#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১৬
আমার বর হ্যাসবেন্ড প্লিজ তার সাথে দেখা করতে দিন৷
‘ম্যাম আপনার বর তো হ্যাসবেন্ড হবেই। বাংলাতে বর,ইংরেজিতে হ্যাসবেন্ড৷
‘আরেহহহ আমার বর ড্রাইভার।
‘ম্যাম অযথা আমাদের সময় নষ্ট করবেন না৷ আপনার বর হ্যাসবেন্ড হোক বা ড্রাইভার আমরা আপনাকে কোন সাহায্য করতে পারবো না৷
‘জাহানারা বেগম বললেন এসব কি ভুলভাল বলছিস তুই?
‘আমার কি দোষ বলো আম্মু?এই লোক আমার মাথা খারাপ করে রেখেছে।
‘স্যরি ভাইয়া। আসলে বলতে চেয়েছিলাম আমার হ্যাসবেন্ড পাইলট। সে ফাস্ট অফিসার৷ আইমিন ক্যাপ্টেন। ওনার কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রেখে গেছেন ভুলবশত প্লিজ হেল্প করুন এগুলো তাকে পৌঁছে দিতে।
‘কোন দেশে যাবে আপনার হ্যাসবেন্ড?
‘কানাডা৷
‘ওয়েট ম্যাম। দেড় হাজার টাকা দিন।
‘ নয়না কিছু বলতে নিলে,জাহানারা বেগম নয়নার হাত টেনে ধরে। নিজের ব্যগ থেকে টাকা বের করে দেন৷
‘লোকটা একটা টোকেন দিয়ে বলে,রুম নাম্বার দশে চলে যান৷ তারা আপনাকে হেল্প করবে। ধন্যবাদ ম্যাম।
‘নয়না রুম নাম্বার খুঁজতে লাগলো হঠাৎ করে চিৎকার করে ডেকে উঠলো, মিস্টার প্লেন ড্রাইভার…..
‘অনিকেতের সাথে পুরো রাস্তা হাসিঠাট্টা করতে করতে এয়ারপোর্টে চলে আসে দু’জনেই।
‘অনিকেত জিয়ানের ব্যাগ নামিয়ে এনে বলে,তুই আমার বন্ধু এটা আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় ভাই।
‘তোর বিশ্বাস করতে হবে না।
‘ভাবির কোন বান্ধবী নাই দোস্ত?
‘এখন এসব বলার সময় শা’লা।
‘বিয়ে শাদীর ক্ষেত্রে সময় টময় হিসেব করতে নেই। যদি পেয়ে যাই মনমতো কন্যা বিয়ে করে বনবাসে যাবো।
‘,জিয়ান হেসে বলে, বিয়ে করে বনবাসে কোন দুঃখে যাবি?
‘বৌ কে নিয়ে যাবো। জানিস তো আমি আবার প্রকৃতি লাভার
বিয়ের একবছর টানা হানিমুন করবো এক দেশের জঙ্গল থেকে আরেক দেশের জঙ্গলে।
‘হানিমুন তো ভালো কথা তোর হাড্ডি অবশিষ্ট থাকলে তবেই না এক জঙ্গল ভ্রমণ শেষ করে আরেক জঙ্গলে যাবি!চুপ কর আর চল।
‘হাঁট ছিলো দুজনে। এমন সময় অনিকেত আবার বলে উঠলো,ভাই তোর বুকে ব্যথা করছে না? এতো সুন্দরী বৌ রেখে তুই কোন বুকের পাঠা নিয়া ফ্লাই করতে চলে আসলি? বৌটাকে সাথে করে নিয়ে আসলে একটা দুইটা চুম্মা খাইতি,জড়ায়া টরায়া ধরতি!বৌ কান্না করতো তুই বলতি কেঁদো না সাথী আমার, আমি তোমার আছি তোমারই থাকবো, ফিরে ফিরে তোমারই কাছে আসবো।
‘চুপ করবি!নয়তো তোর সাথে এখানেই বিদায়।
‘আচ্ছা ভাবির কোন বোন নেই?
‘আছে একটা তোর মাথার চুল সব টেনে ছিড়ে ফেলবে৷ তবে তোর জন্য ওই একপিস যথেষ্ট।
‘তো করিস না আর দেরি নাম্বার দে তাড়াতাড়ি।
‘তুই আসলেই ডাক্তার?
‘হসপিটাল আর ক্লিনিকে আমি ডাক্তার। বাহিরে আমি রোমিও কিন্তু আমার জুলিয়েটের খবর নাই৷
‘ওর বয়স আট তবে তোরে নাকানিচুবানি খাওয়াতে পারবে৷
‘একটা হৃদয় কয়বার ভেঙে দিবি বন্ধু!পাষান বন্ধু। কথা বলছিলো আর হাঁট ছিলো৷ হটাৎ কানে আসলো মিস্টার প্লেন ড্রাইভার। হুট করে পা’থামিয়ে দিয়ে সামনে চোখ বোলালো৷ নাহহ নেই তো!তাহলে কি আমি ইমাজিন করছি!ভাবনার ভেদ করে আবার কানে আসলো মিস্টার প্লেন ড্রাইভার। পেছনে ঘুরে তাকাতেই চোখ পরলো নয়নার দিকে,এক প্রকার ছুটে আসছে সে৷জিয়ান যেনো নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা৷ নিজের দু’হাত প্রসারিত করে দিয়ে বলে, নয়না। সব মানুষ তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। হুট করে দেখলে সবাই ভাববে কোন সিনেমার শুটিং চলছে এখানে,নায়ক নায়িকার জন্য দু’হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে আছে, আর নায়িকা দৌড়ে নায়কের কাছে আসছে!
‘অনিকেত ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করে বলে,এটা তো ভাবি?তুই বললি অস্থায়ী এখন দেখি অন্য সিন? অনিকেতের কথা জেনো জিয়ানের কর্নে পৌঁছায়নি। সে তাকিয়ে আছে নয়নার দিকে।
‘নয়না জিয়ানের সামনে এসে থামলো, জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিচ্ছে।
‘জিয়ান নিজের প্রসারিত হাত দুটো সরিয়ে নিলো।আচ্ছা সে কি চাইছিলো নয়না তাকে জড়িয়ে ধরুক! কেনো তার মন এটা চাইলো?যাকে আপন করতে পারবো না তাকে কেনো বক্ষ টানছে? কেনো মনে হচ্ছে এইভাবে ছুটে এসে আমার বক্ষে আঁছড়ে পরুক!
‘প্লেন ড্রাইভার আপনি লোকটা মোটেও সুবিধার নন। রাতেই বললেন,নাম্বার লাগবে? নাম্বার না দিয়ে চলে যাচ্ছেন?
‘সিরিয়াসলি সুনয়না তুমি একটা নাম্বারের জন্য এভাবে ছুটে এসেছো? তোমার মাথার স্ক্রু আছে নাকি পরে গেছে৷
‘চুপ করুন সব সময় জটিল জটিল কথা! এতো কষ্ট করে এসেছি কই কোলে নিবে চুমু খাবে তা-না উল্টো বকড় বকড় করছেন?
‘পাবলিক প্লেসে তোমাকে কোলে নিয়ে চুমু খাবো?তুমি এটা চাইছো? তুমি চাইলে আমার কোন সমস্যা নেই।
‘অনিকেত কাশি দিয়ে বলে,ভাই তুই থাম আমার বুকে ব্যথা উঠতেছে।
‘আপনি এখানে কি করছেন! দ্রুত হসপিটালে যান। অসুস্থ মানুষ এয়ারপোর্টে না হসপিটালে থাকে।
‘নয়না ও আমার বন্ধু অনিকেত। ও পেশায় ডাক্তার কার্ডিওলজিস্ট। মজা করে বলেছে। এবার বলো কেনো এসেছো?
