#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১০
ইউ লিটল স্নেক।
‘আপনাকে আজ আমি ছাড়বো না।
‘প্লিজ বেবি আমাকে ছেড়ো না। অসমাপ্ত কাজটা পুরোপুরি সমাপ্ত করি৷ প্লিজ ছেড়ো না কিন্তু।
‘আপনি জানেন আপনি চরম অসভ্য৷
‘পুরুষ মানুষ একটু আধটু অসভ্যতা করেই থাকে ইট’স কমন বেবি।
‘দূরে সরুন। ভুলে গেছেন কি বলে নিয়ে এসেছিলেন?
‘তুমিই না একটু আগে বললে আমাকে ছাড়বে না!
‘অসভ্য লোক।আপনার মোবাইলটা একটু দেন তো।
‘পার্সোনাল জিনিস কাউকে দেই না৷
‘মোবাইলে কয়টা জিএফ নিয়ে ঘুরেন!যে মোবাইল কেউ চাইলে তাকে দেয়া যাবে না!
‘গার্লফ্রেন্ড ছাড়া বুঝি মানুষের আর কোন পার্সোনাল লাইফ নেই?
‘থাকবে না কেন অবশ্যই আছে কিন্তু সেটা মোবাইলে না।একটু আগে যখন রুমে ড্রেস চেঞ্জ করলেন সেটা ছিলো পার্সোনাল কাজ।সেটা যখন আমার সামনে করতে পেরেছেন তো মোবাইল দিতে কি সমস্যা? আর আমি আপনার মোবাইলে জাসুসি করবো না। যাস্ট কয়েকটা পিক তুলবো। নয়তো এক কাজ করুন আমাকে কয়েকটা পিক তুলে দিন।
‘সিরিয়াসলি! তোমার মনে হচ্ছে আমি তোমাকে পিক তুলে দেবো?
‘হ্যা দেবেন নয়ত আমিও রুম থেকে বের হবো না৷ আপনার কথায় আমি এতোকিছু করতে পারলে আপনি সামান্য পিক দিতে তুলে দিতে পারবেন না?
‘জিয়ান নয়নার হাত ছেড়ে দিয়ে বলে পিক দিয়ে কি করবে?
‘ফুরসৎ পেলে লবন মরিচ মাখিয়ে আচর করে খাবো।
‘সোজা কথা বলা যায় না?
‘না বলা যায় না৷ মুখ বন্ধ করে ফটাফট কয়েকটা পিক তুলে দিন৷
‘জিয়ান আর কথা না বাড়িয়ে,কয়েকটা পিক তুলে দিলো৷ বুঝে গেছে এই মেয়ে নাছোড়বান্দা। পিক না তুলে দেয়া পর্যন্ত শান্তি দিবে না৷
নয়না সুযোগ বুঝে মোবাইলটা হাত থেকে নিয়ে বলে,তিনটা সেল্ফি তুলবো।
‘আমার মোবাইল আমার কাছে দাও ভালো হবে না কিন্তু।
‘ভালো আর কি হবে তারচেয়ে খারাপ হোক।
‘ওকে বেবি তুমি যখন চাইছো খারাপ কিছু হোক তাহলে তো খারাপ করতেই হয়৷
‘এই একদম আমাকে টাচ করবেন না৷ যাস্ট তিনটা সেল্ফি তুলবো।
জিয়ান নয়নার কাছে এসে নয়নার কোমড়ে হাত রেখে নয়নাকে জড়িয়ে ধরে।
নয়নার হার্ট বিট বাড়তে থাকে, নয়না নিজের হাত উঁচু করে নেয়।
জিয়ান মুচকি হেসে নয়নার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে, তাহলে খারাপ কিছু হয়ে যাক৷
‘নয়না চোখ বন্ধ করে নেয়৷
জিয়ান নয়নার হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে নেয়। বাহ খারাপ কিছুর জন্য এতো প্রস্তুতি!
‘নয়না কিছু বলবে তার আগেই নাহিদ রুমে এসে বলে,তোদের প্রেম শেষ হলে নিচে আয় সবাই অপেক্ষা করছে৷
‘নয়না জিয়ানের হাত টেনে কানে মুখে বলে,এটা কে?
‘আমি নাহিদ জিয়ানের ভার্সিটি লাইফের ফ্রেন্ড। ভাবি আপনার বর কিন্তু শুধু পাইলট নয় ইংরেজিতে অনার্স ও করেছে।
‘আরে বাহহহ এরজন্য ই তো বলি আপনার ফ্রেন্ডের ব্যবহার করলার মত কেনো? ইংরেজি সাবজেক্ট নিয়ে যে অনার্স করে তার মধ্যে মধুসূদন আসবে কোথা থেকে!
‘ভাবি আপনি তো জোসসস।
‘তুমি নাহিদকে আগে থেকে চিনো?
‘আগে কি আপনি আমাকে বিয়ে করেছিলেন?
‘হোয়াট!
‘তো আগে চিনবো কি করে? আজকেই চিনলাম।
‘আজকে চিনে এতো সহজ ভাবে কথা বলছো!
‘স্যরি দেবর ভাইয়া আমি আজকে আপনাকে চিনলাম তাই একদম কঠিন কথা বলবো।
‘নাহিদ হেসে বলে,ভাবি রক রেজা শকড।
‘তাড়াতাড়ি নিচে আয় সবাই অপেক্ষা করছে।
‘নাহিদ চলে গেলে। নয়না বলে আপনার মাথাটা একটু নিচু করেন।
‘কেনো?
‘একটা গোপন কথা আছে।
‘জিয়ান নিচু হয়ে বলে,তাড়াতাড়ি বলো।
‘আমি আপনার কথা মতো নাটক করতে চলে এসেছি৷ আমার কথা আমি রাখছি আপনার কথা রাখছেননা কেনো?
‘সব মিটে যাক তারপর পেয়ে যাবে৷
‘জানেন লম্বা ছেলেদের সাথে বিয়ে হলে এই এক সুবিধা।
‘কি সুবিধা?
‘আপনি সব সময় আমার কথা মাথা নিচু করে শুনবেন। আর আমি সব সময় আপনাকে মাথা উঁচু করে কথা শোনাবো৷
‘জিয়ান সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে হাতে হাত রাখো আর চলো৷ আর হ্যা মনে আছো তো আমাদের মধ্যে কি ডিল হয়েছিলো?
‘হু মনে আছে। তো কিপ স্মাইল।
‘জিয়ান আর সুনয়না যখন এন্ট্রি নিচ্ছিলো উপর থেকে গোলাপের পাপড়ির বর্ষণ হচ্ছিলো৷ জিয়ান নয়নাকে নিয়ে হেঁটে একটু সামনে এসে হাত ধরে নয়নাকে নিয়ে স্টেজে বসলো।
‘সবাই নয়নার প্রশংসা করছে। সবাই বলছে চৌধুরী বাড়ির বড় বৌ একদম পরির মত। সো প্রিটি।
‘জেরিন চৌধুরী উপরে উপরে প্রশংসা করলেও মনে মনে ক্ষোপ। তার মেঝো মেয়ে সায়নার জন্য পছন্দ করেছিলো৷ কিন্তু জিয়ান কিছুতেই রাজি হয়নি৷
‘সায়না এসে বলে, মম ভাবি এত্তো কিউট! একদম রুপকথা রাজকন্যার মত লাগছে। নজর না লাগুক কারো৷ বলতেই হবে দ্যা পার্ফেক্ট রেজা চৌধুরীর পার্ফেক্ট ওয়াইফ৷ ভাইয়ার পছন্দের প্রশংসা করতেই হয়।
‘চুপ করো এই মেয়ে এখানে তোমার জায়গা দখল করে বসে আছে।
‘উঁহু আমার জায়গা হলো জাহিনের হৃদয়ে।মম আমি জাহিনকে ভালোবাসি৷
‘রেজা তাও ভদ্রতা বজায় রাখে। জাহিন! ও কোনদিন তোমাকে পাত্তা দিবে? সারা দেশ ভ্রমণ করা ছাড়া আর কোন দিকে খেয়াল আছে? এমন ছেলের সাথে সংসার হয়?নিজের ভাইয়ের বিয়ে পর্যন্ত এটেন্ড করলো না!
“এটাই তো আমাকে আরো টানে জাহিনের দিকে৷ বিয়ের পরে বরের সাথে একেক দেশে ঘুরে বেড়াবো।
‘চুপ করো আর আমার সাথে আসো খেয়ে নেই৷
🌿মাহবুব তালুকদার তার ভাই আরো আত্মীয় স্বজনরা সবাই এসেছে।
‘জাহানারা বেগম নিজের মেয়ের সাথে সবার আগে দেখা করলেন৷ নয়নার হাতটা ধরে জিয়ানের হাতের উপর দিয়ে বলে,আমার মেয়েটার সব দ্বায়িত্ব আজ থেকে তোমার৷ আমার একমাত্র মেয়ে কোনদিন কোন দুঃখ ওকে আমাদের ভেদ করে স্পর্শ করতে পারেনি। তুমিই ওর এভাবেই খেয়াল রাখবে তো বাবা?
‘জিয়ান নয়নার দিকে তাকিয়ে বলে,যতদিন আছি আমি আগলে রাখার চেষ্টা করবো।
‘জানহারা বেগম বলেন, যতদিন আছি মানে!
‘আম্মু এতো কথা বলার সময় এটা? দেখো আশেপাশে কত মানুষ। পরেও তো বলতে পারবে এসব কথা।
‘ নাহিত সুন্দর করে ডেকোরেশন করে একটা ট্রের মধ্যে আংটি নিয়ে আসলো দুটো।
‘জিয়ান চোখ রাঙিয়ে বলে এসব কি?
‘মিতা বেগম এসে বলেন, তোমরা দুজন দুজনের থেকে দূরে থাকবে তাই এই আংটি একে অপরকে পরিয়ে দাও৷ এটা স্মৃতি হিসেবে বহন করবে দুজন।
‘সবাই একত্রিত হয়ে ঘীরে রেখেছে জিয়ান, নয়নাকে৷ চারপাশ থেকে ফুলের বর্ষণ হতে লাগলো। এমন মূহুর্তে না করার কোন অপশন পেলো না৷ আংটি উঠিয়ে নয়নার অনামিকা আঙ্গুল পরিয়ে দিলো।
‘নয়নাও আংটি নিয়ে জিয়ানের রিং ফিঙ্গারে আংটি পরিয়ে দিলো।ওদের উপরে যেনো ফুলের বৃষ্টি হচ্ছে। নয়না মনে মনে বলে,ইশশ এগুলো যদি ভিডিও করে রাখতে পারতাম! থাক সমস্যা নেই শ্বাশুড়ি আন্টির থেকে পরে নিয়ে নেবো ভিডিও।
নয়না আংটি পরিয়ে জিয়ানের হাত এখনো ছাড়েনি৷ সে চলে গেছে তার ভাবনার জগতে।
‘নাহিদ বলে,ভাবি হাত আর ছাড়াছাড়ি নেই এভাবে ধরে রাখবেন সারাজীবন।
‘নয়না সাথে সাথে হাত ছেড়ে দেয়।
🌿
নীলাঞ্জনা রুমের মধ্যে এককোনে গুটিশুটি মেরে বসে বসে কান্না করছে। পরিবারের বড় মেয়ে সবার আদুরে৷ কেউ কখনো ফুলের টোকা পর্যন্ত দেয়নি৷
‘লাবিব বাহিরে গিয়েছিলো। রুমে এসে নীলাঞ্জনার সামনের বসে, নীলাঞ্জনার হাত ধরে বলে,আমি কি করে মেনে নিতাম আমার ওয়াইফ বাসর রাতে তার এক্সকে টেক্সট করছে!স্যরি জান আমি আর কখনো তোমার গায়ে হাত তুলবো না। নীলাঞ্জনাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে থাকে। ধীরে ধীরে লাবিবের স্পর্শ গভীর হতে থাকে।
নীলাঞ্জনা পাথরে মূর্তির মত তার যেনো কোন হেলদোল নেই।
লাবিব নিজের কার্জ সাধন করে নীলাঞ্জনার কপালে চুমু খেয়ে বলে,আমি তো কাল রাতেই বুঝেছি তুমি ইনটেক। তবুও রাগের মাথায় ভুলভাল বলে ফেলেছি রাগ করে থেকো না জান।
‘নীলাঞ্জনা উঠে এসে ব্যগ থেকে থ্রিপিস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।ওয়াশরুমে শাওয়ারের নিচে বসে চিৎকার করে কান্না করতে লাগলো। মানুষ নিজের ভুলে নিজেই যখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকে তখন কাউকে কিছু বলা যায় আবার সহ্যও করা যায় না। অন্তর পুড়ে ছাই হলেও আগুনের লেলিহান কাউকে দেখানো যায় না৷
#চলবে