাষার সব গালি আমার জন্য তুমি যা যা বলবে তাই আমি । এবার পড়তে বসো৷ এক্সাম ভালো হতে হবে ময়নার মা।
” নয়না রিপ্লাই করলো না। ডাটা অফ করে মোবাইল রেখে দিলো।
নীলাঞ্জনা জিজ্ঞেস করলো কার সাথে কথা বলছিস?
মোবাইলটা কার?
“এটা আমার মোবাইল প্লেন ড্রাইভার গিফট করেছে৷
” জিয়ান? তোকে মেনে নিয়েছে?
“সেসব তোমাকে কেন বলবো?
” আমি কি তোর এতোটাই পর হয়ে গেলাম!
🌿
রাতের বেলা ফুচকা খেতে বের হয়েছে মান্নাত সাথে তার মা।
ফুচকা খেতে খেতে চোখ গেলো সামনের দিকে কয়েকজন ছেলে গোল হয়ে বসে আছে একজন গান গাইছে, তোরে ভুলে যাওয়ার লাগি আমি ভালোবাসিনি।
‘মান্নাত উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করছিলো। হঠাৎ সামনের ছেলেটার চোখে চোখ পরলো। দ্বিতীয়বারের মত চারচোখের মিলন ঘটল৷ মান্নাত সাত পাঁচ না ভেবে চোখ টিপ মারলো।
‘জিহান বেশ অবাক হলো! মনে মনে বলে কি দিন আসলো আজকাল মেয়েরা ফ্লার্ট করে? জিহান আরেকটু ভালো করে তাকালো এটা তো ওইদিন রাতে যে ভিডিও করছিলো সেই মেয়েটা৷ জিহান গিটার অন্তরের হাতে দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে আসলো।
“মান্নাত কিছুটা ঘাবড়ে গেলো৷ এদিক সেদিক তাকিয়ে পেছনে ঘুরে নিজের মা’কে খুঁজতে লাগলো। উফফ আম্মু এখন আবার কি দেখতে গেলো? কই গেলো।
” জাহিন সামনের দিকে এগিয়ে আসছে মান্নাত পিছনে পিছিয়ে যাচ্ছে।
“হঠাৎ জাহিন মান্নাতের হাত ধরে বলে,এতো ভয় নিয়ে ফ্লার্ট করছিলেন? হাত না ধরলে তো আরেক ছেলের উপরে পরতেন।
” মান্নাতের হৃদপিণ্ড মনে হচ্ছে এক্ষুনি বেরিয়ে আসবে৷
“জাহিন মান্নাতকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে বলে,রাস্তা ঘাটে ছেলেদের ইভটিজিং কোন ভদ্র ঘরের মেয়েরা করে না ।
” মান্নাত চোখ বন্ধ করে বলে,আই লাভ ইউ।
#চলবে৷
আজকের পর্ব ছোট। ইনশাআল্লাহ সোমবার পরবর্তী পর্ব আরেকটু বড় করে দেবো।
ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং 🥰