অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-০৪

0
9

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৪
লাবিব নীলাঞ্জনার পিঠের চুল সরিয়ে ঘাড়ে আলতো করে চুমু খেলো। কোমড়ে হাত রেখে নিজের বক্ষে জড়িয়ে নিয়ে কানের কাছে ফিসফিস করে বলে, ভালোবাসি আমার প্রিয়তমা।
‘নীলাঞ্জনা কিছুটা সরে দাঁড়ালো। লাবিব কতবার বলবো বিয়ের আগে আমার এসব পছন্দ না। আমরা বিয়েটা কবে করছি?
‘ করছি না আমরা বিয়ে। ভালোবাসি আমি তোমাকে কি অদ্ভুত তোমাকে টাচ করলেই তোমার শরীর জ্বলে উঠে! তা তো উঠবেই পাইলট জিয়ান রেজা চৌধুরীকে খুব মিস করছো বুঝি? এতোই যখন রেজার জন্য প্রেম উতলে পরে তাহলে আমার সাথে আসলে কেনো? রেজাকে বিয়ে করে এখন হানিমুন সেরে ফেলতে।
‘নীলাঞ্জনা ঠাসসস করে লাবিবের গালে চড় বসিয়ে দেয়, আমার এখন মনে হচ্ছে আসলেই আমি ভুল মানুষের জন্য সবাইকে ত্যাগ করেছি। তুমি আমাকে সত্যি সত্যি ভালোবাসো তো? আমি তোমাকে কি বলেছি? যাস্ট এতোটুকুই তো শারীরিক সম্পর্কে আমরা বিয়ের পরে জড়াবো পবিত্র ভাবে। যে পুরুষ শরীরের পাগল হয় সে তো কখনো ভালোবাসতে পারে না। তার নেশা শরীর, শরীর পেলে একদিন ঠিক তার নেশা কেটে যায়। আমি আজ এক্ষুনি বাসায় চলে যাবো৷ তোমার সাথে আর একমুহূর্ত ও থাকবো না। আমার পরিবার আর আমার যা মানসম্মান যাওয়ার তাতো ধুলোয় মিশি গেছে। তোমার মত মানুষের সাথে থেকে নিজের আত্মমর্যাদা বিসর্জন দিতে পারবো না।
‘লাবিব নীলাঞ্জনার হাত ধরে বলে প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও আমার ভুল হয়ে গেছে। কি করবো বলো, তোমাকে দেখলেই আদর করতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে নিজের মধ্যে তোমাকে মিশিয়ে নিতে। আজই আমি তোমাকে বিয়ে করবো।
‘আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না লাবিব। আমার মনে বলছে তোমার আমার প্রতি কোন ফিলিংস নেই৷
‘এভাবে বলছো! বলছি তো ভুল হয়েছে এই কান ধরে স্যরি বলছি প্লিজ এবারের মত স্যরি এক্সপেক্ট করো ময়না পাখি৷।
‘করতে পারি এক শর্তে।
‘কি শর্ত বলো ময়নাপাখি। তোমার জন্য এই অধমের জান ও হাজির।
‘কথা দাও আমাদের মাঝে কখনো তুমি জিয়ানকে টেনে আনবে না। আমি যদি ওকে সত্যি ভালোবাসতাম তাহলে ওরে ছেড়ে তোমার কাছে আসতাম! জিয়ান আমার স্কুল লাইফের ভালোবাসা তখন আমি নেহাৎ বাচ্চা ছিলাম আবেগে ভেসেছি। তোমার সাথে পরিচয় হওয়ার পর আমি অনুভব করেছি হ্যা এটাই ভালোবাসা৷
‘লাভ ইউ আমার ব্যাক্তিগত ময়না পাখি।
” এবার যাও বিয়ের আয়োজন করো৷
‘তুমি নাস্তা করে রেডি হও আমি কাজি নিয়ে আসছি।
‘অপেক্ষায় রইলাম প্রেমিকা থেকে প্রিয়তমা স্ত্রী হওয়ার৷
🌿
আম্মু আমি সত্যিই দুঃখিত সুনয়নার বয়সটা যে এতো কম আমি বুঝতে পারিনি। যাইহোক আমি আমার ভুল শুধরে নেবো।
‘তোমার কি বিয়েটাকে ছেলেখেলা মনে হয় জিয়ান? বিয়ে হচ্ছে জন্ম জন্মান্তরের বন্ধন। এটা তোমার কিনে আনা কোন শোপিস না। ভালো লাগলো কিনে আনলে ভালো লাগলো না ছুড়ে ফেলে দিলে। তুমি যথেষ্ট ম্যাচিউর তাই নিজের জ্ঞান কাজে লাগাও বোকাদের মত কাজকর্ম করার কোন মানে নেই!
‘নয়না, তুমি বসো আমি তোমার জন্য নাস্তা নিয়ে আসি৷
যাওয়ার সময় জিয়ানকে বলে গেলো, আমি যাবো আর আসবো ওর সাথে কোন রকম মিস বিহেভিয়ার করবি না৷
‘নয়না বেডের এককোনায় বসে বসে চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে রুমটা দেখতে লাগলো। বাপরে রুমের ফার্নিচার থেকে শুরু করে রুমের দেয়ালের রং পর্দা সব সাদা৷ এতো শুভ্রতায় জড়ানো মানুষ এমন খারাপ হয়!
‘এই মেয়ে শোন..
‘প্রথমমত আমার নাম সুনয়না নট এই মেয়ে।
‘তুমি না বাচ্চা?
‘বাচ্চা কাকে বলে জানেন? মন চাইলেই আপনি যার গাল টেনে দিতে পারেন কোলে নিতে পারবেন তাকে৷ আমাকে দেখে কি বাচ্চা মনে হয়! পুরো তেত্রিশ কেজি ওজন আমার আর বয়স ষোল। সো বাচ্চা আর এই মেয়ে দুটোর কোনটাই আমার সাথে যায় না।
‘তারমানে তুমি ইচড়ে পাকা?
‘আপনি যাই বোঝাতে যান আমি বুঝবো না। কারন আপনি জিলাপির প্যাঁচের চেও কঠিন প্যাঁচানো৷ আর ভাববেন না আমি ভীতু! আমার কিন্তু অনেক সাহস জানেন আমার ক্লাসের রাফির নাক ফাটিয়ে দিয়েছিলাম এক ঘুষিতে। আপনি বড়ো তাই কিছু বলিনি৷ কাল রাতে যা করেছেন আপনার নামে মামলা করা উচিৎ।
‘মামলা হইলে পরে দেইখা নেবো থানায়। উপসসসস আমি তো ভিষন ভয় পেয়েছি।
‘আপনার মুখে গান মানায় না আপনার মুখে করলার মত তেতো কথা মানায়। এই আপনাকে আন্টি ছোট বেলায় মুখে মধু দেয়নি?
‘তুমি তো বড্ড বেশি কথা বলো! তোমাকে আজই আমি বাসায় দিয়ে আসবো। বয়সের চেয়ে কথা বেশি শিখেছো পিচ্চি কোথাকার।
‘একদম পিচ্চি বলবেন না৷
‘জিয়ান হুট করে নয়নাকে কোলে তুলে নিলো।
‘এই ছাড়ুন আমি কিন্তু চিৎকার করবো৷
‘নয়নার গালে পরপর দুটো চুমু খেলো এরপর বেডে বসিয়ে দিয়ে বলে,বাচ্চাদের এভাবেই কোলে নিয়ে আদর করতে হয়।
‘মনে মনে নয়না বলে,নেহাৎ ছয়তালা বিল্ডিংয়ের মত দেহ আর লম্বা নয়ত আমি বোঝাতাম আমাকে নিয়ে মজা করার শাস্তি কত কঠিন।
‘জিয়ান নয়নার সামনে বসলো, প্রথমবার নয়নার দিকে নজর দিলো। ভালো ভাবে লক্ষ্য করলো, হলদে ফর্সা গায়ের বরন, পিংকিস পিংকিস একজোড়া ঠোঁট,হরিণের মত টানাটানা একজোড়া চোখ। চেহারা জুড়ে অদ্ভুত সরলতা। হঠাৎ কপালের ডান পাশে চোখ পড়তেই জিয়ানের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো। ঠিক নীলাঞ্জনার কপালের ডানপাশে যেখানে তিল নয়নার ও সেম।
‘আপনি রেগে যাচ্ছেন কেনো! আমার ভয় করছে।
‘জিয়ান হুট করে নয়নার চুলগুলো মুঠ করে ধরলো,তোদের মত মেয়েদের আমার চেনা আছে। এই রুপের জালে আমাদের মত ছেলেদের জীবন ধ্বংস করে দিস৷ তোদের এমন অবস্থা করা উচিৎ যাতে আর কোন ছেলের জীবন নষ্ট না হয়। ভালোবাসাকে তোদের কাছে খেলনা মনে হয়!
‘নয়না ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলো। চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পরতে লাগলো অশ্রুকনা।
‘ব্যথাতুর কন্ঠে অনুনয়ের সুরে বলল,প্লিজ ছাড়ুন আমার লাগছে।
‘মিতা বেগম রুমে এসে এই দৃশ্য দেখে চিৎকার করে বলে জিয়ান এসব কি হচ্ছে? মানা করেছিলাম তো ওর সাথে মিস বিহেভ করতে! হাতে থাকা খাবারের ট্রেটা টেবিলের উপর রেখে নয়নাকে আগলে নিলেন বুকে৷
‘জিয়ান ততক্ষণে রুম ছেড়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েছে।
‘দাঁড়াও। মিতা বেগমের কন্ঠ শুনে স্থীর হলো জিয়ানের পা।
‘আম্মু প্লিজ এখন এই মূহুর্তে আমার কোন রকম জ্ঞানের বানী শোনার মন মানসিকতা বা ধৈর্য কোনটাই নেই। আমাকে একটু একা থাকতে দাও।
‘তোমার মেজাজ নিয়ে ডিপ ফ্রিজে রেখে আসো। আজ তুমি যেটা করলে আমার ভাবতেও ঘৃণা হচ্ছে তোমার মত সন্তান আমি গর্ভে ধারন করেছি! এইটুকু একটা মেয়ে তুমি ওর উপর শারীরিক মানসিক টর্চার করেই যাচ্ছো! তোমার প্রেমিকা তোমাকে ধোঁকা দিয়ে আরেক ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে তাতে এই নিষ্পাপ মেয়েটার কি দোষ? আর কোন মেয়ে এমন মেজাজ সহ্য করবে? মেয়েটা ঠিক ডিসিশন নিয়েছে তোমাকে ছাড়ার। আর হ্যা মনে রেখো ও আজ থেকে আমার মেয়ের মত। জীবনে দ্বিতীয়বার ওর গায়ে আঘাত করার কথা চিন্তাও করলে তোমার মত ছেলেকে অস্বীকার করতে আমি দুবার ভাববো না৷
‘জিয়ান বাহিরে এসে সোজা চিলে কোঠায় চলে আসলো। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে তার৷ আচ্ছা ছেলে মানুষের হৃদয় ভেঙে গুড়িয়ে গেলেও কি তাদের কান্না করা মানা! আমি কি দোষ করেছিলাম শুধুমাত্র নীলাঞ্জনা কে ভালোবাসতাম। আমি তোমাকে কিভাবে বোঝাবো আম্মু, নীলাঞ্জনাকে আমি খোলসের আড়ালে থাকা মুক্তর মত যত্নে রেখেছিলাম। নিজে শত আঘাত সহ্য করলেও কখনো ওর শারীরে সামান্য আঁচড় ও আসতে দেইনি৷
কেউ কেনো বোঝেনা ছেলেদেরও হৃদয় আছে! তাদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ কেউ কেন দেখতে পায় না ? তারাও পুড়ে বিরহের অনলে সেই দগ্ধ হৃদয়ের আর্তনাদ কারো হৃদয় স্পর্শ করে না! কেন কেন?
“তুমি ভুল ছিলে না, তুমি ছিলে সদ্য ফোটা সুভাষিত ফুল।
যার ঘ্রানের মাদকতা আমাকে নিঃশ্ব করে দিয়েছে।”

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে