অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-০২

0
10

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -২

সকালের আলো রুম জুড়ে ছড়িয়ে পরতেই উঠে বসলো জিয়ান, আড়মোড়া ভেঙে তাকাতেই দেখে বেডে রক্ত লেগে আছে। নাক মুখ কুঁচকে উঠো পরলো। ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে তে’লাপোকার মত ছুড়ে মারতে। নিজের রাগ সংযত করে ডাকতে লাগলো, এই মেয়ে উঠো? কি হলো উঠছো না কেন?
‘আম্মু আমার পিরিয়ড চলছে ঘুমাতে দাও ডিস্টার্ব করো না।
জিয়ান আর ডাকলো না নয়না কে। ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে আসলো৷ বাসার কারো সাথে কোন কথা না বলে বের হয়ে গেলো বাহিরে৷ ফার্মেসীতে এসে চুপচাপ কতক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো। বারবার ঘুরে ঘুরে প্যাডের দিকে তাকাচ্ছে৷ কিন্তু দোকান তো ফাঁকা হচ্ছে না! দূর আজ কি মানসম্মান এভাবেই যাবে?
‘আপনার কিছু লাগবে?
‘জ্বি এক প্যাকেট প্যাড দিন। সবচেয়ে ভালোটা।
‘লোকটা প্যাড প্যাক করে দিতে দিতে বলে,স্যার নতুন বিয়ে করেছেন বুঝি! তাই নতুন নতুন লজ্জা পাচ্ছেন! আরেহহ স্যার এসব তো কমন ব্যাপার৷ এতো লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। এ-র সাথে চকোলেট,আইসক্রিম, ফুল কিনে নিয়ে যাবেন৷ দেখবেন ভাবি আসমানের চাঁদ পাওয়ার মত খুশি হয়ে যাবে।
‘আপনাকে কত টাকা দিবো?
‘একশ বিশ টাকা।
‘টাকা দিয়ে জিয়ান দ্রুত বের হয়ে আসলো। ইচ্ছে করছিলো লোকটার নাক ফাঁটিয়ে দিতে। বাসায় এসে ঢুকতেই মিতা বেগম বলেন, মেয়েটার সাথে ভালো আচরণ করিস। মেয়েটার বয়স কম।
‘বয়স কম! তাহলে বিয়ে দিলে কেন? বাসায় সাজিয়ে রেখে দিতো! যে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছে সে মেয়েকে নিয়ে নাটক আমি সহ্য করবো না।
‘বিয়ে যেহেতু হয়েছে বৌ তোমারই থাকবে কেউ নিয়ে যাবে না৷ কয়েকটা দিন সময় দাও। বুঝতে পারছো আমি কি বলতে চাইছি?
‘আমি বুঝতে পারছি তবে দুঃখিত তোমাদের প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে তার বৌয়ের সাথে ফুলসজ্জা সেরে ফেলেছে।
‘কথা শেষ করার আগেই জিয়ানের গালে ঠাসসস করে একটা চড় পরলো। জিয়ান রক্ত চক্ষু নিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে নাজিম সাহেব।
‘তুমি কি মানুষ আছো? মানুষের তো বোধবুদ্ধি থাকে। নিজেকে মানুষ মনে করলে সুনয়নার সাথে মানুষের মত বিহেভিয়ার করবে। কবুল বলে বাসায় যখন নিয়ে এসেছো সারাজীবনের জন্য সে তোমার অর্ধাঙ্গিনী। নিজের অর্ধেক অংশ ও তোমার। তাই সেভাবেই ট্রিট করবে। বাবা মায়ের সামনে কথা বলার ম্যান্যারস টুকুও হারিয়ে ফেলেছো? তোমাকে পড়ালেখা করতে পাঠিয়ে ছিলাম প্রেম করতে না। করেছো প্রেম। হাজার বার মানা করেছি এই মেয়ের সাথে তোমার যায় না। তবুও তোমার জেদের কারনে আমরা নত হয়েছি। কি লাভ হলো! সেই তো তোমার সাধের প্রেমিকা তোমাকে ছেড়ে পালিয়ে গেলো! বললাম ফিরে আসো কিন্তু না তোমার তো বৌ লাগবেই বৌ ছাড়া তুমি ফিরবে কেন? তো বৌ যখন নিয়েই এসেছো তার যত্ন করো। আর হ্যা এরপর কথা বলার সময় সামনের মানুষটা কে সেটা দেখে ভদ্রতা বজায় রেখে উত্তর দিবে।
‘জিয়ান রাগে টগবগ করতে করতে দোতলায় আসলো। দোতলার সিঁড়ির কাছে থাকা ফ্লাওয়ার বসটা পা দিয়ে ফেলে ভেঙে ফেললো। ইচ্ছে করছো সুনয়নাকে শেষ করে ফেলতে।রুমে এসে দেখে নয়না ব্লাউজের ফিতা বাঁধার চেষ্টা করছে।চোখটা ফিরিয়ে নিলো৷ কিন্তু বেহায়া নজর আবার সেদিকে পরলো। ভেজা চুল থেকে টপটপ করে পানি ঝড়ছে, পিঠের বেশ খানিকটা জায়গা উন্মুক্ত। সেখানে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে। ফর্সা ঘাড়ের উপরে জোড়া তিল দুটো যেনো জিয়ানকে চুম্মুকের মত টানছে। কয়েক কদম এগিয়ে গিয়ে থমকে দাঁড়ালো জিয়ান। জোড়ে নিশ্বাস নিয়ে কর্কশ কন্ঠ বলে উঠে,শরীর দেখিয়ে জিয়ান রেজা চৌধুরী কে ঘায়েল করা সহজ নয়৷ তা বয়স কম হলেও পুরুষকে কিভাবে আকৃষ্ট করতে হয় সেটা ভালোই শিখেছ!
‘হঠাৎ পুরুষালি কন্ঠ শুনে চকমে যায় নয়না। কোনমতে শাড়ি দিয়ে নিজেকে প্যাঁচিয়ে নিয়ে বলে,আপনার মধ্যে কি সাধারণ ম্যানারস টুকুও নেই! রুমে ঢোকার আগে নক করে ঢুকতে হয়। এই টুকু বলেই ঢোক গিললো নয়না। যদিও চঞ্চল নয়না কাউকে ছেড়ে দেয়ার পাত্রী না কিন্তু এই লোককে দেখলেই কেমন ভয় হয়! নিজেকে তখন সিংহের গুহায় অসহায় বেড়াল মনে হয়।
‘হামারা রুম হামারা মার্জি।
‘অসভ্য মানুষের কাছ থেকে সভ্যতা আশা করাও বোকামি মুখ ফস্কে কথাটা বের হয়ে গেলো। সাথে সাথে ঠোঁট কামড়ে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলো। মুখের ভেতর কেমন ধুকপুক করছে।
নয়না শাড়ী দুহাতে ধরে কোনমতে হেঁটে ওয়াশরুমের দিকে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে আর কিছুক্ষণ এখানে থাকলেই বিপদ কখন যেনো আক্রমণ করে বসে! হুট করে জিয়ান নয়নার সামনে এসে দাঁড়ালো। নয়না দু’ কদম পিছিয়ে গেলো।জিয়ান দু’কদম এগিয়ে আসলো।
‘ভীত কন্ঠে বললো, সামনে থেকে সরুন কি করছেন?
‘জিয়ান হুট করে শাড়ি ভেদ করে নয়নার উন্মুক্ত কোমড় আকড়ে ধরে নয়নাকে নিজের অনেকটা কাছে নিয়ে আসলো।
‘নয়না চোখ বন্ধ করে নিলো। হার্ট এতো জোড়ে বিট করছে মনে হচ্ছে কেউ তবলা বাজাচ্ছে। ভেঙ্গে ভেঙে বলল প্লিজজ ছাড়ুন ।
‘উঁহু। অসভ্যতা করা এখনো বাকি। বলেই নয়নাকে ঘুরিয়ে নয়নার পিঠ নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নয়নার কাঁধে মাথা রেখে বলে,উফফ বড্ড আদুরে তুমি। বিয়ে যখন হয়েছে বাসরটাও সেরে ফেলি? এতো কিউট টেডিবিয়ারের মত বৌকে আদরে আদরে ভরিয়ে দিতে হয়। কে জানে এই বিয়ে কয়দিন টিকে?
‘নয়নার বন্ধ চোখের কার্নিশ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরছে।
হুট করে জিয়ান নয়নাকে ছেড়ে দিয়ে বলে,তোর মত মেয়ের দিকে জিয়ান চৌধুরী নজর ত দূর ফিরেও তাকাই না বলেই ধাক্কা দিয়ে বেডে ফেলে দিয়ে বলে,আগামীকাল রিসিপশনের পরে তোমার ছায়া জেনো এই বাড়িতে না পরে।
‘হঠাৎ করে এমন হওয়ায় শাড়ি পুরোটা এলোমেলো হয়ে গেলো৷ জিয়ান এক পলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিয়ে বলে,টেবিলের উপরে প্যাড রাখা। আমি বের হচ্ছি তাড়াতাড়ি শাড়ি ঠিক করো।
‘জিয়ান রুম থেকে বের হতেই নয়না শাড়ি পেঁচাতে লাগলো৷ নাহ কোন ভাবেই আগামাথা মেলাতে পারছে না৷ ধুর এসব শাড়ি ফারি আমাকে দিয়ে পরা হবে না। কিন্তু আমি পরবো কি! কোন ড্রেসও তো আনা হয়নি। গালে হাত দিয়ে কতক্ষণ ভাবলো তারপর নিজের খুরাফাতি বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে পরার মত ড্রেস বানিয়ে নিলো। প্যাড হাতে নিয়ে বেশ অবাক হলো। প্যাডের সাথে একটা ব্যাগে কিটক্যাট আর ডেইরি মিল্ক। চকোলেট দেখে বেশ অবাক হলো নয়না। মনে মনে বলে,লোকটা কি এই আধবুড়ো বয়সে চকোলেট খায়!এমন রসকষহীন মানুষ চকোলেট কি করে খেতে পারে? চকলেট খাবে সুইট কিউট মিষ্টি হৃদয়ের মানুষ। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বেডে বসে চকোলেট খাওয়া শুরু করলো।
🌿
জিয়ান চলে যেতেই মিতা বেগম বললেন, এতো বড়ো ছেলের গায়ে কেউ হাত তোলে?
‘একদম চুপ থাকো। এ সব কিছুর জন্য একমাত্র দায়ী তুমি। ছেলের দোষ সারাক্ষণ আঁচলের তলায় লুকিয়ে রেখে রেখে বিগড়ে দিয়েছো ছেলেটাকে। বয়স! বাবা মায়ের সামনে বয়স আবার কি! অন্যায় দেখলেই কানের নিচে ঠাটিয়ে লাগিয়ে দিলে আজ এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হতো না। আর হ্যা ও-ই বাড়িতে কল করে বলে দাও কাল এখানে রিসিপশন। সো এখানে এসে যেনো কোন নাটক ক্রিয়েট না করে৷ এখানকার কেউ তো জানেনা এক মেয়ে পালিয়ে গিয়েছে বলে আরেক মেয়েকে ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছি৷ চৌধুরী পরিবার হাত ছাড়া তো করা যায় না। ডার্টি গেইম খেলেছে।
‘দোষ তো তোমার ছেলের ও আছে।
‘সেটাও তোমার ফল্ট আমি তখন তোমাকে বললাম আমি দেখে নিচ্ছি রেজাকে। তখন তুমি বললে দয়া করে ভরা আসরে সিন ক্রিয়েট করোনা। যা হচ্ছে হতে দাও।
🌿জিয়ান রুমের সামনে এসে দাঁড়িয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে!
#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে