অভিশপ্ত_রাত (১ম পর্ব)
Umme Nipa
স্যার যে মেয়েটাকে মৃত ঘোষনা করেছিলেন তার পেটে বাচ্চা নড়ছে কথাটা নার্স মিনু দৌড়ে এসে ডাঃ শিহাবকে জানালো।
শিহাব চায়ের কাপ রেখে রাগী গলায় বলে উঠলেন কি বলছো যা তা?মৃত মানুষ এর পেটের বাচ্চা নড়াচরা কি করে করে?আমি একদম দেখেছি তার হার্ট বিট নেই,এছাড়া শরীর মৃত মানুষ এর মতন শক্ত হয়ে গিয়েছে।তাহলে কি করে পসিবল তার ভিতরের বাচ্চা জীবিত থাকা?
মিনু: স্যার আমি গায়ের কাপড় টা ভালো করে দিতে গিয়ে অনুভব করলাম তার পেট নড়ছে।একদম জীবিত মানুষ এর মতন।
শিহাব মিনুর কথায় কান না দিয়ে জলদি হেটে মর্গের দিকে চলে গেল।
সে পূর্নরায় পাল্স চেক করলেন।উম হু কোন রেস্পন্স নেই।পেট টা অনেক টা বড়। দেখেই মনে হচ্ছে মেয়েটি গর্ভবতী।বেচে থাকলে খুব জলদি বাচ্চার মা হত।পেটে হাত দিয়ে বার বার শিহাব অনুভব করার চেষ্টা করছে কিন্তু না,কিছুই অনুভব হচ্ছেনা।
মিনু আমি আপনার কথায় আবার এসেই বোকা বনে গেলাম।আমি জানতাম এমন কিছুই হবার সম্ভবনা নাই।গর্ভের বাচ্চার প্রান তার মায়ের প্রান এর সাথে জড়িয়ে থাকে।মায়ের নিশ্বাস ই তাদের নিশ্বাস।এটা কোন সিনেমা না।চিকিৎসা বিজ্ঞানে এমন কিছুই হয়না।যেখানে মা মরে বরফ হয় আর বাচ্চা বেচে থাকে।
মিনু ভয়ে ভয়ে বলতেছিল স্যার বিশ্বাস
এরই মাঝে মিনুকে থামিয়ে দেয় শিহাব।এই বডি কে এনেছে?আই মিন তার আপনজন কেউ এসেছে?
মিনু: না।পুলিশ এনেছিল।ময়নাতদন্ত করতে হবে তা জানতাম।
শিহাব: এর মৃত্যু হয়েছে অনেক আগে।আজ সকাল নাগাদ। আর এখন বাজে রাত ১০:৩০।এর বেঁচে ফেরা টা আসলেই অসম্ভব।
মিনু: আর বাচ্চাটা?
শিহাব: মিনু তুমি মেয়ে মানুষ, মন নরম তাই জানি বাচ্চাটার জন্য খারাপ লাগছে।আমার ও লাগছে।দীর্ঘ ন বছরেও বিয়ের পর আমার কোন বাচ্চা নেই।কিন্তু দেখো এই মহিলার বাচ্চা দিয়েও আল্লাহ নিয়ে গেল।আল্লাহর ইচ্ছা বোঝা খুব কঠিন। যাই হোক তুমি এদিকে বেশি থেকোনা।লাশ ঘরে থাকা তো তোমার দায়িত্ব না তাইনা?এই বলে শিহাব চলে গেল..
চেম্বারে বসে পি সি অন করেও মনোযোগ দিতে পারছেনা শিহাব।বার বার মৃত মেয়েটার মুখ ভেসে আসে।
ময়নাতদন্ত করার পর জানতেই হবে কি তার মৃত্যুর কারণ। এই প্রথম কোন অচেনা লাশ এর মৃত্যুর কারণ নিয়ে তার প্রচুর মাথাব্যথা হচ্ছে।
পেটের ভিতর বাচ্চাটা দেখতে কি তার মায়ের মতন ই হয়েছিল।ইস!বাচ্চা টা যদি আমি পেতাম!আজীবন আগলে রাখতাম ভাবতে ভাবতে শিহাবের স্ত্রী উপমার কল।
-হুম বলো
-কি গো কটা বাজে?আসবে কখন?
একটু কাজ ছিল।
জলদী আসলে ভালো হত।আকাশ মেঘলা বৃষ্টি নামবে।
হুম রাখছি এখন
শিহাব পি সি অফ করে ব্যাগ গুছিয়ে নিল।বাসায় উপমা একাই থাকে।কলেজ এর শিক্ষিকা সে।দুপুরেই বাসায় চলে আসে।তারপর সারাক্ষণ একা।শিহাবের মা বাবা কেউ ই বেঁচে নেই।না আছে কোন বাচ্চা।
মিনু বার বার মর্গের দরজার দিকে তাকিয়ে আছে।তার স্পষ্ট মনে আছে,হঠাৎ ঝড়ো হাওয়ার দরজা টা খুলে গেল।মিনু দরজা লাগাতে গিয়ে দেখছে জানালা খোলা আর তা দিয়ে সাই সাই করে বাতাস এসে লাশ এর গায়ে কাপড় সরিয়ে ফেলছে।
জানালা দিয়ে লাশ এর মুখটায় তার চোখ লেগে এলো।কি কোমল মুখ।মৃত বুঝা যাচ্ছে না।পেট টা উঁচু। ফুলে দ্বিগুণ হয়েছে আরো।মেয়েটার মুখ ভরা মনে হচ্ছিল হাসি।এই হয়ত উঠে বসবে।
কাপড় দিয়ে শরীর ঢাকতে যাবার আগে তার অদ্ভুত আকাঙ্ক্ষা চেপে বসলো।একবার মেয়ের পেটে হাত দেয়ার খুব বাসনা চেপে গেল।
কোমল ভাবে হাত দিল।মৃত মানুষ ব্যথা পায়।মেয়েটাকে ময়নাতদন্ত করলেও নিশ্চই ব্যথা পাবে।পুলিশি মামলার কারনে না একে ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে না দেয়া হচ্ছে কবর।কি কপাল মেয়েটার
আচমকা মনে হতে লাগলো ভিতরে থাকা বাচ্চাটা যেন নড়াচরা করছে।শিউরে উঠলো মিনু।সে ভালোভাবে খেয়াল করলো।নড়াচরা এতই তীব্র হচ্ছে যে পেটের উপর রাখা কাপড়টা দুমড়ে মুছরে যাচ্ছে।
মিনুর গলা ক্রমশ শুকিয়ে এসেছিল।কিছুইতেই সে ডঃ শিহাবকে বিশ্বাস করাতে পারলনা।সে জানে এটা কেউ বিশ্বাস করবেন।এত দূর্বল হৃদয় নিয়ে সেবিকা হওয়া যায় না।সেবিকাদের হৃদয় নমনীয় থাকতে হয়।অসুস্থ ব্যক্তির জন্য কোমল তেমন ভয় পেয়েও কোমল।শক্ত হওয়া যাবেনা।
বাইকে চেপে শিহাব বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল।ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি হঠাৎ যেন ইচ্ছাকৃত ভাবে বেশি ঝড়তে লাগলো। বাইক সাইড করে বিলডিং এর নিচে আশ্রয় নিয়েছে শিহাব।
সেই বিল্ডিং এর বিপরীত পাশেই লাশ কাটা ঘর।রাস্তার বিদ্যুৎ ও চলে গেল।আর লাশ কাটা ঘরের কেবল দোতলার কাজ সম্পন্ন হয়েছে।নিচতলা ফাকা।শিহাবের ভয় করছেনা।দোতলায় তাকিয়ে ভাবছে,ওখানের বাসিন্দাদের কি বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে হয়?
ওখানের মানুষগুলি আর আমার মাঝে দূরত্ব কত কম কিন্তু আমি চাইলেই যা তা করতে পারি তারা পারেনা।তারা নিজের উপর আর নিজেই নিয়ন্ত্রন রাখতে পারেনা।
বৃষ্টির তীব্রতা কমে যাচ্ছে। উপমা বার বার কল দিয়েই চলেছে।
হুট করেই লাশকাটা ঘরের দোতলা থেকে ভেসে আস্তে লাগলো,আয় আয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা , চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা।
শিহাব ভড়কে গেল।দোতলায়য় তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই।সে ভেবে নিয়েছে হয়ত তার ভাবনার ভুল।এতক্ষণ আজগুবি ভাবনা তাকে ঘোরে ফেলেদিয়েছে।সে কিকরে ডাক্তার হয়েও প্যারানরমাল বেপারে ব্লিভ করতে পারে!হাস্যকর
মিনুর আজ নাইট ডিউটি।রাতে দুটা সিজার আছে।যেখানে তার থাকা লাগবে।কিন্তু সে আজ কাজে মনোযোগ দিতে পারছে।
এরই মাঝে একজন এসে বললো,আমার স্ত্রীর প্রসব যন্ত্রনা উঠেছে। একটু দেখবেন।ডাক্তার ম্যাম কই?
মিনু তার সাথে চলে গেল।
শিহাব সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলো।মাথা ভিজে গেছে একেবারেই।উপমার বকুনি খেতে হবে শিওর।দরজায় বেল দিচ্ছে দরজা খুলছেই না উপমা।সপ্তম বারের মতন বেল দিতেই দরজা খুললো।দরজার ওপাশে মেয়েটাকে দেখে শিহাবের বুক টা ধক করে উঠলো।ওহ মাই গড! এ কি করে সম্ভব?আমি কি ঠিক দেখছি?
এই মেয়েকেই তো আজ আমি নিজে মৃত ঘোষনা করলাম।
শিহাব শক্ত হয়ে দাড়িয়ে আছে।কিছুতেই হিসাব মিলাতে পারছেনা।তার সাথে কি ঘটছে।একই রকম দেখতে মানুষ হয়!নাকি মৃত মানুষ ফিরে আসে!সব কিছুতে মিলে তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে শিহাবের।এরই মাঝে মেয়েটির পিছন থেকে উপমা এসে বললো কি হলো?ভিতরে আসো…
চলবে…