#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১৯
জিয়ান নয়নার দিকে তাকিয়ে আছে নয়না কান্না করছে৷
“এই পিচ্চি এভাবে কান্না করছো কেন!
‘নয়না নাক টেনে বলে,আমার চোখ আমার অশ্রু আমার ইচ্ছে আমি কাঁদবো।
‘এই আঠারো ঘন্টা জার্নি শেষ করে রেস্ট না নিয়ে তোমার কান্না দেখার জন্য কল করিনি।
‘তো কেটে দেন কল।
‘সত্যি কাটবো?
‘আমি তখন চিৎকার করে কাঁদবো।
‘তুমি কি ছিঁচকাঁদুনি।
‘জানেন রাতে আমি কি স্বপ্ন দেখেছি৷
‘চোখের পানি নাকের পানি মুছে জানাও তো লিটল প্রিন্সেস কি স্বপ্ন দেখলে।
‘নয়না ওড়না দিয়ে চোখ মুখ মুছে জিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,আপনি এভাবে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকলে কি করে বলবো!আমার বুঝি লজ্জা করে না?
‘জিয়ান দৃষ্টি অন্য দিকে ঘুরিয়ে বলে,এবার বলেন মহারানী।
‘দেখলাম আপনি নাকি আমার, ঠোঁটের নেশায়
মাতাল হয়ে গেছেন, আপনারর নেশা কাটাতে আমার ঠোঁট দুটো চাইছেন৷
‘জিয়ান হুট করে নয়নার দিকে তাকালো৷ দুজনের দৃষ্টি মোবাইলের স্কিনের দু’প্রান্তে থেকে স্থীর হলো একে অপরের দৃষ্টিতে।
‘কান্নার ফলে ঠোঁট দুটো হালকা ফুলে উঠে আরো আকর্ষণীয় লাগছে। নাকটা লালচে হয়ে আছে। জিয়ান অপলক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে,এমন ঠোঁট তো আফিমের চেয়ে নেশালো, মাতাল না হয়ে উপায় আছে?
‘নয়না দু’হাতে মুখ ডেকে নিলো ইশশ কি লজ্জা, কি লজ্জা এভাবে এমন স্বপ্ন কেউ কাউকে বলে! কে যানে এই ড্রাইভার কি ভাবছে!
‘লাজুকলতা.. এভাবে মুখ ঢেকে রাখলে তো তোমাকে একদম আদুরে বৌ লাগে৷
‘তো আমি কি বৌ না?
‘তুমি বৌ?তা তোমার বর কই?
‘আমার বর বিদ্যাশে।
‘জিয়ান হেসে ফেললো৷ হাতটা সরাও দেখতে দাও তোমাকে।
‘আমার লজ্জা করছে তো! এভাবে কেউ দেখতে চাইলে লজ্জা করে না বুঝি?
‘তুমি জানো আমার বয়স কত?
‘আপনার বয়স জেনে আমি কি করবো?
‘গুনে গুনে তোমার চেয়ে চৌদ্দ বছরের বড়।
‘তেরো।
‘এক যুগ বেশি কাটিয়েছি তোমার চেয়ে৷
‘এক যুগ বেশি কাটিয়ে কোন রাজ্য জয় করেছেন শুনি?
‘এখনো শিউর না তবে মনে হচ্ছে কারো মনের রাজ্য খুব তাড়াতাড়ি জয় করে নেবো।
‘নয়না মোবাইলের সামনে এসে বলে,মিস্টার প্লেন ড্রাইভার জেগে জেগে স্বপ্ন দেখতে থাকুন।
‘এই সব বাদ দাও তোমার না এক্সাম পড়ালেখা করছো না কেন।
‘আজকে থেকে করবো৷ আচ্ছা আমার পরিক্ষা সবাই আমাকে কিছু না কিছু দেবে৷ তো আপনি কিছু দিলেন না?
‘এক্সাম থাকলে কিছু দিতে হয়! আর দেইনি কে বলল?
‘এই যে আপনার চোখের সামনে বসা ষোড়শী, রূপবতী বললো।
‘রূপবতী মেয়েরা সহজ ভাবে মিথ্যা বলতে পারে৷
‘আপনাকে আমার মিথ্যাবাদী মনে হয়!
‘আরেহহ স্যরি মজা করে বলেছি৷
‘আমার চোখের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকবেন না।
‘রাতে ঠিকমত ঘুম হয়নি?সুন্দর চোখদুটোর নিচে কালসিটে দাগ বসে গেছে।
‘এসব হয়েছে আপনার জন্য মিস্টার প্লেন ড্রাইভার। যত দোষ প্লেন ড্রাইভার ঘোষ।
‘তোমার চোখের চাহনি কিন্তু সুন্দর ।
‘ তেলের দাম এতো কমে যায় নি!আপনি যেভাবে তেল দিচ্ছেন মনে হচ্ছে তেল ফ্রীতে পাওয়া যায়
‘জিয়ান চৌধুরী কাউকে তেল দেয় না।
‘নয়না কিছু বলতে যেয়েও থেমে গেলো।
‘আচ্ছা পিচ্চি এখন রাখি খেয়ে রেস্ট নেবো। আর হ্যা এখন শুধু পড়ালেখায় ফোকাস করো।
‘আমাকে কিছু কেন দিলেননা সেটার উত্তর দিন।
‘আমি এয়ারপোর্টে তখন টাকা সাধলাম নিলে না কেনো?
‘ওটা তো বেডসিটের তাই।
‘এখন কিভাবে দেবো?
‘জানিনা৷
‘আচ্ছা বাবু রাখি। গুড বায় টেক কেয়ার৷
‘জিয়ান কল কেটে দিলো৷
নয়নার মনটা উদাস হয়ে গেলো। মাত্র চল্লিশ মিনিট কথা বললো!
‘রাতে এপাশ ওপাশ করতে করতে কখন চোখ লেগেছে জানা নেই নয়নার। ঘুম ভেঙেই দেখে জিয়ানের মিসডকল। কল ব্যাক করবে তার আগেই ওপাশ থেকে কল আসে৷ কিন্তু এতোটুকু কথায় তৃষ্ণা তো মিটলো না উল্টো আরো বাড়লো।
🌿নীলাঞ্জনা তালুকদার। ওর বাবার নাম মিজান তালুকদার আর চাচার নাম মাহবুব তালুকদার। তালুকদার বাড়ির বড় মেয়ে নীলাঞ্জনা৷
‘লাবীবের কথা শুনে অবাক হলেন সৈকত সাহেব। মূহুর্তেই শান্ত স্বরে বলে,শিল্পী মেয়েটাকে তোমার সাথে নিয়ে যাও৷ ওর কি কি লাগে দেখো। নীলাঞ্জনা নাম তোমার?
‘জ্বি।
‘আজকে থেকে আমরাও তোমার আরেক বাবা মা৷
‘নীলাঞ্জনা বেশ অবাক হলো! মূহুর্তেই মানুষ চেঞ্জ হয়ে গেলো!বাপ চাচার টাকা থাকা বুঝি এতো প্রয়োজন?
‘শিল্পী বেগম আর নীলাঞ্জনা চলে যেতেই৷ সৈকত সাহেব বলেন,জীবনে এই প্রথম একটা কাজের মত কাজ করেছিস। আমার ছেলের বৌ কিনা তালুকদার বংশের মেয়ে! এবার এটাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের ব্যবসাটা আগে বাড়াতে হবে৷ সোনার ডিম পাড়া হাঁস পেয়েছি আস্তেধীরে কাজে লাগাবো।
‘বাবা ওনারা কি এই বিয়ে মেনে নিবে?
‘মেনে না নিয়ে উপায় আছে? কান টানলে মাথা এমনেই আসে। যাহহহ খাতির যত্ন কর বৌয়ের৷ বৌ তো না যেনো আলাদিনের চেরাগ।
🌿বাসায় ঢুকেই ব্যাগটা সোফায় ছুড়ে মারলো। রত্না বেগম দৌড়ে এসে বলে কি হয়েছে মান্নাত?
‘চশমাটা ছুড়ে ফেলে বলে,কি হয়নি সেটা বলো?আম্মু আর কতদিন এমন দাদিআম্মা সেজে ঘুরবো? এই ড্রেস চশমা এসব আমার সাথে যায়?
‘আমাকে কেনো বলছিস তোর বাবাকে বল৷
‘বাবা! হিটলার বলো৷ দেখো এসব আর আমাকে দিয়ে হবে না৷ কলেজে কে জোকার সেজে যায়! জানো আজকে কি হয়েছে? দানিশের মত একটা ছেলের সাথে টক্কর হয়েছে। পুরাই আগুন। হিরোর মত এসে আমাকে বাঁচিয়েছে৷
‘চুপ থাক তোর বাবা বাসায়। ছেলের কথা শুনলে তোকে আস্ত রাখবে না৷
‘খেতে দাও কিছু আর শুনো রাতে কিন্তু রিতুর বার্থডে পার্টি সো কোন না শুনবো না৷ আগেই বলে রাখি ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরবো কিন্তু।তোমার হিটলার স্বামীকে কিভাবে ম্যানেজ করবে সেটা আমি জানি না৷
‘মেয়ে আর জামাই নিয়ে রত্না বেগম প্যারায় আছেন৷ যেমন পাব ঘাড়ত্যাড়া তেমন মেয়ে। কি দরকার সরকার পক্ষের বিরুদ্ধে কেস নেয়া! এখন নিজের বৌ মেয়েকে ছদ্মবেশে থাকতে হচ্ছে।
‘জামাল সাহেব সৎ পুলিশ অফিসার৷ তবে বর্তমানে সততাও যে বিপদ ডেকে আনে সেটার প্রমান সে নিজেই৷ মন্ত্রীর ছেলেলে গ্রেফতার করেছিলো। কেস তো কোর্ট পর্যন্ত উঠেই নি উল্টো এখন পরিবার নিয়ে ঝুঁকিতে আছেন৷
‘মান্নাত শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,মিস্টার হিরো আমাকে এভাবে দেখলে নিশ্চিত ক্রাশ খেয়ে রাতে ব্রাশ করা ভুলে যেতেন৷ বাট আই লাইক ইউর এটিটিউ। উপসসস মিস্টার হিরো নামটাও তো জানিনা আপনার! হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকাতে শুকাতে বলে,আপনি এই এলাকার তাহলে ছয়মাস কই ছিলেন? একবার ও তো দেখলাম না৷ কোন ব্যাপার না নজর যখন পরেছে আপনাকে খুঁজে ঠিক বের করবোই৷ মান্নাত যা চায় তা নিজের করেই ছাড়ে। ফোনটা হাতে নিয়ে রিতুকে কল করলো।
‘কিরে আজকে নাকি আমাদের সারপ্রাইজ দিবি? তা কখন আসছিস?দাদিআম্মা?
‘সারপ্রাইজ তো দেখবিই সে-সব ছাড় আগে বল তো তোদের এলাকায় কোন ক্রাশ বয় আছে? যাকে দেখলেই ক্রাশ খাওয়া যায়?
‘হ্যা ছিলো চৌধুরী বাড়ির ছেলে আবার পাইলট যেমন দেখতে তেমন এটিটিউট। কিন্তু সে তো কয়েকদিন আগেই বিয়ে করে ফেলেছে।
‘তুই শিউর আর কোন ক্রাশবয় নেই?
‘নাহহ আমার জানামতে নেই।
‘মান্নাত কল কেটে দিয়ে বলে, ধুর ও হয়তো জানেনা৷ আবার মনে মনে বলে, ওদের এলাকা ওতো জানতো থাকলে৷ বিবাহিত ছেলের উপর কিভাবে ক্রাশ খেতে পারি! মনে হচ্ছে এবার ক্রাশ খেয়ে ব্রাশ আমার নিজের করতে হবে। এখন এসব ভাবলে হবে না মান্নাত৷ আজকে সবার হুঁশ উড়িয়ে দিতে হবে তোর৷ ড্রেস সিলেক্ট কর দেখিয়ে দে তোর আসল সুরত।
‘জামাল সাহেব চট্রগ্রাম থেকে বদলি হয়ে এখানে এসেছেন মাস ছয়েক আগে। চার রুম বিশিষ্ট একতলা বাড়িটা কিনেছেন তিনমাস ধরে৷ এখানে এসে মেয়ে বৌকে সবার নজর থেকে লুকিয়ে রাখছেন যতটা সম্ভব। পৃথিবীতে তার মেয়ে আর বৌ ছাড়া তিন কুলে কেউ নেই৷ এদের আগলে রাখার জন্য সব সেক্রিফাইস করতে রাজি। তার নিজের জীবন ঝুঁকির মধ্যে আছে৷ সে মারা গেলে কে দেখে রাখবে তার মেয়ে আর বৌ কে? এসব চিন্তা সব সময় জামাল সাহেবের মাথায় ঘুরতে থাকে।
‘রত্না বেগম এসে বলেন,বলছিলাম কি মেয়েটাতে এখানে এসে একদম ঘর কুনো হয়ে আছে৷ আজ রিতুর বার্থডে যেতে চাচ্ছে?
‘আমি দিয়ে আসবো। আমি নিয়ে আসবো তবেই যাওয়ার পারমিশন পাবে৷
🌿
নয়না সকালের নাস্তা করে এই পর্যন্ত একশবার মোবাইলের কাছে এসেছে। কিন্তু সাহস করে জিয়ানকে কল করেনি৷ মোবাইল হাতে নিয়ে গুগলে সার্চ করলো কোন মানুষকে কিভাবে চিন্তা থেকে বের করা যায়।
‘প্রথমেই লেখা তাকে নিয়ে না ভেবে মনযোগ অন্য দিকে দিতে৷
‘নয়না মোবাইল রেখে বলে,মনোযোগ যদি অন্য দিকে ঘোরাতে পারতাম তাহলে সার্চ করতাম!গুগলের মাথায় কি বুদ্ধি নেই নাকি? এসব কেমন টিপস হলো? এরচেয়ে তো আমার বান্ধবীদের মাথায় বুদ্ধি বেশি। এবার ওদের জিজ্ঞেস করে দেখি।
#চলবে৷
আসসালামু আলাইকুম।গত পর্ব যারা পড়েছেন তারাই এই পর্ব বুঝবেন৷ হুট করে মাঝখান থেকে পড়লে খাপছাড়া লাগবে। গল্পে তিনটা/চারটা কাপলকে হাইলাইট করা হবে তাই মেইন ক্যারেক্টারের পাশাপাশি তাদের ও এটেনশন দিবো। সো ইন্জয়। হ্যাপি রিডিং ❤️