অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-০১

0
11

#অর্ধাঙ্গিনী
#সূচনা পর্ব
#নুসাইবা_ইভানা

বিছানার চাদর গায়ে পেঁচিয়ে গুটিশুটি মেরে বসে আছে এক কিশোরী। চাদরের বিভিন্ন জায়গায় ছোপ, ছোপ রক্তের দাগ।চোখ মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। অন্ধকার রাত টিমটিম করে জ্ব’লছে মোমবাতিগুলো পাশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিভিন্ন সুগন্ধি ফুল৷

বারান্দায় ইজি চেয়ারে বসে একের পর এক সিগারেটের পোড়াচ্ছে জিয়ান । জিয়ান রেজা চৌধুরী, সদ্য পাইলটে জয়েন করেছে ।বয়স আঠাশের কোটায় হলেও দেখতে পঁচিশ বছরের যুবক। লম্বা চওড়া শরীর,উজ্জ্বল বর্ণের গায়ের রং, ধুসর রাঙা চোখ।
কিছু সময় পর উঠে এসে কিশোরীর সামনে বসলো, সিগারেটে শেষ টান দিয়ে ধোঁয়া নয়নার চোখে মুখে ছাড়লো। মোবাইলের টর্চ অন করে বলে,বিয়ে হলে স্বামীর আদর সহ্য করতে হয় তা জানো না।
‘নয়না চুপ করে আছে শরীরের অসহ্য ব্যথা চোখ থেকে টুপটুপ করে অশ্রু ঝড়ছে।
‘বয়স কত তোমার? নাম কি?
‘নয়না তবুও চুপ করে আছে। চোখ থেকে অঝোর ধারায় অশ্রু ঝড়ছে।
‘জিয়ান রেগে বলে, বোবা নাকি কি জিজ্ঞেস করছি উত্তর দাও?
‘নয়না তবুও মুখ থেকে কথা বের করলো না।
জিয়ান নয়নার বাহু ধরে বলে, নাম জিজ্ঞেস করছি তো উত্তর দাও।
‘নয়না কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,সুনয়না।
‘তোমার বোন কোথায়?নীলাঞ্জনা কোথায়?
‘আমি জানিনা।
‘আমাকে বিয়ে কেন করলে? কবুল কেন বললে?তোমাকে শোপিসের মত সাজিয়ে রাখার জন্য বিয়ে করিনি, ভালো না বাসি, আমি প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ আমার শারীরিক চাহিদা আছে সেটা তো বউ হিসেবে তোমাকে পূরণ করতে হবে। কবুল যখন বলেছ তখন তো আর নিস্তার নেই। বলেই নয়নাকে আবার কোলে তুলে নিলো।
‘নয়না কাঁদো, কাঁদো কন্ঠে বলে,প্লিজ আমাকে ছেড়েদিন আমি আর সহ্য করতে পারবো না৷ অনেক ব্লাড আসছে। আমার শরীরও ব্যাথা হচ্ছে প্লিজ ছেড়ে দিন।আর ব্যথা দেবেননা ভাইয়া৷
‘বয়স কত?
‘ছেড়ে দিন আমাকে আমি সত্যি বলছি আমি মরে যাবো।
‘জিয়ান নয়নাকে বেডে রেখে লাইট অন করলো৷
‘নয়না আরো ভালো করে নিজের শরীরে চাদর প্যাচিয়ে নিলো। এলোমেলো চুল,ফর্সা চেহারাটা লাল হয়ে আছে। চোখে লেপ্টে আছে কাজল, ঠোঁট জোড়া ফুলে উঠেছে।
‘মেয়েটাকে দেখে এবার মায়া হচ্ছে জিয়ানের । জেদের বসে এইটুকু মেয়ের সাথে জোর জবরদস্তি করা হওয়া উচিৎ হয়নি৷ জিয়ান নরম স্বরে বললো, এখনো ব্লাড আসছে?
‘নয়না মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।
‘ওয়াশরুমে যাও আর চেঞ্জ করে আসো৷
‘নয়না উঠতে যেয়ে হোচট খেয়ে পরলো৷
জিয়ান নয়নাকে কোলে তুলে ওয়াশরুমে নিয়ে আসলো৷
‘নয়নার শরীরে পানি লাগতেই শরীর জ্বলে উঠলো।
জিয়ান নয়নাকে শাওয়ারের নিচে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বাহিরে চলে আসলো।
বেডের পাশে বসে নিজের ফোনের স্কিনে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, কি সুন্দর হাসোজ্জল মুখখানা, কে বলবে এই মেয়েটি তাকে চরম ভাবে ঠকিয়েছে!আসলেই কি স্বার্থের দুনিয়ায় ভালোবাসা ঠুনকো?

এরমধ্যেই শীতে কাঁপতে কাঁপতে জিয়ানের একটু দূরে দাঁড়িয়ে নয়না বলে,আমার প্যাড লাগবে?
‘আমি কি তোমার চাকর আমাকে কেন বলছো!
‘নয়না জিয়ানের ভয়ে আরো দু’কদম পিছিয়ে যায়। যার ফলে নয়নার কাঁধ থেকে চাদর সরে যায়। ফর্সা কাঁদে লাল তিলটা জ্বলজ্বল করছে।
‘জিয়ান চোখ রাঙিয়ে বলে,তুমি কি ড্রেসও পরতে পারো না! এখন সেটাও আমাকে পরিয়ে দিতে হবে?
‘নয়না চাদর শক্ত করে ধরে বলে,আমার ড্রেস ত বাসায়।
‘তাহলে তুমি এখানে কেন এসেছো?
‘নয়না কিছু বলবে তার আগেই জিয়ান নয়নার দিকে একটা টিশার্ট আর জিন্স বাড়িয়ে দিয়ে বলে, আজকের মত ম্যানেজ করো কাল এক ব্যবস্থা করবো।
‘কিন্তু প্যাড?
‘প্যাড দিয়ে কি করবে?
‘নয়না পায়ের নখ দিয়ে দেয়ালে আঁচড় কাটছে৷
‘বলো!
‘পিরিয়ড।
‘প্রথমবার ত তাই ব্লাড বের হয়েছে এখন আর বের হবে না। চুপচাপ এগুলো পরে শুয়ে থাকো।

‘নয়না ওয়াশরুমে এসে টিশার্ট পরতেই হাঁটুর নিচ পর্যন্ত ঢেকে গেলো। ছ’ফুট লম্বা চওড়া বডির টিশার্টের ভেতর নয়না ছানা পোনা। জিন্সটাও পরে দু’হাতে ধরে আবার রুমে আসলো।
‘জিয়ান নয়নার দিকে একবার তাকালো, তাকিয়ে কোনমতে নিজের হাসি চেপে রেখে বলে, বা’পাশে শুয়ে পরো।
নয়না চুপচাপ গুটিশুটি মেরে শুয়ে পরলো।

🌿 মাহফুজা বেগম বালিশে মুখ গুঁজে ফুপিয়ে কেঁদেই চলেছে।
মাহবুব তালুকদার এবার উঠে বসলেন বেড সাইট সুইচ টিপ দিয়ে লাইট অন করলেন ধমকের সুরে বললেন,সেই কখন থেকে মরা কান্না করছো!তা মরেছেটা কে?
‘এই বাচ্চা মেয়েটাকে চোখের সামনে থেকে নিয়ে গেলো,আর তুমি বলছো কে মরেছে!
‘মাহফুজা কতবার বলেছি, মেয়ের জন্মই হয় পরের ঘরের জন্য। আজ না হয় কাল পাঠাতেই হতো।
‘তাই বলে আমার বাচ্চা মেয়েটাকে বিয়ে দিয়ে পাঠিয়ে দিবে?
‘আমি যা করেছি এই তালুকদার বংশের মান সম্মান আর ভালোর কথা চিন্তা করেই করছি৷ আর তাছাড়া ছেলেও ভালো আর বংশীয়।
‘সব সময় তুমি ভালোই করো, তবে সেটা তোমার ভাইয়ের জন্য নয়ত তার পরিবারের জন্য। কিন্তু সেসবে আমার মেয়েটাকে কেন কুরবানি দিলে?
‘ আমার মেয়ে আর আমার ভাইয়ের মেয়ে আমার কাছে আলাদা না। নীলাঞ্জনা একটা ভুল করেছে তার ভুলের জন্য আমরা শাস্তি দেবো কিন্তু সমাজের মানুষের কাছে নিজের মেয়ের সম্মান নিয়ে কথা উঠুক সেটা ত হতে দিতে পারিনা। নাজিম চৌধুরী যেমন নাম তেমন তার দাপট তার একমাত্র ছেলে জিয়ান রেজা চৌধুরী। যদি তাদের প্রস্তাবে রাজি না হতাম তাহলে সমাজে মুখ দেখানোর মত অবস্থা তারা রাখতো না।
‘বাহহহ নিজের ভাইয়ের মেয়ের সম্মান রক্ষা করার জন্য নিজের মেয়ের জীবন বলি দিয়ে দিলে!
‘বলি কেন বলছো মেয়ে আমার ভালো থাকবে।
‘তাতো থাকবেই এখনো এসএসসি গন্ডি পেরোতে পারলো না সেই মেয়েকে এক প্রাপ্ত বয়স্ক পাইলটের গলায় ঝুলিয়ে দিয়ে বলছে মেয়ে আমার ভালো থাকবে! তুমি কি সত্যি সুনয়নার নিজের বাবা? এমন বাবা জেনো কোন মেয়ের না হয়।
‘হ্যা আমি পৃথিবীর সবচেয়ে স্বার্থপর বাবা।
‘তুমি মনে রেখো আমার মেয়ের শরীরে একটু আঁচড় লাগলে আমি কাউকে ছেড়ে দিবো না জেলের ভাত খাওয়াবো সবাইকে ভুলে যাবো কার সাথে আমার কি সম্পর্ক!

মাহবুব তালুকদার উঠে এসে বারান্দায় দাঁড়ালেন রাত বাজে একটা পঁচিশ এখন কি কল করা ঠিক হবে? সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে কল করেই বসলেন নাজিম সাহেবকে।
নাজিম সাহেব ভ্রু কুঁচকে কলটা রিসিভ করলেন গম্ভীর কন্ঠে বললেন এখন আর কি বলার বাকি আছে তালুকদার সাহেব?
‘রাগ অভিমান করাটা স্বাভাবিক কিন্তু ভাগ্যের খেলা আমাদের তো বোঝা দায়।
‘যেটা বলার জন্য কল করেছেন সোজা সেই পয়েন্ট আসুন।
‘আমার মেয়েটা নাবালিকা এখনো তার আঠারো বছর হতো দুই বছর বাকি। আপনার ছেলেকে বলবেন আমার মেয়েটার সাথে যাতে কোন রকম খারাপ কিছু না করে।
‘নাবালিকা মেয়েকে বিয়ে দেয়ার সময় মনে ছিলো না? এখন নিজের ছেলেকে এসব আমি কোন মুখে বলবো?
‘ভাই আমার মেয়েটাকে নিজের মেয়ে মনে করে একটু খেয়াল রাইখেন।
নাজিম সাহেব কল কেটে দিয়ে বলে নাইস জোক্স একটা সাতাশ বছরের যুবকের বউ কিনা নাবালিকা!
মিতা বেগম বললেন কি বলো?তাহলে যাও ছেলেকে আটকাও রাগের বশে মেয়েটার সাথে কি না কি করে ফেলবে।
‘তোমার ছেলের রাগ তোমার অবশ্য জানা কতবার বলেছি এই মেয়েকে বিয়ে করতে হবে না, না করবেই করবে! কি হলো রেজাল্ট মেয়ে আরেক ছেলের সাথে পালিয়ে গেলো, শেষে কি হলো তারা আরেকটা মেয়েকে আমাদের ছেলের গলায় ঝুলিয়ে দিলো? এবার যা হওয়ার হোক তুমি চুপচাপ ঘুমাও।
‘এই সবে বাচ্চা মেয়েটার কি দোষ? ওতো ভিক্টিম সবাই ওর উপর চাপিয়ে দিলো সব!

চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে