#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -২৫
নয়না বাসায় এসে টেনেটুনে হিজাব খুলে সোফায় ছুড়ে মারলো। ইচ্ছে করছে জিয়ানের মাথা চিবিয়ে খেতে, তাহলে হয়ত মেজাজ একটু ঠান্ডা হতো৷ ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানির বোতল বের করে ঢকঢক করে গিলছে৷
“জাহানার বেগম হাত থেকে ঠান্ডা পানির বোতল কেড়ে নিয়ে বলে,বাপ চাচাদের মত মাথায় ক্যাড়া উঠেছে? এতো রাগ জেদ ভালো না নয়না৷ কি হয়েছে সেটা আগে বল।”
নয়না জোরে নিশ্বাস ছেড়ে বলে,”আম্মু আমার জন্য ছেলে দেখো আমি বিয়ে করবো।”
“এমন অলুক্ষণে কথা কখনো মুখেও আনবি না!মেয়ে মানুষ হলো সাদা চাদরের মত একটু কিছু হলেই সহজে দাগ লেগে যায়। তাছাড়া রেজা ছেলেটা ভালো সুখেই থাকবি তুই। রুমে যেয়ে ফ্রেশ হ আমি তোর জন্য শরবত করে নিয়ে আসছি।”
“নয়না যেতে যেতে উচ্চ আওয়াজে বলে,বিয়ে কিন্তু আমি করবোই ওই ড্রাইভারের সাথে আমি কিছুতেই থাকবো না৷ শা’লা একটা হিটলার।”
“জাহানারা বেগম মনে মনে বলে,এই মেয়ের কবে বুদ্ধি হবে! পাইলট ছেলেটাকে ড্রাইভার বানিয়ে দিয়েছে!”
“নয়না রুমে এসে পায়চারি করতে লাগলো। নাহহ কিছুতেই সে স্থীর হতে পারছেনা। এভাবে কেউ মিথ্যে বলে? এরজন্যই নীলাঞ্জনা আপি পালিয়ে গেছে। সে পালিয়ে বেঁচে গেছে আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়ে গেছে। মোবাইল হাতে উঠিয়ে নিয়ে কল করলো জিয়ানকে। পরপর পরপর কয়েকবার কল করেই যাচ্ছে। ওপাশ থেকে একি কথা বলছে নাম্বার আনরিচেবল! রাগে মোবাইল বেডে ছুড়ে মারলো। ড্রেস নিয়ে সোজা চলে গেলে ওয়াশরুমে। বাথটবে হালকা উষ্ণ পানিতে নিজেকে ডুবিয়ে রাখলো। একটু পর পর মাথা বের করে শ্বাস নিচ্ছে।কিছুক্ষণ পর পুরো মাথা বাহিরে বের করে জোড়ে নিশ্বাস নিলো৷ রাগ কিছুটা কমছে। ড্রেস চেঞ্জ করে আয়নার সামনে দাঁড়ালো। কোমর ছাড়িয়ে হাঁটু ছুঁই ছুঁই চুলগুলো৷ এখন তার বিরক্ত লাগছে চুলগুলোকে। ড্রায়ার থেকে কাঁ’চি বের করলো আজ সে তার সখের চুলগুলো কেটে ফেলবে৷
“জাহানারা বেগম দ্রুত এসে নয়নার হাত থেকে কাঁ’চি নিয়ে বলে,কি হয়েছে তোর?”
“জানিনা আম্মু আমার কিছুই ভালো লাগছে না।”
“এটা শেষ করে রেডি হ। চল আজ তোর জন্য কিছু কেনাকাটা করবো।”
” নাহহ আম্মু আমার ইচ্ছে নেই।”
“তবে বিরিয়ানি রান্না করি।”
“নাহহ আমার খাওয়ার মুড নেই।”
“কি হয়েছে আমার প্রিন্সেসের?”
“নয়না জাহানারা বেগমকে জড়িয়ে ধরে বলে,আম্মু আমরা কি পরীক্ষার পর ভ্রমণে যেতে পারি না?”
“অবশ্যই পারি। দশটা না পাঁচটা না আমার একটা মাত্র এই সব কিছুই তো তোর জন্য।”
” আচ্ছা কথা দিচ্ছো কিন্তু।”
“দিলাম কথা৷ এবার তুই রেস্ট নে আমি বিরিয়ানির জন্য গোশত নামিয়ে ভিজিয়ে রাখি৷”
“নয়না চুপচাপ বসলো না, পায়চারি করছে আর জিয়ানকে কল করেই যাচ্ছে। সাথে মনে মনে অগণিত গালি তো দিচ্ছেই।”
🌿
নীলঞ্জনা গেটের বাহিরে এসে বলে,আপনাকে ধন্যবাদ আমাকে নতুন করে পথ দেখানোর জন্য।
“জীবন অনেক মূল্যবান সে জীবনকে নিজের হাতে হত্যা করলে দ্বিতীয়বার আর ফিরে পাওয়া যায় না৷ আমরা চাইলেই জীবনের ভুলগুলোকে শুধরে নিয়ে জীবনটাকে সাজিয়ে নিতে পারি। যদিও তা সহজ নয় তবে কঠিনও না।”
“জীবনের কিছু ভুল এমন থাকে যা কখনো শুধরে নেয়া যায় না। সেই একটা ভুল সারাজীবন আমাদের বয়ে বেড়াতে হয়। জীবনটা আসলে আমরা নিজেরাই নষ্ট করি। ছাড়ুন এসব এটা বলুন আপনার নাম কি?”
“আমার নাম আহিয়ান হাসান অন্তর৷”
“নীলাঞ্জনা।”
” কিছু মনে না করলে আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসতে পারি?”
“মন্দ হয়না৷”
অন্তর ড্রাইভ করছে নীলাঞ্জনা পাশের সিটে বসা৷ অন্তর হঠাৎ বলল, জানিনা কেনো কিন্তু আপনাকে পরিচিত মনে হচ্ছে!
“একই শহরের মানুষ হয়তো কোন রাস্তার মোড়ে আমাদের রাস্তা বদলের সময় দেখা হয়েছিলো।”
“আপনি সুইসাইড কেনো করতে যাচ্ছিলেন?”
“যার জন্য সব ছেড়েছি সে আমাকে না আমার দেহটাকে ভালোবেসেছে। আচ্ছা ছেলে মানুষ কেনো বোঝেনা নারীর মন পেলে তার জন্য সে নারী দুনিয়ায় সর্গ সাজিয়ে দিতে পারে৷ অথচ পুরুষের কেবল নারীর দেহের প্রতি মোহ!”
“সব পুরুষ এক না৷ ভালোবাসা এই যুগে বাগান বিলাস ফুলের মত। সবাই তার সৌন্দর্য আটকে গভীর ভাবে এরপর ধীরে ধীরে তা ঝড়ে পরতে থাকে৷ মোহ আর ভালোবাসার মধ্যে মানুষ মোহকেই ভালোবাসা মনে করে সামনে এগিয়ে যায়।”
“এখানেই থামুন আমার বাসা চলে এসেছে৷”
” তালুকদার ম্যানশনের সমানে এসে থামকে দাঁড়ালো নীলাঞ্জনা৷ কোন মুখে দাঁড়াবে সে? তাকে কি ঠাই দিবে পরিবার নাকি দুর দুর করে তাড়িয়ে দিবে?”
“অন্তর পেছন থেকে বলে,সামনের পথ কঠিন হলেও এগিয়ে যাওয়ার পথে পিছু ফেরতে নেই৷ সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হয়।”
“নীলাঞ্জনা বাসায় এসে কলিং বেল দিলো৷”
“জাহানারা বেগম তখন বিরিয়ানি দমে দিচ্ছিলেন৷ কলিংবেলের আওয়াজ শুনে বলে,এই সময় কে আসলো?”
“সার্ভেন্ট দরজা খুলে দিয়েই চিৎকার করে বলে,বড় আম্মা দেহেন কেডা আইছে?”
“জাহানারা বেগম ছুটে আসলেন ড্রয়িং রুমে। নীলাঞ্জনাকে দেখে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সামনের দিকে।
“নীলাঞ্জনা জাহানার বেগমের পায়ের কাছে বসে বলে,বড় আম্মু আমাকে ফিরিয়ে দিও না৷ আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি৷ আমাকে একটু ঠাঁই দেও বড় আম্মু।”
🌿
দীর্ঘ তেরো ঘন্টা জার্নির পরে জিয়ান নিজের রেস্ট রুমে ঢুকে ড্রেস খুলে থ্রি-কোয়াটার পরে শুয়ে পরলো৷ কখন চোখ দুটো লেগে গেছে তার ইয়াত্তা নেই। যখন চোখ খুললো তখন উঠে দেখে অনেক সময় পার হয়ে গেছে। নিজের মোবাইল ওপেন করতেই চমকে উঠলো জিয়ান। নয়’শ মিসডকল! সাথে শ’খানেক টেক্সট।
“শয়তান ড্রাইভার, লুচ্চা ড্রাইভার, ডেভিল ড্রাইভার, হিটলার ড্রাইভার, মেয়েবাজ ড্রাইভার, আরো কত আজে বাজে টেক্সট। এসব দেখে হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পারছে না৷সাত পাঁচ না ভেবে কল ব্যাক করলো৷”
” নয়না সাথে সাথে কল রিসিভ করলো। মুখ ফুলিয়ে রেখে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।”
“জিয়ান কাশি দিয়ে বলে,আমি কি দেখতে এতোই খারাপ? আমার দিকে তাকানে যায় না?”
“নাহহ যায় না৷ আগে জামা কাপড় পরেন তারপর তাকাতে বলেন, বডি বানিয়েছেন আর ভাবছেন সব মেয়ে আপনার বডি দেখে প্রেমে পরে যাবে!”
“জিয়ান কম্ফোর্টার টেনে গলা অব্দি টেনে তুললো৷ এবার বলো তো বাংলাদেশের নামকরা প্লেবয় কেন বানিয়েছো আমাকে?”
“সোজা কথার সোজা উত্তর দিবেন একটুও বাঁকা উত্তর দিলে আপনার তেরোটা বাজিয়ে ফেলবো৷”
“আচ্ছা একদম বরাবর উত্তর দেবো।”
” আপনি সিগারেট খান?”
“অভ্যাস নেই তবে মাঝে মাঝে খাই৷ আরেহহহ জানো না সিগারেট খেলে বুদ্ধি বাড়ে।”
“বাজে কথা রেখে এটা বলুন সামনের বাটন খোলা রেখে শার্ট পরেন?”
“মাঝে মাঝে দেশে থাকলে পরি গরমের সময়।”
“কচি মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করেন?”
“জিয়ান এক চোখ টিপে বলে,আগে তো করতাম না এখন করি।”
“জিয়ানের দুষ্টুমি মাখা কথায় আরেকজনে ভুল বুঝে রেগে বোম হয়ে যাচ্ছে সে বিষয়ে বেচারা বেখবর। আর কিছু জানতে চান প্রিন্সেস সুনয়না?”
“নয়নার চোখমুখ রাগে লাল হয়ে গেছে। রাগলে নয়নার চোখে অশ্রু টলমল করে, রাগী কন্ঠে বলে,”আমার ইচ্ছে করছে, আপনাকে থেঁতো করে স্যুপ রান্না করে খেতে৷ তবেই যদি আমার মাথা একটু ঠান্ডা হয়।”
“বাহহহ মাস্টার শেফ সুনয়না চৌধুরী মানুষের স্যুপ বানাবে?”
“মানুষের না আপনার স্যুপ বানাবো।”
“তো আমি কি?”
“আপনি ড্রাইভার। বলেই খট করে কল কেটে দিয়ে মোবাইল সুইচড অফ করে দিলো৷ রাগে কি করবে বুঝতে পারছে না৷ কি অসভ্য লোক কচি মেয়েদের ইভটিজিং করে তা আবার বুক ফুলিয়ে বলছে!নির্লজ্জ লোক।”
“জিয়ান ফোনের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে,এই পাগলি মেয়ের আবার কি হলো? এই নিব্বা বৌকে নিয়ে যদি সংসার করতে হয় আমার অবস্থা বেহাল হয়ে যাবে৷”
জিয়ান উঠে বসলো৷ টেলিফোন কল করে খাবার অর্ডার করলো। নিজে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো৷
ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে, এক তালাক, দুই তালাক,একশ তালাক৷ টেক্সট দেখে জিয়ান উচ্চ স্বরে হেসে ফেললো!
🌿
মান্নাত ক্লাস শেষ করে একটা হাওয়াই মিঠা কিনে সেটা খেতে খেতে আসছিলো। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা গায়ে জানালার পর্দার মত একটা ড্রেস।মান্নাতের চোখ আটকে গেলে এক বাসার দোতলার বারান্দায়। মান্নাত ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে বারান্দায় দাঁড়িয়ে গিটার বাজানো ছেলেটার দিকে।
“জাহিন বারান্দায় দাঁড়িয়ে টুংটাং করে গিটারের সুর তুলছিলো। সেদিন দেখা হয়েছিলো আজও পারিনি কিছুই বলতে যে তোমায়…হঠাৎ রাস্তায় চোখ যেতেই ভ্রু কুঁচকে নিজের রুমে চলে গেলো।
“মান্নাত নিজের দিকে তাকিয়ে বলে,হিটলার বাপের জন্য এজন্মে প্রেম হবে না। নিশ্চিত আমাকে পাগল ভেবে চলে গেছে!”
“জাহিন রুমে ঢুকে দেখে, সায়না দাঁড়িয়ে আছে।”
“তোর কি সমস্যা? তুই জানিস না প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলের রুমে হুট করে চলে আসা ব্যাড ম্যানারস?”
“জাহিন আই লাভ ইউ।”
“আই লাভ ইউ টু ডিয়ার বনু।”
“এটা ঠিক না জাহিন আমি তোকে ছ্যাইয়ার নজরে দেখি।”
“আমি তোকে বোনের নজরে দেখি। যা সর এখন রুম থেকে বের হ আমি আমার গার্লফ্রেন্ডকে কল করবো৷”
#চলবে