#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৫
রাত তখন প্রায় একটা ছুঁই ছুঁই, জিয়ান পা টিপে টিপে রুমে আসলো। বেডের উপর এলোমেলো হয়ে ঘুমিয়ে আছে এক কিশোরী, শাড়ি সরে যেয়ে কিশোরীর উন্মুক্ত হয়ে আছে শরীরে বেশ খানিকটা অংশ। আলতো হাতে কোলে তুলো নিলো ঘুমন্ত কিশোরীকে চুপাসারে সিঁড়ি বেয়ে নিচে চলে আসলো। গাড়ির সামনের সিটে নয়নাকে বসিয়ে শাড়িটা কোনমতে পেঁচিয়ে দিলো শরীরে। হঠাৎ ঘুমন্ত রমনী হাত ধরে বসলো৷
‘জিয়ান খানিকটা ভয় পেলো। কিছু সময় সেভাবেই রইলো৷
বুঝতে পারলো ঘুম ভাঙ্গেনি৷ আলতো করে হাত সরিয়ে এনে ড্রাইভিং সিটে বসে ড্রাইভ করতে লাগলো৷রাতের নিরব রাস্তা দু’একটা দূরপাল্লার বাসের শো শো ক্ষীন আওয়াজ৷ সাথে সাথে গাড়ির গ্লাস উঠিয়ে দিলো। খুব ধীর গতিতে গাড়ি ড্রাইভ করছে। নয়নার মাথাটা জিয়ানের কাঁধে একবার সরিয়ে দিয়েছিলে তারপর নিজেই ঠিক করে রাখলো।বেশ কিছু দূর আসার পরে পুলিশ চেকপোস্ট পার হতে হয়।
নয়নার মাথাটা গাড়ির সিটে ঠিকভাবে রেখে গাড়ি থেকে বের হয়ে আসে জিয়ান৷
‘গাড়ির কাগজ পত্র সব দেখায়।
’একজন অফিসার বলে,আপনার সাথে গাড়িতে উনি কে?
‘আমার ওয়াইফ।
‘আপনার ওয়াইফ তার প্রমান কি?
‘আপনার কি মনে হয় এই রাতে আমি ম্যারেজ সার্টিফিকেট নিয়ে ঘুরবো! বলছি যখন আমার ওয়াইফ তখন অবশ্যই আমার ওয়াইফ।
‘প্রমান দেখান তারপর বিশ্বাস করবো। আপনাদের বিয়ে হয়ে হয়েছে কতদিন?
‘গত সপ্তাহে শুক্রবার।
‘আজতো রবিবার নিশ্চয়ই আপনার ফোনে বিয়ের পিকচার আছে সেটা দেখান।
‘দেখুন স্যার আমি একজন পাইলট তাছাড়া আমার ওয়াইফ ঘুমিয়ে আছে। আপনারা প্লিজ আমাকে বিরক্ত করবেন না৷
‘আপনার বাসায় কারো সাথে কথা বলিয়ে দেন৷ আর আপনি যেই হোন না কেনো আইন সবার জন্য সমান। হতেই তো পারে মেয়েটিকে আপনি কিডন্যাপ করে নিয়ে যাচ্ছেন।
‘একজন যেয়ে জানালার কাচে বাড়ি দিয়ে ম্যাডাম ম্যাডাম বলে ডাকতে লাগলো।
‘জিয়ান দ্রুত গাড়িতে এসে নিজের গায়ের শার্ট খুলে নয়নার গায়ে পরিয়ে দিচ্ছে।
‘নয়না ঘুমঘুম চোখ দুটো কোনমতে খুলতেই জিয়ানকে দেখে ঘাবড়ে যায়। কান্না মিশ্রত কন্ঠে বলে,প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন আমাকে আর ব্যথা দেবেন না।
‘একদম চুপ একটাও কথা বলবে না৷ বাহিরে পুলিশ শাড়ি তো খুলে রাখছো অর্ধেক আমার ওয়াইফকে এই অবস্থায় অন্য কেউ দেখবে!
‘নয়না জোড়ে চিৎকার দিয়ে বলে,কে আছো বাঁচাও।
‘বাহিরে পুলিশের লোকেরা বলতে থাকে গাড়ি থেকে বের না হলে আমরা গাড়ির দরজা ভেঙে ফেলতে বাধ্য হবো।
‘একটা শব্দ ও করবে না৷ চুপ করে থাকো বলেই শার্টের বাটন লাগিয়ে দিলো।তোমার বাবার নাম্বার বলো৷
‘বাবা! এতো রাতে? হ্যা তোমার বাবা৷
‘আপনি না চৌধুরী বংশের ছেলে তো বলুন আমাকে হ্যারাসমেন্টের দায়ে আপনাদের চাকরি খেয়ে দেবো৷
‘যাস্ট সাইলেন্ট যেটা বলেছি সেটা করো৷
‘ফোনটা দিন নাম্বার উঠিয়ে দেই।
‘যেটা বলেছি সেটা করো। এরপর বের হয়ে এসে বলে, আপনাদের কাজ কি রাতের বেলা ভদ্র মানুষদের অসম্মান করা?
‘নাহ আমাদের ডিউটি দেশ ও জনগণকে নিরাপত্তা দেয়া। আমরা সেটাই করছি।
‘যাস্ট ওয়েট৷ কল করলো মাহবুব তালুকদাররের নাম্বারে৷ কল ঢোকার আগেই কেউ একজন মোবাইল নিয়ে কল কেটে দিলো৷
‘তুমি বাহিরে কেনো এসোছো?
‘তুমি আদর্শ হ্যাসবেন্ডের মত আমাকে প্রটেক্ট করার জন্য একা লড়াই করবে আর আমি ঘুমিয়ে থাকবো জান!
‘আমি সুনয়না তালুকদার। পিতা মাহবুব তালুকদার। এই যে দুদিন আগে শুক্রবার গেলো সেই দিন টাই ছিলো আমার আর আমাদের ভালোবাসার প্রনয়ের দিন৷ আমরা হ্যাসবেন্ড ওয়াইফ লং ড্রাইভে বের হয়েছিলাম। এতে আপনাদের সমস্যা কি?
‘ আচ্ছা ম্যাডাম স্যরি। তবে আপনাকে তার ওয়াইফ মনে হচ্ছে না।
‘সুনয়না রাগি কন্ঠে বলল, আপনার বৌয়ের সাথে নিশ্চয়ই আপনি বেমানান তাই এসব উল্টোপাল্টা কথা বলছেন৷
‘এই চলো তো সময় নষ্ট না করে বলেই জিয়ানের হাতের মধ্যে হাত রাখলো।
গাড়িতে এসে বসে, জিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,আসলে আমি অনেক সাহসী কিন্তু সমস্যা হলো আমার আরেকটু সাহস দরকার তারপর আপনার সাথে বোঝাপড়া করবো৷
‘এই প্রথম সুনয়নার মুখ থেকে স্বাভাবিক কথা শুনলো জিয়ান। বেশ কিছুক্ষণ সুনয়নার দিকে তাকিয়ে রইলো৷
‘এভাবে দেখার কি আছে? আপনারই তো বৌ না চাইলেও সারাজীবন এই মুখ দর্শন করতে হবে। আচ্ছা আমরা যাচ্ছি কোথায়?
‘স্যরি।
‘নয়না অবাক হয়ে বলে আপনি কিছু বললেন এই মাত্র?
‘স্যরি আমি আসলেই দুঃখিত আমার উচিৎ হয়নি তোমার সাথে এমন আচরণ করা৷ তোমার তো এখানে কোন দোষ নেই উল্টো আমাদের মাঝে তুমি ফেঁসে গেছো রিয়েলি স্যরি সুনয়না।
‘আপনি স্যরিও বলতে পারেন! এক কাজ করুন আপনার স্যরির আচার বানিয়ে ধীরে ধীরে এক চামচ করে খেয়ে ফেলুন।
‘আমি তোমাকে একেবারের জন্য রেখে যাবো এখানে। খুব তাড়াতাড়ি তোমার জন্য তোমার উপহার চলে আসবে।
‘দেখুন আমার এইটুকু মাথা তাও আবার বিশাল চুল তার ভেতরে খোলস, খোলসের ভেতরে এইটুকু বুদ্ধি তাই সহজ ভাবে বলুন মিস্টার পাইলট।
‘খুব তাড়াতাড়ি আমি তোমার জন্য ডিভোর্স লেটার পাঠাবো।
‘যা ইচ্ছে করুন আগে আমাকে বাসায় দিয়ে আসুন।নাহহহ আমি বাসায় যাবো না। আপনি এক কাজ করুন আমাকে কোন হোস্টেলে রেখে আসুন।
‘আর ইউ ক্রেজি?
‘ হঠাৎ করে অশ্রু টলমল নেত্রে তাকিয়ে বলে,জানেন আমি না ধর্ষণ সম্পর্কে পত্রিকায় পরেছি টিভিতে নিউজ দেখেছি কখনো কল্পনা ও করিনি সেই সব কিছুর ভিক্টিম আমি নিজে হবো। আমার আপনাকে দেখলে ভয় হয় মনে হয় এখনি হিংস্র জানোয়ারের মত ঝাপিয়ে পরবেন আমার উপর। বলতে বলতে হাঁটুতে মুখ গুজে কান্না করতে লাগলো৷
‘এই মূহুর্তে নিজেকে ধ্বংস করে দিতে ইচ্ছে করছে জিয়ানের। শেষে কিনা সে কোন মেয়ের কাছে ধর্ষক! চোখে রক্ত জমাট বেঁধে গেছে হাত মুঠো করে নিজের প্রতি আসা রাগটাকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। নয়নার গায়ে হাত দিতেও লজ্জা হচ্ছে এখন। কিভাবে করলাম আমি এটা! নিজেকে ক্ষমা করবো কিভাবে? নয়নার মাথায় হাত রেখে বলে,
আমি তোমাকে কষ্ট দিয়েছি, আর তা কখনোই আমি চাইনি। আমি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি, তোমার যন্ত্রণার জন্য আমি গভীরভাবে দুঃখিত। আমি জানি, কথা দিয়ে সব কিছু ঠিক হবে না। আমি তোমার হৃদয়ে যে গভীর ক্ষত দিয়েছে জানিনা তুমি কখনো আমাকে ক্ষমা করবে কিনা!
আর কিছু বলার আগেই নয়না জিয়ানাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। প্লিজ কেঁদো না নয়না আমার কালো ছায়া কোনদিন আর তোমার উপর পরবে না৷ আমি জানি তোমার হৃদয়ে যে গভীর ক্ষত তাজা আছে তা হয়তো এজন্মে আমি মুছে দিতে পারবো না৷ পারলে ক্ষমা করে দিও।
‘নয়না কিছু বলতে যেয়েও বলতে পারলো না৷ গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে বসে রইলো৷
‘জিয়ান নয়নার বাড়ির সামনে এসে বলে,আমি কি এখান থেকে চলে যাবো? নাকি বাসার ভেতর পর্যন্ত আসবো?
‘আপনি আমাকে বাবা মায়ের কাছ থেকে নিয়ে গেছেন তাই তাদের হাতে ফেরত দিয়ে আসবেন৷
‘দারোয়ান বেশ অবাক হলো এতো রাতে নয়নাকে দেখে।
বাসায় দরজায় এসে বার কয়েক কলিং বেল দেয়ার পর মাহফুজা বেগমের ঘুম ভেঙে গেলো। ড্রয়িংরুমে এসে লাইট অন করে বলে, এতো রাতে কে আসলো? দরজা খুলে নয়নাকে দেখে বলে মা’ তুই এতো রাতে “সব ঠিক আছে তো?
কি হয়েছে? তোমার শার্ট ওর শরীরে কেনো? কি করেছো আমার মেয়ের সাথে?
‘আম্মু ভেতরে আসতে দাও আগে।
‘আয়। বলেই দ্রুত মাহবুব তালুকদারকে ডেকে তুললো৷ চোখ ডলতে ডলতে বলেন, এতো রাতে তোমার আবার কি হলো?
‘মেয়ে আর মেয়ের জামাই এসেছে দ্রুত চলো আমার কিছু ঠিক মনে হচ্ছে না৷
‘মাহবুব তালুকদার এসেই বলেন এতো রাতে? কি এমন ইমার্জেন্সি পরলো যে বাসায় চলে আসলে! আসার আগে একটা ইনফর্ম তো করবে?
‘আপনার মেয়েকে আপনার কাছে ফেরত দিতে আসলাম।
‘আচ্ছা কথা পরে হবে, নয়না তুই বরং জামাইকে নিয়ে রুমে যা৷
‘ওরা দুজন রুমে ঢুকতেই মাহবুব তালুকদার বাহির থেকে দরজা লক করে দিলো৷
#চলবে