অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-১১

0
6

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১১
আপনার কি আমার কথা মনে পড়বে না?
‘হয়তো পড়তেও পারে আবার নাও পড়তে পারে৷
‘আচ্ছা আমি বেশী সুন্দরী নাকি আপনার প্লেনের এয়ারহোস্টরা?
‘কোনটা বললে খুশি হবে?
‘নয়না জিয়ানের পাশে এসে বসে বলে,সত্যি টা।
‘ওরা ফরেনার তাই সুন্দর বললে ওরা তো অনেক সুন্দরী।
‘নয়না খানিকটা গাল ফুলিয়ে নিলো।
‘তবে বাঙালি নারীদের সৌন্দর্যের কাছে ওসব সুন্দরী কিছুই না।
‘নয়না উৎসাহ নিয়ে বলে সত্যি!
‘হু সত্যি আমার দেশের নারীদের তুলনা হয় না।
‘জানেন নীলাঞ্জনা আপি একটা ফরেনার ছেলের সাথে রিলেশন করেছিলো৷ তারপর কি হইছে জানেন?
‘জিয়ানের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো হাতের সামনে থাকা কাঁচের গ্লাসটা সর্বশক্তি দিয়ে চেপে ধরলো৷
‘নয়না ভয় পেয়ে গেলো। জিয়ানের চোখ লাল হয়ে গেছে গ্লাসটা যেকোন সময় ভেঙে কাঁচের টুকরো হাতে ঢুকে যেতে পারে। নয়না কান্না জড়িত কন্ঠে বলে,আমার ভুল হয়ে গেছে কখন এই নাম আপনার সামনে নেবো না৷ প্লিজ গ্লাসটা ছেড়েদিন আপনার হাত কেটে যাবে।নয়নার কথা শেষ হওয়ার আগেই শব্দ করে গ্লাসটা ভেঙে গেলো৷ সাদা ফ্লোরে মূহুর্তে ছড়িয়ে পরতে লাগলো টকটকে লাল তাজা রক্ত।
‘নয়না জিয়ানের হাতটা ধরে বলে,ইশশ কতখানি কেটে গেছে এমন রাগ কারো কিভাবে থাকতে পারে?
‘জিয়ান নয়নার বাহু চেপে ধরে দু হাত দিয়ে নিজের কাছে এনে বলে,ঘৃণা করি আমি এই নামটাকে কেনো বললে!আমি জিয়ান রেজা চৌধুরী যতদিন বেঁচে আছি এই নাম আমার সামনে নেবে না৷
‘ছাড়ুন আমার লাগছে।
‘জিয়ান নয়নাকে আরো কাছে টেনে নিলো৷ নয়না ভয়ে চোখ বন্ধ করে বল,আপনার হাত থেকে রক্ত ঝড়ছে আমাকে ছাড়ুন আমি বেন্ডেজ করে দেই। আর কোন কথা বের করতে পারলো না নয়না৷ তার আগেই জিয়ান নয়নার ওষ্ঠদ্বয়ে নিজের ওষ্ঠের মিলন ঘটালো৷ আকষ্মিক ঘটনায় নয়া ঘাবড়ে গেলো। জিয়ানের শার্ট খামচে ধরলো। নক বসে গেলো জিয়ানের পিঠে৷
প্রায় পাঁচ মিনিট পর নয়নাকে ছেড়ে দিয়ে বারান্দায় চলে গেলো।
‘নয়না নিজের ঠোঁটে হাত দিয়ে সেভাবেই বসে রইলো৷
বেশকিছু ক্ষন পর জিয়ানকে খুঁজতে লাগলো। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দৃষ্টি স্থীর করলো৷ নয়না উঠে ড্রায়ার থেকে ফাস্টএইড বক্স নিয়ে ধীরে পায়ে বারান্দার দিকে এগিয়ে গেলো। নয়নার শখের বারান্দা। বিশার বড়ো বারান্দার এক কোনে নয়নার শখের বুক প্লেস। নিজের পছন্দের লেখকের বই সাজানো আছে তাতে। ওই পশ্চিম কর্নার টা নয়নার মন খারাপের ঔষধ ও বলা যায়।
‘জিয়ানের হাতে একটা বই। নীলাঞ্জনার বিয়ের জন্য পুরো বইটা শেষ করা হয়নি নয়নার। প্রিয়তম অসুখ সে। সাদাত হোসাইনের লেখা বইটি। নয়নার পছন্দের লেখক সাদাত হোসাইন। গত বই মেলায় ভীড় ঠেলে অটোগ্রাফ সহ সংগ্রহ করেছিলো৷ নয়না ধীর পায়ে জিয়ানের পাশে পায়ের কাছে বসলো। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য মৃদু স্বরে বললো,আমার প্রিয় বইটি আপনি রক্তাক্ত করছেন কেনো!ও বেচারার কি দোষ?
‘জিয়ান শান্ত স্বরে বলল,স্যরি। আমি আবারও একটা ভুল করলাম৷ আচ্ছা তুমি কি বলতে পারো সুনয়না মানুষ হৃদয়ের রক্তক্ষরণ কেনো দেখতে পায় না! এই যে আমার সামান্য কেটে যাওয়া ক্ষতে তুমি প্রলেপ লাগাতে এসেছো কখন কেউ মনের ক্ষতে প্রলেপ কেনো লাগায় না?
‘কারো মনের ক্ষতের প্রলেব হতে হলে মনের মানুষ হতে হয়। মনের মানুষ মন বোঝে অন্য মানুষ তো বুঝবে না।
‘কেউ কি আসলেই আমাদের মনের মানুষ হয়?
‘হবে না কেনো? ভালোবাসা থাকলেই হয়।
‘ভালোবাসা বলতে আদতে কিছু আছে সুনয়না?
‘ভালোবাস হলো অনেকগুলো অংশের এক কথায় প্রকাশ করার মত শব্দ। বিশ্বাস, ভরসা, মায়া, প্রশান্তি এই সব মিলিয়ে ভালোবাসা। এখান থেকে একটাও কম হলে সেখানে ভালোবাসা থাকে না৷ কথার মধ্যেই নয়না জিয়ানের হাতটা ধরলো,আলতো হাতে কাচগুলো টেনে বের করতে করতে বলে,নিজেকে যে ভালোবাসতে পারে না সে অন্যকে কি করে ভালোবাসবে! এই যে নিজের ক্ষতি করলেন এই দায় তো আপনার! এই ক্ষতির পরিমাণ আপনাকেই চুকাতে হবে। মানুষ ভুল করলে সে ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হয়। আর নয়তো সে ভুল থেকে শতশত ভুলের জন্ম হয়।
‘জিয়ান অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে নয়নার দিকে। কে বলবে, তার সাথে এতো গুছিয়ে কথা বলা মেয়েটা ষোড়শী বালিকা৷ মনে হচ্ছে উপন্যাসের মাধবীলতা। কত যত্ন নিয়ে সে হাতের ক্ষতে প্রলেপ লাগাচ্ছে। যেনো আমার চেয়ে তার ব্যথা অনুভব হচ্ছে বেশি! জীবন এতো অদ্ভুত কেনো?
‘নয়না হাতে ব্যান্ডেজ করা শেষ করে বলে,আজকে সবচেয়ে ভালো লেগেছে কোনটা জানেন?
‘আজ তো ভালো লাগার মত কিছু হয়নি নয়না৷
‘হয়েছে। তবে তা আপনি বুঝবেন না মিস্টার প্লেন ড্রাইভার।
‘বলো তাহলেই তো বুঝবো।
‘বুঝলে বুঝপাতা না বুঝলে তেজপাতা৷
‘আপনাকে আবার আমার বাসায় আসতে হলো!
‘তুমি আমার বাড়ির সম্মান রক্ষা করেছো আমি তোমার বাড়ির সম্মান রক্ষা করলাম। শোধবোধ।
‘এটা কিন্তু কথা ছিলো না। আমার প্রাপ্য কই?
‘এটা দিলে তোমার বাসার কেউ কিছু বলবে না? সামনে তো তোমার পরিক্ষা।
‘আরেহহ বুদ্বু সবাইকে বলবো জামাই বিদ্যাশে এরজন্য মোবাইল দিয়ে গেছে। এবার তাড়াতাড়ি দিন তো। এই আসার সময় নিয়ে এসেছেন তো? নাকি খালি হাতে চলে এসেছেন?
‘জিয়ান হতাশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে,উপসসস একটুও মনে ছিলো না আমার!
‘আশ্চর্য মনে ছিলো না মানে কি? সকালে তো পালাবেন তখন আপনাকে আমি কই পাবো?
‘আমাকে পেতে চাও?
‘নো নেভার৷ তবে মোবাইল পেতে চাই।
‘হায়রে নিষ্ঠুর রমনী তুমি মোবাইল চাইলে কিন্তু আমাকে চাইলে না!
‘নাটক কম করেন প্রিয়।
‘আমি তোমার প্রিয়!
‘আপনার সাথে প্রিয় শব্দ যায়!
‘তাও ঠিক। জিয়ান পকেট থেকে একটা ফোন বের করে নয়নার সামনে ধরে বলে,এই নাও তোমার প্রাপ্য।
‘নয়না খুশি হয়ে বলে,লাভ ইউ।
‘লাভ ইউ টু ডার্লিং। এরপর দুজনেই দুজনের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে৷
‘কিন্তু আমি সিম পাবো কই?
‘সিম দিয়ে কি করবে?
‘সিম ছাড়া মোবাইলের কোন মূল্য আছে?
‘অবশ্যই আছে, তুমি এটাতে ওয়াই-ফাই কানেক্ট করে ভিডিও দেখতে পারবে।
‘আমাকে বোকা মনে হয়! জিমেইল ছাড়া কিছু ওপেন হবে?
‘বাহহ সবই জানো দেখি।
‘তো কি সাইন্সের স্টুডেন্ট এতো সহজ ভাবে নেয়ার কিছু নেই!
‘বড় হয়ে কি হতে চাও?
‘আপনার কি আমাকে বাচ্চা মনে হয়!প্রশ্নটা ভুল করেছেন প্রশ্ন হতো, পড়ালেখা করে কি হতে চাও?
‘কি হতে চাও?
‘পাইলট।
‘জিয়ান হেসে বলে বাহ অবশেষে তুমিও প্লেন ড্রাইভার হতে চাও?
‘মোটেই না শুধুমাত্র আপনার মুখ থেকে শুনতে চাইছিলাম প্লেন ড্রাইভার শব্দটা। আগেই তো বলেছিলাম সাইন্সের স্টুডেন্ট সহজ ভাবে নেবেন না। নয়না উঠে হাঁটা শুরু করতেই।

‘জিয়ান পা বাড়িয়ে দেয়। নয়না পড়ে যেতে নিলে জিয়ান হাত ধরে টান দিয়ে নিজের কোলে বসায়। জিয়ান নয়নার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,বাচ্চা মানুষ যখন তখন কোলে বসে পরে!

🌿মাহবুব তালুকদার যা চায় তাই হয়।
‘মিজান বলে,ভাইয়া আমার মেয়েটা আজ পাঁচদিন ধরে নিখোঁজ! কোথায় আছে কি অবস্থায় আছে কিছুই জানিনা।
‘এমন মেয়ে দিয়ে কি হবে! যে মেয়ে পরিবারের মানসম্মান ডুবিয়ে দেয়ার আগে একবার ভাবে না তাকে খুঁজে কি করবে?
‘ভাইজান এভাবে বলবেন না। শতহোক আমার ঔরসজাত মেয়ে শত অন্যায় করলেও তাকে ফেলে দিতে পারবো না৷
‘তোর মেয়ের জন্য তুই কাঁদছিস আর তোর মেয়ে বিয়ে করে সংসার করছে।
‘কি বলছেন ভাইজান?
‘ঠিকি বলছি নীলাঞ্জনা ওই ছেলেটাকে বিয়ে করে নিয়েছে আমি সব খোঁজ নিয়েছি৷ ওরা এখন শরিয়তপুর আছে। এই নে ঠিকানা তোর একার মেয়ে তোরই মায়া আছে যা দেখে আয়।
‘আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন ভাইজান আমার জন্য আজ নয়নার জীবনে এতো বড় তুফান আসলো। নিজের মেয়েকে মানুষ করতে কি ত্রুটি রেখেছি আমার জানা নেই!
#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে