অভিমান হাজারো পর্বঃ-৯

0
2289

অভিমান হাজারো পর্বঃ-৯
আফসানা মিমি

—“ভাবী তুমি কি কোথাও যাচ্ছো?”
—“অতশী! হ্যাঁ ঐতো একটু হাসপাতালে যাব।”
—“কেন? তোমার কিছু হয়েছে? শরীর খারাপ?”
—“না না তেমন কিছু হয়নি। আসলে কয়েকদিন যাবৎ শরীরটা বিশেষ ভালো যাচ্ছে না।”
—“একটু খুলে বলো তো কি সমস্যা?”

অদিতি বিস্তারিত বলতে লাগলো
—“আসলে কয়েকদিন যাবৎ লক্ষ্য করছি শরীরটা কেমন অসাড় অসাড় লাগে। মাথাটা হঠাৎ করেই চক্কর দিয়ে উঠে। খেতে বসলে গা গুলায়। আর তাছাড়া ইদানিং পেটটাও একটু ছেড়ে ছেড়ে ব্যথা করছে। ছোটবেলায় অ্যাপেন্ডিক্সের ব্যথা ছিল।”

অতশী আৎকে উঠে বললো
—“সেকি! এখনো কি সেটা আছে নাকি?”
—“না না, অপারেশন করার পর ভালোই ছিলাম। কিন্তু কয়েকদিন ধরে…..”
—“আচ্ছা ভাবী, তোমার মেন্সট্রুয়েশন নিয়মিত তো?”
—“প্রায় দুইমাস যাবৎ হচ্ছে না তো। আর তাছাড়া ছোটবেলা থেকেই আমার অনিয়মিত হয়।”
—“ছোটবেলার সময় আর এখনকার সময় কি এক? তোমার একবার হোম টেস্টটা করা উচিৎ ছিল।”
—“এতোকিছু ভেবে দেখিনি আমি।”
—“আচ্ছা ঠিক আছে। আমিও তোমার সাথে যাব চলো।”
—“কিন্তু তোমার তো এমনিতেই শরীর খারাপ। তার ওপর আমার সাথে গেলে…..”
—“আমাকে নিয়ে এতো টেনশনের দরকার নেই। আমি ঠিক আছি। তোমাকে কি আমি একা ছেড়ে দিব নাকি? রাস্তায় যদি কোন বিপদ আপদ হয়!”
—“স্পন্দন শুনলে কিন্তু তোমায় খুব বকবে ওকে না বলে গেলে।”
—“সে জানলে তো বকবে! আমি মায়ের কাছে বলে যাব তাহলেই হবে।”
—“নাহ তুমি বরং স্পন্দনকে একটা ফোন দাও। এমনিতেই সেদিন যা রাগারাগি করলো তোমার সাথে! তোমাকে না দেখতে পেয়ে তো পুরো পাগলপ্রায় হয়ে গিয়েছিল। এক ভুল বারবার কোরো না।”

অতশী বাধ্য হয়ে বললো
—“আচ্ছা ফোন দিচ্ছি।”

—“হ্যালো…”
—“হুম।”
—“কি হুম? কিছু বলবে?”
—“না মানে হ্যাঁ…..”
—“ভনিতা না করে সোজাসুজি বলো।”
—“আসলে ভাবীকে নিয়ে একটু বাইরে যাব।”
—“কেন?”
—“কেন আবার? দরকার বলেই যাব।”
—“তোমার না শরীর খারাপ? বাইরে যাওয়ার দরকার কি? আব্বু, ভাইয়া কেউই তো বাসায় নেই। আর এদিকে আমিও ফেঁসে গেছি আরেক ঝামেলায়। আজকেই কেন তোমাদের বের হতে হবে? উফফ…অসহ্য! আচ্ছা এক কাজ করো তাহলে ড্রাইভার নিয়ে যাও একা একা যেও না। বুঝতে পেরেছো?”
—“হ্যাঁ বুঝেছি।”
—“আচ্ছা সাবধানে যেও।”
—“হুম।”

শাশুড়ীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অতশী আর অদিতি বেড়িয়ে পড়লো হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।

—“ভাই সাহেব, আমি আজকেই ওদের দুজনের আক্বদটা সেরে ফেলতে চাই। যদি এতে আপনার কোন আপত্তি না থাকে।”

অয়নের বাবার এমন কথা শুনে আফরা স্তব্ধ হয়ে গেছে। এতক্ষণের হাজার মাইল গতির হার্টবিটটা যেন হঠাৎ করেই কয়েক মুহূর্তের জন্য থেমে গেছে। মনে হচ্ছে গলায় এসে হঠাৎ করেই আঁটকে গেছে হৃদপিণ্ডটা। শ্বাস প্রশ্বাস যেন টুপ করেই বন্ধ হয়ে গেছে হঠাৎ করে। পুরো শরীরে নিস্তেজ একটা ভাব এসে পড়ছে। তিরতির করে কাঁপছে তার শরীর, হাত পা। ঘেমে একাকার হয়ে যাচ্ছে।

আফরার কম্পমান ঠোঁটের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অয়ন। তার এ অবস্থা দেখে বেশ মজা পাচ্ছে অয়ন। বুঝাই যাচ্ছে বেশ শকড হয়েছে বিয়ের কথা শুনে। সবে তো শুরু এমন শক পাওয়ার। এখনো তো পুরোটাই বাকি পড়ে আছে। আপনমনে এসব ভেবে মুচকি হাসছে অয়ন। আফরা অয়নের এমন হাসির কারণ খুঁজে পাচ্ছে না। ধ্যান ভাঙলো বড়দের কথায়।

—“এ তো খুশির খবর! তবে আফরার এতে কোন আপত্তি আছে কিনা তাও আমার জানা দরকার। কারণ একবার বিয়ে হয়ে যাওয়া মানে তাকে সারাজীবনের জন্য এ বিয়ে নামক পবিত্র সম্পর্কটা মেনে নেওয়া। এ পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আগে ওর মতামত নেওয়াটা জরুরী। কিন্তু আমার মেয়ের ওপর আমার বিশ্বাস আছে। আমার অসম্মান হবে এমন কোন কাজ সে করবে না। তাই নারে মা?”

আফরার দিকে তাকিয়ে বললো। বাবার এমন কথায় আফরার চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছে। এখানে আপত্তি করার প্রশ্নই আসে না। ওর বাবা কত আশা করে তার দিকে তাকিয়ে আছে তার উত্তরের আশায়। এমনিতেই বাবা হার্টের রুগী। এতো লোকের সামনে তার মতামত জানতে চায়ছে। সে না করবে কোন মুখে?

—“তোমার আপত্তি থাকলে বলতে পারো মামনি।” অয়নের ফুফু বললো

চোখের পানিটা গাল বেয়ে পড়ার আগে নিচু হয়ে টিস্যু দিয়ে আলগোছে চেপে ধরে কোনমতে বললো
—“না, আমার কোন আপত্তি নেই।”

আফরার লুকিয়ে চোখের পানি মুছাটা দেখে কেন জানি অয়নের একটু খারাপই লাগলো।

এতোক্ষণ সবাই মনে হয় ওর উত্তরের আশায়ই বসে ছিল। তার বলার শেষে সবাই একত্রে বলে উঠলো ‘আলহামদুলিল্লাহ্!’
তার মা তাকে ধরে ভিতরের ঘরে নিয়ে যাওয়ার পর কান্নায় ভেঙে পড়লো আফরা।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


—“আম্মু আমাকে এভাবে জরুরী তলব দিয়ে আনার কারন কি? আফরা কাঁদছে কেন? আর ড্রয়িংরুমেই বা এতো লোকজন কিসের?”

একদমে কথাগুলো বলে আফরার কাছে এসে বসলো। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো
—“কিরে বনু কাঁদছিস কেন? কেউ কিছু বলেছে তোকে?”
—“আজ ওর আক্বদ।”
—“মানে?” চোখে মুখে হাজার বিস্ময় সামিরের
—“মানে বুঝিস নি? আজ আফরার বিয়ে।”
—“তোমার মাথা ঠিক আছে আম্মু? এতো তাড়াতাড়ি কিসের বিয়ে? কিসব আবোল তাবোল বলছো তুমি?” রাগে ফেটে পড়ছে সামির।
—“যা তাহলে তোর বাবাকেই গিয়ে জিজ্ঞেস করে নে। এমনিতেই মানুষটার হার্টের সমস্যা। ছেলেমেয়ের যদি একটা গতি করে না দিয়ে যেতে পারে তাহলে মরেও শান্তি পাবে না।”
—“তাই বলে এতো তাড়াতাড়ি….”
—“ছেলে ভালো, পরিবারও ভালো। বিয়ের পর ওকে লেখাপড়া করারও সুযোগ দিবে।”
—“এরকম সবাইই বলে আম্মু। কিন্তু পরে….”
—“নাহ তাদেরকে দেখেই বুঝেছি তারা কেমন মানুষ। তাছাড়া তাদের ফ্যামিলিতে কোন ঝামেলাও নেই। ছেলেরা তিন ভাইবোনের মধ্যে বড় বোনটার বিয়ে হয়ে গেছে কয়েক বছর আগেই। ছোট একটা বোন আছে। পড়াশোনা করছে। মেয়ের মতোই আগলে রাখবে ওরা। খুব করে অনুরোধ করছে তোর বাবার কাছে।”
—“তাই বলে এভাবে হুটহাট বিয়ে করিয়ে ফেলবে? একটুও কি ধৈর্য্য নেই তাদের?”
—“মেয়ে পছন্দ হয়েছে তাই আর দেরি করতে চায় না তারা। আর তাছাড়া ওদের মা নেই।”
—“কিন্তু আম্মু এভাবে কোন খোঁজ খবর না নিয়ে….”
—“কালকেই খোঁজ নিয়ে দেখেছে তোর বাবা। তারপরই এগিয়েছে। নয়তো তাদের আসতে বলতো না।”
—“কিরে বনু তোর কোন আপত্তি নেই তো?”
—“দ্যাখো ভাইয়া, আব্বুর এ অবস্থায় আমি কিছুতেই আব্বুর মুখের ওপর কথা বলতে পারবো না। যদি আবারো উনিশ থেকে বিশ হয়ে যায়! আর তাছাড়া আব্বু তো আর আমার খারাপ চায়বে না। আব্বুর খুশিতেই আমি খুশি।”

আলট্রাসনো করে হাসপাতাল থেকে বাইরে বেড়িয়ে এলো তারা দুজন। রিপোর্ট দুই ঘন্টা পরে দিবে। তাই অতশী বললো পাশেই একটা রেস্টুরেন্ট আছে ঐখানে গিয়ে বসতে। দুইজনে কোল্ড কফি অর্ডার করলো।

—“জানো অতশী, আমার না কেমন যেন লাগছে!”
—“কেমন লাগছে ভাবী?”
—“আসলে খুব টেনশন হচ্ছে। রিপোর্টে কি না কি আসবে।”
—“একদম টেনশন কোরো না। দেখবে সব ভালোই হবে যা হওয়ার। একদম টেনশন ফ্রী থাকো তুমি।”

কফি আসার পর তাতে চুমুক দিয়ে রেস্টুরেন্টের আশপাশটা দেখছে অতশী। নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে পুরো রেস্টুরেন্ট জুড়ে। তবে মাঝে মাঝে মানুষের মিহি গুনগুন কথা বলার আওয়াজ আসছে কানে। চারদিকে চোখ ঘুরিয়ে নিজেদের টেবিলে চোখ ফিরিয়ে আনার সাথে সাথে একটা কর্ণারের টেবিলের দিকে আবারো তাকালো। ঐদিকটা একদম নিরিবিলি। একটা পরিচিত মুখ দেখতে পাচ্ছে অতশী। হালকা আলোয় খুব একটা বুঝা না গেলেও সে নিশ্চিত যে এটা কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিটিই। তাই পুরোপুরি সিউর হওয়ার জন্য অদিতিকে বললো

—“ভাবী ঐদিকে একটু তাকাও তো!”
কফি খাওয়া থামিয়ে অদিতি জিজ্ঞাসা করলো
—“কোনদিকে?”
—“ঐযে পশ্চিম কর্ণারের টেবিলটার দিকে।”

কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকার পর অদিতি ভ্রু কুঁচকে বললো
—“এটা লাবণ্য না?”
—“আমার কাছে তো তাই মনে হচ্ছে। সিউর হওয়ার জন্য তোমাকে দেখালাম। যদি আমার চোখের ভুল হয়ে থাকে!
—“না ভুল না। তুমি ঠিকই দেখেছো। কিন্তু ও এখানে কি করছে? আর তার পাশে ঐ ছেলেটিই বা কে?”
—“দেখে তো মনে হচ্ছে তাদের দুজনের মাঝে কিছু চলছে। কিন্তু ছেলেটার মুখ দেখা যাচ্ছে না।”
—“হুম তাছাড়া ছেলেটাকে দেখে মোটেও সুবিধার মনে হচ্ছে না। দ্যাখো কেমন ঘেঁষে বসে আছে শরীরের সাথে লেপ্টে।”
—“লাবণ্য কি এটা টের পাচ্ছে না?”
—“আর কত রূপ দেখবো এই মেয়ের? পরিবারের মান সম্মান সব ডুবিয়ে ক্ষান্ত হবে মনে হচ্ছে। দাঁড়াও এক্ষুণি গিয়ে জিজ্ঞেস করছি এতো ঘেঁষাঘেঁষি কিসের এই ছেলের সাথে! এসব করার আগে কি একটাবারও তার বাবা ভাইয়ের কথা ভাবলো না?”

অদিতিকে টেনে বসিয়ে
—“আরে আরে মাথা খারাপ নাকি তোমার? এখন তাকে কিছু বললে শুধুশুধু সিনক্রিয়েট করবে এই পাবলিক প্লেসে। তার চেয়ে বরং বাসায় গিয়ে নিই আগে। তারপর দেখা যাক কি করা যায়! এখন চলো রিপোর্ট নিয়ে বাসায় যাই।

একপ্রকার টেনেটুনেই নিয়ে গেল অদিতিকে। নির্ঘাত কোন ঝামেলা করে ফেলবে এই মেয়েটা।

হুসনে আরা খাতুনকে হন্তদন্ত হয়ে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করতে দেখে ভ্রু জোরা সম্পূর্ণ কুঁচকে গেল অদিতির। এ মহিলা ফের এ বাড়িতে কি ঝামেলা সৃষ্টি করতে চলে এসেছে তা মনে মনে ভেবে চলেছে অদিতি। এ মহিলার এ বাড়িতে আগমন মানেই একটা না একটা তাণ্ডবলীলা ঘটানো। যখনই আসবে তখনই হাউকাউ শুরু করবে এসে। এক দন্ড শান্তিতে থাকতে দেয় না কাউকে। শ্বশুর শাশুড়ীকুলের আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে শুধুমাত্র এ মহিলাটিকেই দু’চোখে সহ্য করতে পারে না সে। শুধুমাত্র শাশুড়ীর আত্মীয়া বলে মুখ বুজে সব সহ্য করে। নয়তো উনার মুখও দর্শন করতো না সে।

এসেই চারদিকে চার হাত পা ছড়িয়ে সোফায় চিৎপটাং হয়ে শুয়ে পড়লো হুসনে আরা খাতুন।

—“ও বড় বউ! এক গেলাস ঠান্ডা পানি আনো তো দেহি। আর তোমার শাওড়িরে খবর দেও যে আমি আইছি।”

‘এসেছে এক মিনিটও হয়নি অমনি শুরু হয়ে গেছে ফরমায়েশ জারি করা!’ বিড়বিড় করতে করতে রান্নাঘরের দিকে এগোলো অদিতি। চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট।

বিকেলবেলার নাস্তা তৈরি করছিল অতশী। সেই মুহূর্তে বড় জা এর বিরক্তিতে ছেয়ে যাওয়া মুখপানে চেয়ে জিজ্ঞাসা করলো
—“কি হলো ভাবী? বিড়বিড় করে কি বলছো?”
—“আর বোলো না বোন! এসেছেন এক মহিলা প্রেসিডেন্ট! আসতে না আসতেই হুকুম জারি করা শুরু করে দিয়েছে আমার ওপর। জাস্ট অসহ্য!”
—“তোমার কিছু করতে হবে না ভাবী। যা করার দরকার আমাকে বলবা। এ অবস্থায় তোমার বেশি নড়াচড়া করা উচিৎ হবে না। এখন থেকে একটু সাবধানতা অবলম্বন করে চলতে হবে তোমাকে। বলো কি করতে হবে আমাকে?”
—“শুনো তোমাকে বলে রাখি, ঐ যে সোফায় মিসেস চিৎপটাং হাত পা ছড়িয়ে আধশোয়া হয়ে আছে! উনার কাছ থেকে যথেষ্ট পরিমাণ দূরত্ব বজায় রেখে চলবে। মুখে কোন লাগাম নেই। যাকে যা ইচ্ছা বলে বসেন।”

অতশী হালকা হেসে বললো
—“ভাবী এভাবে বোলো না। এটা কিন্তু এক প্রকার গীবত! গীবতকারীর শাস্তি কিন্তু ভয়াবহ! আর তাছাড়া কে উনি? উনার ওপর তোমার এতো ক্ষোভই বা কিসের?”

অতশী জিজ্ঞাসা না করে পারলো না। অদিতি যেভাবে বলা শুরু করেছিল উনি শুনেও ফেলতে পারতেন। তাছাড়া মহিলাটি তার শ্বশুড়ের কোন আত্মীয়াই হবে হয়তো। শ্বশুর শাশুড়ী যদি অদিতির কথোপকথন শুনে ফেলতেন তাহলে তো অদিতিকে উনারা খারাপ ভাবতো।

—“যেহেতু তাণ্ডব এসে পড়েছে দেখতেই পাবে কে উনি আর আমার ক্ষোভ কিসের জন্য!”

অদিতির কথা শুনে অতশী হেসে দিল। তাদের কথার মাঝখানেই ঐ মহিলাটির হাঁকডাক শোনা গেল।
—“কই গো বউ! পানি আনতে গিয়া কি পথ হারায় ফেললা নাকি? পানি আনতে এতোক্ষণ লাগেনি?”

অদিতি যেতে নিলে অতশী তাকে থামিয়ে দিয়ে নিজেই পানি আর সাথে কিছু নাস্তা সাজিয়ে নিয়ে গেল। ছোট সেন্টার টেবিলটায় হাতের ট্রেটা রেখে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মহিলাটিকে সালাম দিল। মহিলাটি অতশীর দিকে তাকিয়ে তির্যক দৃষ্টিতে আগাগোড়া দেখতে লাগলো। তার দিকে তাকিয়েই হাতে পানির গ্লাসটা তুলে নিল। পানিটা এক ঢোকে খেয়ে শেষ করে একটা পাকোড়া হাতে নিয়ে কামড় দিতে যাবে তখন হঠাৎ ধমকে বলে উঠলো
—“এমন সঙ এর মতো খাড়াইয়া আছো ক্যান? যাও এহান থিকা!”

এমন কথায় অতশী ভেবাচেকা খেয়ে গেল। এ কেমন ব্যবহার! সালাম দিল সালামের উত্তর না নিয়ে কেমনতর ভাবে কথা বলে উঠলো! দ্রুত সেখান থেকে প্রস্থান করে অতশী। ভাবী ঠিকই বলেছিল। আসলেই একটা তাণ্ডব। মনে মনে বিড়বিড় করে অতশী।

—“মামী কেমন আছেন আপনি? কখন আসলেন?”
খুশিতে গদগদ হয়ে হুসনে আরা খাতুনকে লাবণ্য জিজ্ঞাসা করলো
—“আরে লাবু, কইথিকা আইলি? আইলাম তো হেই বিহালবেলা। তরে তো দেখলামই না আইসা। কই ছিলি তুই?”
—“ঐতো ফ্রেন্ডের সাথে।”
—“লেহাপড়া ঠিকঠাক মতো করতাসোস ত?”
—“জ্বী মামী করছি।”
—“তাইলে যা গিয়া ফেরেশ হ রুমে গিয়া।”

—“কিরে ইয়াসমিন তোর কি খবরাবর? পুলারে বিয়া করাইলি অথচ জানাইলিও না!”
ইয়াসমিন বেগম ইতস্তত করে বলতে লাগলেন
—“আসলে ভাবী হয়েছে কি স্পন্দনের বিয়েটা একপ্রকার হুট করেই হয়ে গেছে। কোন আত্মীয় স্বজনকেই জানাতে পারিনি। ভাবছি একটা অনুষ্ঠান করে সবাইকে এসে বউ দেখার জন্য বলবো।”

বড় ভাইয়ের বউ বলেই কিনা কে জানে! ইয়াসমিন বেগম বেশ সমীহ করে চলেন উনার বড় ভাবীকে। নয়তো মুখের যা লাগাম! কখন কি বলে বসে ঠিকঠিকানা নেই। দেখা যায় এমন কথাও বলে বসে যা শুনলে জ্বলে কম পুড়ে বেশি।

—“তা কই তোর মেঝ বউ? ডাক দেহি একটু। আসার পরে তো আইসা একবার জিগাইলোও না যে মামী শইল গতর ভালা নি আমনের?”

অদিতি আশেপাশেই ছিল। উনার কথা শুনে মনে মনে বিশ্রী একটা গালি দিল। যদিও উনি মুরুব্বি মানুষ! তবুও কোন অনুতাপ হলো না মনে বরং একটু শান্তি পেল। কত বড় মিথ্যেবাদী খবিশ মহিলাটা!

—“আস্সালামু আলাইকুম। কেমন আছেন মামী?”

মাথায় ঘোমটা দিয়ে হুসনে আরা খাতুনের সামনে এসে দাঁড়ালো অতশী। ইতোমধ্যেই জা’এর কাছ থেকে সে কিছুটা বিস্তারিত জেনে নিয়েছে উনার সম্বন্ধে। পান থেকে চুন খসলে তবেই হলো!

দ্বিতীয়বারের মতো অতশীকে আগাগোড়া দেখে নিয়ে বললো
—“তা কেমন বাপ মার ঘর থেইকা আইছো যে মুরুব্বিদের যে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে হয় অইডাও জানো না?”

এমন কথায় অতশী একটু কষ্ট পেল বটে। কথায় কথায় বাবা মাকে নিয়ে কটুবাক্য করাটা ওর মোটেও পছন্দ না। কিন্তু সেটা প্রকাশ না করে বললো
—“কিন্তু মামী আমি তো এমন কোথাও পাইনি যে মুরুব্বিদের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে হয়!”
—“কিরে ইয়াসমিন, তোর পুলা দেহি এক্কেরে একটা ধানি লঙ্কা বিয়া কইরা আনছে। কি চটাংচটাং কথা! কার লগে কেম্নে কথা কইতে হয় অইডা কি বাপ মা শিখায়া দেয় নাই?”

অতশী কান্না আঁটকে দাঁড়িয়ে রইলো। অদিতি তার সাথেই দাঁড়িয়ে আছে। সে অতশীর কাপড় ধরে টেনে ইশারা করছে এখান থেকে সরে যেতে। কিন্তু অতশী অনড় দাঁড়িয়ে রইলো।

চলবে………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে