#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -২৪
জিয়ান প্রপার রেডি হয়ে ঘড়িতে টাইম দেখলো,আরো আধঘন্টা বাকি ফ্লাইটের৷ মোবাইল নিয়ে নয়নাকে ভিডিও কল করলো।
“ওপাশ থেকে রিসিভ হতেই জিয়ান বুকে হাত দিয়ে বলে,বাব্বাহ আমি ভাবলাম এই মওশুমে টকটকে স্টবেরী কোথা থেকে এলো৷”
“ক্রাশ খেয়েছেন তাইতো? আমি এতোই সুন্দর ক্রাশ খেতে বাধ্য আপনি৷”
“তা শাড়ি পরেছো কেনো?”
“আরেহহ মাথামোটা লোক ঠিক করে দেখুন এটা শাড়ী না। ওড়না। কালারটা জোসসস তাই না?”
“একটু বেশিই জোসসস এতো বেশি জোসস৷ যে কেউ ভুল করে স্টবেরী মনে করে টুপ করে খেয়ে ফেলবে।”
“আমি ভাবছি বিয়েতে ঠিক এই রঙের লেহেঙ্গা পরবো৷”
“বিয়েতে মানে কতবার বিয়ে করতে চাও?”
“মিস্টার প্লেন ড্রাইভার আপনি হয়ত ভুলে যাচ্ছেন আমাদের মধ্যে কি ডিল হয়েছিলো৷ নাকি আমার সৌন্দর্য দেখে মোহ মায়ায় আটকে যাচ্ছেন!”
“জিয়ান নয়নার দিকে সহজ ভাবে তাকিয়ে থেকে বলে সুন্দরী মেয়েদের আমি বিশ্বাস করি না৷ এরা খুব সহজে ছলনা করতে পারে৷”
“আপনি আসলে মূর্খ। বুঝতে পারছিনা আপনি পাইলট কিভাবে হলেন? এই ব্রেইন নিয়ে তো বিমান ঝাড়ু দেয়ার যোগ্যতা থাকার কথাও না।
” ইউ নো তোমার চেয়ে আমার বয়স বেশি আমার অভিজ্ঞতা বেশি তাই আমি তোমার চেয়ে বেশিই বুঝি।”
“ছাতার মাথা বোঝেন। বেডা মানুষ আসলেই মাথা মোটা! একটা প্রেম করবে ছ্যাকা খাবে৷ তারপর বলবে, মেয়েরা ছলনাময়ী,ধোঁকাবাজ । আপনার প্রেমিকা যখন আপনার নাকের ডগায় বসে আপনার চোখে ধুলো দিচ্ছিলো তখন আপনার এই এত্তো বড় মাথাটা কই ছিলো? এটার মধ্যে কি শুধু শো অফ করার জন্য চুলই আছে নাকি বুদ্ধি বলতেও কিছু আছে?”
“মাইন্ড ইউর ল্যাঙয়েজ। ডোন্ট ক্রোস ইউর লিমিট।”
“রাখেন তো আপনার ইনজেরি৷ শুনেন আমার বুদ্ধিমত এগোলে এবার কিন্তু ট্রু লাভ পেয়ে যাবেন৷”
“নয়না তোমার এইটুকু মাথা তারমধ্যে তোমার চেয়ে লম্মা চুল তার পরেও এতো আজাইরা কথা কিভাবে ভাবো?”
“ও হ্যালো সুনয়না তালুকদার আমার নাম। এইটুকু মাথার মধ্যে আপনার বিশাল মাথার চেয়ে ডাবল ব্রেইন আছে। মাথা বড় হলেই তাতে বুদ্ধি থাকে না৷ ছোট মাথায় বড় বুদ্ধি। মানে বুঝতে পরছেন ছোট মরিচের ঝাল বেশি।”
“এখন তোমার ঝালে ঝলসে যাওয়ার সময় নেই বেব। সুযোগ পেলে একদিন সব ঝাল শুষে নেবো। দেখি কতটা ঝলসে দিতে পারো৷”
“কি বলছেন এসব! সব আমার মথার তেরো হাত উপর দিয়ে গেলো!”
“বাচ্চা মানুষ এসব বুঝবে না। আমার সঙ্গ পেলে তখন আবার এসবে পিএইচডি প্রাপ্ত হয়ে যাবে। জিয়ান এক চোখ টিপে বলে, হানি তখন তো টিচারের মত ভাষণ দিয়েছি তাই এবার বরের মত ট্রিট করলাম কও তো কোনটা ভালো লেগেছে!”
“একটাও না আপনার অভিনয় কাঁচা৷”
“তাই? আসলে আমারও তাই মনে হয়। তবে প্রাকটিক্যালী আমি আবার এসবের মাস্টার বেবি। এখন আমি তোমার কাছে থাকলে তোমার গলার নিচে জ্বলজ্বল করা কালো তিলটার পাশে স্টাম্প দিয়ে দিতাম৷”
“নয়না কিছুটা বিব্রত হলো। লোকটার মুখে কিছু আটকায় না নাকি!”
“লিটল কুইন কি ভাবছো? শুনো চৌদ্দ ঘন্টা ভাবতে থাকো তারপর শুনবো। তবে মনে রেখো তোলা রইলো তোমার প্রাপ্য লাভ বাইট।”
” কন্টাক্ট বিচ্ছিন হলো নয়না। আয়নার সামনে যেয়ে বারবার তিলটা ছুঁয়ে দেখছে আর লজ্জা পাচ্ছে।নিজেই নিজের মাথায় চাপড় মেরে বলে,এসব বাদ দিয়ে এডমিট কার্ড আনতে যা৷ পড়ালেখা কর এই প্লেন ড্রাইভারকে মাথা থেকে বের কর।
নয়না রেডি হয়ে বের হলো৷ স্কুলের গেট দিয়ে ঢোকার আগেই রাস্তার অপজিট সাইডে জিয়ানকে দেখে থমকে গেলো!সাদা শার্ট পরা, তাও বুকের সামনের বাটন খোলা, মনের সুখে নিকোটিনের ধোঁয়া উড়াচ্ছে৷ নয়না রেগেমেগে বোম হয়ে গেলো, একটু বারুদ হলেই জিয়ানকে ছারখার করে দেবে৷ লোকটা আমাকে বোকা বানাচ্ছে! এভাবে ঠকাচ্ছে?আজ তার একদিন কি আমার যতদিন লাগে। গুষ্টির তুষ্টি উদ্ধার করবো আজ৷ আজ বুঝতে পারবে সুনয়না তালুকদার কি চিজ।
নয়না সোজা রাস্ত পার এসে অপর পাশে এসেই শার্টের কলার চেপে ধরে বলে, আপনার সাহস কি করে হয় রাস্তায় দাঁড়িয়ে বুক খোলা রেখে শার্ট পরে সি’গারেট খাওয়ার!
‘জাহিনের শার্টের কলার চেপে ধরে রাগী কন্ঠে কথাগুলো বলছে,এক ষোড়শী রমনী। পার্পল আর সাদা রঙের মিশ্রণে গাউন পরিহিতা রমনীর চোখে যেনো অগ্নিশিখা।
” আমার শার্ট আমার চিক আমি দেখাবো তাতে আপনার কি?
“আমার কি মানে! অসভ্য লোক আমাকে মিথ্যে বলে এখন রাস্তায় দাঁড়িয়ে বখাটেপনা করছেন! একটু লজ্জা নেই আপনার মধ্যে! আমি আপনাকে এতোটা চিপ ভাবিনি৷
‘তুষি এসে বলে,সাইফুল স্যার তোকে ডাকছে কি শুরু করলি! চল তাড়াতাড়ি।
‘নয়না শার্টের কলার ছেড়ে দিয়ে বলে,এখানেই থাকবেন আপনাকে আমি ফিরে এসে দেখে নিচ্ছি৷ আমার সাথে নাটক করা! আপনার নাটক বেটে নাগা মরচি মাখিয়ে আপনাকে না খাইয়েছি তবে আমার নাম পাল্টে রাখবো।
” একটা পিক ক্যাপচার করে গলায় ঝুলিয়ে নিন দেখতে সুবিধা হবে। যত ইচ্ছে তত দেখবেন৷ আর হ্যাঁ নাগা মরচি কিন্তু আমার ভিষণ ফেবারিট ওয়েট করবা খাওয়ার জন্য।
‘নয়না দ্রুত পায়ে স্কুলের ভেতর চলে গেলো৷ রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে চুলগুলো ছিড়ে কুঁচিকুঁচি করে কেঁটে ফেলতে।
“অন্তর বলে,কিরে ভাই তলে তলে এতো দূর? এরজন্যই বলি আমার নায়কের মতো বন্ধু কোন মেয়ের প্রেমে কেন পরে না।
‘ঠিক ধরেছিস রাম ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চা। এমন সাহসী মেয়ে পাইনি বলেই এতোদিন প্রেম করিনি৷ জাহিন শার্টের বাটন লাগাতে লাগাতে বলে,তুই চিন্তা কর কোন মেয়ে জাহিন চৌধুরীর কলার ধরে! আমি ইমপ্রেস! উফফ মনে মনে এমন উড়নচণ্ডী মেয়েই তো খুঁজচ্ছিলাম।
” অন্তর কিছুক্ষণ চুপ থেকে তারপর বলে,হতে পারে এই মেয়ে তোকে জিয়ান ভাইয়ার সাথে গুলিয়ে ফেলছে।
“তোর মাথায় আসলেই কিছু নেই। বলবো যে গোবর নিয়ে ঘুরিস ওইটুকুও নেই তোর মাথায়। আরে নির্বোধ ভাইয়ার পছন্দ ম্যাচিউর সুশীল ভদ্র টাইপ মেয়ে।এমন বাচ্চা আমার ভাই বিয়ে করবে না৷
” তোর প্রেম তো হলো না চল এবার এখান থেকে। নয়ত ওই মেয়ে এসে এবার কি করবে কে জানে৷ মানে মানে কেটে পরি।”
‘আরেহহহহ দ্যা গ্রেট জাহিন চৌধুরী একটা মেয়ের ভয়ে পালাচ্ছে!”
‘চুপ করা শা’লা ভয় না আগ্রহ যাতে বাড়ে আমাকে জানার তাই চলে যাচ্ছি।”
‘শা’লা বলবি না চাইলে সুমুন্দি বলতে পারিস৷”
‘স্যারের রুম থেকে এডমিট কার্ড নিয়ে বের হলো নয়না৷”
তুষি বলে,তুই রাস্তায় দাঁড়িয়ে গুন্ডামী করার সাহস কই পেলি নয়না! দ্যা গ্রেট ভীতু নয়নার এতো সাহস!
“চুপ থাক তুই ওটা হলো ফ্রড। আমাকে কি সুন্দর বলল, তোমার সাথে চৌদ্দ ঘন্টা পর কথা হবে আর এখানে এসে বাচ্চা মেয়েদের সাথে লাইন মারার চেষ্টা করছে! আমার সাথে নাটক করে? আজকে নাটকের গুষ্টিরপিণ্ডি চটকাবো।”
“এটা তোর বর! যাই বলিস দুলাব্রোকে আমার কিন্তু অনেক পছন্দ হয়েছে৷ কি হ্যান্ডসাম দেখতে বল?”
” এটা অপশনাল। এটাকে ডিভোর্স দিয়ে এটার ছোট ভাইকে বিয়ে করবো৷ তারপর প্রতি মূহুর্তে অনুভব করাবো কি হারালো।”
“তাহলে এটাকে আমাকে ড্রপ কর।”
” তোর লজ্জা করে না! এক বেডার কিসটিস খেয়ে আরেক বেডার কাছে যেতে চাস?”
“লজ্জার কি আছে প্রেম হলো পার্মানেন্ট।প্রেমিক হলো ভাতের মত আর ক্রাশ হলো বিরিয়ানি। প্রতিদিন ভাত খেয়ে বোরিং হলে দূর থেকে ক্রাশ খাওয়া যায়।”
” চুপ কর আমার মেজাজ হারাচ্ছি। রিকশা ডাক দ্রুত বাস্তব ফিরবো।”
“তুষি রিক্সা ডেকে নয়না তুলে দিয়ে বলে,আজ দুলাব্রোর আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি৷ বেচারা কি যে সহ্য করবে আজ!”
🌿
একটা ছাদের কর্নারে দাঁড়িয়ে সেখান থেকে লাফ দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছে নীলাঞ্জনা৷
” আপনি সুইসাইড করতে চাচ্ছেন?” এক মিনিট বলেই একটা চেয়ার এনে বসে পরলো অন্তর৷
‘নীলাঞ্জনা জিঙ্গেসু দৃষ্টিতে তাকালো৷”
“আপনি কি ভেবেছিলেন আপনাকে বাঁচাবো? আরেহহহ না আপনার জীবন আপনি আরামসে শেষ করুন আমি একটু লাইভ দেখি।”
” নীলাঞ্জনা চোখ বন্ধ করে লাফ দেবে ঠিক সেই মূহুর্তে অন্তর বলল ওয়েট। কষ্ট করে একটু বলে সুইসাইড করুন৷ মানে কোন সুখে এই অপকর্ম বেছে নিলেন?”
“আপনাকে বলবো কেনো?”
” তাহলে আমার বাসার ছাদে মরতে আসলেন কেনো মরার জায়গা কি কম পরেছে?”
“নীলাঞ্জনা অসহায় দৃষ্টিতে অন্তরের দিকে তাকালো৷”
” শুনেন যা ভুল করেছেন বা যে আপনার সাথে ভুল করেছে বা যাই হয়ে যাক আত্মহত্যা কোন অপশন না৷ এখান থেকে নামুন আর নিজের বাবা মায়ের কাছে ফিরে যান। মনে রাখবেন, ‘চিরজীবন কেউ পাশে থাকে না৷ কারো অনুপস্থিতিতে নিজের ক্ষতি করার মত ভুল করতে নেই।”
“সকালের আলো ঝলমলে রুমে বসে নীলাঞ্জনা গতকাল রাতের কথা ভেবে নিজেকে সাহস দিলো বাসায় ফিরে যাওয়ার৷ ছেলেটা কত ভালো তাকে নিজের বাসায় আশ্রয় দিলো! পৃথিবীতে এখনো ভালো মানুষ বেঁচে আছে বলেই হয়ত জীবনে চলার পথ কিছুটা হলেও সহজ।”
🌿
সানায় তার মামির সাথে রাতের কথা খুলে বলল।
” মিতা বেগম বলেন,এরকম বাচ্চামো করা তোর একদম ঠিক হয়নি।জোড় করে সংসার হয় না। সংসার করার জন্য মনের মিল থাকতে হয়। তুই তো জানিস জাহিন কেমন ও তোকে বোন ছাড়া অন্য কোনভাবে মেনে নেবে না। জানিসই তো একরোখা ছেলেটা আমার।”
“জাহিন এখন কোথায়? রুমেও তো নেই সকাল সকাল কোথায় বের হয়েছে আম্মি?”
” ওর ফেরা আর বের হওয়া কোনটার কোন ঠিক ঠিকানা নেই। আয় আমরা দুজন নাস্তা সেরে ফেলি।”
#চলবে