অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-২১

0
101

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -২১
“আপনি দেখতে অনেক সুন্দর, আপনার হ্যাসবেন্ড অনেক লাকি।”
“মান্নাত ভ্রু কুঁচকে বলে,ইস কিউজ মি! আপনার আমাকে দেখে বিবাহিতা মনে হচ্ছে?”
“স্যরি আপনার বয়ফ্রেন্ড লাকি।”
“আমার কোন বয়ফ্রেন্ড নেই।”
“অন্তর একটু দূরে সরে বলে,এটাই জানার ছিলো বিউটিফুল লেডি।”
“মান্নাত খেয়াল করতেই দেখে এটাতো সেই ছেলেটা যে তাকে বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে! মনে মনে বলে,আমাকে চিনতে পারেনি! চিনতে পারার কথাও না৷”
“অন্তর আর একটু সামনে এসে বলে,ভালো করে দেখে নিন আমি কিন্তু পিউর সিঙ্গেল।”
“আপনার ফ্লার্টিং স্কিল একদম জঘন্য। এভাবে ট্রাই করলে আগামী বছরও সিঙ্গেল থাকবেন। মান্নাত সরে আসলো৷ রিতুর কাছে এসে বলে,এই রিতু ওই ছেলেটা কে রে?
“এটা আমার ভাই৷ পছন্দ হয়েছে তোর? পছন্দ হলে বল তোর সেটিং করিয়ে দেই। ”
“চুপ কর। তুই কেক কাটবি কখন? আর কেউ আসার বাকি আছে?”
“হুম ভাইয়ার স্পেশাল ফ্রেন্ড জাহিন চৌধুরী আসলেই কেক কাটবো৷”

মান্নাত ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য নিচে আসছিলো, হঠাৎ করে চিৎকার দিয়ে বলে কে আছো বাঁচাও আমাকে৷ জাহিন দ্রুত মান্নাতের মুখ চেপে ধরে বলে,হোয়াই?
“মান্নাত চোখ বন্ধ করে উমমম উমম করছে।”
“জাহিন আস্তে করে বলল,হাত সরালে চিৎকার দেবে নাতো?”
“মান্নাত মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো৷”
“জাহিন নিজের হাত মান্নাতের মুখের উপর থেকে সরিয়ে নিলো৷ সিঁড়ির লাইট অফ সম্ভবত কারেন্ট চলে গেছে তাই কেউ কাউকে দেখতে পাচ্ছে না।
“মান্নাত ভয়ে ভয়ে বলে,এটাকে সরান প্লিজ আমি বেড়াল ভয় পাই।”
“ম্যারিনো এদিকে আসো বাচ্চা৷ কাম বেবি কাম কাম।”
‘ম্যারিনো চুপটি করে জিহানের কাছে চলে গেলো। অন্ধকারে ম্যারিনোর চোখ দেখে ভয় পেয়েছিল মান্নাত। মান্নাত সাইড ঘেঁষে চলে যেতে নিলে তার ওড়নায় টান খায়। পেছনে না তাকিয়ে বলে,একদম অসভ্যতা করার চেষ্টা করবেন না আমি কিন্তু চিৎকার করে মানুষ জড়ো করবো।

“ও হ্যালো জাহিন চৌধুরী কোন মেয়েকে পাত্তা দেয় না। উল্টো মেয়েরা তার জন্য পাগল।”

ততক্ষণে কারেন্ট চলে এসেছে। মান্নাত সামনে তাকিয়ে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে জাহিনের দিকে। উফফ ব্ল্যাক ব্লেজার, কি হ্যান্ডসাম লাগছে।
এরমধ্যেই ম্যারিনো মিউ মিউ করতে লাগলো। মান্নাত তাকিয়ে দেখে ম্যারিনোর পায়ের নিচে তার ওড়না। মান্নাত চট করে জাহিনের পেছনে দাঁড়িয়ে জাহিনের ব্লেজার আঁকড়ে ধরে বলে,প্লিজ ওকে তাড়িয়ে দিন৷

“ও আমার সঙ্গী ম্যারিনো। কোথাও ভ্রমণে গেলে ওকে ছাড়ি না আর আপনি বলছেন ওকে তাড়িয়ে দিতে? জাহিন ম্যারিনোকে কোলে তুলে নিয়ে সামনে হাটা শুরু করলো।”
“মান্নাত বুকে হাত রেখে বলে, আমি তোমার প্রেমে ডুবে যাচ্ছি। ঠিক যেভাবে চায়ের কাপে ডুবে যায় বিস্কিট! সেই বিস্কিট যেভাবে বিলিন হয়ে যায় আমিও ঠিক সেভাবেই তোমাতে বিলিন হতো চাই, এরপর শত চেষ্টা করেও আমাকে কেউ তোমার থেকে আলাদা করতে পারবে না।কিন্তু তোমার বিড়াল এটাকে কিভাবে মেন নিবো!

🌿

নয়না পড়তে বসেছে বেশ কিছু সময় মনোযোগ দিয়ে পড়লো। এরপর মোবাইল নিয়ে তার ফ্রেন্ড তুষিকে কল করলো। ওপাশ থেকে আসলো, দ্যা নাম্বার ইজ বিজি নাউ৷ পরপর বেশ কয়েকবার কল করলো। সেম অবস্থা! এই মেয়ে রাত এগারোটায় কার সাথে এতো কথা বলতে ব্যস্ত?
নয়না ফোন নিয়ে ভাবলো জিয়ানকে কল করবে কিন্তু এই রাতে কল করলে নিশ্চিত এই লোক বলবে, কতবার বলবো আমাকে কল না করে পড়তে বসো? আমাকে ডিস্টার্ব করবে না আমার কাল ফ্লাইট আছে। নয়না আবার বসলো ম্যাথ নিয়ে। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো৷ বা’হাত দিয়ে ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরে বলে,তোর এতো রাতে কিসের পিরিত! তুষি ভুসি তোরে একদম ভাসিয়ে দেবো৷ পিরিত এক্সামের পর করতে পারবি না! এরপরে এক্সাম হলে যদি বলিস,নয়না আমাকে একটু দেখা শুধু পাস নাম্বার উঠিয়ে দে। তাহলে তোর বয়ফ্রেন্ডের কোলে নিয়ে ফেলবো তোকে৷

“এরজন্যই বলি তুমি এতো সাড়ে আঠারো হলে কি করে?”
“নয়না ফোনটা সামনে নিয়ে এসে বলে,আপনি?নাম্বারে কিভাবে কল করলেন?”
“ও হ্যালো নাম্বারে কল করা যায় না সেটা কে বলল?তোমার ডাটা অফ তাই নাম্বারে কল করলাম।”
“আগে এটা বলুন সাড়ে আঠারো কেন বললেন আমাকে?”
“তোমার এজের মেয়েরা প্রেমও করে!”
“আমার এজের মেয়েরা বাচ্চা পয়দা করে সংসারও করে।”
“লাইনে আসো, বলেই জিয়ান কল কেটে দিলো। ঘুম থেকে উঠে ভাবলো নয়নাকে একটা কল করা দরকার। কল করতে যেয়ে দেখে ডাটা অফ তাই নাম্বারে কল করলো৷
‘নয়না টিশার্ট আর প্লাজু পরা চুলগুলো সব এলোমেলো। একটা ওড়না প্যাচিয়ে ডাটা অন করলো।
“জিয়ান কল রিসিভ করে কফি মগে চুমুক দিতে দিতে বলে,এতো সময় লাগে ডাটা অন করতে?”
“নয়না চুপ করে রইলো৷”
“জিয়ান ভালো করে নয়নার দিকে লক্ষ্য করলো।এভাবে নয়নাকে আরো সুন্দর লাগছে৷ বলা যায় নয়না ন্যাচারাল বিউটি। এমন প্যাঁচার মত মুখ করে বসে আছো কেন?”
“আমার না পড়ালেখা ভাল্লাগে না। এতো পড়ে হবে টা কি আপনি বলুন তো? এরচেয়ে বিয়ে করে সন্তান আর সংসার করা সহজ৷ বাবা মা বোঝে না৷”
“জিয়ান হেসে বলে,ওরে বুড়িরে বয়স এখনো ষোল পার করতে পারলো না সন্তান, সংসারো চলে গেছে।”
“আপনার বয়স কত সেটা জানেন তো নাকি! নিজে বুইড়া আর কচি আমপাতার মত মেয়েকে বুড়ি বলে!শুনুন আমি যখন আমি ভার্সিটিতে ভর্তি হবো কত সিনিয়ররা লাইন মারবে। আর আপনার তখন চুল পেঁকে যাবে।”
“মোটেই না তখন মেয়েরা আমাকে আরো বেশি পাত্তা দেবে। দেখো না ইদানীং মেয়েদের সুগার ড্যাডি পছন্দ।”
‘আচ্ছা প্রেমে পড়ার প্রথম ডেফিনেশন কি?”
‘প্রেমে পড়ার আবার ডেফিনেশন থাকে?”
“প্রেম, মোহ, ভালোবাসা এই তিনটা ভিন্ন জিনিস আপনাকে বুঝতে হবে আপনি কোন স্তরে আছেন।”
“বেশ ইন্টারেস্টিং কথা বললে তো! আচ্ছা আমাকে বোঝাও তো এই তিনটার ভিন্নতা৷”
“মোহ” সাময়িক আকর্ষণ আপনি কারো রুপের মোহে আটকে পড়তে পারেন অথবা কথার মোহে অথবা তার ব্যাক্তিত্বের মোহে। তবে মোহ একদিন ঠিক কেটে যায়।”
“তারপর,”
“প্রেম হলো সবচেয়ে সুন্দর অনূভুতি। প্রেমে পড়ার মূহুর্তগুলো রঙিন ফানুসের মত। আপনি এমন ভাবে প্রেম উপভোগ করবেন মনে হবে জীবনে প্রেম ছাড়া সব কিছু পানসে৷ প্রেমে না পড়লে মানুষ হয়ত জীবনের স্বাদ উপভোগ করতে পারে না।”
“ইমপ্রেসিভ! এরপর ভালোবাসার ব্যখ্যাটা কি?”
“ভালোবাসা হলো বিরহ৷”
“বিরহ কেনো?”
“যখন আমরা প্রেমে পড়ি তা খুব কম সময় স্থায়ী হয়।তবে আপনি যদি কাউকে একবার মন থেকে ভালোবাসেন তাকে কখনো ভুলতে পারবেন না, ঘৃনা করতে পারবেন না, অবহেলা করতে পারবেন না। সে আপনাকে সর্বোচ্চ কষ্ট দেয়ার পরেও আপনি বারবার তার কাছে ফিরে যাবেন৷ বিচ্ছেদ হলেও সে আমৃত্যু আপনার হৃদয়ে থেকে যাবে৷ আপনি চাইলেও তার চিহ্ন মুছে দিতে পারবেন না। ভালোবাসার পূর্নতা না পেলে আজীবন মেয়াদি বিরহ নিয়ে বাঁচতে হবে আপনাকে।”
“আরেহহ বাহহহ তা তুমি প্রেম ভালোবাসায় পিএইচডি প্রাপ্ত মনে হচ্ছে!”
“আমার এইটুকু জীবনে তেমন কোন ফ্রেন্ড নেই, বাহিরের জগত আমি চিনিনা। আমার সঙ্গী বলতে বই আর আম্মু।”
“তুমি এই তিনটার কোনটায় পড়েছো এখন পর্যন্ত?”
“হুম মোহে আটকেছি বিলাল আব্বাস খানের৷ প্রেম আর ভালোবাসা ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর করবো।”
“তোমাকে যতটা বাচ্চা ভেবেছি তুমি ততটা বাচ্চা নও। খুব গভীর চিন্তা ভাবনা তোমার৷ আমি সত্যি ইমপ্রেস হচ্ছি তোমার সাথে যত কথা বলছি ততই তোমাকে নতুন মনে হচ্ছে।”
“বেচারা কফিকে শাস্তি কেনো দিলেন?”
‘মানে? ”
“ও বেচারকে তো একটু পর ছুড়ে ফেলে দিবেন। শুনুন ভালোবাসলে যত্ন করতে হয়৷ যত্নে রত্ন মিলে।”
“জিয়ান অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নয়নার দিকে৷ মেয়েটা এতোটুকু বয়সে এতো গভীর চিন্তাভাবনা কি করে পোষণ করে!”
“এভাবে তাকিয়ে থাকবেন না মিস্টার ড্রাইভার।”
“নট ড্রাইভার ইট’স পাইলট।”
“ওহি ওহি। আচ্ছা আপনি কোন আকাশে উড়েন?আমার রাত কাটে, দিন কাটে আকাশের পানে চেয়ে! সে খবর কি একবারও রাখেন? নিষ্ঠুর প্লেন ড্রাইভার একবার নিচে তাকালেও পারেন!”
“আহাগো ময়নার মা’নিচে তাকালে বুঝি তোমাকে দেখা যাবে?তোমার আমার আকাশ তো ভিন্ন। এক আকাশের নিচে হলেও ট্রাই করতাম দূরবীন দিয়ে তোমাকে দেখার৷”
“আকাশ কখনো ভিন্ন হয়না মিস্টার প্লেন ড্রাইভার। আমরা একি আকাশের নিচে তবে ভিন্ন ছাদের তলায়৷ দেশ ভিন্ন হতে পারে আকাশ কিন্তু একটাই।”
“জিয়ান ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে,তোমাদের দেশে তো এখন একটা বাজে! ইশশ সময় নষ্ট করলাম তোমার! রাতে খেয়েছো সুনয়না?”
“হুম বিরিয়ানি খেয়েছি৷”
“গুড বেবি। এবার ঘুমিয়ে পরো লক্ষি বাচ্চার মত। বলেই কল কেটে দিলো৷”
“নয়নার ভিষণ রাগ হচ্ছে! এই লোকটা এমন কেন? কথা শেষ হওয়ার আগেই ধুম করে কল কেটে দেয়ার বেরাম আছে নাকি!আজাইরা লোক মনচায় দেই দুইটা কিল৷”
🌿

নীলাঞ্জনার চোখের পাতা এক হচ্ছে না।ঘন্টা খানেক সময় নিয়ে শাওয়ার নিয়েছে। হলদে রংয়ের একটা শাড়ী পরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। ল্যামপোস্টের আধো আলো তার শাড়ীতে পরতেই নিজের দৃষ্টি স্থীর করলো শাড়ির উপর, হুট করে হৃদয় কেঁপে উঠলো! চোখ থেকে নামলো অঝোর ধারায় বৃষ্টি। এই শাড়িটা জিয়ান থাকে বসন্ত উৎসবে গিফট করেছিলো। আমার হয়তো তোমাকেই ভালোবাসা উচিৎ ছিলো ভুল মানুষকে ভালোবেসে ফুলের মত জীবনটা নিজের হাতে ধ্বংস করে দিলাম! তুমি আমাকে ভুলে গেছো?তুমি না বলতে আমি কাঁদলে বা আমার মন খারাপ থাকলে তোমার মনে পৌঁছে যায় সে সংবাদ? আমার এতো কষ্ট তোমার হৃদয় স্পর্শ করেনি? তোমায় খুব সহজে পেয়েছিলাম তো তাই অবহেলায় হারিয়ে ফেলেছি৷ বুঝতেই পারিনি হিরে ছেড়ে কাঁচের টুকরো হৃদয়ে জায়গা দিয়েছি! কাঁচতো বিঁধবেই, রক্তাক্ত হবে হৃদয়। আমি তোমার কাছে কোন মুখে ক্ষমা চাইবো? একবার তোমার মুখোমুখি হতে চাই। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পুরোনো স্মৃতি ভাবছে আর নিরব অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছো। দৃষ্টি রেখেছে শূন্য আকাশের পানে৷ যেখানে ছেয়ে আছে শুভ্র কুয়াশা৷

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে