অভিমান হাজারো পর্বঃ-৩
আফসানা মিমি
অতশী এখনো ঠায় বসে আছে ব্যালকনির ফ্লোরে। এক দৃষ্টিতে আকাশপানে তাকিয়ে আছে। সেদিন স্পন্দনের সাথে এরকম ব্যবহার সে ইচ্ছে করেই করেছিল। নিজেকে খুব কষ্টে কন্ট্রোল করে এতোগুলো মিথ্যে বলেছিল। তাই তো তার চোখে চোখ রেখে একটা কথাও বলতে পারেনি। প্রত্যেকটা কথা বলার সময় কে যেন তার গলায় চেপে ধরে রেখেছিল। বলতে খুব কষ্ট হয়েছে। বুকের ভিতরের কষ্টগুলো কান্না হয়ে দলা পাকিয়ে বাইরে আসতে চেয়েছিল। কিন্তু অতশী আসতে দেয়নি। তার যে আর কিছুই করার ছিল না। প্রিয় মানুষটাকে ভালো রাখার জন্য তার সুখের কথা চিন্তা করেই তো এমনটা করেছিল সে। সে তো জানে স্পন্দন তাকে কতটা ভালবাসে! এমনি এমনি বললে সরতো না। তাই তো অন্য আরেকজনের কথা বলে সরাতে চেয়েছিল। কিন্তু তা আর হলো কই? নিয়তি তাকে এখানে এনে ছুঁড়ে ফেলেছে।
…
শুয়ে শুয়ে কান্না করছিল আর তাদের অতীতের স্মৃতি রোমন্থন করছিল অতশী। হঠাৎ মোবাইলের ভাইব্রেশনের আওয়াজে চিন্তার জাল ছিন্ন হলো। দেখলো তার বাবা ফোন করেছে। চোখের পানিটা মুছে ব্যালকনিতে গিয়ে ফোন রিসিভ করে সালাম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো
—“কেমন আছো আব্বু?”
—“তোকে ছাড়া কি করে ভালো থাকি রে মা! আমার ঘরটা শূন্য করে দিয়ে তুই চলে গেলি। কিছু ভালো লাগে না রে মা।”
কান্না আঁটকে অতশী বললো
—“আমারও তোমাকে ছাড়া থাকতে অনেক কষ্ট হচ্ছে আব্বু।”
—“তুই আমাকে এতোই পর ভাবিস রে মা! যে এই বুড়ো বাপটাকে তোর মনের সত্যিটা কথাটা বলতে পারলি না! রিমনকে বিয়ে করে কি তুই সুখী হতি? তোর কষ্ট দেখে আমারও কি কষ্ট হতো না বল!”
—“প্লিজ আব্বু এভাবে বোলো না। আমার ভুল হয়ে গেছে প্লিজ মাফ করে দাও। এমন ভুল আর কখনো করবো না কথা দিচ্ছি।”
—“ছেলেটা এসে যখন আমার পায়ে ধরে বসে গেল আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। তাদের সবার এভাবে বলার পরও আমার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিল না তোদের চার বছরের সম্পর্ক ছিল। কারণ তুই তো বলেছিলি তোর রিমনের সাথে সম্পর্ক। আমি তা বলার পর তখন স্বয়ং রিমন নিজে এসে বললো যে এটা নাকি সত্যিই। তুই নাকি রিমনকে সবই খুলে বলেছিলি। তাহলে আমাকে কেন বলতে পারলি না তুই? কেন করলি এমনটা মা?”
—“আমি সত্যিটা বলতে পারবো না আব্বু আমাকে ক্ষমা করো।” কেঁদে দিয়ে বললো অতশী
—“আচ্ছা তুই না বলতে চায়লে জোর করবো না। এখন বল কবে আসবি তুই?”
—“আমি তো এখন বলতে পারছি না আব্বু। দেখি ও যখন নিয়ে যায় তখনই যাব।”
—“ও বাড়ির মানুষজন কেমন রে মা? তোকে মেনে নিয়েছে তো! আমার খুব চিন্তা হচ্ছে তোকে নিয়ে।”
—“চিন্তার কোন কারণ নেই আব্বু। এ বাড়ির সবাই অনেক ভালো। একদিনেই আমাকে আপন করে নিয়েছে।”
—“শুনে মনটা শান্ত হলো রে মা।”
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
আরো কিছুক্ষণ টুকটাক কথা বলে ফোন রেখে দিল। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ভাবতে লাগলো ‘স্পন্দন বাবার পায়ে পড়ে গেছে আমাকে বিয়ে করার জন্য!’ কথাটা শুনে অবাক হওয়ার পাশাপাশি বেশ খারাপও লাগলো তার কাছে। অতশী জানে স্পন্দন তার জন্য কতটা পাগল। কতটা ভালবাসে তাকে। ঠিক তখনই রুমের দরজা খুলার আওয়াজ পাওয়া গেল। রুমে এসে দেখে স্পন্দন এসেছে।
—“তুমি ফ্রেশ হয়ে নিচে আসো আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি।”
—“খাব না। ক্ষিদে নেই।” শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বললো স্পন্দন।
—“সকালেও তো খাওনি। দুপুরে খেয়েছিলে?”
—“না।” নির্বিকারভাবে বললো
—“তাহলে বলছো যে ক্ষিদে নেই! খেয়ে এসেছো নাকি?”
এবার স্পন্দন একটু রেগে গিয়ে বললো
—“তার কৈফিয়ত কি আমি তোমাকে দিব?”
বলেই হনহন করে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। আর অতশী ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে সেখানে। সে ভেবেছিল স্পন্দন আসলে একসাথে খাবে। তার জন্য অপেক্ষা করে ছিল। কিন্তু তার সে আশায় গুড়ে বালি।
ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে রুম থেকে বাইরে চলে যায় স্পন্দন। আর অতশী ব্যালকনিতে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আকাশের তারা গুণতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। স্পন্দন নিচে যাওয়ার পর তার মায়ের সম্মুখীন হয়।
—“মা এক কাপ কফি করে দিতে পারবে?”
—“সেকি রে! এখন রাত সাড়ে দশটা বাজে। মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে সারাদিন না খেয়েই ছিলি। তা এখনও না খেয়ে তুই কফি চায়ছিস কেন?”
কপালে বৃদ্ধাঙ্গুলি আর তর্জনী দিয়ে একটু স্লাইড করে বললো
—“মাথাটা ধরেছে। এক কাপ স্ট্রং কফির দরকার।”
—“তুই একটু বোস, আমি করে আনছি।
চলে যাচ্ছিল আবার ফিরে এসে বললো
—হ্যাঁ রে স্পন্দন, অতশী কোথায়? মেয়েটা সারাদিন না খেয়ে তোর জন্য অপেক্ষা করছিল। সবাই মিলে কত করে বললাম কিন্তু মুখে এক দানা খাবারও তুললো না। যতবারই খাওয়ার কথা বলেছি ততবারই বলেছে পরে খেয়ে নিবে। বিকেলে খাবার প্লেট নিয়ে গিয়ে দেখি ঘুমোচ্ছে। তাই আর ডাকিনি। দ্যাখ মেয়েটা তো এই বাড়িতে নতুন। স্বামী হিসেবে তোর কি উচিৎ না ওর খুঁজখবর নেওয়া?”
মায়ের কথা শুনে স্পন্দনের বুকটা ধুক করে ওঠল। এবং আস্তে আস্তে বুকটা যেন ভারী হয়ে আসছিল অজানা কারণে। সারাদিন না খেয়ে আছে অতশী! অথচ সে কিনা একটা খবরও নিল না অতশীর! ছিঃ এই ভালবাসে সে অতশীকে! নিজেকে নিজেই ধিক্কার জানাচ্ছে স্পন্দন। কি যেন একটা ভেবে বলে ওঠলো
—“মা এক কাজ করো একটা প্লেটে দুইজনের খাবার দিয়ে দাও। এখন আর কফি করতে হবে না।”
—“আচ্ছা তুই একটু দাঁড়া।”
—“তুমিও যে কি মা! এতো আহ্লাদ করছো কেন ঐ মেয়েটাকে নিয়ে? একে তো রাস্তা থেকে ধরে এনেছে আমার বাপ ভাই মিলে। তার ওপর আবার তুমি ন্যাকামো শুরু করে দিলে ঐ মেয়েটাকে নিয়ে। জাস্ট ডিজগাস্টিং!”
মেয়ের কথায় মুখে বিরক্তির ভাব এনে ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকালো ইয়াসমিন বেগম। কোত্থেকে যে এমন হলো তার মেয়েটা! তার বাকি দুই ছেলে সম্পূর্ণ অন্য মেরুর মানুষ। ছেলেদের সাথে মেয়েটার কোন মিলই নেই। আল্লাহ্ তার মেয়েটাকে কার মতো করে বানালো!
—“মুখের ভাষা ঠিক কর লাবণ্য। আর সে তোর ভাবী হয় মনে রাখিস। বয়সে এবং সম্পর্কে কিন্তু তোর চেয়ে বড়।”
—“বড় তো কি হয়েছে? তাকে কি আমার মাথায় নিয়ে ঘুরতে হবে? নতুন বিয়ে হয়েছে বলে কি সারাদিনই রুমে শুয়ে থাকতে হবে নবাবজাদীর মতো? এটা যে শশুরবাড়ি এই সাধারণ সেন্সটুকু মেয়েটার মধ্যে নেই?”
এবার সত্যি সত্যি মেয়ের কথায় একটু বেশিই বিরক্ত হলেন। মেয়েটার কি কোন আক্কেল জ্ঞান নেই? খানিক দম নিয়ে বললেন
—“মেয়েটাকে নিয়ে তোর এতো সমস্যা কোথায়? আমি আসলেই বুঝতে পারছি না। নতুন মানুষ, নতুন পরিবেশ সবার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে একটু তো সময় লাগবেই তাই না? এতে এতো রিয়েক্ট করার কি আছে বুঝি না! আমরা যদি ওর সমস্যাটা না বুঝি তাহলে ও আমাদের সাথে মিশবে কিভাবে? একটু সময় দরকার ওর। হুট করে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় এসে সবার সাথে নিজেকে মানাতে একটু কাঠখড় পোহাতে হয়। তোর যখন বিয়ে হবে তখন তুইও বুঝবি। তখন দেখিস কেমন লাগে!”
মায়ের কথায় বিরক্তিতে ছেয়ে গেল লাবণ্যর মুখটা। আবারো জোড় গলায় বলতে শুরু করলো
—“নিশ্চয়ই ভাইয়াকে কোন জাদুটোনা করেছে ঐ মেয়ে। নয়তো ওর মধ্যে কি এমন দেখেছে যে বিয়ের মঞ্চ থেকে একেবারে জোর করে বিয়ে করে তুলে নিয়ে এসেছে? নির্ঘাত এই মেয়ে একটি ধান্দাবাজ মেয়ে। ভাইয়াকে পটিয়ে….”
মেয়েকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ধমক দিয়ে বললো
—“আস্তে কথা বল আর মুখের ভাষা ঠিক কর। ঐখানে তোর ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে। যদি শুনতে পায় তাহলে কি হবে বুঝতে পারছিস তো?”
আর কিছু না বলে সে স্থান ত্যাগ করে লাবণ্য। ওর প্রত্যেকটা কথাই শুনতে পেয়েছে স্পন্দন। মন চাচ্ছিল লাবণ্যর দুই গালে ঠাটিয়ে দুইটা থাপ্পড় দিতে। মায়ের কথাগুলো শুনে কিছুটা নরম হলো ওর মন। যাক মা তাহলে অতশীকে মেনে নিয়েছে! খাবারের প্লেট স্পন্দনের হাতে দিয়ে কিচেনরুমের লাইট নিভিয়ে চলে গেল তার মা।
রুমে এসে দেখে অতশী কাঁথা মুড়ি দিয়ে একপাশ হয়ে জড়সড়ভাবে শুয়ে আছে। হালকা আলোতেও স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে অতশীর শুকনো মুখটা। অথচ সে কিনা এসে একবারও তার মুখটা ভালো করে খেয়াল করেনি! এতোটা নির্দয়া হয়ে গেল সে!
—“অতশী, এই অতশী উঠো।”
অতশী চোখ মেলে দেখে স্পন্দন হাতে প্লেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অতশীর শুকনো মুখটা দেখে স্পন্দনের বুকটা হাহাকার করে ওঠলো। চোখের আশপাশ জুরে কান্নার ছাপ স্পষ্ট। তা দেখে খারাপ লাগাটা বেড়ে দ্বিগুণ হলো স্পন্দনের। অতশী উঠে সোজা হয়ে বসে নিচু গলায় বললো
—“কি হলো ডাকছো কেন?”
—“সারাদিন না খেয়ে ছিলে কেন?”
—“কে বলেছে খাইনি? খেয়েছি তো।”
চোখ গরম করে স্পন্দন বললো
—“মিথ্যে বলছো কেন?”
—“মিথ্যে বলবো কেন শুধুশুধু?”
রাগ ওঠে গেল স্পন্দনের। এখনো মেয়েটা মিথ্যা বলেই যাচ্ছে। সাহস তো মন্দ না!
—“আরেকটা মিথ্যে কথা বললে ঠাটিয়ে চড় লাগাবো গালে। অসুস্থ হওয়ার খুব স্বাধ জেগেছে মনে তাই না?”
অতশী নিশ্চুপ রইলো স্পন্দনের এমন কথায়। তাকে এ মুহূর্তে রাগাতে চায়ছে না সে। স্পন্দন আবারও খ্যাঁক করে ওঠলো
—“এরকম যেন আর কখনো না হয়! মনে থাকে যেন। আমাকে আরো কঠোর হতে বাধ্য কোরো না। এসো, নেমে দাঁড়াও।”
স্পন্দনের কথা চুপচাপ মেনে নিল। বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালো। স্পন্দনের এই রাগের সাথে সে পরিচিত নয়। কেননা সম্পর্কের এতো বছরেও কখনো তার সাথে রাগ দেখায়নি স্পন্দন। শুধুমাত্র সে কষ্ট পাবে বলে। এত্তো ভালবাসতো ছেলেটা তাকে। এমনকি এখনো বাসে। কিন্তু লুকিয়ে রেখেছে।
—“স্ট্যাচু অব লিবার্টির মতো পৃথিবীর ঐ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছো কেন? এদিকে এসো।”
অতশী ঠায় দাঁড়িয়ে আছে আগের মতোই। স্পন্দনের কথায় তার কোন হেলদোল নেই। হঠাৎ স্পন্দনের হেঁচকা টানে তার সম্বিৎ ফিরলো। স্পন্দন তাকে তার কোলে বসিয়ে দিল। মাথা নিচু করে বসে আছে সে। ভাত মেখে এক লোকমা ভাত অতশীর মুখের সামনে এনে ধরলো। অবাক চোখে তাকিয়ে আছে অতশী। স্পন্দনের নতুন রূপ উন্মোচিত হলো আজ তার সামনে।
—“হা করে আমাকে না গিলে ভাতটা আপাতত গিলেন।”
স্পন্দনের এমন কথায় ভেবাচেকা খেয়ে গেল অতশী। আস্তে করে ভাতের লোকমাটা স্পন্দনের হাত থেকে মুখে তুললো।
ভাত খাওয়াতে খাওয়াতে বিড়বিড় করে বলছে
‘আমাকে জ্বালিয়ে মারতে তো খুব ভালো লাগে উনার। বেছে বেছে আমার উইক পয়েন্টেই আঘাত করবে। জানে উনি না খেলে আমার কষ্ট হয়। তবুও না খেয়ে থেকে আমাকে কষ্ট দিবে।’
অতশী চুপচাপ খাচ্ছে আর স্পন্দনের কথা শুনে মুচকি হাসছে। ওর হাসি দেখে স্পন্দন চোখ গরম করে ওর দিকে তাকালো। হাসি বন্ধ করে চুপচাপ খাওয়া শেষ করল অতশী। তাকে খাওয়ানোর ফাঁকে ফাঁকে স্পন্দনও মুখে কিছুটা খাবার নিল মুখে।
…
এতোক্ষণ কান্না করার কারনে মাথায় একটু বেশিই পেইন হচ্ছে। আবারো তাকে এক মুঠো ঔষধ গিলতে হবে। মাথা ব্যথাটা যেন দিন দিন বেড়েই চলেছে। ঔষধের ওপর নির্ভর করেই বেঁচে আছে অতশী। নয়তো মাথা ব্যথায় বিছানায় পড়ে কাতরাতে হতো সারা দিনরাত। ভাগ্যিস এখানে আসার সময় বাবা ঔষধগুলো ব্রিফকেসে ভরে দিয়েছিল! যদিও তার বাবা জানে না যে এগুলো কিসের ঔষধ!
মুঠোভরতি ঔষধ খেতে দেখে ভ্রুজোড়া কুঁচকে গেল স্পন্দনের। এভাবে এতোগুলো ঔষধ গেলার কারন কি? অতশীর কি তবে শরীর খারাপ? কৌতূহল দমিয়ে রাখতে না পেরে জিজ্ঞেস করেই ফেললো
—“শরীর খারাপ নাকি তোমার?”
খানিকটা চমকে গেল অতশী। স্পন্দন ঘুমায়নি এখনো! সে ব্যালকনিতে চলে গিয়েছিল। যাতে করে স্পন্দন ঘুমিয়ে গেলে এসে ঔষধগুলো খেতে পারে।
—“হঠাৎ তা মনে হওয়ার কারণ?”
—“সোজাসাপ্টাভাবে কোন কথার উত্তর মুখ দিয়ে আসে না?” কণ্ঠে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট স্পন্দনের।
অতশীও নির্বিকারভাবে মেঝের দিকে তাকিয়ে বললো
—“বেঁচে আছি আর কি।”
এমন কথা শুনে স্পন্দনের আর কিছু জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হলো না। এমনিতেই সারাদিনের ক্লান্তি। তার শরীরটা যেন ভেঙে পড়তে চায়ছে। বিছানায় পিঠ লাগানোর সাথে সাথেই যেন চোখে সারা রাজ্যের ঘুম ভর করলো স্পন্দনের। কিন্তু ঘুমটা এসেও যেন তার কাছ থেকে আবার পালিয়ে যাচ্ছে। বুকটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। শূন্যতা ভর করেছে তার দেহমনে। মনকে সে প্রশ্ন করলো ‘এমন লাগার কারণ কি? বুকটা এতো খাঁ খাঁ করছে কেন? পুড়ছে কেন এতো প্রবলভাবে?’
ভিতর থেকে অদৃশ্য কেউ বলে ওঠল ‘কেন আবার? সেই শূন্য জায়গায় যে একমাত্র তোর অতশীর বসবাস। তাকে ছাড়া বুকে শান্তি পাবি কি করে? পুড়বেই তো।’
কেন যেন অতশীকে বুকে নিয়ে ঘুমালে স্পন্দনের বুকের ভিতরের জ্বলতে থাকা আগুনটা নিমিষেই নিভে গিয়ে শান্তি অনুভব করে সেখানে। না নিলে যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। শূন্যতা ঘিরে রাখে তাকে। সে খুব করে চায়ছে অতশী যেন তার বুকে মাথা রেখে ঘুমায়। কিন্তু অতশী একপাশ হয়ে জড়সড়ভাবে শুয়ে আছে।
অপরদিকে অতশীও ভাবছে একটাবার কি তোমার বুকে টেনে নিতে পারো না! তোমার বুকে মাথা না রাখলে যে আমার ঘুম আসবে না। অজান্তেই চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো। বুকটা ফেটে যাচ্ছে। তাই আর কিছু না ভেবেই সকল দ্বিধা উপেক্ষা করে স্পন্দনের বুকে মাথা রেখে তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে অতশী। বুকে কিছুক্ষণ মাথা রেখে তারপর স্পন্দনের গলায় মুখ ডুবিয়ে নিঃশব্দে কান্না করতে থাকে।
অতশীর গরম নিঃশ্বাস এবং গরম পানি দুটোই স্পন্দনের গলায় পড়ছে। স্পন্দনেরও কেমন যেন একটা অনুভূতি হচ্ছে। এ অনুভূতির সাথে সে সম্পূর্ণই নতুন। তার সারা শরীর জুড়ে একপ্রকার মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে। তার মন বলছে ‘অতশী তোর প্রিয়তমা, তোর ভালবাসার মানুষ, তোর অর্ধাঙ্গিনী। তার অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করিস না। মনপ্রাণ উজার করে ভালবাসা দে ওকে। ওর কান্না সহ্য করছিস কি করে তুই? পাষাণ হয়ে গেলি?’ অপরদিকে স্পন্দনের ব্রেন বলছে ‘ও তোর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ওকে এতো তাড়াতাড়িই ক্ষমা করবি না। বিশ্বাসঘাতকদের ক্ষমা হয় না। কাঁদুক, যত খুশি কাঁদুক। তোকে দেওয়া কষ্টের কাছে ওর এই কান্না কিছুই না।’
অতশী এক হাতে স্পন্দনের গলা জড়িয়ে ধরে আছে। আরেক হাতে স্পন্দনের চুলগুলো মুঠো করে ধরে আছে। এভাবেই সারাজীবন মিশে থাকতে চায় স্পন্দনের সাথে। স্পন্দনের প্রতি তার ভালবাসার জোর কতটুকু? নিয়তি কি তাকে স্পন্দনের সাথে থাকার সুযোগ দিবে এ জন্মে? এ জন্মে না দিলেও পরের জন্মে সুযোগ তাকে দিতেই হবে। দরকার হলে ছিনিয়ে নিবে।
চলবে………