অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-০৯

0
5

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৯
রয়েল ব্লু কালারের গর্জিয়াছ লেহেঙ্গা সাথে ভারি গহনা পরে বসে আছে নয়না। রুম ফাঁকা হতেই দু’হাতে লেহেঙ্গা উঁচু করে ধরে আয়নার সামনে দাঁড়ালো। নিজেকে আয়নায় দেখে বলে,হেই সুনয়না তোমার কোন অধিকার নেই এতো সুন্দর হওয়ার! তোমাকে তো বলিউডের নায়িকা মনে হচ্ছে। ম্যা ইতনি সুন্দর হু ম্যা কিয়া কারু৷ বিয়ে করতে চাইতাম সুন্দর করে বৌ সাজতে বৌ সাজা শেষ বিয়ের শখ ও শেষ। আবার নিজেই বিড়বিড় করে বলে,শখ আবার কি তোর তো বিয়েই শেষ। ধুর যাও একটা বিয়ে হলো স্বামী থাকবে বিদ্যাশে! পড়ালেখা ছাড়ার কোন উপায় নেই!
‘জিয়ান সদ্য শাওয়ার নিয়ে কোমড়ে একটা তোয়ালে জড়িয়ে বের হয়েছে। শরীর জুড়ে এখন মুক্তর দানার মত পানির ফোঁটা টপকে পরছে। তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে আয়নার সামনে দাঁড়ালো। অর্ধ নগ্ন ফর্সা জীম করা পেটানো বডি। নয়না একটু পেছনে সরে তাকিয়ে আছে জিয়ানের দিকে। মনে মনে বলে,বাপরে কি বডি বানিয়েছে পুরাই সালমান খান। নয়নার ইচ্ছে করছে একটু টাচ করে দেখতে।
‘হঠাৎ জিয়ানের নজর পরলো নয়নার দিকে, লিটল পরি লাগছে আজ নায়নাকে। আয়নার দিক থেকে তাকিয়ে বলে,মেয়েটা একটু এক্সট্রা সুন্দরী। কিউট ফেইস সাথে কেমন একটা সুইটনেস আছে। চুলগুলো লম্বা। জিয়ান হঠাৎ খেয়াল করলো নয়না তার বডির দিকে তাকিয়ে আছে৷ এভাবে তাকিয়ে নজর দিচ্ছো কেনো!

নজর দেয়ার মত জিনিস চোখের সামনে থাকলে নজর তো দেবোই।

‘আমার ইজ্জত লুট করছো চোখ দিয়ে,?

রাবিশ কথাবার্তা বলবেন না।

‘আচ্ছা ছেলেরা জীম করে সিক্স প্যাক বডি কেনো বানায়?

‘তুমি ই বলো কেনো বানায়?

আপনি জানেনা বুঝি!এতো কষ্ট করে বডি বানায়ই তো মেয়েদের দেখানোর জন্য। ওই যে টনি কাকারের গান আছে না
Main gym-shim jaata hoon tere liye
Main body banata hoon tere liye
Main ande shande khata hoon tere liye

‘তো আজ পর্যন্ত কতজনের বডি দেখেছো।

‘নয়না হাতের কড় গুনে বলে,দশজনের।

‘হোয়াট!

‘আরেহহহ হ্যা। তবে সবচেয়ে জোসসস ফিটনেস কিন্তু প্রভাসের। জানেন আমার ক্রাশ ছিলো মহেশ বাবু তারপর দেখি তার মেয়ে আছে আমার বয়সী। তারপর ক্রাশ থেকে সোজা আঙ্কেল। সালমান খানের বডি দেখেছেন কি বডি!

‘বাস্তবে নিজের চোখের সামনে কতজনকে দেখেছো?

‘ওরা কি চোখের পেছনে ছিলো। ওরা তো আমার চোখের সামনেই ছিলো টিভির স্কিনে।

‘সরাসরি কতজনকে দেখেছো।

‘নয়না জিয়ানের একদম কাছে এসে বলে এইতো দেখছি ওয়ান এন্ড অনলি প্লেনের ড্রাইভারের বডি।

‘কতবার বলবো আমি পাইলট।

‘ওই একি কথা যাহা কদু তাহাই লাউ। এসব বাদ দিন আগে বলুনতো এমন নায়কদের মত বডি আপনি কি করে বানালেন?
‘পাইলট হওয়ার জন্য কিছু শারীরিক মানদণ্ড ও পূর্ণ করতে হয়। যেমন, চোখের দৃশ্য ক্ষমতা, রক্তচাপ, শারীরিক শক্তি ইত্যাদি পরীক্ষার মাধ্যমে একজন পাইলটের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। এরজন্য জীম করে বডি বানিয়েছি মেয়েদের দেখাতে না।
‘মেয়েদের দেখানোর ইচ্ছে না থাকলে ওয়াশরুম থেকে লুঙ্গি টিশার্ট পরে আসতেন। এভাবে অর্ধনগ্ন হয়ে চলে আসতেন না।
‘আমার ঠোঁটের ইজ্জত তো লুট করেছোই এখন চোখ দিয়ে শরীরের ইজ্জতও লুট করার ধান্দা?
‘আপনার আবার ইজ্জতও আছে?
‘নেই?
‘নাহহহ
‘ওকে বেবি ইজ্জত যেহেতু নেই তা হরন হলেই বা কি? বলেই নয়নার সামনে দাঁড়ালো৷
‘নয়না চোখ বন্ধ করে বলে,দূরে সরুন আমার লজ্জা লাগছে।
‘এতোক্ষণ চোখ দিয়ে গিলে খেতে লজ্জা লাগেনি।
‘ছিহহহ কি ভাষা ব্যবহার করছেন। আমি গিলে খাবো কেনো!আমি যাস্ট উপভোগ করছিলাম৷
‘তো এভাবে তাকিয়ে থাকলে আমার লজ্জা লাগে না?
‘পুরুষ মানুষের আবার কিসের লজ্জা? সুযোগ পেলেই তো টিশার্ট খুলে ফেলে৷
‘ লজ্জা যখন নেই আসো তোমাকে জড়িয়ে ধরি।
‘আপনার নায়কের মত বডি বলে আপনি ইমরান হাশমি ভাববেন নিজেকে! সালমান খানও তো ভাবতে পারেন।
‘এবার বুঝলাম।
‘নয়না এক চোখ একটু ফাঁকা করে বলে,কি বুঝলেন?
‘ঠোঁটে স্টাম্পকার্ড কি করে বসালে। ইমরান হাশমির ছাত্রী তাই তো আমার নিরীহ ঠোঁটের এই দশা।
‘আপনার সাহস তো কম না আমাকে এসব বলেন! তো আপনি কি? নিজেই তো ইমরান হাশমির টু পিস?
‘ইয়েস বেবি। তোমার পিংকি ঠোঁট আমার ইমরান হাশমির মত স্বভাবের কারন। আই নিড ইউর লিপস যাস্ট টু মিনিট। ফ্লেভার চেক করেই ছেড়ে দেবো।
‘নয়না পেছনের দিকে ঘুরে বলে,এটা স্টবেরি ফ্লেভারের হুদা বিউটির গ্লাসি লিপস্টিক মাত্র টু থাউজ্যান্ড টাকায় কিনে চকোলেটের মত খেয়ে ফ্লেভার টেস্ট করতে পারেন। ভাবলাম নায়ক বের হলো ইমরান হাশমি! ছিহহহহহহ।
‘জিয়ান ততক্ষণে হোয়াইট শার্ট, রয়েল ব্লু কালারের ব্লেজার পরে নয়নার পেছনে দাঁড়িয়ে বলে,তোমাদের মেয়েদের টাকার জন্য মায়া হয় না। দুই হাজার টাকা দিয়ে লিপস্টিক কে কিনে? আজকে তো টেস্ট করে দেখতেই হবে। কি এমন আছে এতে? তাছাড়া ফ্রীতে পেলে কে টাকা নষ্ট করে?
‘নয়না দৌড়ে সরে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলে জিয়ান নয়নাকে ধরে ফেলে।
‘প্লিজ ছেড়েদিন তিনঘন্টা লাগিয়ে এতো সুন্দর একটা হেয়ার স্টাইল করেছি। নষ্ট হয়ে যাবে।
‘আমার ঠোঁটে স্টাম্প লাগিয়ে দিয়েছো আমি সবাইকে মুখ দেখাবো কি করে!
‘আমি আপনাকে সাজেশন দিতে পারি। আপনি মাস্ক পরবেন বা রুমাল দিয়ে মুখ ঢেকে রাখবেন।
জিয়ান নয়নার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,সেম স্টাম্প তোমাকেও দিবো। শোধবোধ।
‘শোধবোধের কথা আসলে তো আপনি আরো অনেকগুলো পাওনা। আর আপনি কিন্তু আমাকে পটিয়ে এখানে এনেছেন ভুলভাল কিছু করলে চলে যাবো কিন্তু। নয়না সামনের দিকে তাকিয়ে বলে হায়.. আপনাকে তো পুরাই বলেই চুপ হয়ে গেলো নিজের কথা পূর্ণ করলো না।
‘বলো পুরাই কি?
‘বাজে দেখতে লাগছে একদম কলা গাছের মত৷
‘এরমধ্যেই ডাক পরলো, মিতা বেগম বললেন কিরে তোদের হলো?
‘হ্যা আম্মু আসো।
‘মিতা বেগম এসে বলে মাশা আল্লাহ আমার বৌমাকে তো একদম পরি লাগছে, কারো নজর না লাগুক। আমি যাচ্ছি তোরা আয়। তাড়াতাড়ি আসিস দেরি করিস না।
‘জিয়ান নয়নার পাশে দাঁড়িয়ে বলে,আমার হাতে হাত রাখো। আর ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসি।
‘কেনো!আমরা কি সিনেমার শ্যুটিং করতে যাচ্ছি!
‘মনে করো তাই। যা বলছি তাই করো।
‘কিন্তু আপনার পাশে আমাকে মানাবে না৷ আপনি তালগাছ আমি আম গাছ।
‘ আমার পাশে তোমাকে বাটার মাশরুম লাগবে। তোমাকে দেখলেই সবাই বলবে আমার ভাগ্য ভালো বলেই এতো সুন্দরী বৌ পেয়েছি।
‘সত্যি!
‘হ্যা সত্যি আজকে তোমাকে দেখতে রুপকথার রাজকন্যা লাগছে।
🌿লাবিব বেডের পাশে হাত দিয়ে দেখে পাশে কেউ নেই। মোবাইলের টচ অন করে নীলাঞ্জনাকে খুঁজতে থাকে।
‘হঠাৎ লাবিবকে দেখে নীলাঞ্জনার হাত থেকে মোবাইলটা নিচে পরে যায়।
‘লাবিব নয়নার মোবাইল হাতে নিয়ে বলে,এতো রাতে তুমি মোবাইলে কি করছো?টেক্সটগুলো দেখে লাবিব মোবাইলটা আছাড় মেরে ভেঙে ফেলে।
‘নীলাঞ্জনা কাঁপা-কাঁপা কন্ঠে বলে,তুমি যা ভাবছো তা-না। আমি যাস্ট।
‘আর কিছু বলার আগেই লাবীব নীলাঞ্জনার মুখ চেপে ধরে বলে,তোর যাস্ট নিজের বাসর রাতে বরের সাথে ফুলসজ্জা সেরে তোর এক্সের কথা মনে পরেছে! কেনো মনে পরলো? তোর বর তোকে খুশি করতে পারেনি। তাই এক্সের কথা মনে পড়লো!
‘ছাড়ো আমার লাগছে।
‘লাগুক। চুলগুলো মুঠ করে ধরে বলে,তুই তো বলেছিলি রেজা তোকে কখনো স্পর্শ করেনি। মিথ্যে বলেছিস বল,তোর কোন কোন জায়গার স্পর্শ করেছে? আমার স্পর্শ তোর ভালো লাগেনি! তোর পুরোনো প্রেমিকের স্পর্শ মনে পরলো!
#চলবেে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে