অভিমান হাজারো পর্বঃ-৭

0
2456

অভিমান হাজারো পর্বঃ-৭
আফসানা মিমি

—“অরিন কালকে একটু বেরুতে পারবি?”
—“কোন দরকার?”
—“হ্যাঁ দরকার বলেই তো বলছি।”
—“কিন্তু কেউ যদি জিজ্ঞেস করে তাহলে কি বলবো?”
—“তুই রিমনকে খুলে বলবি আমার সাথে দেখা করতে আসবি।”
—“আচ্ছা বলে দেখি। তা কয়টায় বেরুতে হবে?”
—“এই ধর আড়াইটে তিনটের দিকে।”
—“আচ্ছা ঠিক আছে।

হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এসেছে অতশী আর অরিন। অতশীর মুখটা যেন কালো মেঘে ছেয়ে আছে। সত্যিই জীবনের খেলায় কে কখন হেরে যায় তা কেউ বলতে পারে না। কেউবা অনেকদিন পৃথিবীর আলো বাতাস গ্রহন করতে চায়। কেউবা নিজের সাথে হেরে গিয়ে চারপাশের পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপ খাওয়াতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। আবার কেউবা পৃথিবীর মায়া এতো তাড়াতাড়ি ত্যাগ করতে চায় না। তবুও তাদেরকে পরপারে পাড়ি জমাতে হয় সকল মায়া ত্যাগ করে। সকল মায়ার সম্পর্ক ছিন্ন করে।

অতশীর গম্ভীর মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অরিন। একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে তারা দুজন।
—“কিরে কিছু ভাবলি?”
অরিনের কথায় মাথা তুলে তাকায় অতশী। মুখটা শুকিয়ে আছে।
—“কি ভাববো?”
—“এ ব্যাপারে ভাইয়াকে কিছু জানাবি না?”
—“জানিয়ে কি হবে শুধুশুধু?” নির্লিপ্ত ভঙিতে জবাব দিল।
—“অন্তত মনে একটু শান্তি হলেও তো পাবি। তোকে ভুল বুঝে অভিমান করে বসে আছে ভাইয়া। তার ভুল আর অভিমানটা ভাঙিয়ে দে।”
—“জানালে যে সে কষ্ট পেয়ে পেয়ে মরবে। আর তা আমি মানতে পারবো না। তারচে বরং যেভাবে আছি সেভাবেই থাকি।”
—“দ্যাখ আমি বুঝতে পারি তোর আর ভাইয়ার সম্পর্কটা স্বাভাবিক নয়। কেন স্বেচ্ছায় মনের কষ্ট বাড়াচ্ছিস?”
—“সেই কষ্টের কাছে এই কষ্ট কিছুই না। আরতো কয়টা দিন…”
—“চুপ একদম বাজে কথা বলবি না।”
—“ভালো লাগছে নারে। বাসায় যাব।”
—“হুম চল। তবে আমার কথাটা ভেবে দেখিস।”

আজকে স্পন্দন একটু তাড়াতাড়িই বাসায় চলে এসেছে। অতশীর শরীরটা বেশি একটা ভালো নেই। তার ওপর ঠিকমত খাওয়াদাওয়াও করে না। এতো টেনশনে রাখে মেয়েটা! কোন কাজে মন বসাতে পারে না একদম। বাসায় ঢুকে সোফায় হেলান দিয়ে বসে পড়ে। একটু বেশিই ক্লান্ত লাগছে আজ।

—“মা, এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দাও তো!”
—“কিরে আজ এতো তাড়াতাড়ি চলে এলি যে!”
—“ভাবছিলাম অতশীকে নিয়ে একটু ডাক্তারের কাছে যাব।”
—“কিন্তু অতশী তো বাসায় নেই।”

মায়ের কথা শুনে হেলান দেওয়া অবস্থা থেকে তড়াক করে সোজা হয়ে বসে স্পন্দন। কপাল কুঁচকে জিজ্ঞাসা করে
—“নেই মানে? কোথায় গেছে?”
—“তা তো বলে যায়নি। শুধু বলেছে একটু দরকার আছে।”
—“আর তুমিও ওকে এই অবস্থায় একা ছেড়ে দিলে?”
—“আরে আমি তো….”

—“সে তো আর ছোট বাচ্চা নয় যে একা কোথাও গেলে রাস্তা পার হতে না পেরে অ্যাক্সিডেন্ট করবে। তোমরা এতো আদিখ্যেতা করতে পারো মেয়েটিকে নিয়ে! দেখলেই আমার গা জ্বলে যায়।”

লাবন্যর কথা শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল স্পন্দনের।
—“এই অতশীকে নিয়ে তোর সমস্যা কিরে? ওর পিছনে এভাবে লেগে থাকিস কেন সবসময়?”
—“উচিৎ কথা বললেই যত দোষ। কোত্থেকে না কোত্থেকে ধরে নিয়ে এসেছো। আবার তাকে নিয়ে ঢং করো। এগুলো সহ্য করা যায়?”
—“মা তোমার মেয়েকে চুপ করতে বলো। নয়তো আমার হাতে থাপ্পড় খাবে এখন।”
—“হ্যাঁ হ্যাঁ এখন ঐ মেয়েটার রাজত্ব চলবে এ বাড়িতে। ঐ রাস্তার মেয়েটার জন্য এখন আমাকে থাপ্পড় মারার হুমকি দিচ্ছো।”
—“মুখ সামলে কথা বল লাবন্য। আর কাকে রাস্তার মেয়ে বলছিস তুই? জিভ টেনে ছিড়ে ফেলব তোর।”
—“আহ স্পন্দন কি শুরু করেছিস? যা উপরে যা, গিয়ে রেস্ট নে।”

হনহন করে উপরে চলে গেল স্পন্দন। মেয়েটা আজকে বাসায় ফিরুক। ঠেং ভেঙে ঘরে বসিয়ে রেখে দেবে। বড্ড বাড় বেড়েছে ওর।

—“তোমার ছেলের কত বড় সাহস দেখেছো? বলে কিনা আমার জিভ টেনে ছিড়ে ফেলবে! শুধুমাত্র ঐ মেয়েটার জন্য আজকে এতোগুলো কথা শুনালো আমাকে!”
—“তুই জানিস না তোর ভাইয়ের স্বভাব কেমন! ওর সামনে এসব বলতে গেলি কেন? তোকে না আমি নিষেধ করেছি অতশীকে এভাবে অসম্মান না করতে! তবুও বারবার ওর পিছনেই কেন লাগতে যাস তুই? ওর সাথে তোর কিসের এতো শত্রুতা?”
—“জাস্ট সহ্য করতে পারি না ঐ ছোটলোকের মেয়েটাকে। মেয়েটা আজকে বাসায় ফিরুক। দ্যাখো ওর কি করি!”
—“কাকে ছোটলোক বলছিস তুই হ্যাঁ? এতো অহংকার ভালো না বুচ্ছিস? জানিস তো অহংকার পতনের মূল! আর যদি অতশীকে কিছু বলিস তাহলে আমাকে আর মা ডাকতে পারবি না।”
—“মা! ঐ মেয়েটার জন্য এ কথাটা বলতে পারলে তুমি?”
—“যা চুপচাপ নিজের ঘরে যা। যা বলেছি মনে থাকে যেন। কোন সিনক্রিয়েট করতে যাবি না।”

রেগে হনহন করে চলে গেল লাবণ্য। এই উড়নচন্ডী মেয়েটাকে নিয়ে ভারী ঝামেলায় পড়েছে ইয়াসমিন বেগম। দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের ঘরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।

সেদিনের কথাগুলো শুনার পর থেকে আফরার ওপর একটা জেদ তৈরি হয়েছে অয়নের। কখনো কোন মেয়ের দিকে চোখ তুলেও তাকায়নি সে। যেদিন আফরাকে প্রথম দেখে তার চোখ যেন স্থির হয়ে গিয়েছিল। আফরার হাসিতেই সে কুপোকাত হয়ে গিয়েছিল। ঘটনাটা মাস ছয়েক আগের এক মায়াবী সন্ধ্যার। অয়ন তার ছোটবোন অরুনিমাকে আনতে তার ভার্সিটি গিয়েছিল। সেদিন নবীনবরন অনুষ্ঠান ছিল। তাই সন্ধ্যে হয়ে যাওয়ায় নিজেই আনতে যায়। আজকালকার রাস্তাঘাটের যা অবস্থা! মেয়েদের একা একা চলাফেরা করা মোটেও নিরাপদ নয়। সেখানে গিয়ে ভিতরে না গিয়ে ভার্সিটির গেইটের সামনেই অপেক্ষা করছিল অয়ন। কারণ তার এসব জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান মোটেও ভালো লাগে না। মোবাইল চাপছিল আর গেইটের বাইরে পায়চারী করছিল অয়ন। একটু পর পরই ভিতরে নজর বুলাচ্ছিল। তেমনই একবার চোখ বুলিয়ে নজর অন্যদিকে ঘুরাতে গিয়ে ফের তার আঁখিজোড়া ঐদিকে নিবদ্ধ হলো একটা মেয়ের ওপর। দুইটা মেয়ের মাঝখানের মেয়েটাতে চোখ আঁটকে গিয়েছিল তার। বিশেষ করে মেয়ের ঐ ঝঙ্কারময়ী হাসিটা ছিল নজরকাড়া। সন্ধ্যার হালকা শীতল বাতাসে মেয়েটার কয়েকটা উড়োচুল চোখেমুখে পড়ায় মেয়েটি তা সযত্নে কানের পিছনে গুঁজে দেওয়ার দৃশ্যটা একেবারে মনে গেঁথে গেছে। মেয়েটার পরনে সাদার মাঝে হালকা বেগুনী কালারের সুতার সিম্পল কাজ করা একটা সাধারণ থ্রি-পিস পরা ছিল। তবুও মেয়েটার সৌন্দর্য এতোটুকুও ভাটা পড়েনি এতে। বরং তার সৌন্দর্য যেন আরো বেশি করে উপচে পড়ছিল। সন্ধ্যার এই মায়াবী আলোয় বড়ই মোহময়ী লাগছিল তাকে। এতো বছরের জমানো ভালবাসা যেন মেয়েটাকে দেওয়ার জন্য মনটা উতলা হয়ে যাচ্ছিল। সেদিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে মেয়েটাকেই দেখে যাচ্ছিল। এদিকে কখন যে মেয়েটা চলে গেল তা টেরও পেল না সে। হঠাৎ কারো ধাক্কায় ঘোর কাটে অয়নের। তাকিয়ে দেখে অরুনিমা ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে।
—“কিরে ভাইয়া এভাবে স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? সেই কখন থেকে ডাকছি।”

অয়ন আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখে মেয়েটি উধাও। হতাশার একটা নিঃশ্বাস বের হয় তার ভিতর থেকে।
—“আশেপাশে কাকে খুঁজছিস?”
—“হুম? কাউকে না। বাসায় চল।”

যেদিন থেকে আফরাকে দেখেছে সেদিন থেকেই তার জমানো ভালবাসাগুলো ঢেলে দিচ্ছিল। দিন দিন যেন আফরার প্রতি তার ভালবাসা ক্রমান্বয়ে বেড়েই যাচ্ছিল তার। ভালবাসা জিনিসটাই বোধহয় এমন। কিন্তু আজ নিজের মনকেই সে প্রশ্ন করছে আফরাকে ভালবেসে তবে কি সে কোন ভুল করে ফেলেছে! আফরা তাকে এতো নিচু চোখে দেখে সে এটা ভাবতে পারছে না কিছুতেই। তাছাড়াও এতো অবহেলা সহ্য করা যায় ভালবাসার মানুষটার কাছ থেকে? সে তো একটু ভালবাসাই চেয়েছিল আফরার কাছ থেকে। তার বিনিময়ে কি পেয়েছে? ভোগের সামগ্রীর সাথে নিজেকে তুলনা করেছে। আর অয়নকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সব ছেলেরা একইরকম হয়। সব ছেলেরাই রক্ষকের নামে ভক্ষক, সব ছেলেরাই প্রতারক। তবে সেও দেখিয়ে দেবে তার ভালবাসার গভীরতা কতটুকু! কতটুকু জোর আছে তার ভালবাসার!

—“ঐখানেই দাঁড়াও।”

স্পন্দনের গম্ভীর কণ্ঠ শুনে দরজার বাইরেই দাঁড়িয়ে পড়ে অতশী। স্পন্দন আজকে এতো তাড়াতাড়ি বাসায় চলে এসেছে! না জানি এখন তার কি অবস্থা হয়! দরজার মুখে এসে স্পন্দন গমগম স্বরে বলে ওঠলো
—“কোথায় গিয়েছিলে?”

মাথা নিচু করে দুই ঠোঁট চেপে গলার ঘামটা বাম হাতের উল্টোপিঠে মুছতে মুছতে ভাবছে কি বলা যায়। এতো তাড়াতাড়ি কোন মিথ্যে কথাও সে বানিয়ে বলতে পারবে না।

—“বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে বলার চেষ্টাও করবে না। বলো কোথাও গিয়েছিলে এই অসুস্থ শরীরে?”
—“আসলে মানে…….”
—“বলেছি না সত্যিটা বলতে? আমতা আমতা করছো কেন এভাবে?”

স্পন্দনের ধমকে হালকা কেঁপে ওঠলো অতশী। এখন সে কি বলে বাঁচবে স্পন্দনের হাত থেকে?

—“উত্তর দিচ্ছো না কেন? খুব বাড় বেড়েছে তাই না? আমাকে না বলে বাড়ির বাইরে পা রেখেছো কেন বলো?”

স্পন্দনের রাগের সামনে টিকার উপায় নেই অতশীর। অতশীকে চুপ থাকতে দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে স্পন্দনের। এমনিতেই অসুস্থ শরীর। তার ওপর আবার একা একা বাড়ির বাইরে পা রেখেছে। মন চাচ্ছে মাথায় তুলে আছাড় মারতে মেয়েটাকে। রুমের ভিতর টেনে এনে খাটের ওপর ধপ করে বসিয়ে দিল অতশীকে। চিৎকার করে বললো

—“আমার কথা কি কানে যাচ্ছে না তোমার? মুখে এভাবে কুলুপ এঁটেছো কেন?”
—“না মানে আমি….”
—“সমস্যা কি তোমার বলো? আমাকে টেনশনে রেখে খুব মজা পাও?”
—“আমাকে নিয়ে এতো টেনশনের কি আছে? আর আমি তো কারো কেউ না। আমি তো কারো ভালবাসাও পাওয়ার যোগ্য না। আমার জন্য কারোর অযথা এতো চিন্তা করার দরকার নেই।”
—“ঠাটিয়ে একটা চড় লাগাবো গালে। এতোক্ষণ তো কথাই বলছিলে না। আর এখন মুখ দিয়ে খৈ ফুটেছে তাই না?”
—“সত্যি কথাই বলেছি। বিশ্বাসঘাতকরা কারো ভালবাসা পাওয়ার যোগ্য না। তারা জঘন্য হয়। যেমনটা আমি।”
—“মেজাজ খারাপ কোরো না বলে দিচ্ছি অতশী। বলো একা একা কোথায় গিয়েছিলে?”
—“অরিনের সাথে একটু দেখা করতে গিয়েছিলাম।”

এবার একটু নরম হলো স্পন্দন।
—“দেখা করাটা কি খুব জরুরী ছিল?”
—“হ্যাঁ।”
—“তাহলে বাসায় আসতে বলতে। এই শরীর নিয়ে বাইরে যাওয়ার কি দরকার ছিল? যদি কিছু হয়ে যেত তোমার?”
নির্বিকার গলায় সরাসরি স্পন্দনের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো
—“কি আর হতো? বেশি হলে অ্যাক্সিডেন্ট করে মরেই যেতাম। তোমার ঘাড়ের ওপর অতশী নামের যে বোঝাটা ছিল তা নেমে যেতো চিরতরের জন্য।”

এমন কথা শুনে মাথায় রক্ত চড়ে গেল স্পন্দনের। কলিজায় কামড় দেয় এসব কথা বললে। থাপ্পড় মারার জন্য হাত ওঠানোর পর চোখ মুখ কুঁচকে চোখ বন্ধ করে ফেললো অতশী। রাগটা গিয়ে মজালো দেয়ালের সাথে। পরপর কয়েকবার আঘাত করে দেয়ালে। ডান হাতটা দেয়ালে রেখে তার ওপর মুখটা রেখে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে। দম দম আওয়াজ শুনে সেদিকে তাকিয়ে দেখে দেয়ালে হাত দিয়ে আঘাত করছে স্পন্দন। স্পন্দনকে থামাতে দৌড়ে এসে পিছন থেকে শক্ত করে দু’হাতে জাপটে ধরে স্পন্দনকে। যেভাবে দাঁড়িয়ে ছিল সেভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে কোন নড়চড় না করে। এ মেয়েটা কেন বুঝে না তাকে সে কতটা ভালবাসে! কেন বারবার কষ্ট দেয় এসব বলে? ওকে ছাড়া সে কিভাবে বাঁচবে? এসব কথা কি একবারও মাথায় আসে না অতশীর? বুকের ভিতর কান্নাটা এসে থেমে গেছে। ছেলেদের কাঁদতে মানা। তাই তাকেও কান্নাটা আঁটকে রাখতে হবে অতশীর সামনে। স্পন্দনের এ প্রত্যেকটা আঘাত যেন অতশীর বুকের ভিতর গিয়ে তীরের ফলার মতো বিঁধেছে। রক্তাক্ত করেছে তার হৃদয়টাকে। জখম হয়েছে তার ভিতর বাহির পুরোটা।

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


অনুশোচনায় দগ্ধ হচ্ছে আফরা। এতেগুলো বাজে কথা তার মুখ দিয়ে কি করে বের হয়ে গেল? সে কি মানুষটা আসলেই এতো নোংরা? যার কারনে ওর মুখ দিয়ে এসব বেরিয়েছে! এমন তো নয় যে সে অয়নকে ঘৃণা করে। হ্যাঁ ভালো লাগে অয়নকে এটা সে স্বীকার করে। কিন্তু এই ভালো লাগাটা ভালবাসায় রূপান্তরিত হোক এটা সে চায় না। তার যে এতো মনের জোর নেই বারবার প্রতারিত হওয়ার। সে যেমন আছে তেমনই থাকতে চায়। সে বেশ বুঝতে পারে অয়ন তাকে ভালবাসে। অয়নের চোখের দিকে তাকালে বুঝা যায় অয়ন তাকে কতটা চায়। কিন্তু সব চোখের দেখা কি সঠিক হয়? অয়নও যদি ঠকায় ওকে! সে যে একেবারে মরেই যাবে। সেধে সেধে গিয়ে ঠকার কোন মানে হয়! এবারও যে সে ঠকবে না এটারই বা গ্যারান্টি কি? কিন্তু তার মনটাকে যে সে কিছুতেই বুঝাতে পারছে না। অয়নকে তার খুব করে ভালবাসতে ইচ্ছে করছে। কালকের ঐরকম ব্যবহারের পর থেকে সে ভিতরে ভিতরে মরে যাচ্ছে। অয়ন কি তাকে ঘৃণা করা শুরু করবে? না বুঝেই অয়নকে সে কষ্ট দিয়ে ফেলেছে। অয়ন কি তাকে একটিবারের জন্য হলেও ক্ষমা করবে?

বিছানায় শুয়ে বালিশ চেপে কাঁদছিল আর এসব ভেবে ভেবে অস্থির হচ্ছিল। সেই মুহূর্তে দরজায় কে যেন নক করলো। শুয়া থেকে ওঠে চোখমুখ মুছে স্বাভাবিক হয়ে গিয়ে দরজা খুলে দেখলো তার বাবা দাঁড়িয়ে আছে। এই একটা মানুষের দিকে তাকালে তার মনে হয় দুনিয়াতে এখনও কিছু হলেও ভালো মানুষ বিদ্যমান। তার বাবা এবং ভাইয়া এটার জ্বলন্ত প্রমাণ। এই মানুষটা তার কোন চাওয়া পাওয়া অপূর্ণ রাখেন না। নিঃস্বার্থভাবে ভালবেসে গেছেন তাকে। অনেক আদরে আদরে বড় করেছেন। উনার মুখের দিকে তাকালেও যেন মনে প্রশান্তির সুবাতাস বয়ে যায়।

—“কিরে মা কি করছিলি?”
—“কিছু না আব্বু তুমি কি কিছু বলবে?”
—“না মানে হ্যাঁ ছিল।”
—“তাহলে বলে ফেলো, এতো আমতা আমতা করছো কেন? আর বাইরে দাঁড়িয়ে কেন? ভেতরে এসো।”
—“না মানে আসলে তোকে না জানিয়ে আমরা তোর ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি রে মা।”
—“কি সিদ্ধান্ত আব্বু?”
—“তুই আবার মন খারাপ করবি নাতো?”
—“তুমি নির্দ্বিধায় বলো আব্বু।”
আমতা আমতা করে বললো
—“না মানে আসলে তোর জন্য একটা সম্বন্ধ এসেছে। ছেলে এবং ছেলের পরিবার দুটোই খুব ভালো। আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি।”

হঠাৎ করেই বুকটা ধুক করে ওঠলো আফরার। এবং সেই মুহূর্তে অয়নের মুখাবয়বটা একটিবার উঁকি দিয়ে তার হৃদয়টা নাড়িয়ে দিয়ে গেল। আচ্ছা হঠাৎ করে অয়নের মুখটা আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠলো কেন? নিজের মনকে প্রশ্ন করে নিজেই অবাক হয়ে গেল। তাহলে কি অয়ন তার হৃদয়ে একটু হলেও জায়গা করে নিয়েছে?

চোখে হাজারো অশ্রুরা ভীড় করেছে। টলমল চোখে বাবার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো
—“আব্বু এতো তাড়াতাড়ি আমার বিয়ে দিতে চাচ্ছো কেন? তুমি তো বলেছিলে আমার লেখাপড়া শেষ হলে বিয়ে দিবে। আর তাছাড়া সামনে আমার দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল এক্সাম।এতো তাড়াতাড়ি…….”

—“দ্যাখ মা, আমার বয়স বাড়ছে। কখন কি হয়ে যায় বলা যায় না। তোর একটা গতি করে দিয়ে যেতে পারলে আমি মরেও শান্তি পাব রে মা।”

বাবার কথা শুনে কান্না এসে গেল আফরার। এই মানুষটাকে সে কিভাবে কষ্ট দিবে। এর আগেও দুইবার মাইনর স্ট্রোক করেছিল। ডাক্তার বলেছিল যাতে কোন টেনশনে না রাখে। তাহলে নাকি বড় ধরনের স্ট্রোক করার সম্ভাবনা আছে। সবসময় হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করার কথা বলেছে। এখন যদি মুখের ওপর না করে দেয় তাহলে তো খুব কষ্ট পাবে তার বাবা। তার জন্য তার বাবার জীবন ঝুঁকিতে পড়ুক এটা সে কখনোই চায় না। তার বাবার খুশিই তার খুশি। যদিও অয়নের জন্য তার দুর্বলতা কাজ করে। কিন্তু কয়েকদিনের ভালো লাগার জন্য ২০ বছরের নিঃস্বার্থ ভালবাসাকে সে অস্বীকার করতে পারে না।

—“কিরে মা তোর কোন আপত্তি আছে এতে?”
—“না বাবা। তোমাদের সিদ্ধান্তকে কখনো আমি হেলা করেছি? তোমরা যা করবে তা আমার ভালোর জন্যই করবে। আমার ক্ষতি তোমরা কখনোই চায়বে না। তাই যা ভালো বুঝো তোমরা করো। আমার কোন আপত্তি নেই।”
—“আমি জানতাম তুই কোন আপত্তি করবি না। আমাকে নিশ্চিন্ত করলি আমার লক্ষ্মী মা।”

এটা বলেই বাবা আফরার কপালে একটা চুমু দিয়ে হাসি মুখে বেড়িয়ে গেল। অনেক দামী এই হাসিটা। যা লক্ষ কোটি টাকার বিনিময়েও পাওয়া যায় না। বাবা-মা যদি এতে খুশি হয় তাহলে সেও খুশি। তাদের যেকোন সিদ্ধান্তকেই সে হাসিমুখে মেনে নিবে।

বাবা বেরিয়ে যাওয়ার পর হঠাৎ করেই আবারো অনেক কান্না পেল আফরার। কিন্তু তার কারণ খুঁজে পাচ্ছে না সে। তার কি অয়নের জন্য বুকটা পুড়ছে? নাকি বাবা মা ভাইয়া সবাইকে ছেড়ে চলে যাবে বিধায় খারাপ লাগছে?

চলবে…….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে