অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-০৭

0
43

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৭
“প্লিজ জাস্ট ওয়ান কিস।
‘তোমার মাথা ঠিক নেই? কি বলছো এসব?
‘একটা কিস করতে ভয় পাচ্ছেন! এরপর কোনদিন নিজেকে আর সাহসী বলবেন না৷
‘তুমি কি বুঝতে পারছো তুমি কি বলছো? তুমি যেচে কেনো উত্তপ্ত স্পাতে হাত দিতে চাইছো৷
‘কিস না করলে কিন্ত আপনাকে আমি এখান থেকে বের হতে বিন্দুমাত্র সাহায্য করবো না।
‘ওকে কাম অন বাবু। তবে এরপর যা হবে তারজন্য কিন্তু দায়ী তুমি।
‘একটা কিস করার জন্য এতো কথা! সেদিন রাতে তো! বলেই মুখে হাত দিলো।
‘জিয়ান নয়নার কাছাকাছি এসে বলে,আগেই ঠোঁট আড়াল করেছো! বলেই আলতো করে নয়নার কপালে নিজের ঠোঁটের উষ্ণতা ছোঁয়ালো।
‘নয়না জিয়ানের টিশার্ট আঁকড়ে ধরে বলে লিপ কিস।
‘নয়নার কথাটা কানে যেতেই জিয়ানের হার্টবিট ফাস্ট হতে লাগল। কি হলো এই মেয়ের কেনো আমাকে ঠিক থাকতে দিতে চাইছে না! এর কি সত্যি ষোল বছর!
‘এতো কি ভাবছেন? এখান থেকে বের হতে হলে এক্ষুনি আমাকে কিস করতে হবে।
‘জিয়ান একটু সরে আসলো জোড়ে নিঃশ্বাস নিয়ে বলে,এই মেয়ে আমাকে এলোমেলো করে দিচ্ছো তুমি তা বুঝতে পারছো?জানো তুমি আমাকে উষ্কে দিচ্ছো এরপর সামলাতে পারবে তো?
‘নয়না শার্টের বাটনগুলো খুলে শার্টটা বেডের উপর রাখলো।
‘জিয়ান পেছন দিকে ঘুরে বলে কি হচ্ছে এসব! প্লিজ ডোন্ট ডু দ্যাট৷ এর পরিনতি ভালো হবে না।
‘নয়না শার্টখুলে শাড়ীটা কোমড়ে গুঁজে টুল নিয়ে এসে জিয়ানের পেছনে দাঁড়ালো। মিস্টার পাইলট মহাশয় এদিকে ঘুরে দাঁড়ান। গত রাতে আমার পরনের শাড়িটা যখন খুলে ফেলেছিলেন নিজের হাতে তখন লজ্জা কোথায় ছিলো!
‘জিয়ান নরম স্বরে বলে,আমি দুঃখিত।
‘ওসব দুঃখ পরে দেখাবেন এখন আমার দিকে ঘুরে দাঁড়ান।
‘জিয়ান সামনে ঘুরে দেখে নয়না আর সে সেম সেম। শাড়ি গুঁজে রাখার ফলে কোমড় উন্মুক্ত এতোক্ষণ শীত লাগছিলো কিন্তু এখন গরম লাগছে৷
‘নয়না জিয়ানের মাথা দু’হাতে চেপে ধরে নিজের দাঁত দিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে জিয়ানের ঠোঁটে কামড় বসিয়ে দিলো। এরপর টুপ করে সরে আসতে চাইলে আটকা পরলো জিয়ানের হাতে। জিয়ান নয়নার কোমড় ধরে রেখেছে। ঠোঁট দিয়ে রক্ত ঝড়ছে।
‘ছাড়ুন নয়ত চিৎকার করে বাসার মানুষ জড়ো করবো।এমনিতেই আটকা আছেন তারপর খাবেন ধোলাই।
‘জিয়ান কিছু একটা ভেবে নয়নাকে ছেড়ে দিলো৷
‘নয়না বেডের উপর বসে জিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,এবার বলুন এই কিস আপনাকে কেমন ফিলিংস এনে দিলো?
‘বুঝলাম তুমি ছোট করে প্রতিশোধ নিলে তাই তো?
‘নাহহহ। শুধুমাত্র আমার কষ্টের বিন্দু পরিমাণ অনুভব করালাম।
‘জিয়ান নয়নার পড়ার টেবিলের চেয়ার টেনে বসলো।
‘নয়না জিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,আপনি দেখতে কিন্তু ঠিকঠাক আছেন। আচ্ছা আপনার চুলগুলো আসল নাকি নকল?
‘ফাস্টএইড বক্স কোথায়?
‘আমি কি ডাক্তার নাকি আমার কাছে ওসব থাকবে?
‘জিয়ান সামনের দিকে ঘুরে বলে, ব্লড বন্ধ করো। নয়তো দ্বিতীয় উপায় আমার জানা আছে৷
‘নয়না দ্রুত ড্রয়ার থেকে ফাস্টএইড বক্স এনে জিয়ানের সামনে রাখলো। নিজে চলে গেলো ড্রেস চেঞ্জ করতে৷
‘আলতো হাতে নিজেই এন্টিবায়োটিক লাগালো৷
‘নয়না এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছে।
‘আমি যে একটা মানুষ তোমার চোখের সামনে বসে আছি এটা তুমি দেখতে পাচ্ছো না?
‘নয়না আয়নার দিকে তাকিয়ে বলে নাহহ৷ আমার রুমে তো আমি নিজেকে ছাড়া কাউকে দেখতে পাচ্ছি না৷ ওপসসস স্যরি আমি তো দেখতে পাচ্ছি দ্যা গ্রেট পাইলট জিয়ান ভেজা চৌধুরী। স্যরি রেজা।
‘তা ভাই এতো রাতে আমার রুমে কি করছেন? আমি আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?
‘ডিয়ার পিচ্চি বাবু প্লিজ আপনি আমাকে এই রুম থেকে বের হতে সাহায্য করুন৷
‘আহা শখ কত! পিচ্চি বাবু এতোকিছু কিভাবে করবে?
‘তুমি দেখতে পারছো না আমার অবস্থা? ঠোঁট ফুলে গেছে কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। জংলী বিল্লির মত কেউ কামড় দেয়।
‘আমি দেখাবো আমাকে কোন এক হিংস্র বাঘ কিভাবে কামড়ে ছিলো৷
‘তাই বলে ঠোঁটে?
‘চুপ করে শুয়ে পরুন বেডে এসে৷ এখন বাজে রাত দুইটা চল্লিশ মিনিট। ঘুমিয়ে পরুন ভোর হোক আপনাকে বের করার ব্যবস্থা করবো।
‘আমি এখানেই ঠিক আছি।
‘ওকে ডিয়ার হ্যাসবেন্ড আপনি ঠিক থাকুন আমি একটা আরামসে ঘুম দেই। বলেই ব্লাঙ্কেট মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরলো।
‘জিয়ান একি ভাবে বসে নয়নার দিকে তাকিয়ে আছে।
কম্ফোর্টারের ভেতর থেকে নয়না বললো এভাবে তাকিয়ে থাকবেন না আমার কম্ফোর্টার লজ্জা পাচ্ছে। ছিহহহ একটা কম্ফোর্টারকেও ছাড় দিচ্ছেননা!

🌿 ঘোমটা টেনে বাসর ঘরে নিজের বরের জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে নীলাঞ্জনা। চোখ থেকে অনবরত অশ্রু ঝড়েই যাচ্ছে। নিঃশব্দ কান্না।
‘লাবিব রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে নীলাঞ্জনার পাশে বসলো। নীলাঞ্জনার হাতটা ধরে হাতে চুমু খেয়ে বলে,অবশেষে আমার অপেক্ষার অবসান ঘটতে চললো। তোমাকে পাওয়ায় যুদ্ধে আমি জিতে গেলাম।
‘নীলাঞ্জনা ঘুমটা তুলে বলে,পাওয়ায় যুদ্ধ মানে?
‘লাবিব নীলাঞ্জনার থুতনিতে হাত রেখে মুখটা উঁচু করে ধরে বলে,এতোদিন তো আমাকে বাঁধা দিয়েছো আজ থেকে তোমাকে স্পর্শ করতে কোন বাঁধা নেই। আজ আমার ভালোবাসবার চাদরে তোমাকে পুরোপুরি মুড়িয়ে নেবো।
‘শরীর পাওয়া মানেই কি সব পেয়ে যাওয়া লাবিব?
তোমার কাছে কোনটার দাম বেশি দেহ নাকি মনের?
‘লাবিব নীলাঞ্জনাকে নিজের কাছে এনে কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,আজকে রাতে কোন তর্কবিতর্ক নয়, আজ শুধু ভালোবাসা আর ভালোবাসা৷বলেই নীলাঞ্জনার অধরে অধর মিলিয়ে দিলো৷
‘নিয়াজ সাহেব বলেন, তোমার ছেলের জন্য আমি কি সমাজে মুখ দেখাতে পারবো না! আমাদের কিছু না বলে মেয়েটাকে নিয়ে চলে গেলো! আবার ওই বাড়িতে যেয়ে বলে ফেরত দিতে এসেছি আপনার মেয়েকে? এই বুদ্ধি নিয়ে ও পাইলট হয়েছে! সব কিছু এতো সহজ?
‘ছেলে তো আমার একার। ছেলে যার জন্মের হবে তো তার মতই। ঘাড়ত্যাড়ামি তো আমার থেকে পায়নি তোমার থেকে পেয়েছে৷ আচ্ছা একটা কথা বলো, ছেলেরা যা ভুল করুক সব দোষ আমার ঘাড়ে কেন চাপিয়ে দাও৷
‘আরেক নবাবজাদার তো খবরই নেই সে ব্যস্ত দেশ ভ্রমণ করতে! বাপের টাকায় ফুর্তি করতে খুব আয়েশ৷ নিজের ভাইয়ের বিয়েতে ও আসলো না৷ এরচেয়ে দুটো মেয়ে হলে ভালো হতো বিয়ে দিয়ে চিন্তা মুক্ত থাকতাম। ও-ই তালুকদার বংশের লোকদের কোনদিন সাহস হতো আমাদের কথা শোনানোর? আজকে তোমার ছেলের জন্য সেই সাহস পেলো৷ কল করো আর বলো সকালে বৌমাকে নিয়ে বাসায় ফিরতে কাল রিসিপশন৷ মানুষ দাওয়াত দেয়া। তাদের সামনে আমাকে জেনো ছোট না হতে হয়।
‘মিতা বেগম মোবাইল নিয়ে কল করলো জিয়ানকে৷
‘কিছুক্ষণ আগেই চুপিসারে নয়নার পাশে এসে শুয়েছে জিয়ান। মোবাইল বেজে উঠতেই রিসিভ করলো৷, উঠে বসে বলে,এতো রাতে কেনো কল করেছো আম্মু?
‘কল করেছি,!নাকি তোর কর্ম করিয়েছে! সকালের নাস্তা বাসায় করবি বৌমাকে সাথে নিয়ে আসবি৷ কিভাবে আনবি আমি জানিনা। কাল রিসিপশনে শত শত মানুষকে দাওয়াত দেয়া৷ আর তুই আমাদের কিছু না জানিয়ে চলে গেছিস!
‘এসবের কি দরকার ছিলো!
‘তুই জানিস না? এসব তোর জন্যই হয়েছে। তুই ভবিষ্যতে কি করবি আমি জানিনা তবে এই মেয়েকে তোকে মেনে নিতে হবে। প্রেম করেছিস ধোঁকা খেয়েছিস সব ফল্ট তোর। এখানে এই মেয়েটার দোষ কোথায়? মনে রাখিস কবুল বলার আগে কবুল বলার ভার বহন করার যোগ্যতা আছে কিনা সেটা ভেবে কবুল বলতে হয়। কবুল বলার পরে ও-ই মেয়েটাই তোর অর্ধাঙ্গিনী তোর জীবনসঙ্গীনি, তার মর্যাদা রক্ষার দায়ভার তোর। নিজের দ্বায়িত্ব থেকে পালাতে পারবি না৷
‘মিতা বেগম কল কেটে দিলো৷
‘জিয়ান ঘুমন্ত নয়নার দিকে তবে একি এরসাথেই বাকিটা জীবন কাটাতে হবে!এটাকি সম্ভব!
#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে