#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৬
লাল টুকটুকে বেনারসিতে বৌ সেজে বসে আছে নীলাঞ্জনা৷ হাত ভর্তি মেহেদী। বাসা থেকে পালানোর সময় টাকা আর গহনা নিয়ে এসেছিলো। সে-সব দিয়েই বিয়ের আয়োজনে করেছে লাবিব।
‘মেরুন রংঙয়ের শেরওয়ানি পরে রুমে প্রবেশ করলো লাবিব। নীলাঞ্জনাকে দেখে তার রুপে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থেকে বলে, তোমার প্রেমে আমি কেন! যে কোন পুরুষ পরতে বাধ্য। তোমার সৌন্দর্য বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। ইশশ সবাই বলবে জিতেছি। ইচ্ছে করছে টুপ করে তোমাকে খেয়ে ফেলি। নিজের বৌকে নিজেই না নজর দিয়ে ফেলি!
‘নীলাঞ্জনা বেশ অবাক হলো। আচ্ছা লাবিব আমার রুপ দেখছে? আমার চোখ ভর্তি অশ্রু ওর চোখে পরছে না? কই একবারও জিজ্ঞেস করলো না তোমার চোখে পানি কেনো? একবারও বললো না তোমার হাতের মেহদীর রং কেমন গাড় হয়েছে দেখি। তোমার কি মন খারাপ! তাহলে লাবিব কি আমায় ভালোবাসে নাকি আমার রুপের মোহে আটকে পরেছে।
‘এই আমার সুন্দরী বৌ কি ভাবছো বলো তো?
”তুমি আমাকে দেখে আমার সৌন্দর্য উপভোগ করো! অথচ আমার চোখের দিকে তাকিয়ে হৃদয় পড়তে পারো না! তুমি কি আমায় ভালোবাসো? নাকি শুধুই আটকে আছো আমার মোহ মায়ায়?
‘লাবিব এগিয়ে এসে বলে,কবুল বলতে দাও তারপর দেখো আমি কিসে আটকে আছি আর কি পড়তে পারি। সুন্দরী।
এক্ষুনি কাজি আসবে।
‘নীলাঞ্জনার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। হঠাৎ মনে হলো ভালোবাসার চেয়ে মন পড়তে পারে এমন মানুষ জীবনে বেশি প্রয়োজন। রংচঙে ভালোবাসা হয় না, রংতো কেবল মোহ।
‘কাজি সাহেব আসলেন বিয়ে পরালেন। লাবিবের চাচা আর তার পরিবার উপস্থিত ছিলো বিয়েতে। নীলাঞ্জনার পক্ষ থেকে কেউ উপস্থিত নেই। কবুল বলতে যেয়ে কান্নায় ভেঙে পরে নীলাঞ্জনা। হঠাৎ তার মন বলছে সে জেনো বড়ো কোন ধ্বংসের সূচনা করছে। মনে মনে আওরালো, তোমাদের অভিশাপ নিয়ে আমি সুখে হতে পারবো তো বাবা?
‘রঙিন বেলুন আর জরি দিয়ে সাজানো রুমে বসে আছে নীলাঞ্জনা। হাঁটুতে মুখ গুঁজে কান্না করছে। সব কিছু কেমন বিষাক্ত মনে হচ্ছে। ছুটে চলে যেতে ইচ্ছে করছে ছেড়ে আসা প্রিয় মানুষদের কাছে।
🌿মাহফুজা বেগম বলেন, এটা কি করলে তুমি? জামাই প্রথমবার এসেছে কই তাকে আপ্যায়ন করবে তা-না উল্টো বন্দী করে রেখেছো?
‘একদম চুপ করো তুমি। জামাই? কতোবড় সাহস তুমি ভেবে দেখো। আমার মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে এখন আবার ফেরত দিতে এসেছে? ওর চৌদ্দপুরুষ চৌধুরী হলে আমরাও তালুকদার বংশ দেখি কার ঘাড়ে কটা মাথা৷ আমার মেয়ের জীবন নিয়ে কোন শা’লার বেডাকে সাপ লুডো খেলতে দেবো না। মাহবুব তালুকদার বেঁচে থাকতে কখনোই তা সম্ভব না।
‘মিজান তালুকদার এসে বলে, ভাইজান এতো রাতে ডেকে পাঠালেন কোন সমস্যা?
‘সমস্যা বলেই ডেকে এনেছি। ও-ই ছেলে আমার মেয়েকে ফেরত দিতে এসেছে ওর এতো বড়ো স্পর্ধা! আমার মেয়েকে ও পন্য ভেবেছে?
‘মাথা ঠান্ডা করেন ভাইজান। শতহোক আমরা মেয়ে পক্ষের তাই হুটকরেই হটকারিতায় কোন সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না৷
‘রাতটা শেষ হোক চৌধুরী সাহেব কি বলে এ-র উপর ডিপেন্ডেবল আগে কি হবে।
🌿
আশ্চর্য তোমাদের পরিবারের সবার কি মাথায় সমস্যা! তোমরা এখানে কি করো পাবনা মেন্টাল হসপিটালে যাও।
‘নয়না বেডের উপর দাঁড়িয়ে বলে,মুখ বন্ধ করুন মিস্টার পাইলট। আপনার মাথায় সমস্যা আপনাকে এখন বরফের নিচে চাপা দিয়ে রাখা উচিৎ ঘন্টা খানেক৷ আর হ্যা একদম চোখ রাঙিয়ে কথা বলবেন না। ওটা আপনার এড়িয়া ছিলো এটা আমার। এবার বুঝবেন সুনয়না কি চিজ।
‘ওহহহ রিয়েলি! প্রথমে আমার সন্দেহ হয়েছিলো তোমরা বংশগত পাগল। এখন বিশ্বাসে পরিনত হলো। সো শেইম অন মি শেষ পর্যন্ত কি না পাগলের সাথে বিয়ে হলো! এই ছিলো কপালে?
‘নিজের লিমিট ক্রস করবেন না। পাগল যে বলছেন পাগলামি শুরু করলে যে পালাবেন সে রাস্তা ও কিন্তু বন্ধ। তাই চুপ করুন। নয়না চোখ পাকিয়ে বলে,এবার আমি আপনাকে টর্চার করবো। আমাকে একা পেয়ে আমাকে টর্চার করেছেন। আজকে ইতিহাস হয়ে যাবে ছেলে নির্যাতনের৷
‘উপসসস আমি তো ভিষণ ভয় পেয়েছি প্লিজ আমাকে ক্ষমা করেদিন রাজকন্যা। এবাবের মত আমাকে ক্ষমা করুন৷ বলেই হাসতে লাগলো।
‘চুপ একদম হাসবেন না৷ দেখুন আমি কি করি৷
‘পটোলের মত হাইট ইঁদুর হয়ে বেড়ালের সাথে লড়াই করা বোকামি। আমার শার্ট দাও শীত করছে।
‘দেবো না শার্ট শীতের দিনে বিয়ে করতে কে বলছে।
‘মাথার স্ক্রু ঢিলা হয়ে গেছে?
‘এখন আমি আপনার বস্ত্র হরন করবো। তারপর কামড়ে, নখের আঁচড়ে আপনার শরীর ক্ষত বিক্ষত করে দিবো। এরপর আপনি বুঝবেন কারো সাথে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে জবরদস্তি করলে কেমন লাগে।
‘মাথা ঠিক আছে তোমার? এই বাড়ি থেকে আমি বের হবো কি করে সেই ব্যবস্থা করো। এই ড্রেসের সাথে কিছু করবে না বলে দিলাম।
‘নয়না বেড থেকে নেমে পড়ার টেবিলের ড্রয়ার থেকে সিজার নিয়ে এসে হুট করেই জিয়ানের টিশার্ট ঘেচাং করে কাটা শুরু করলো।
‘জিয়ান নয়নার হাত ধরে বলে,কি হচ্ছে এসব বাচ্চাদের মত বিহেভিয়ার কেন করছো! উফফ শিট বাচ্চা তো বাচ্চামো করবেই। আমারই ভুল হয়েছে ফেরত দিতে আসা৷
‘আপনাকে কতবার বলবো আমাকে বাচ্চা বলবেন না৷ আজকে আপনার খবর আছে। বলেই ধস্তাধস্তি করা শুরু করল।
‘জিয়ান নয়নার কোমড় ধরে একদম নিজের কাছে নিয়ে আসলো। আরেক হাত দিয়ে নয়নার হাত দুটো পেছনের দিকে শক্ত করে ধরে রাখলো।
‘নয়নার কেমন অদ্ভুত লাগছে। মনে মনে বিড়বিড় করে বলে,নয়না দূর্বল হলে চলবে না এটা তোর বাসা৷ সাহস দেখা।
‘ছাড়ুন আমাকে। এখন জোড় দেখাচ্ছেন?
‘জিয়ান নয়নাকে আর নিজের কাছে টেনে আনলো। কাম অন বাবু৷ সুইট কিউট বেবি বৌ আমার লেটস ইন্জয়।
‘নয়না চোখ বন্ধ করে বলে প্লিজ ছাড়ুন কিছু করবো না আপনাকে।
‘জিয়ান নয়নার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,কেন বাবু ভয় করছে! আরেহহ বেবি কিসের ভয় এটা তো তোমারই বাসা গুন্ডামি করতেই পারো৷
‘ছাড়ুন আমি সত্যি কিছু করবো না৷
‘ছাড়তে পারি তবে আমাকে এখান থেকে সেইভ ভাবে বের পারে দিতে হবে। আমি কথা দিচ্ছি তো আর কোনদিন তোমার উপর আমার কালো ছায়া পরবে না৷
কথা বলতে বলতে দুজনে বেশ ঘনিষ্ঠ হয়ে গেছে। নয়নার বুকের ভেতর কারা জেনো তবলা বাজাচ্ছে।
‘জিয়ান দ্রুত নয়নাকে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে দাঁড়ালো৷
‘দুজনেই জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে। আর কিছুক্ষণ এভাবে থাকলে খারাপ কিছু হয়ে যেতো।
‘নয়না নিজের ঠোঁট মুছছে।
‘স্যরি। এক্সট্রিমলি স্যরি৷ দেখো তোমার বয়স কম কিন্তু এতোটুকু তো জানো কোন ছেলে মেয়ে একাকী এতো কাছাকাছি আসলে প্রাপ্ত বয়স্ক একটা ছেলের জন্য কন্ট্রোল করা সহজ নয়।আর সেই নারী যদি হয় তার বিয়ে করা বৌ! স্যরি এই অনাকাঙ্ক্ষিত কিসের জন্য।
‘নয়না কোন কথা না বলে মুখে হাত দিয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে আছে।
‘প্লিজ আমাকে এখান থেকে বের করার ব্যবস্থা করো। এই শেষ অনুগ্রহ টুকু করো আমার প্রতি।
‘নয়না আস্তে করে বলে,আমি আপনাকে আরেকবার কিস করতে পারি?
‘নয়নার কথা শুনে জিয়ান শকড। এই মেয়ে কি বলে! আগুনে ঘী ঢালার কাজ কেন করতে চাইছে?
‘আর ইউ ম্যাড? মাথা ঠিক আছে তোমার? তুমি বুঝতে পারছো তুমি কি বলছো?
‘নয়না বলে হ্যা বুঝতে পারছি প্লিজ ওয়ান কিস৷ এরপর আমি আপনাকে বোঝাচ্ছি আসলে আমি কি চাইছি?
‘জিয়ান দু কদম পেছনে সরে এসে বলে প্লিজ ডোন্ট টু দিস। এই মূহুর্তে এটা বিপদজনক।
#চলবে