#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -২৩
“আমি ফ্লাইটের উদ্দেশ্য বের হচ্ছি৷ তোমার সাথে আবার কথা হবে তেরো ঘন্টা পর। মনোযোগ দিয়ে পড়ালেখা করবে৷ সব মানুষ তোমাকে ছেড়ে গেলেও তোমার শিক্ষা তোমাকে কখনো একা ছাড়বে না। কলমের জোর থাকলে কারো কাছে মাথা নত করতে হয় না৷কলম তোমাকে সম্মানের সাথে বাঁচতে সাহায্য করবে৷ সো মনোযোগ দিয়ে পড়বা।”
‘নয়না হাসা শুরু করলো।
“এভাবে বোকার মত হাসছো কেন! আমি কি জোক্স বলেছি?”
“স্যরি বাট নট স্যরি। আমাদের আলতাফ স্যারের মত মোটিভেশনাল কথাবার্তা বলছেন তাই হাসছি৷ আপনি আমার অফিসিয়াল হোন বা আনঅফিসিয়ালি হোন বর তাই তো! ভবিষ্যতে আলাদা হয়ে যাবো সেটা ভিন্ন । তাই বলে কাজে যাওয়ার সময় বৌকে লেকচার দিবেন! বৌ হলো আদর করার জিনিস। সব সময় আদরে সোহাগে রাখতে হয়।”
“এসব তোমাকে কে বলল!উপন্যাস পড়ে পড়ে মাথাটা অল্প বয়সে খারাপ করছো?”
“রেগে যাচ্ছেন কেনো? এসব আমাকে নানুমনি বলেছে৷ জানেন নানুমনি নাকি নানাভাইকে অনেক নাকানিচুবানি খাওয়াতো। বেচারা নানাভাই নানুমনির প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে কত কিছুই না করেছে৷”
“নয়না আমি সিরিয়াস”
“আপনি সিরিয়া কেন হবেন আপনি তো আমার কানাডা৷ শুনুন বৌয়ের কথা শুনে চলতে হয় তাহলে ঘর বাহির দু’টোই ঠিক থাকে।”
“তো এখন কি প্রফেশনাল বরের মত বিহেভিয়ার করবো?”
“এখন কি সেটাও আমাকে শিখিয়ে দিতে হবে মিস্টার প্লেন ড্রাইভার! আকাশে উড়াতে পারেন আর বৌয়ের সাথে প্রেম করতে পারেননা!”
“এই বেবি কাম।”
” আর কত কাছে আসবো বেবি?”
“একদম আমার ঠোঁটের কাছে বেবি। তোমাকে খুব আদর করতে ইচ্ছে করছে ডার্লিং।”
” উফফ বাবু! লজ্জা লাগছে তো।”
“আসো না জান।”
“এইতো এসেছি তোমার ঠিক কাছে, এতোটা কাছে যতটা কাছে আসলে একে অপরের নিঃস্বাস মিলিত হয়ে যায়।”
“বেব এবার মনে করো আমি তোমার নিঃস্বাস বন্ধ করে দিচ্ছি দু’হাতে কলার চেপে ধরে।”
‘ইট’স নট ফেয়ার মিস্টার প্লেন ড্রাইভার! মিষ্টি দেয়ার কথা বলে, জান নেয়ার ভয় দেখাচ্ছেন! আনরোমান্টিকের বস্তা।”
“কিসমিস খাওয়ার তো দেখছি খুব সখ?”
“আপনি জানেন তুষির বফ তুষিকে বলে,ওর ঠোঁটের কাছে পৃথিবীর সব মিষ্টতা ফিঁকে। আর আপনি তো মিয়া ফ্রীতে আমার মিষ্টি টেস্ট করে গেছেন৷ আপনার নামে কেস করা উচিৎ থানায়।”
“মামলা হইলে পরে দেইখা নেবো থানায়। নয়না বয়স কতটুকু তোমার! এসব বাদ দিয়ে পড়ো৷ মাথায় সারাক্ষণ দুষ্টু বুদ্ধি।”
“আমার ঠিক ততটুকু বয়স যতটুকু বয়স হলে প্রেম করা যায়।”নয়না মোবাইলের সামনে এগিয়ে এসে বলে,এই দেখুন আমার ঠোঁট এতো সুন্দর ঠোঁটে কে চুমু না খেতে চাইবে হু?
“কিস লাগবেই তোমার হানি?”
“নাহহ লাগবে না স্যার৷ প্লিজ জয়েন ইউর ডিউটি।”
” জিয়ান নয়নার দিকে তাকিয়ে বলে,গুডবাই হানি। আবার কথা হবে চৌদ্দঘন্টা পর৷ ফ্লাই কিস দিয়ে বলে,টেক কেয়ার সুইটহার্ট।”
“কন্টাক্ট বিচ্ছিন হয়ে গেলো৷ নয়না সেভাবেই বসে আছে৷ মনে মনে বলে,এইলোক এমন রসহীন কেন?আরেহহ একটা মেয়ে তোকে পছন্দ করে আর তুই টিচারের মত বিহেভিয়ার করিস! তোর মাথায় কি ঘিলু নেই? আমার টিচারের অভাব! উঠে এসে আয়নায় দাঁড়িয়ে বলে,আমি বেশি সুন্দর নাকি তার প্লেনের এয়ারহোস্টসরা বেশি সুন্দর? এই লোকের চরিত্র ঠিক আছে তো নাকি? নয়না নিজের রুম থেকে বাহিরে আসলো৷”
‘সূচনা বলে,”এই তুই এই বাড়ি থেকে যাচ্ছিস না কেন ময়না?”
“তুই নিজের বাসা ফেলে সারাক্ষণ আমাদের বাসায় কি করিস?”
“চুপ কর টয়না এটা আমার বড় আব্বুর বাসা৷ বড় আব্বুকে বিচার দেবো কিন্তু।”
“নয়না মুখে ভেংচি কেটে কিচেনে গেলো৷ কফি বিটার নিয়ে কফি বিট করছে৷”
“জাহানারা বেগম নয়নার সামনে এসে বলে,এভাবে রাগ করতে নেই নয়না৷ এখন থেকে উনিও তোমার আরেক মা৷ শোন ওনাকে খুব ভালো মনের মনে হয়েছে৷ নিজের মনে করবে।”
“নয়না কফি মগে দুধ ঢালতে ঢালতে বলে,তাই বলে তুমি আমাকে এবাড়ির মেহমান বানিয়ে দেবে! এটা আমার বাড়ি আছে, ছিলো, ভবিষ্যতেও থাকবে৷ মনে রাখবেন মিসেস মাহবুব তালুকদার আমি সুনয়না তালুকদার, তালুকদার বাড়ি মানে আমার নিজের বাড়ি।”
“নিজের মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে বলেন, ওরে পাগলি মেয়ে ওটাতো কথার কথা বলেছি।”
🌿
মান্নাত বাসায় ফিরে বারবার জাহিনের ভিডিওটা দেখছে৷ আর নিজেই লজ্জা পাচ্ছে! ইশশ আমি তো আপনাকে ভালোবাসি আপনি আমাকে ভালোবাসবেন তো!
” জাহিন বাসায় ফিরে গিটার নিয়ে টুংটাং আওয়াজ তুলে গান গাইছে৷ তখন রাত বাজে তিনটে৷ হঠাৎ গেটের বাহিরে গাড়ির হর্ন শুনতে পেয়ে বাহিরে খেয়াল করলো৷ মনে মনে বলে এতো রাতে কে আসলো! গিটার রেখে নিচে নেমে আসে।
“অনিকেত বলে,আপনি কাজটা মোটেও ঠিক করেননি! একটা ছেলে কতটা স্বপ্ন নিয়ে বৌ নিতে এসেছিলো তাকে এভাবে ফাঁকি দিলেন! এতো নিষ্ঠুরতা কেনো কেনো?”
“এতো কথা কেন বলেন আপনি? আর কি সারাক্ষণ বৌ বৌ করেই যাচ্ছেন? যারা এতো বৌ বৌ করে তাদের কপালে বৌ জুটে না৷”
“প্লিজ এভাবে বলবেন না, এসব কথা শুনলে বুকে ব্যথা করে। নিজের হার্ট তো নিজে সার্জারী করতে পারবো না।”
“সায়না বলে,এই নিন ঠিকানা মুখ বন্ধ করে চুপচাপ ড্রাইভ করুন।”
“ললনা বলোনা, কার প্রেমে তুমি বাড়ি ছাড়া হলে?”
“সেটা আপনাকে কেন বলবো?”
” আমি তোমাকে হেল্প করতে পারব।আমার ফ্রেন্ড রেজার বাসা এটা আমি ভালো করেই চিনি এই ঠিকানা৷”
“আপনি রেজা ভাইয়ের বন্ধু! আরেহহ বাহহহহ নাম কি আপনার?”
” অনিকেত।”
“এরজন্যই আপনাকে পরিচিত লাগছিলো৷ আমি জাহিনের প্রেমে ফেরারি।”
” রেজার ছোট ভাই?”
“হুম। ব্যাডারে আমি পছন্দ করি কিন্তু ব্যাডা আমারে পাত্তা দেয়না।”
” যে পাত্তা দেয় না তার জন্য ঘর ছাড়া উচিৎ হয়নি। বরং যে পাত্তা দিয়ে নিতে এসেছিলো তার সাথে যাওয়া উচিৎ ছিলো৷”
“চুপ করেন পৌঁছে গেছি।”
” সায়না গাড়ি থেকে নামলো।”
“অনিকেত বলল,আমরা সব সময় ভুল মানুষকে প্রায়োরিটি দিতে যেয়ে নিজেদের সেল্ফ রেসপেক্ট কমিয়ে ফেলি। যাকে আমরা ভালোবাসি তারচেয়ে তাকেই আপন করে নেয়া ভালো যে আমাদের ভালোবাসে। অথচ আমরা তার পেছনে নিজের সবটুকু আবেগ, অনূভুতি, ভালোবাসা বিসর্জন দেই!”
“সায়না এক পলক স্থীর করলো। মনে মনে বলল,ছেলেটা দেখতে তো খারাপ না। এই যে মিস্টার বৌ পাগলা, ধন্যবাদ।”
“জাহিন গেটের সামনে হাতে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে৷ ভাবলেশহীন ভাবে বলে,যেখান থেকে এসেছিস সেখানে ব্যাক কর।”
“তোমাকে বিয়ে না করে এই বাড়ি ছাড়বো না৷ বিয়ের জন্য অনশনে বসবো জাহিন ভাই।”
“লজ্জা করে না ডাকিস ভাইয়া বানাতে চাস ছ্যাইয়া?”
“মুখে বলি ভাইয়া মনে মনে বলে জান্টুস।”
“অনিকেত গাড়ি থেকে বের হয়ে জাহিনকে বলে,হেই লিটল ব্রো কি অবস্থা?”
” জাহিন অনিকেতের সাথে হাত মিলিয়ে বলে,আপনি এতো রাতে এই পাগলের সাথে?”
“রাস্তায় গুন্ডীগিরি করে এখানে নিয়ে এসেছে। ভাই সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করে নাও বৌ না থাকলে জীবনে আর কিছু নাই।”
” জাহিন হেসে বলে ভেতরে আসো৷”
“সায়না, জাহিন, অনিকেত বাসায় প্রবেশ করলো।”
🌿
নীলাঞ্জনা সকাল থেকে এদিক ওদিক ঘুরছে৷ তার সম্বল বলতে পাঁচশ টাকা আছে হাতে৷ সারাদিন পর সন্ধায় একটা ছাউনির নিচে বসলো। কি করবো কোথায় যাবো? এ জীবন এতো বিষাক্ত না হলেও পারতো! আমার কাছে তো মৃত্যু ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই৷ কোন মুখে পরিবারের সামনে দাঁড়াবো? আমি যে নিজের হাতে সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছি। রাস্তায় থাকলে রাত গভীর হওয়ার সাথে সাথে আমাকে খুবলে খাবে মানুষ নামের পশুরা। আমি বেঁচে থেকে কি করবো!মরে যাবো, আমি মরেই যাবো। আমার কোন অধিকার নেই বেঁচে থাকার৷ রাত একটা পর্যন্ত এদিক সেদিক ঘুরতে ঘুরতে একটা বিল্ডিংয়ের সামনে এসে দাঁড়ালো৷ক্লান্ত শরীরটা নিয়ে বসে পরলো গেটের সামনে৷ চোখ বন্ধ করে জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিলো৷ চোখের সামনে ভেসে উঠলো জিয়ানের মুখশ্রী। কি নির্মম ভাবে আমি তোমাকে প্রতিনিয়ত ঠকিয়েছি! মনে পরলো পুরোনো স্মৃতি… জিয়ান নিজের ব্লেজার নীলাঞ্জনার কাঁধে পড়িয়ে দিয়ে বলছে, নীলাঞ্জনা আমার স্লিভলেস ব্লাউজ পছন্দ না কতবার বলেছি এসব পরে বের হবে না?
“তোমার সব কিছুতেই শাসন বারন আমার একদম পছন্দ না৷ বিরক্ত হয়ে যাচ্ছি দিনদিন। এই যুগে এসেও সেই দাদার আমলের মানুষের মত বিহেভিয়ার কেনো করো রেজা? আমার শরীর আমার ইচ্ছে আমি কতটুকু দেখাবো৷ বলেই ব্লেজার ছুড়ে ফেলে দিয়ে চলে আসলো”, নীলাঞ্জনার চোখ থেকে অঝোর ধারায় বর্ষণ হতে লাগলো৷ কি হারিয়েছে সে এখন অনুভব করছে। কিন্তু এখন যে আর ফিরবে না সে।
চোখের কার্নিশ বেয়ে বোবা অশ্রু গুলো মুছে নিতে নিতে বলে,”তুমি ছিলে আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অধ্যায়, আর এখন আমি সেই অধ্যায়ের শূন্যতায় ডুবে আছি। তোমার চলে যাওয়া আমার ভেতরে যে শূন্যতা রেখে গেছে, তা কখনো পূর্ণ হবে না। কিন্তু জানো, আমি তোমাকে ভালোবাসি—এ অনুভূতি আমার মধ্যে চিরকাল বেঁচে থাকবে, আমার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত!!আমি ভুল করেছি রেজা। এই ভুলের মাশুল হয়ত আমার জীবনের বিনিময়ে দিতে হবে! আমি বুঝতে পারিনি স্বর্ন খুঁজতে যেয়ে হিরে হারিয়ে ফেলছি! আমার তোমাকে একবার জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে। মনে হচ্ছে তোমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে পারলে আমার জীবনটা হয়ত আবার প্রান ফিরে পেতো৷ অথচ এজন্মে আর তোমার বক্ষে মাথা রাখার অধিকার আমার নেই। ইচ্ছে করছে সমাজের নিয়ম ভেঙে বেহায়া হয়ে তোমার বক্ষে ঝাপিয়ে পরে,চিৎকার করে কান্না করি৷
#চলবে