অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-০৩

0
8

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৩
তুই কি আসলেই মেয়টার সাথে ইন্টিমেড হয়েছিস!
‘চুপ কর শা’লা মেজাজ এমনিতেই খারাপ আর খারাপ করিস না। নি*কো*টিনে শেষ টান দিয়ে বলে,করতে পারলাম কই?
‘তাহলে কি করেছিস! এই অবস্থা কি করে হলো?
‘তেমন কিছুই করিনি। টেনে রুমে নিয়ে এসেছি জবরদস্তি করেছি। পুরোটা কম্পিলিট হওয়ার আগেই মেয়ে বেহুশ!
‘তুই এইটুকু মেয়ের সাথে জবরদস্তি করেছিস! মেয়েটা বাচ্চা ব্রো?
‘রাখ তোর বাচ্চা। ছয়মাসের বাচ্চার মা হয়ে যাবে আসছে বাচ্চা! একটা বাচ্চা মেয়েকে কোন বাবা বিয়ে দেয়! আমার আর ওর বয়সের ডিফারেন্স জেনেই বিয়ে দিয়েছে।
‘জায়িন তুই তো আমার বন্ধু জায়িন না। আমি যে জায়িনকে চিনি সে-তো মেয়েদের সম্মান করে, ভদ্র প্রকৃতির একজন আদর্শ পুরুষ।
ভদ্রতা! ভদ্রতাকে আমি দাফন করে দিয়ে এসেছি ও-ই বাড়ির উঠোনে। কি দোষ ছিলো আমার? ভালোবাসে ছিলাম এইটুকুই। সবার বিরুদ্ধে যেয়ে বিয়ে করে নিজের অর্ধাঙ্গিনী বানাতে চেয়েছিলাম এটাই ভুল!
‘এখানে সুনয়নার দোষটা কোথায়?
‘সাপের বংশে মানুষ আসবে কোথা থেকে? ওরা সব ক’টা সাপ। তাই বিষদাঁত আগেই উপড়ে ফেলবো৷ ভাগ্যিস পিরিয়ড শুরু হয়েছে নয়তো আমি ওর এমন হাল করতাম জীবনে অন্য কোন পুরুষের কথা চিন্তায় আনতেও ওপর রুহ কেঁপে উঠতো।
‘তুই যাচ্ছিস কবে? তোর ছুটি শেষ হচ্ছে কবে?
‘সিগারেট ধরাতে ধরাতে বলে,পাঁচদিনের ছুটির তিনদিন শেষ আর দুদিন বাকি আছে। আচ্ছা লাবিব কই? ওরে তো আমার বিয়ের দিন থেকে দেখছি না৷ মোবাইল ও সুইচড অফ?
‘লাবিব গ্রামে গেছে। লাবিবের কথা ছাড় আমার কথা শোন, মেয়েটাকে একটা বছর সময় দে। এবার এসএসসি দিবে সেটা শেষ করুক। ততদিনে তোর সাথে ওর সম্পর্ক মজবুত হোক। এমন কিছু করিস না মেয়েটার সাথে যাতে তোকে ছেড়ে যেতে ব্যাধ্য হয়।
‘দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে হনহন করে বেরিয়ে আসলো নাহিদের রুম থেকে। সোজা বাসায় এসে নিজের রুমে ঢুকলো।
খাটের উপর তাকিয়ে দেখে খাটের উপর বসে চকোলেট খেতে ব্যস্ত নয়না। শার্টের কলার কাঁধ বেয়ে পরে কাঁধের বেশ খানিকটা স্পষ্ট।
‘ঝাঁঝালো কন্ঠে ডাকলো এই মেয়ে..
‘ভয়ে চকোলেট মুখের পাশে লেপ্টে গেলো। হাত পেছনো নিয়ে চকোলেট লুকিয়ে রাখলো।
‘তোমার সমস্যা কি? সব সময় নিজের শরীর দেখানোর চেষ্টা কেন করো? এসব কি পরেছো? শাড়ি কই তোমার?
‘নয়নার বলতে ইচ্ছে করলো আমার নাম সুনয়না নট এই মেয়ে। চোখ পিটপিট করে তাকাচ্ছে আর মনে মনে এসব ভাবছে।
‘কি হলো উত্তর দাও শাড়ি কোথায় তোমার?
‘নয়না উঠে দাঁড়িয়ে বলে এই তো।
‘পুরো শাড়ি পেঁচিয়ে কোমড়ের গুঁজে রেখেছে। দাঁড়ানো ফলে শার্টের হাতার ভেতরে হাত দুটো হারিয়ে গেছে।
‘জিয়ানের এবার রাগ না হাসি আসছে। সামনের দিকে ভালো করে তাকিয়ে মনে মনে বলে,আসলেই তো বাচ্চা লাগছে দেখতে! মুখে চকোলেট লেপ্টে আছে। শাড়ি এমনভাবে পেঁচিয়ে রেখেছে দু’ কদম হাঁটলেই উষ্টা খেয়ে পরবে। বুঝলাম না পুরো পরিবার কি আমার সাথে আবার একটা ধোঁকা করলো! বিয়ের দিনতো জলপাই রংয়ের লেহেঙ্গা পরা মেয়েটাকে এতো বাচ্চা লাগেনি।
‘এই মেয়ে এদিকে আসো।
‘নয়না বারবার হাতা দুটো উপরের দিকে উঠানোর চেষ্টা করছে, কয়েকবার চেষ্টা করে মোটামুটি হাতাদুটো কাবু করতে পেরেছে শাড়ি একটু উঁচু করে সামনে এগোতে চাইলেই বেডের উপর থেকে ধপাস করে পরে যেতে নিলে জিয়ান ধরে ফেলে,জিয়ানের গলা জড়িয়ে ধরে ড্যাপড্যাপ করে তাকিয়ে আছে নয়না। মনে মনে বলে হায় আমার রনবীর কাপুর।
‘জিয়ান ঠাসসস করে নিচে ফেলে দেয়, নয়না জোড়ে বাবাগো বলে জোড়ে চিৎকার করে উঠে। আরো চিৎকার দেয়ার আগেই জিয়ান নয়নার মুখ চেপে ধরে।
‘মনে মনে নয়না বলে,তুই একটা ভিলেন। তোকে আমি এমন শিক্ষা দেবো খালি আরেকটু সাহসটা আমার বাড়ুক।

🌿রুমের মধ্যে বসে না থেকে যাও মেয়েটার কাছে যাও খোঁজ নাও মেয়েটার দেখো তোমার ছেলে তার অবস্থা কি করেছে। দরকার পরলে ডাক্তার খবর দেই। ডাক্তার সুলতানা পারভিন কে কল করলেই চলে আসবে। নাজিম সাহেবের কথা শেষ করার আগেই নয়নার গলার স্বর কানে আসলো। মিতা বেগম দ্রুত ছুটে আসলেন রুমে।
‘এসে দেখে নয়না নিচে পরে আছে জিয়ান তার খুব কাছে মুখ চেপে রেখেছে।
‘মিতা বেগম জিয়ান বলে ডাক দিতেই জিয়ান নয়নাকে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে আসলো। মিতা বেগম দ্রুত এসে নয়নাকে বুকের সাথে চেপে ধরলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, তোমার এ অবস্থা কেন মা?
‘নয়না আড়চোখে জিয়ানের দিকে তাকাচ্ছে।
‘রুম থেকে বের হ।
‘জিয়ান সাদা শার্ট নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো।
‘মিতা বেগম নয়নাকে ধরে বেডে বসালেন। কোমল স্বরে জিজ্ঞেস করলেন তুমি শাড়ি পরতে পারো না?
‘নয়না মাথা নাড়িয়ে অসম্মতি জানালো।
‘আসো আমি পরিয়ে দেই। বলে নিজের আঁচল দিয়ে নয়নার মুখে লেপ্টে থাকা চকোলেট মুছে দিলেন। সুন্দর করে শাড়ি পরিয়ে দিলেন। তুমি বসো আমি তোমার জন্য খাবার আনাচ্ছি। আচ্ছা সকালে তোমার কেমন নাস্তা পছন্দ?
‘নয়না মিতা বেগমকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।
‘শাড়ি পরানোর সময় মিতা বেগম নয়নার শরীরে বিভিন্ন চিহ্ন দেখেছেন যা তার ছেলের বদৌলতে বাচ্চা মেয়েটার শরীরে স্থান পেয়েছে। মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,কাঁদে না নয়না। শরীর খুব ব্যথা করছে? আমাকে বলো তোমার কি সমস্যা হচ্ছে?
‘আমি আপনার সাথে থাকবো আন্টি।
‘আচ্ছা ঠিক আছে। তবে জানো তো বিয়ের পর মেয়েদের একমাত্র ভরসা যোগ্য আশ্রয়স্থল স্বামী।
‘নয়না মিতা বেগমের আঁচল খামচে ধরলো। গতকাল রাতে তার সাথে যা হয়েছে এরপর এই মানুষটার সাথে স্বাভাবিক হতে পারবে কখনো!
‘মিতা বেগম নয়নার ভয় বুঝতে পেরে নয়নাকে বলল, তোমার স্বামী ততটা খারাপ না যে রুপ তুমি দেখছো সেটা তোমার বোনের উপর রাগ ক্ষোভ থেকে৷ তবে জানো তোমাকে ভালোবাসা দিয়ে ওর এই রাগকে মোচন করতে হবে। তুমি চিন্তা কোরোনা আমি তোমাকে সহযোগিতা করবো আর্দশবান স্ত্রী হয়ে উঠতে। এখন বসো আমি খাবার নিয়ে আসি৷
‘মিতা বেগম চলে যেতেই নয়নার নীলাঞ্জনার কথাটা মাথায় আসলো। আচ্ছা নীলাঞ্জনা আপি তো লাবিব নামের একটা ছেলেকে ভালোবাসতো তাহলে এই তিত করলার সাথে কি সম্পর্ক! নীলাঞ্জনা আপি কি টু টাইমিং করতো? কেনো এমনটা করলে আমার সাথে নীলাঞ্জনা আপি! কেনো করলে?তোমাকে আমি কোনদিন ক্ষমা করবো না। চোখের পানি মুছে ড্রেসিং টেবিলের উপর একটা মোবাইল দেখতে পেলো দ্রুত মোবাইলটা হাতে নিয়ে সাইট বাটনে ক্লিক করতেই মোবাইলের স্কিনে দুজন কপোত-কপোতী হাসোজ্জল পিক ভেসে উঠলো। এটাতো নীলাঞ্জনা আপি আর তিত করলা। দুজনে এতোটা ক্লোজ! তারমানে আমি যা ভাবছি তাই? মোবাইলটা হাত থেকে রাখার আগেই কেউ ছো মেরে নিয়ে নিলো, কর্কশ কন্ঠে বলে,সাধারণ বোদবুদ্ধি নেই! পারমিশন ছাড়া কারো পার্সোনাল জিনিসে হাত দিতে নেই৷
‘আপনি নীলাঞ্জনা আপিকে কতদিন ধরে চেনেন?
‘সে কৈফিয়ত আমি তোমাকে দেবো না। নয়নার দিকে চোখ পরতেই চোখ গেলো গলার দিকে রক্ত জমে জমাট বেঁধে কালো হয়ে থাকা চিহ্নের উপর।
‘মনে একজন রেখে ঘরে কেনো আমাকে আনলেন? মলিন কন্ঠে বললো নয়না।
‘তোমার বয়স কত?
‘পেছন থেকে মিতা বেগম বলেন, ষোল বছর। এখন মনে হলো বৌয়ের বয়স জানতে হয়? বিয়ের আগে জানতে হয় বিয়ের পরে না।
‘স্যরি আম্মু আমার ভুল হয়েছে। আমি আমার ভুল শুধরে নেবো। আজই সুনয়নাকে ওদের বাসায় ফেরত দিয়ে আসবো।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে