#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -২২
“জিয়ান নয়নার কোমড় ধরে নিজের কাছে টেনে নিলো, নয়নার এলোমেলো চুলগুলো কানের পাশে গুঁজে দিয়ে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে নয়নার দিকে তাকিয়ে আছে৷ ”
“নয়না চোখ বন্ধ করে নিলো,এভাবে কেউ তাকিয়ে থাকলে লজ্জা করে তো!”
“জিয়ান নয়নার চোখে ফুউউ দিয়ে বলে,তোমার লজ্জা আমার কাছে বিসর্জন দাও। আমি তোমাকে পুরোপুরি আমার দখলে নিতে চাই?”
“নয়না সরে যেতে চাইলো৷ কেমন এলোমেলো লাগছে তার, বুকের ভেতর কেউ তবলা বাজাচ্ছে! আশ্চর্য মানুষটা সামনে আসলেই এভাবে হৃদপিণ্ড বের হয়ে আসতে চায় কেনো৷”
‘”জিয়ান নয়নার ঠোঁটের উপর আঙ্গুল রেখে বলে,তুমি বড্ড মোহনীয়। তোমার ঠোঁট দুটো যেনো কালো জাদু জানে! বারবার আমাকে টানে৷”
“নয়না জিয়ানের বুকের কাছের শার্ট খামচে ধরে বলে,ছাড়ুন আমাকে৷”
“জিয়ান ধীরে ধীরে নয়নার ঠোঁটের দিকে নিজের ঠোঁট এগিয়ে নিতে নিতে বলে,এতো কাছে এসে ছাড়া যায় বলো?আমি এই ঠোঁটের সুধা পান করে তবেই ছাড়বো৷”
“নয়না আর কিছু বলতে পারলো না, তার আগেই জিয়ান নয়নার ঠোঁট দুটো দখল করে নিলো।”
“নয়না হুট করে জিয়ানকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরে গেলো৷”
“প্লিজ ডোন্ট লিভ, আই নিড ইউর লিপস।”
“নয়না হাসছে কি মনোমুগ্ধকর সে হাসি!”
“জিয়ান দ্রুত উঠে বসলো,সামনে তাকিয়ে দেখে পর্দা নড়ছে। রুম জুড়ে কি ভিষণ শূন্যতা বিরাজ করছে। সাইড টেবিল থেকে ওয়াটারপট নিয়ে ঢকঢক করে পানি পান করলো। অস্বস্তি হচ্ছে!নয়না নেই? নয়না এখানে কিভাবে আসবে? তারমানে স্বপ্ন ছিলো? ঘড়ি বের করে টাইম দেখলো। এখনো আরো দু’ঘন্টা রাত বাকি। বারান্দায় এসে ইজি চেয়ারে বসবে ভেবে বাহিরে আসলো। পুরো বারান্দা সাদা বরফে ঢাকা৷ দরজা বন্ধ করে রুমে চলে আসলো৷ নিজের ব্যাগ থেকে নয়নার বুকসেল্ফ থেকে চুরি করে আনা বইটা বের করলো৷ তোমার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম বলে,বইয়ের নামটা ঠিক পছন্দ হলো না জিয়ানের! মনে মনে ভাবলো নিশ্চিত বিরহের গল্প নাহহ এখন তার বিরহ বিলাস করার ইচ্ছে নেই৷ আবার শুয়ে ঘুমানোর বৃথা চেষ্টা করতে লাগলো৷
🌿
নয়না বারান্দায় বসে পড়ছিলো। হঠাৎ খেয়াল করলো তাদের বাসায় একটা প্রাইভেট কার ঢুকছে৷ সূচনা এসে বলে,এবার তোকে নিয়ে যাবে দেখিস৷ তারপর সবার আদর আমি একা খাবো।
“এই তোকে না কতবার বলেছি আমাকে তুই করে বলবি না৷”
“বলবো তোকে আমি তুই করে বলবো৷ নয়না, টয়না গান কেউ কয় না৷”
“সূচনা তোকে আমি ছাড়বো না। বলে নয়না সূচনার পেছনে ছুটতে লাগে।”
“হঠাৎ থমকে যেয়ে বলে, আপনি? নয়না নিজের দিকে তাকিয়ে একছুটে নিজের রুমে চলে গেলো৷ নয়না প্লাজু আর টিশার্ট পরা। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,ছিহহহ নয়না ছিহহহ শ্বাশুড়ির সামনে মানসম্মান হারালি!দ্রুত একটা ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। ড্রেস চেঞ্জ করে, জিয়ানকে কল করে৷ সাথে সাথে ওপাশ থেকে রিসিভ।
“মিস্টার প্লেন ড্রাইভার আপনি ভারী বজ্জাত তো! একবার বলবেন তো নকল শ্বাশুড়ি ধুর মানে আপনার মা আমাদের বাসায় আসছে৷”
“ডার্লিং আমি তো নিজেও জানিনা৷ তো তুমি তার সাথে কথা না বলে আমাকে কেন কল করছো!”
“বাসায় তো কাজের বেটি রহিমা সেজে থাকি, সে অবস্থায় শ্বাশুড়ির সামনে যাওয়া যায়?”
“এখন নায়িকা ক্যাটরিনা সেজে দ্রুত যাও৷”
“নয়না কল কেটে দিয়ে মাথায় সুন্দর করে ওড়না দিয়ে বসার রুমে গেলো৷ নিলুফা বেগমকে সালাম দিলো, আসসালামু আলাইকুম আন্টি।
‘নিলুফা বেগম নয়নার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন৷ তাড়াহুড়ো করে জামা উল্টো পরে আসছে৷ নয়নাকে ডেকে নিজের পাশে বসালেন৷ জাহানারা বেগম নয়নার দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করছেন৷ কিন্তু নয়না কিছুই বুঝতে পারছে না৷
“কেমন আছো?”
“আলহামদুলিল্লাহ। আপনি?”
“ভালো আছি। তোমাকে নিতে এসেছি যাবে তো আমার সাথে?”
“নয়না চুপ করে রইলো। জিয়ান যাওয়ার সময় বলে গেছে পরিক্ষা শেষ না হতে এ বাসা ছেড়ে যেতে মানা৷”
“কি হলো বলো?”
“জাহানারা বেগম বললেন ও কি বলবে আপা!আমি চাইছিলাম পরিক্ষা শেষ করে পাঠাতে। আপনাদের আপত্তি না থাকলে থাকুক৷”
‘”আচ্ছা ঠিক আছে। তবে পরিক্ষার পর কিন্তু আমাদের বাড়ির লক্ষী আমরা নিয়ে যাবো।”
“এখন তো মেয়ে আপনাদেরই আমাদের বাসার তো কয়েকদিনের মেহমান।*
“নয়না ফট করে বলে,ফেললো থাকবো না তোমাদের বাসায় মেহমান কি একমাস থাকে নাকি! বলেই গাল ফুলিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো৷ মায়ের কথায় রাগ হয়েছে ভিষন!”
“নয়না চলে যেতেই জাহানারা বেগম বলেন,কিছু মনে করবেন না আপা, মেয়েটার বয়স কম তো তাই। আস্তেধীরে বুঝে যাবে সব৷”
‘নাহহ আমি কিছু মনে করিনি। বড্ড মিষ্টি আপনার মেয়েটা৷
“সুচনা কোমড়ে হাত দিয়ে বলে,তুমি কে গো?”
“জাহানারা বেগম বলেন,সূচনা এভাবে কেউ কথা বলে?উনি তোমার আন্টি সালাম করো।”
‘সূচনা দৌঁড়ে নিজের বাসায় চলে গেলো৷
“আমার ছোট জা’য়ের মেয়ে।”
“নীলাঞ্জনার বোন?”
“হ্যা।”
“নয়না রুমে এসে পায়চারি করতে লাগলো, এমা! জামা তো উল্টো! শ্বাশুড়ি সামনে সম্মান আর থাকলোই না!
🌿
অনিকেত হসপিটাল থেকে বের হয়েছে রাত এগারোটায়৷ আজ তার একটা ওটি ছিলো৷ বের হয়ে রেস্টুরেন্টে রাতের ডিনার সেরে লং ড্রাইভে বের হয়েছে, নিজেই ড্রাইভিং করছে আর গানের তালে মাথা নাড়াচ্ছে৷ একা জীবনে অনিকেতের সঙ্গী বলতে তিন বন্ধু ছাড়া কেউ নেই। হঠাৎ কোথা থেকে এক মেয়ে এসে গাড়ির সামনে পরলো,অনিকেত দ্রুত হার্ড ব্রেক করলো। গাড়ি থেকে বের হয়ে বলে,”মরার জন্য আমার গাড়ি পেলেন? আমার এইটুকু জীবন এখনো বিয়ে করিনি,বৌকে আদর করিনি একটা প্রেমও করিনি আমাকে কেনো ফাঁসাচ্ছেন!”
“হ্যালো মিস্টার আমি মরতে এসেছি সেটা কখন বললাম?”
“তো আমার গাড়ি নিচে কি হাডুডু খেলতে এসেছেন?”
“নাহহ চার ছক্কা খেলতে এসেছি, খেলবেন আমার সাথে?”
“মেয়েদের সাথে ব্যাটে বলে ঠিক ম্যাচ করবে না৷ সো আমার রাস্তা ছাড়ুন।”
“আমি বৌ খুঁজতে ব্যস্ত, আহারে আহারে কোথায় পাবো তাহারে? যে রাখিবে আমারে তাহার আঁচলের তলে!”
“সায়না লেহেঙ্গা উঁচু করে ধরে বলে,একদম চুপ করুন মাথায় সমস্যা আছে নাকি আপনার! ওয়েট আপনাকে চেনাচেনা লাগছে কোথায় দেখেছি বলেন তো?
‘আমার আপনাকে চেনা চেনা লাগছে না৷ সো টাটা৷
“আপনি আমাকে ফেলে চলে গেলে চিৎকার করে মানুষ জড়ো করে গণধোলাই খাইয়ে হাত পা ভেঙে দেবো।”
“এই না না এই কাজ করবেন না প্লিজ আমি এখনো বিয়ে করিনি৷”
“তাহলে আমাকে একটু হেল্প করুন। গাড়িতে আসুন বলছি৷”
“ছিহহহ আপনি যা ভাবছেন আমি ওই টাইপের ছেলে না৷ আমি আমার লজ্জার হেফাজত করছি বৌয়ের জন্য প্লিজ টাকা লাগলে নিন আমার ইজ্জতে হাত দিবেন না।”
‘চুপ একদম চুপ! আমাকে দেখে আপনার ওরকম মেয়ে মনে হয়? আমি একজনকে ভালোবাসি কিন্তু আমার পরিবার মিথ্যে বলে আমাকে অন্য কারো কাছে বিয়ে দিতে চাইছে তাই বাসা থেকে পালিয়ে এসেছি৷ আপনি আমাকে আমার প্রেমিকের বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দিন৷
‘অনিকেত বুকে হাত দিয়ে বলে,আহহহ বুকে বড্ড ব্যথা পেলুম। আমার হবু বৌটা যে কেনো আমার কাছে আসছে না!
‘আমাকে হেল্প করুন আপনাকে একটা হাফ মেন্টাল বৌ খুঁজে দেবো।
‘আসুন গাড়িতে বসে আমাকে ঠিকানা দিন৷
🌿
লাবিব ঘুম থেকে উঠে দেখে নীলাঞ্জনা তার পাশে নেই! ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে নিচে এসেও নীলাঞ্জনাকে দেখতে পেলো না!
‘আম্মু নীলাঞ্জনাকে দেখেছো?
‘নাহহ সকাল থেকে তো একবারও আমার নজরে পরেনি।
‘লাবীব পুরো বাসায় খুঁজেও পেলো না নীলাঞ্জনাকে৷ গেটের সামনে এসে দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করতেই দারোয়ান বলল, ম্যাডাম তো খুব ভোরেই বের হয়ে গেছেন৷
‘বের হয়ে গেছে মানে! কোথায় গেছে?
‘তা তো জানি না স্যার।
‘লাবীব নিজের মোবাইল বের করে নীলাঞ্জনাকে কল করলো, নিজেই বলে উঠলো উফফ সিট। মোবাইল তো আমি ভেঙে ফেলেছি!
🌿জাহিন ম্যারিনকো নিয়ে ব্যস্ত এতো মেয়ে তাদের দিকে কোন নজর নেই জাহিনের৷ মেয়েদের তার এক্সট্রা প্যারা মনে হয়! একবার তার মায়ের সাথে শপিংয়ে যেয়ে বুঝেছে বিয়ে শাদী তার কম্য নয়৷
‘মান্নাত ইন্জয় করছিলো বেশ, এতোদিন পর নিজেকে মুক্ত পাখি মনে হচ্ছে।
‘অন্তর জাহিনের সামনে এসে বলে,এতোগুলা মেয়ে চোখেন সামনে অথচ আমারা সিঙ্গেল এমন কেন! ভাই আমারা কি একটা মেয়ে পাবো না!
‘চুপ কর তোর জন্য পার্টি ক্যানসেল করে এখানে এসে বোরিং হচ্ছি।
‘এক কাজ কর তুই তো খুব ভালো গাইতে পারিস আমি গিটার এনে রেখেছি একটা গান শুনিয়ে সবাইকে ঘায়েল করে দে।
‘যাহহহ এনাউন্সমেন্ট কর আমি গাইবো৷
‘ অন্তর এনাউন্সমেন্ট করতেই সবাই স্থীর হলো৷ সবার দৃষ্টি পরলো হ্যান্ডসাম এক ছেলের উপর যার হাতে গিটার৷ পরনে ব্ল্যাক শার্ট ব্ল্যাক ব্লেজার। স্পাইক করা চুল, হাতে শোভা পাচ্ছে ব্র্যান্ডের ওয়াচ। জাহিন গাওয়া শুরু করলো,
Milgaye jo chora chori
Hui masti thodi thodi
Bas pyaar ka naam na lena
I hate love storys
Koi aas paas ho
Samjhe jo dil ki baat ko
Soche na aaj yaar voh
Kal ki baatein
Pal do pal ka saath ho
Phir na haaton mein haath ho
Bhule naa yaad aayein
Phir beeti raatein
Aankho se kehke yeh
Sapnaa gaya hai
Subha ko jaage toh
Raasta naya
Milgaye jo chora chori
Hui masti thodi thodi
Bas pyaar ka naam na lena
I hate love storys
সবাই গানের তালে নাচচ্ছে। মান্নাত ব্যস্ত ভিডিও করতে।
জাহিন এই প্রথমবার দৃষ্টি দিলো মান্নাতের উপর৷
‘মান্নাতের সেদিকে খেয়াল নেই মান্নাত ব্যস্ত ভিডিও করতে৷ হঠাৎ ভিডিও থামিয়ে দৃষ্টি স্থীর করলো৷ প্রথম বারের মত চার চোখ এক হলো।
#চলবে