‘বাসায় বসে আপনার বিরহে পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম৷ তাই ভাবলাম পাগল না হয়ে আপনাকে কয়েকটা কিসমিস দিয়ে যাই।
‘এখানে কেনো বেবি? খোলা ময়দানে প্রেম জমে নাকি? প্রেম জমে আড়ালে।
‘আহারে মিস্টার রোমিও। এই নিন আপনার কিসমিস।
‘ধন্যবাদ প্রিয়া।
‘ওয়েলকাম প্রিয়।
‘জিয়ান ওয়ালেট থেকে তিনহাজার টাকা বের করে নয়নার হাতে গুঁজে দিয়ে বলে, বেড সিটের দাম৷ আমি আবার এতো উদার না।
‘নয়না জিয়ানের জিন্সের পকেটে টাকাটা ঢুকিয়ে দিয়ে বলে,দাগ চলে গেছে তাই টাকা লাগবে না৷
‘তোমার সাথে কে এসেছে?
‘আম্মু এসেছে।
‘উনি কোথায়?
‘বসে আছে।
‘আচ্ছা আমার হাতে একদম সময় নেই। আমি আসি৷
‘শুনুন
‘বলো।
‘এভাবে বলো, বললে কি বলবে হু! মনে হচ্ছে আমার উপর এক্ষুনি পাহাড় ছুড়ে মারবেন৷
‘সুনয়না এখন মজা করার সময় না।
‘অনিকেত হেসে বলে,এতো কিউট একটা বচ্চা বৌয়ের মিষ্টি কথা তোর ভালো লাগছে না!
‘আপনি হার্টের ডাক্তার তাইতো?এককাজ করতে পারবেন?
‘কি কাজ লিটল ভাবি।
‘এই ড্রাইভার হার্টের সার্জারী করে সব বদ রাগ জেদগুলো বের করে দিবেন৷
‘অনিকেত জিয়ানের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলে সরে গেলো।
‘আপনি এভাবে চোখ রাঙিয়ে ডাক্তার বাবুকে সরিয়ে দিলেন কেন? আমি তো আপনার চোখ রাঙানোকে ভয় পাই না৷
‘নয়নার কথার উত্তর না দিয়ে নয়নার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিজের নাম্বার সেভ করে দিলো৷ ফোনটা নয়নার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,পড়ালেখা করো ক্যারিয়ার গড়ো।
‘আমার পড়ালেখায় হলো বিয়ে আর ক্যারিয়ার হলো সংসার।
এতো কষ্ট করে পড়ালেখা না করে বরের সাথে ঝামেলা করবো। উল্টোপাল্টা কাজ করে শ্বাশুড়ির বকা খাবো৷ এই হলো আমার মূল ক্যারিয়ার৷ জামাই ইনকাম করবে আমি তার মাথায় চড়ে দুনিয়া ভ্রমণ করবো৷
‘এসব উল্টোপাল্টা চিন্তা বাদ দিয়ে পড়ালেখায় মনোযোগী হও। আমার হাতে সময় নেই।
‘আহা আমার কথাটা তো শুনবেন।
‘এখন বাচ্চামো করার সময় না সুনয়না।
‘আমার আপনাকে কিছু বলার আছে।
জিয়ান কিছু বলবে তার আগেই এনাউন্সমেন্ট হলো, প্রিয় যাত্রীরা Ac. 87 টরন্টোগামী ফ্লাইটের যাত্রীদের গেইট নাম্বার ২২ এর দিকে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।
‘জিয়ান নয়নার দিকে তাকিয়ে বলে,কিছু কথা না বলা থাকুক। কথাটা শেষ করেই দ্রুত সামনের দিকে পা’ বাড়ালো।
জিয়ানের ইচ্ছে করছে নয়নার কথাটা শুনতে কিন্তু তার গন্তব্য সামনে এই মূহুর্তে পিছু ফেরা সম্ভব না। তাছাড়া সময় একদম কম।
‘নয়না এক ভাবেই তাকিয়ে আছে জিয়ানের চলে যাওয়ার দিকে। মনে মনে বলছে,আমার কথাটা শুনলেন না! কথার ভাজে কথা জমতে থাকুক৷ আপনি ভালো থাকুন সব সময়। নয়না ততক্ষণ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে ছিলো যতক্ষণ জিয়ানকে দেখা যাচ্ছিলো।
‘জাহানারা বেগম এসে নয়নার হাত ধরে বলে,ওতে কাজে যাচ্ছে এটাই ওর পেশা। ফিরে চল। সময় হলে আবার তোর কাছেই আসবে।
‘জিয়ান প্লেনে নিজের সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে। কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে,নিজের মোবাইল বের করে নয়নার আজকে সকালে লুকিয়ে তোলা পিকটার দিকে তাকিয়ে বলে,”তোমার চাওয়াটা আমি পূরন করতে পারলাম না।
আমার জীবন তোমার নামে বিলীন করতে পারলাম না,
ধীরে ধীরে জ্বলছি,আগুনকে হৃদয় থেকে নেভাতে পারছি না!
‘বড্ড অন্যায় করে ফেলেছি তোমার সাথে। নিজেকে কখন ক্ষমা করতে পারবো না। “তুমি সদ্য ফোটা কলি আমি ঝড়ে যাওয়া ফুল, কিভাবে খুঁজবো তোমাতে কুল!
‘ভিষন ভিষণ অভিমান জমলো নয়নার৷ তার কথাটা না শুনে চলে গেলো! লোকটা একটুও ভালো না৷ আজ থেকে তার নাম নিষ্ঠুর প্লেন ড্রাইভার। মনে মনে বকবক করতে ব্যস্ত নয়না। জাহানারা বেগম বললেন, এতো কি ভাবছিস?এসব ভাবনা বাদ দিয়ে এবার বইখাতার চিন্তা কর।এখন রেজাল্ট খারাপ হলে শ্বশুর বাড়ির মানুষ ও তোকে পঁচাবে।
🌿
লাবিব বাসায় এসে ঢুকতেই। সৈকত সাহেব (লাবিবের বাবা) বলেন,তুই আমার বাসায় কেনো এসেছিস?
‘বাবা স্যরি।কিন্তু দোষটা আমার একার না৷ আমি তোমাদের বলেছিলাম তোমরা রাজি হওনি তাই এই পথ বেঁছে নিতে হলো।
‘সৈকত সাহেব লাবিবের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বলে,তা তোমার বাবা মা তোমাকে এই শিক্ষা দিয়েছে? বড়লোক ছেলে পেয়েই গলায় ঝুলে পরলে? কোন ভদ্র পরিবারের মেয়ে একটা ছেলের সাথে পালিয়ে যায় শুনি!
নীলাঞ্জনা নিচের দিকে তাকিয়ে নিরব অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে। কত আদরের মেয়ে ছিলো সে। মুখ ফুটে বলার আগেই সব হাজির হয়ে যেতো।এতো বিলাসী জীবন ছিলো তার৷ আজ তার একটা ভুল তাকে কোথায় এনে দাঁড় করিয়েছে!
‘শিল্পি বেগম এসে বলে,(লাবিবের মা) মেয়েটার কি দোষ বলো? তোমার ছেলে প্রশ্রয় দিয়েছে বলেই না এসেছে সব ছেড়ে।
‘একদম চুপ করো তুমি। আমি কি ফিডার খাওয়া বাচ্চা? মেয়েরা সায় না দিলে কোন ছেলের সাহস হয়! আমি নিশ্চিত কোন নিম্ন পরিবারের মেয়ে এরজন্য লোভে পরে আমার ছেলেকে রুপের জ্বালে ফাঁসিয়েছে। এই মেয়ে বংশ পরিচয় কি তোমার? তা আদৌও বংশ পরিচয় আছে তো নাকি ছাপড়ি?
#চলবে