#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৮
নয়না চোখ মেলে চিৎকার দিয়ে বলে,আম্মু বাঁচাও।
‘জিয়ান নয়নার মুখে হাত দিয়ে চেপে ধরে বলে,সমস্যা কি তোমার! আর ঘুম এতো তাড়াতাড়ি ভাঙ্গলো কি করে?
‘নয়না হাত দিয়ে চোখ ডলে বলে,পাইলট মহাশয় আপনি? এতো রাতে ভুতের মত আমার দিকে তাকিয়ে আছেন কেনো! দেখুন ওইদিন রাতের মত কিছু করার কথা ভাবলে আজকে আপনার খবর আছে।এই বলে দিলাম হু।
‘আচ্ছা বলো তো আকাশের চাঁদের পাশে সবচেয়ে সুন্দর কোন জিনিস লাগে?
‘তারা।
‘নাহহহ।
‘তাহলে?
‘অন্ধকার। রাত যত নিকোষ কালো হবে চাঁদের সৌন্দর্য তত বৃদ্ধি পাবে৷
‘আপনি না ঘুমিয়ে আমাকে চাঁদের সৌন্দর্যের পাঠ পড়াচ্ছেন!
‘তুমি ঘুমাও।
‘ঘুম ভাঙ্গিয়ে এখন বলেন ঘুমাও! আমার ঘুম ভাঙিয়ে দিলো রে মরার পাইলটে। আচ্ছা আপনি প্লেনের ড্রাইভার নাকি হেলপার? নাকি আপনি বাটপার?
‘তুমি জানো না পাইলট মানে কি?
‘জানেন আর ক্লাসে আমার রোল নাম্বার কত?
‘ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কত?
‘আমাদের শাখায় ১০০ জন
‘তাহলে আর কত ৯৫ হবে হয়তো।
‘আপনি আমাকে ইনসাল্ট করছেন? আপনি জানেন আমি ক্লাসের ক্যাপটেন। আমাকে কেউ ফার্স্ট হওয়া থেকে নড়াতে পারে না। সামনে এসএসসি পরিক্ষা নিশ্চিত আমি গোল্ডেন পাবো৷ এই আপনার জন্য আমার পড়ালেখায় ডিস্টার্ব হচ্ছে। আপনার বৌ পালিয়ে গেছে আপনার বিয়ে করা কেন লাগবে!আমার বাবা বললেই বিয়ে করতে হবে? আপনি বলতে পারলেন না না আমি বিয়ে করবো না৷
‘আচ্ছা আমার ভুল হয়েছে।
‘”আপনার একটা ভুল সিদ্ধান্ত আমার সারাজীবনের কলঙ্ক। আপনার গায়ে তো কেউ কলঙ্ক লেপন করবে না।কলঙ্কের ভাগ সব আমার!
‘আমি সত্যি দুঃখিত। আচ্ছা শোন আমার কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। চলো আমরা লুডু খেলি।
‘নাহহ আমি ঘুমাবো।
‘ভোর হতে বেশি সময় বাকি নেই। আসো বাকি রাতটুকু একসাথে কাটাই।
‘আপনাকে কে পাইলট বানিয়েছে বলুন তো! আমরা কি আলাদা আছি? একসাথে একি বেডে বসে বলেন আসো একসাথে কাটাই?
‘একটু আগেই তুমি কত সুন্দর ম্যাচিউর কথা বললে, আর এখন বাচ্চাদের মত কথা কেন বলছো?
‘আপনি বুঝিয়ে বলুন কি বলতে চাইছেন?
‘তোমার কাছে ছোট একটা আবদার।
‘আয়হায় আমাকে কি আপনার মামা বাড়ি পেয়েছেন? আবদার করবেন মামার বাড়িতে আমার কাছে না।
‘একটা অনুরোধ করতে চাই রাখবা প্লিজ?
‘আপনার ঠোঁট থেকে রক্ত বের হচ্ছে।আমি অ্যান্টিসেপটিক লাগিয়ে দেই আপনি একটু চুপ করে বসে থাকুন৷
‘তোমার জীবন থেকে আগামীকাল দিনটা আমাকে দেবে?
‘নয়না ড্রায়ার থেকে আ্যান্টিসেপটিক এনে জিয়ানের ঠোঁটে লাগিয়ে দিচ্ছে।
‘জিয়ান নয়নার হাতটা ধরে বলে,প্লিজ আগামীকাল দিনটা দাও আমাকে।
‘আমার একটা দিন আপনার কি উপকারে আসবে?
‘তোমার একটা দিন আমার পরিবারের সম্মান রক্ষা করবে৷
‘হাত ছাড়ুন আপনি টাচ করলে কেমন যেনো লাগে৷
‘জিয়ান হাত সরিয়ে নিলো।
‘নয়না জিয়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,আপনি কিন্তু দেখতে সুন্দর। আমি কি আপনাকে আগে কখনো দেখেছি?
‘আমার তো মনে পরে না।
‘আমি বলবো কবে আপনার সাথে দেখা হয়েছিলো।
‘বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সে। আপনার ঘড়ি আমার ওড়নাতে আটকে গিয়েছিল। আপনি রেগে বলেছিন ওড়না সামলে না রাখতে পারলে পরার কি দরকার?
‘তোমার ফিল্মি ডায়লগ এসব কখনো আমার সাথে হয়নি।
‘অদ্ভুত আপনাকে আমি মিথ্যে কেন বলবো আপনিই ছিলেন ওটা। আমার ওড়নাটা ছিড়ে ফেলেছিলেন।
‘আচ্ছা তা তুমি বাচ্চা মানুষ একা-একা বসুন্ধরা কি করছিলে?
‘আরেহহহ একা একা মানে? ফুপ্পির সাথে গিয়েছিলাম। সে ফোনে কথা বলতে ব্যস্ত ছিলো৷ জানেন আমি তো সেদিন আপনাকে দেখে পুরাই ফিদা। ব্ল্যাক কোর্ট সাদা শার্ট সুন্দর করে চুলগুলো সেট করা৷ এরজন্য স্যরি বলেছি নয়তো ঝগড়া করতাম।
‘তোমার বাজে কথা শেষ হলে আমার কথাটা শোন। আমরা ভোরেই চলে যাবো বাসায়। পরশু আমার ডিউটি শুরু আগামীকাল রাতেই চলে যাবো আমি। এরপর তোমার সাথে আমার আর দেখা হবে না৷ তুমি ভুলে যেও আমার নাম, মনে করো আমি ছিলাম দূর থেকে ভেসে আসা কোন স্লোগান।
‘নয়না জিয়ানের কাঁধে মাথা রেখে বলে,আপনি চলে যাওয়ার পরে কি হবে?
‘কিছুই হবে না। তুমি আগের মত নিজের জীবনটা গুছিয়ে নেবে। আমি তোমার জীবনের এমন এক কালো অধ্যায় যা আমার সারাজীবনের সবটুকু অনুনয়ের বিনিময়ে ও মুছে দিতে পারবো না৷ ক্ষমা চাইবো সেই যোগ্যতাটুকুও আমার নেই। আমায় ভুলে যেয়ে নতুন করে জীবনটা সাজিয়ে নিও। মনে করো আমি ছিলাম হঠাৎ আসা কোন সুনামি যে ক্ষয়ক্ষতির দায় না চুকিয়ে হারিয়ে যায় অতল গহব্বরে।জিয়ান কথাগুলো শেষ করে তাকিয়ে দেখে নয়না তার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরেছে। জিয়ান নয়নার মাথাটা সরালো না। সেভাবেই বসে থেকে ভাবতে লাগলো। আমি জানি আমি তোমার সাথে অন্যায় করছি। তোমাকে কিভাবে মেনে নেবো! আমি তোমার দৃষ্টিতে ধর্ষক ছাড়া কিছুই না৷ কোনদিন ও তুমি আমাকে ক্ষমা করতে পারবে না৷ আর এসব কিছুর জন্য দায়ী আমি নিজেই। জিয়ানের হঠাৎ ইচ্ছে করছে নয়নার কপাল আলত করে ছুঁয়ে দিতে৷
🌿
নীলাঞ্জনা ফ্লোরে বসে হাঁটুতে মুখ গুঁজে কান্না করছে৷ লাবিব বেডের উপরে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। নীলাঞ্জনা যে রাতটার জন্য এতো অপেক্ষায় ছিলো সেই রাত তার কাছে বিষাক্ত মনে হচ্ছে। আচ্ছা একজন পুরুষের কি মেয়েদের শরীর ছাড়া আর কিছু লাগে না! ভালোবাসা তাহলে কি মিথ্যে আশা? যাকে ভালোবেসে সব ছেড়ে আসলাম সে শুধু শরীর ভোগ করতে ব্যস্ত ছিলো। আমার চোখের পানি আমার দুঃখ কষ্ট তাকে বিন্দু মাত্র স্পর্শ করতে পারলো না! নীলাঞ্জনার হঠাৎ করে জিয়ানের কথা মনে পরলো৷
…. অতীত……
আচ্ছা তুমি আমাকে কখনো কিস কেনো করো নি! এতোটুকু তো করাই যায় তাই না৷
‘জিয়ান নীলাঞ্জনার হাতের উপর হাত রেখে বলে,তোমাকে আমি পরিপূর্ণ পেতে চাই। এই একটু আধটু পাওয়াতে আমার পোষাবে না গো।আজকে কিস করবো, কালকে হাগ করবো এরপর ধীরে ধীরে অন্য কিছু। একদিন তোমার মনে হবে আমাকে তুমি ভালোবাসো না৷ কারন আমি তোমাকে ভোগ করেছি। আমি তোমাকে পরিপূর্ণ পেতে চাই৷
‘পরিপূর্ণ পাওয়া মানে কি গো?
‘তুমি যা ভাবছো তা না। পরিপূর্ণ পাওয়া মানে তোমাকে ভালোবেসে এমন ভাবে অনুভব করা যাতে আমার প্রতিটি স্পর্শ তোমার কাছে ভালোবাসার চুড়ান্ত পূর্নতা মনে হয়। আর তা এমন এক মোহ তৈরি করবে যা বারবার আমাদেরকে আরো কাছে টানবে৷ যাকে মানুষ মন দেয় তার জন্য জীবনও দিতে পারে শরীর তো সেখানে সামান্য। এসব মনে করে নিজের চুলমুঠ করে ধরলো। ঠোঁটে লেপ্টে থাকা লিপস্টিক শরীরে দাগ প্রমান করছে এই স্পর্শে ভালোবাসা ছিলো না৷ ছিলো শুধু চাহিদা পূরণ। উঠে এসে বেডের সাইট থেকে মোবাইল নিলো৷ ভয়ে ভয়ে তিনদিন ধরে বন্ধ হয়ে থাকা মোবাইলটা অন করলো৷ মেসেঞ্জারে ঠুকতেই বুক কেঁপে উঠলো৷ একটা মানুষকে কতটা বাজে ভাবে ঠকিয়েছে! গায়ে হলুদের পিক দিয়েও বলেছিলো তোমার জন্য শেষ অপেক্ষা এরপর আর কোন অপেক্ষা নেই৷ সবার প্রথম জিয়ানের ইনবক্সে উঁকি দিলো। নিক নেইম এখনো মাই হার্ট দেয়া৷ কতশত টেক্সট। লাস্ট টেক্সট ছিলো,ভালো থেকো৷
‘কাঁপা-কাঁপা হাতে টাইপিং করতে যেয়েও ধমকে গেলো৷ এক পলক দৃষ্টি দিলো লাবিবের দিকে৷ ড্রিম লাইটের আধো আলোতে উজ্জ্বল মুখশ্রী দেখে বলে,আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমার ভালোবাসা দিয়ে তোমাকে জয় করে নেবো৷ মোবাইলটা আবার বন্ধ করে দিতে যেয়ে আবার উঁকি দিলো জিয়ানের ইনবক্সে,টাইপিং করলো,পারলে ক্ষমা করে দিও আমাকে।তুমি আমার চেয়ে ভালো কাউকে পাবে জীবনে। নতুন কাউকে নিয়ে জীবনটা গুছিয়ে নিও৷ ক্ষমা করে দিও।…
#চলবে